পাঁচিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সাদিফ। বক্ষপটে মাংসল হাত গুঁজে রাখা। গায়ের কালো পাঞ্জাবি মিশে গেছে তিঁমিরে। ক্ষীণ রশ্মিতে, চশমার গ্লাস চিকচিক করছে।
অমানিশার এই সুবিধে টুকু, মারিয়া হামলে নিয়েছে প্রযত্নে। তৃষিত নয়নে,চেয়ে আছে ওর দিক। সে মানুষটার নজর সম্মুখে,একটু উঁচুতে,ঐ আকাশের রাস্তায়।
এমনিতে বিয়ে হলে, মেয়ে বাড়ি গুটিয়ে থাকে বিষন্নতায়। কন্যা বিদায়ের, আজীবনের জন্যে তাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর হাহাকারে বাবা মায়ের বক্ষ ছি*ড়েখুঁড়ে আসে। যেমনটা সেবার পুষ্পর বিয়েতে হয়েছিল।
তারা ব্যস্ত,ভীষণ ব্যস্ত বিয়ের তালিকা করতে।
কথা ছিল আজকেই শপিং করতে যাবেন। কিন্তু পরবর্তীতে পিছিয়ে আনলেন সিদ্ধান্ত। বাড়ির কর্তারা একটা দিন বিশ্রাম নিচ্ছেন,এই দিন ঘর খালি করে কীভাবে যাবেন তারা?
বুকের ভেতর উত্তেজনায় কেমন করছে ওর। ওষ্ঠপুটের চতুর্দিকে ঝলকে উঠছে প্রোজ্জ্বল হাসি। খবরটা শুনলে মারিয়া খুশি হবে! কিন্তু কতটা হবে সেটুকু জানেনা। হয়ত বসা থেকে লাফিয়ে উঠবে আনন্দে!
সাদিফ একা একা হাসল। ওই মুহুর্তে মারিয়ার উচ্ছ্বল, দীপ্ত মুখখানি ভেবে সেই হাসি দ্বিগুন হলো।
পিউ মাত্রাতিরিক্ত হো*চট খেয়েছে। যাকে বলে অদৃশ্য ভাবে মুখ থুবড়ে পরেছে ধা*ক্কায়। কাশি সামলে বাবার দিক প্রকট আঁখিতে চাইল সে।
রুদ্ধশ্বাসে বলল,
'' আব্বু, আব্বু আমি এখন বিয়ে করব না।''
আফতাব অস্থির,অধীর। গলবিলটা কেমন ফ্যাসফ্যাস করছে দুশ্চিন্তায়। মস্তকের সমগ্র কোষ যেন স্বীয় জায়গায় থমকেছে। ঘামছে বয়ষ্ক গতর।
বাড়ি ফেরা থেকে এক দন্ড শান্তিতে বসতে পারছেন না। ভেতরটায় কেমন করছে! ক্ষণ বাদে বাদে মুচ*ড়ে উঠছে বা-পাশ।
পিউ ছুটে এসে লুটিয়ে পরল বিছানায়৷ চিরাচরিত সেই সিনেমায় হিরোয়িনদের মত ঝাঁপ দিলো এক প্রকার। বালিশটা বুকে চেপে হাঁস-ফাঁস করে উঠল। ধূসর ভাই ওর ঠোঁটে চুমু খেয়েছেন? এখনও স্তম্ভিত ফিরছেনা ওর। একটু আগের সবকিছু সত্যিই ঘটেছে? উনি নিজে থেকে কাছে এসেছিলেন? পিউয়ের মাথা চক্কর কাটছে বিশ্বাস- অবিশ্বাসের মাঝখানে ঝুলে।
বাইক চলতে চলতে পিউ জিজ্ঞেস করল,
' বাড়ি থেকে আমার সাথে এলেই তো পারতেন ধূসর ভাই।'
' তখন এলে,তুই এত অবাক হতি?'
পিউয়ের কণ্ঠ ছল্কে উঠল,
'আপনি কি আমাকে সারপ্রাইজ দিলেন?'
ধূসর আর জবাব দিলো না। কিন্তু পিউ একা একা হাসল।
নিশির তৃতীয় প্রহর। সাদিফ চিৎ হয়ে শুয়ে আছে ছাদের খোলা মেঝেতে। চতুর্দিকে নির্মল প্রভঞ্জনের ছোঁয়ায়, চোখ মুঁদে আসতে চাইছে। মাথার নীচে আড়া-আড়ি বাম হাত রেখে, উন্মুক্ত আকাশের দিক চেয়ে ও। একটা তারা নেই,না আছে চাঁদ হতে ছুটে আসা জ্যোৎস্নার কোনও অংশ। বরং গভীর অমানিশার তোপে সব কিছু অন্ধকার
ধূসর ঝড়ের গতিতে বাইরে এলো। বিধ্বস্ত লাগছে ওকে। সারা শরীর ঘামে জবজবে। বুকের মধ্যে দা-মামা বাজছে আ*তঙ্কের। উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে গেটের কাছে এলো সে। মনে পড়ল বাইক ফেলে যাচ্ছে। আবার পার্কিং লটের দিক পিছু দৌড়াল । ওর এত তাড়াহুড়ো দেখে দারোয়ান তটস্থ ভাবে গেট সরিয়ে দিলেন দুদিক।