এ মুহুর্ত গ্লাসের বাইরে দৃষ্টি আদওয়ার।দূর আকাশের তেজি তারকা এতই ঝলমল করছে যে তাদের বড় এক অংশ এখান থেকেই গুণা যায়।একটা তারা হুট করেই মিলিয়ে গেলো।দৃষ্টি ঘুরিয়ে আরহামের দিকে তাকালো আদওয়া।আরহাম পাশে বসলে বুঝালো,তারাগুলো গুনে দিতে।সে তাঁরা গুনলো,আরহাম ঠায় তাকিয়েই রইলেন।
আরহাম হেসে ফেললেন।সন্তুষ্টচিত্তে বললেন, 'আলহামদুলিল্লাহ।দিস ইজ ফার্স্ট টাইম,হুয়েন আই এ্যাম স্যাটিসফাইড অন ইউর রিপ্লাই।'
হাফসাকে খাইয়ে দিয়ে যখন রুমে আসলেন আদওয়া বলল, 'আর কতদিন অপেক্ষা করলে ছোটু টাকে দেখতে পাবো?সময় যেনো শেষ হচ্ছেই না।'
আরহামের চোখের অবাধ্য জলগুলো আর বাঁধা মানলো না।অশ্রুসিক্ত নয়নে বাবার দিকে তাকাতে তিনি বললেন, 'আমার একটা অংশ ভালো নেই।এত অশান্তি নিয়ে কি করে যেতাম।'
আরহাম বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন তৎক্ষনাৎ।নি:শব্দে আঁখিদ্বয় ভিজে উঠলো।বাবার ফিরে আসায়,একটুও আফসোস হলো না।বরং খুশি হলেন।
আরহামের ভেতরটা যেনো চুরমার হয়ে গেলো।অসহ্য রকম যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন ভেতর ভেতর।এত বড় সত্যির জন্য যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।'লাং ক্যান্সার' শব্দটা কর্ণে দ্রীম দ্রীম আওয়াজ তুলতে থাকলো।বক্ষে কেউ পাথর চাপা দিয়েছে এমন যন্ত্রণা হলো।বাক্যগুলো হারিয়ে গেলো যেনো কন্ঠনালী থেকে।অপ্রস্ততের মতো এলোমেলো বাক্যে বলতে লাগলেন
সন্ধ্যার পর নামাজ থেকে ফিরেই হাফসার রুমে গেলেন।আম্মু কিছু দরকারি কথাবার্তা সারছিলেন।আরহাম দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন।আম্মু বেরোতেই সোফায় গিয়ে পাশ ঘেষে বসে পড়লেন।হাফসা একপলক চেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।আরহাম মুখ বাড়িয়ে তাকাতে মাথানিচু করে নিলো।
মাইমুনা তখন সবে শাওয়ার নিয়ে বেরোচ্ছিলেন,তখুনি আরহাম রুমে আসেন।স্নিগ্ধ বেলি ফুলের সুঘ্রাণে রুম ভরপুর। আরহাম মাইমুনাকে একেবারে কোলে নিয়ে ছাদে চলে এলেন।
মাইমুনা জিজ্ঞাসাদৃষ্টিতে তাকালে তিনি বললেন, 'একবার হেয়ারড্রায়ার এভোয়েড করুন।লেট মি ফিল ইউর হেয়ার'স স্মেল হানি।'
গা জ্বালানো শব্দটা বলে আরহাম চলে গেলেন।আদওয়া বের হয়ে দেখে আরহাম চলেই গিয়েছেন।মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে বলে, 'বোকা!কেন যে মুখফুটে বললাম।লোকটা মুখের ওপর একপ্রকার না করে দিলেন।তাতে কি!আব্বুকে বলবো আমি।আমার জন্য এসব নিয়ে আসতে।যেমনটা কালকে ফুচকা আনিয়ে খেয়েছিলাম!
খানিক পরই দরজায় করাঘাত হলো।আরহাম বেলকনি থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, অরেন্জের গ্লাস হাতে হাফসা দাঁড়িয়ে।সন্তুষ্টিতে আরহামের ঠোঁটে আরেক চিলতে হাসি বয়ে গেলো।পাশে বসিয়ে গ্লাসটা খালি করে শুকরিয়া জানালেন।
হাঁটতে হাঁটতে আরহামের হঠাৎ চোখ পড়লো পুকুরের দিকটায়।কাউকে দেখে আদওয়ার হাত খপ করে ধরলেন তিনি।'কাম ফাস্ট' বলে ওকে টেনে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে চাইলেন।আদওয়া আহাম্মক বনে গেলো।জিজ্ঞেস করতে লাগলো বারবার,'কি হয়েছে?এমন তাড়াহুড়ো করছেন কেন?'
আদওয়া লজ্জা পেয়ে একটু দূরে সরেই কমল দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়লো।আরহাম হেসে ওকে কাছে টেনে বুকের মধ্যে এনে শোয়ালেন।আদওয়া তো অবাক!আদওয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললেন, 'আপনিও ঘুমোচ্ছেন না আমাকেও ঘুমোতে দিচ্ছেন না।চুপচাপ ঘুমান তো।'