পুরোটা বিকেল ওরা বারান্দায় কফির মগ হাতে গল্প করে কাটিয়ে দিল। বারান্দার দেয়ালে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে গল্প। খুব সিরিয়াস টাইপের গল্প। প্রায় এক বছর কে কিভাবে কাটিয়েছে, কার জীবনে কি হয়েছে সেসব গল্প। তিতির মুগ্ধকে সুহাসের কথাটা সব খুলে বলততেই মুগ্ধ খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেল। বলল
তিতিরের শরীর প্রচন্ড গরম। চোখগুলো লাল হয়ে আছে, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। ও বোধহয় জ্বরের ঘোরে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি তাই চলে এসেছে। জ্বর কমলে, ঘোর কাটলে তো চলেই যাবে। শুধু শুধু মায়া বাড়াতে এল মেয়েটা! -“এই দাওনা। খাবোতো!” মুগ্ধর ঘোর কাটলো। বলল, -“কি দেব?” -“তোমার ঘুমু ঘুমু ভয়েসটা।”
মুগ্ধ আটকালো না তিতিরকে। ওর মা এসে আচমকাই ওর গালে একটা চড় মারলো। মুগ্ধ আকাশ থেকে পড়লো! মা শেষ কবে ওকে মেরেছিল মনে করতে পারছে না। পিউ অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। মুগ্ধ বলল, -“এটা কি হলো?” মা বলল, -“তুই মেয়েটাকে এভাবে কাঁদালি কেন?” -“মা মাঝেমধ্যে না আমি তোমাকে বুঝেও বুঝিনা।
সবাই একে একে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। শুধু চম্পা ঘরের এক কোনায় বসে কাঁদতে লাগলো। তিতির উপুর হয়ে শুলো। পিঠটা বিছানায় রাখতে পারছে না। পিঠের এমন কোন যায়গা নেই যে স্কেল পড়েনি। কোথাও কোথাও একই যায়গায় বারবার পড়েছে। উপুর হয়েও ব্যাথা অনুভব করলো। বুকে, পেটেও বোধহয় দুএকটা লেগেছে।
মা কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে শীতল গলায় বলল, -“কি করে হলো এসব?” তিতির তো আকাশ থেকে পড়লো। নিজের মেয়েকে কেউ এসব জিজ্ঞেস করে? এমনি লজ্জা লাগছে আবার ডিটেইল জানতে চাচ্ছে। এমন তো না যে মা জানেনা কি করে মানুষ প্রেগন্যান্ট হয়। ওকে চুপ থাকতে দেখে মা আবার জিজ্ঞেস করলো
তিতির কখন যেন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মুগ্ধ ওকে বুকের উপর থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর উঠে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলো শরীরটা ভার হয়ে আছে। বুকের ভেতর ব্যাথা করে উঠলো। বুকে হাত দিতেই দেখতে পেল বুকের লোমগুলো ভিজে গেছে তিতিরের চোখের জলে। বুকের ভেতরটায় হাহাকার করে উঠলো।
গোয়াইনঘাটে নৌকার ঘাট থেকে কিছুটা আগে গাড়ি রেখেছিল মুগ্ধ। সাঁতরে সাঁতরে শরীর ক্লান্ত দুজনেরই। যা খেয়েছিল তা সব শেষ। এটুকু হেটে গাড়ির কাছে আসতেও খুব কষ্ট হলো। এসে মুগ্ধ বলল, -“তুমি গাড়িতে ঢুকে চেঞ্জ করে নাও। তোমার হয়ে গেলে আমি ঢুকবো।” -“এখানে আমি চেঞ্জ করবো?” -“হ্যা কে আছে দেখবার জন্য?
সকাল সকাল গাড়ি ছুটে চলেছে গোয়াইনঘাটের পথে। শহর ছেড়েছে অনেকক্ষণ। গোয়াইনঘাট থেকে নৌকায় করে যাবে বিছনাকান্দি। মুগ্ধ ড্রাইভ করতে করতে বলল, -“একটা সুপুরুষ ছেলের সাথে কিস করতে করতে একটা মেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারে আমি আগে জানতাম না। তাও আবার দাঁড়ানো অবস্থায়!” তিতির মন খারাপ করে বলল, -“আর কত পচাবে?” -“আজীবন
-“উফ, এবার নামাও। আমি টায়ার্ড হয়ে গিয়েছি।” কোনমতে হাসি থামিয়ে তিতির একথা বলল। মুগ্ধ ওকে তালগাছ থেকে নামিয়ে ওভাবেই পা ভাজ করলো। তিতির সেই ভাজ করা পায়ে হেলান দিয়ে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, -“তালগাছে উঠালে তুমি আর টায়ার্ড হলাম আমি।” -“স্বাভাবিক, কারন তুমি অতিরিক্ত হেসেছো।” তিতির বলল, -“গরম লাগছে।”
মুগ্ধ বাথরুম থেকে বের হয়ে নতুন কেনা টাওয়াল টা নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেল। ডিভানে বসে শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে। টাওয়াল টা পড়ে প্যান্ট টা খুলে সেটাও ছুড়ে ফেলল। রাগে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়লো। তান্নাকে পেলে এখন খুন করতো ও।