ভালোবাসি তোমায় | পর্ব – ৭

এক মাস পার হয়ে গিয়েছে। হুর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছে। আগে যেমন সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো, এখনো ঠিক সেই ভাবেই সবাইকে মাতিয়ে রাখে। হৃদ আর লিয়ার সাথে দু’ষ্টুমি, মায়ের ব’কা, বাবার আদর সব নিয়ে স্বাভাবিক আছে সে। তবুও একা যখন থাকে তখন মনে পড়ে প্রিয় মানুষটার কথা।
————————————————————————–
আজকে একটা এক্সট্রা ক্লাস থাকায় বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হলো হুর আর লিয়ার। লিয়া নিজের বাড়ি চলে গেলো। হুর নিজের বাড়িতে ঢুকামাত্র বাহারী খাবারের ঘ্রাণ তার নাকে এসে লাগলো। সারা বাড়ি খাবারের ঘ্রানে মো মো করছে। খাবারের ঘ্রাণ নাকে লাগা মাত্র পেট যেনো মো’চড় দিয়ে উঠলো ক্ষুধায়। আজকে সারাদিনে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি তার। সেই সকালে অল্প খেয়ে বেরিয়েছিল। আর দুপুরে একটা স্যান্ডউইচ খেয়েছে। আর এখন ফেভারিট খাবারের ঘ্রাণ নাকে লাগা মাত্র মনে হচ্ছে এক গামলা খাবার দিলেও খেতে পারবে।
হুর আর দেরি করলো না। এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো। উদ্দেশ্য একটাই দ্রুত ফ্রেস হয়ে খেতে বসবে।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখলো লিয়া আর হৃদ বসে বসে চকলেট খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। হুর সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো। হেনা আর লিয়ার আম্মু দুইজন মিলে বাহারী বাহারী খাবার রান্না করছে। হুর অবাক না হয়ে পারলো না।
-“আম্মু আজ কি কেউ আসবে নাকি!”
-“হুম তোর বাবাই এর একটা কলেজ ফ্রেন্ড আসবে। অনেকদিন বলে তোর বাবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ ছিলো না। কালকে একটা মিটিং করতে গিয়ে দেখলো তোর বাবাই এর নিউ বিসনেস পার্টনার তার সেই কলেজ ফ্রেন্ড টা। এতদিন পর বন্ধু কে পেয়ে তাকে আজকে বাসায় দাওয়াত করেছে। তারা চলেই আসবে কিছুক্ষনের মধ্যে। ”
-“আচ্ছা ঐসব বাদ দাও। আমাকে জলদি কিছু খাবার দাও। ক্ষুধায় পেট জ্ব’লে যাচ্ছে। জলদিইইই! ”
-“দিচ্ছি থাম! এমনিতে তো খা খা করেও খাওয়াতে পারিনা! হুঁহ! ”
হুর খাবার নিয়ে সোজা ড্রয়িং রুমে চলে আসলো। হৃদ আর লিয়া এখানেই বসে ছিলো। লিয়ার পাশে ধু’ম করে বসে পড়লো হুর।
-“কিরে তুই রোহিঙ্গা দের মতো সারাক্ষন আমাদের বাসায় থাকিস কেন! তোর কি বাড়ি ঘর নাই!”
-“হুরের বাচ্চা জানিস না কেনো আসছি! বাসায় কেউ নেই। আমি একা কি করবো!”
দাঁত কট’মট করে বললো লিয়া।
-“আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। তুই চক্কেত খা বাবু। আমিও খাবার খাই। অনেক ক্ষুধা লেগেছে। ”
হুর গোগ্রা’সে খাবার খাচ্ছে। তার আজকে আসলেই প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছিলো। হুট করে কেউ একজন বলে উঠলো,
-“এই যে মিস, এভাবে রা’ক্ষসীর মতো খাচ্ছেন কেনো! কয় বছর ধরে খান না কিছু!? ”
হুর চোঁখ বড়োবড়ো করে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। সামনে একটা সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। কথাগুলো যে সেই বলেছে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। হুরের তাকানো দেখে যুবক টা আবার বলে উঠলো,
-“এতক্ষন তো রাক্ষ’সীর মতো খাবার খাচ্ছিলেন। এখন দেখি আমাকে চোঁখ দিয়ে গি’লে খাচ্ছেন! আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে তাকাবেন! আমার নজর লেগে যাবে তো… ”
হুর হুট করে দাঁড়িয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো। হুরের চলে যাওয়া দেখে লিয়া আর হৃদ হেসে লু’টোপু’টি খেতে লাগলো। হৃদ বললো,
-“ভাইয়া আপনাকে তো চিনলাম না!”
পিছন থেকে হাসান সাহেব জবাব দিলেন,
-“ও হচ্ছে ফাইয়াজ। তোমার ভাইয়া হয় । তোমাদের কালকে আমার বন্ধুর কথা বলেছিলাম না? ও আমার বন্ধুর ছেলে। আর এই যে তোমাদের আঙ্কেল। ”
লিয়া আর হৃদ তাকিয়ে দেখলো পিছনে তাদের বাবার বয়সী একটা আঙ্কেল আছে। তারা দুইজনই সালাম দিলো আর টু’কটাক কথা বার্তা বললো।
হৃদ ফাইয়াজের সামনে গিয়ে বললো,
-“হ্যালো ভাইয়া… ”
-“হ্যালো চ্যাম্প। কেমন আছো তুমি?”
