ড্রইং রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে তিতির দেখলো বাবা খবরের কাগজ পড়ছে। তিতির বাবার সামনে গিয়ে ফ্লোরে বসলো। বাবা কাগজ থেকে চোখ না সরিয়েই বলল, -“কিছু বলবি মা?” তিতির কখনো এভাবে একা বাবার সামনে বসে সরাসরি মুগ্ধর ব্যাপারে কথা বলেনি। কিভাবে বলবে? লজ্জা লাগছে, আর ভয়ও করছে।
প্রেমাতাল পর্ব ৫৬ মৌরি মরিয়ম মুগ্ধর মা ফোন রাখার কিছুক্ষণ পরই মুগ্ধ ফোন করলো। -“তিতির, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। একটু সময় দিতে পারবে?” কি করবে তিতির? মাত্রই ওর মা ফোন করে বলল যাতে দেখা না করে আর এক্ষুনি ও দেখা করতে চাইছে! আল্লাহ কেন এমন পরিস্থিতিতে ফেলে? তিতির বলল, -“কবে?” -“আজ। সন্ধ্যার পর।”
মুগ্ধ বাসায় ফিরতেই দেখলো পিউরা মাত্রই এসেছে, যাক বেশি দেরী হয়নি তাহলে। সবার সাথে গল্পগুজব, হইচই, খাওয়াদাওয়ার পর রাত ১২ টার দিকে পিউরা চলে গেল। মুগ্ধ নিজের ঘরে গিয়ে শুয়েছে কেবল। এমনসময় মা এসে দরজায় নক করলো, -“ঘুমিয়ে পড়েছিস বাবা?” -“না, মা.. খুলছি দাঁড়াও।” দরজা খুলতেই মা বলল, -“ঢুকবো না
ঘুম ভাঙার পরও শুয়ে রইলো মুগ্ধ তিতির যদি আসে! যদি আগের মত এসে ওর ঘুম ভাঙায়! আজকের দিনটা কি ও না এসে পারবে? অবশ্য নাও আসতে পারে, এখন তো ওর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে। এখন তো চাইলেও এত সহজে আসতে পারবে না।
এলার্ম বেজে উঠতেই তিতির হাত বাড়িয়ে সেটাকে বন্ধ করলো। রাতে ঘুম আসেনা, ইনসমনিয়া হয়ে গিয়েছে বোধহয়। ঘুমাতে ঘুমাতেই ২/৩ টা বেজে যায়। তাই এলার্ম দিয়ে রেখেছিল, যাতে ভোর ৫ টায় উঠতে কোন প্রব্লেম না হয়। তিতির আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। বাইরে তাকিয়ে দেখলো এখনো আলো ফোটেনি।
দুই সপ্তাহ পর তিতিরের বাবাকে বাসায় আনা হলো। তারপর তিতির একটু নিশ্চিন্ত হলো। ডাক্তার বলে দিয়েছে বাবাকে এখন থেকে খুব সাবধানে রাখতে হবে, উনি আর কোন ভারী কাজ করতে পারবেন না। এমনকি ওনাকে বাজার করতেও দেয়া যাবে না। ফুল বেডরেস্টে থাকতে হবে, নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।
হসপিটালে কেবিনের সামনেই তান্নাকে দেখা গেল। তিতিরের পেছন পেছন মুগ্ধও কেবিনে ঢুকতে নিতেই তান্না ওকে আটকে বলে, -“তোর ভাগ্য ভাল যে আমার বাবা অসুস্থ নাহলে তোকে এখানেই মেরে পুঁতে দিতাম।” একথা শুনে তিতির চমকে পেছনে তাকালো। মুগ্ধ চোখের ইশারায় ওকে ভেতরে যেতে বলল। তিতির ভেতরে গেল।
তিতির বরাবরই এভাবে মুগ্ধর বুকে মাথা রেখে গান শুনতে পছন্দ করে। মুগ্ধর বুকের পাঁজর যেন প্রতিটা ধুকধুক এর মধ্য দিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয় তিতিরের গাল। আর গানের প্রতিটা কথা, সুর সাথে প্রিয় মানুষটার কণ্ঠস্বর কানের এত কাছে! গান শেষ করে তিতিরের কানে কানে মুগ্ধ বলল...
মা আর স্নিগ্ধ ফেরার পর ওরা সবাই মিলে মিটিং এ বসলো। তিতির বসলো একদম মুগ্ধর মার গা ঘেঁষে। মা ওকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। প্রথম কথা উঠলো কাকে কাকে দাওয়াত করা হবে। মুগ্ধ বলল, -“এত দাওয়াত ফাওয়াতের কি দরকার মা? আপাতত নিজেরা নিজেরাই করি।
সন্ধ্যা হতে না হতেই তিতিরের জ্বর মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেল। ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। কিন্তু ও কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলছে। অবশেষে মুগ্ধ ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল। ডাক্তার দেখে বলল, ‘ভাইরাস জ্বর। এন্টিবায়োটিকস দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না ঠিক হয়ে যাবে।’