-“আমি তো বিন্দাস আছি। আর আপুকে যেই পঁ’চানি টা দিলে না! আঃ সেই বিনোদন পেলাম। ”
-“তোমার রা’ক্ষসী আপু টা তো পালিয়ে গেলো। এখন মনে হয় রুমে বসে রা’ক্ষসীর মতো খাচ্ছে। ”
হৃদ আর ফাইয়াজ দুইজনই উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।
—————————————————————————-
হুর খাবার রেখে নিজের রুমে পায়চারি করছে অস্থির ভাবে।
-“এটা কিভাবে সম্ভব! আমার চোঁখ ভুল হতে পারে না। নিশ্চই কোনো রহস্য আছে। আমাকে সেই রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে। সন্দেহ করে আমি কাউকে কিছু বলতে পারি না। আমাকে নিশ্চিত হতে হবে আমি যা সন্দেহ করছি তা সঠিক কিনা…. ”
এরমধ্যে হুর শুনতে পেলো তার বাবাই তাকে ডাকছে।
—————————————————————————
-“আম্মু এই যে এটা হচ্ছে তোমার ফরিদ আঙ্কেল। আর এইটা তোমার ফরিদ আঙ্কেল এর ছেলে ফাইয়াজ। আর ফরিদ এইটা আমার মেয়ে হুর। ”
হুর ফরিদ সাহেব কে সালাম দিলো।
-“হুর বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো। যেমন নাম টা সুন্দর তেমন আম্মু টাও সুন্দর। তো আম্মু কেমন আছো তুমি? পড়াশোনা কেমন চলছে? ”
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ”
মিসেস হেনা বললেন,
-“হুর, হৃদ যা তোরা ফাইয়াজ বাবা কে নিয়ে ছাদ থেকে ঘুরে আয়। ততক্ষনে আমরা খাবার রেডি করে টেবিলে সাজাচ্ছি। ”
হৃদ লাফ দিয়ে উঠে বললো,
-“চলো ভাইয়া ছাদে যাই। অনেক মজা হবে। রাতে ছাদে যাওয়ার মজাই আলাদা। ”
হৃদ ফাইয়াজ এর হাত ধরে লাফাতে লাফাতে ছাদে চলে গেলো। হুর লিয়ার সাথে আসতে ধীরে ছাদে উঠতে লাগলো।
-“দস্ত ফাইয়াজ ভাইয়া টা কিন্তু সেই রে। উফঃ ক্রাশ খাইসি। কি cute আহা!”
হুর মুখ বাঁকা করে বললো,
-“cute না ছাই। কেমন করলো আমার সাথে। একটু তাড়াহুড়ো করে নাহয় খাচ্ছিলাম তাই বলে আমাকে রা’ক্ষসী বললো!”
-“ঠিকই তো বললো। তুই তো একটা রা’ক্ষসী ই!”
কথাটা বলেই ছাদের দিকে দৌড় দিলো লিয়া। কারণ সে জানে হুর এখন তার পিঠে ধু’ম’ধা’ম চার পাঁচটা কি’ল না দেয়া পর্যন্ত শান্ত হবে না।
হুর লিয়ার পিছন পিছন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ছাদে এসে হুট করে কিছু একটার সাথে বেঁ’ধে পড়তে নিলো। হুর নিজের চোঁখ মুখ খি’চে বন্ধ করে নিলো। আজকে আর তার কোমরের হা’ড়গো’ড় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কিন্তু দুই মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন কোনো ব্যাথা লাগলো না তখন সে ধীরে ধীরে চোঁখ খুলে দেখলো ফাইয়াজ তার হাত ধরে আছে এক হাত দিয়ে। আর সে এখনো পিছন দিকে হে’লে আছে। ছেড়ে দিলেই নিচে পড়ে যাবে।
ফাইয়াজ হুর কে আরেকটু নিচের দিকে ঝুকিয়ে বললো,
-“মিস হুর না কি জানো! যাই হোক আগে তো আপনাকে শুধু রা’ক্ষসী ভেবেছিলাম এখন দেখি আপনি একটা বাঁদর ও। এভাবে রাতে ছাদে দৌড়া দৌড়ি করছিলেন! এখন ফেলে দেই নিচে? ”
হুর কে আরেকটু নিচু করতেই হুর চি’ৎকার করে উঠলো,
-“নাহহহ! ফেলবেন না প্লিজজ। ”
-“কেনো ফেলবো না? আপনি তো এমনিতেও পড়তেন!”
হুর মুখ টাকে কাঁদো কাঁদো করে বললো,
-“প্লিজজ ফেলিয়েন না। আমি অনেক ব্যাথা পাবো তো।”
-“আচ্ছা ফেলবো না। কিন্ত আমার একটা শর্ত আছে!”
-“কি শর্ত!”
-“সেটা এখন বলবো না। সময় আসলে তখন বলবো। কিন্ত তখন আপনি না করতে পারবেন না প্রমিস করুন!”
-“আ… আচ্ছা শর্ত মানবো প্রমিস তাও ফেলিয়েন না। ”
ফাইয়াজ হুর কে এক টা’ন দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। হুর ফাইয়াজ এর বুঁকের উপর হুম’ড়ি খেয়ে পড়লো। কিন্ত সেদিকে হুরের খেয়াল নেই। সে তো বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে ব্যস্ত। হঠাৎ নিজের অবস্থানের কথা খেয়াল হতেই হুর মাথা উপরে তুললো। ফাইয়াজ তার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হুরের বুক কেঁ’পে উঠলো। সে এক লাফে ফাইয়াজ এর কাছ থেকে দূরে সরে এক পলক ফাইয়াজ এর দিকে তাকিয়ে ছাদের অন্য দিকে দৌড় দিলো।
ফাইয়াজ হেসে জোরে বলে উঠলো,
-“মিস রা’ক্ষসী আপনি আবার দৌড়াচ্ছেন! পড়ে যাবেন তো!”
কিন্তু হুর থামলে তো!

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।