হঠাৎ করে টান দেয়ায় ছি’টকে এসে কারোর বুঁকের সাথে বাড়ি খেলো হুর। চোঁখ বন্ধ করে তার বুঁকেই মাথা রাখলো সে। জোরে জোরে শ্বাস টানতে লাগলো।হুশ আসতেই বুঝতে পারলো সে কারো বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ। মানুষ টা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। যেনো বুঁকের মধ্যে পুরে নিতে চায়। হুর শুনতে পেলো লোকটার বুঁকের ধুকপুকানি। এতো জোরে বিট করছে যে মনে হচ্ছে মারা’ত্মক ভ’য় পেয়েছিলো সে।হুর আলতো করে মাথা তুলতেই তার চোঁখের সম্মুখে ভেসে উঠলো পরিচিত একটা মুখ। হুর আস্তে করে ঠোঁট নাড়ালো ;
-“ফাইয়াজ ভাইয়া!”
হুর আস্তে বললেও ফাইয়াজ এর কানে ঠিকই গেলো। ফাইয়াজ হুরের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো হুর। ফাইয়াজ এর চোঁখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে। ফাইয়াজ হুর কে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। ফাইয়াজ এর দিকে অবাক চোঁখে তাকিয়ে রইলো হুর। এরমাঝে লিয়া দৌড়ে এসে হুর কে জড়িয়ে ধরে কা’ন্না করতে লাগলো।
-“দোস্ত ঠিক আছিস তুই! তোকে আমি কতবার বললাম সরে যেতে কিন্তু তুই সরলি না কেনো! এখন ফাইয়াজ ভাইয়া না আসলে কি হতো বল! আসলে সব দোষ আমার। আমার কারণেই তুই রাস্তা পার হতে যাচ্ছিলি। আমার কারণেই হয়েছে সব। ”
লিয়ার কা’ন্না দেখে হুর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“দেখ আমি তো ঠিক আছি। কিছু হয় নি তো আমার। আর এতে তোর কোনো দোষ নেই রে। আমিই কেয়ারলেস হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলাম আর তুই আমাকে সতর্ক করার পরও আমি সরতে পারি নি। ভয়ে আমার ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। নড়ার শক্তি টাও ছিলো না। তুই প্লিজজ কা’ন্না বন্ধ কর। এতে তোর কোনো দোষ নেই। ”
দুই বান্ধুবীর কথোপকথন এর মাঝে ফাইয়াজ শক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“লিয়া তোমার বান্ধুবী কে নিয়ে গাড়িতে ওঠো। ”
লিয়া ফাইয়াজ এর কথা মতো হুর কে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। সারা রাস্তা ফাইয়াজ হুরের সাথে একটা কথাও বলে নি। যা দুই একটা কথা বলেছে তাও লিয়ার সাথে। হুর খুব ক’ষ্ট পেলো ফাইয়াজ এর এমন ব্যবহারে। গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর পর লিয়া নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো। যাওয়ার আগে হুর তার কাছ থেকে কথা নিয়েছে যেনো সে কাউকে ভার্সিটির বিষয় টা না জানায়।
নিজের বাড়িতে ঢোকার পূর্বে হুর ফাইয়াজ কে ডেকে উঠলো। ফাইয়াজ হুরের ডাক শুনে দাঁড়ালেও ঘুরে তাকালো না। হুর নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“প্লিজজ বাসার কাউকে ভার্সিটির বিষয় টা জানাবেন না। অনুরোধ রইলো। এসব জানতে পারলে আম্মু বাবাই অনেক ক’ষ্ট পাবে। আমি চাচ্ছি না তারা এসব জানুক। ”
ফাইয়াজ হুরের দিকে ফিরে তাচ্ছিল্য করে বললো,
-“তুমি তোমার বাবা মা কে কতো টা ভালোবাসো তা নিজের চোখেই দেখলাম হুর। তুমি যদি তাদের ভালোবাসতে, তাদের ক’ষ্ট পাওয়ার কথা চিন্তা করতে তাহলে এত টা অসাবধান হতে পারতে না। লিয়া তোমাকে কতবার বলেছিলো সরে যেতে কিন্তু তুমি হাহ! তুমি তো ভ’য় পাও। ভ’য়ে নিজের জীবন টাই হারাতে চলেছিলে। একবার ভেবে দেখো তো আমি যদি আর একটু লেট করে ফেলতাম বা কোনোভাবে তুমি পর্যন্ত সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারতাম তাহলে কি হতো! তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার বাবা মার কি হতো বলো! জীবন টা এতো সহজ নয় হুর। নিজেকে পরিবর্তন করো। নিজের মাঝে ম্যাচুরিটি আনো। নিজেকে সামলাতে শেখো। তোমাকে বিপ’দ থেকে রক্ষা করার জন্য সবসময় কেউ থাকবে না কিন্তু। নিজেকে নিজেই সেফ করতে হবে। ”
নিজের কথা শেষ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললো ফাইয়াজ। এক পলক হুরের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। হুর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোঁখ তার জলে টইটুম্বুর হয়ে আছে। ফাইয়াজ এর ব্যবহারে ক’ষ্ট লাগলেও তার একটা কথাও ভুল ছিলো না এটা মানে হুর । আজ নিজের ভ’য়ের কারণে প্রাণ হারাতে চলেছিল সে। হুর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো এখন থেকে সাবধানে চলাফেরা করবে। এমন কঠিন কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে নিজেকে শান্ত রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর বাকি টা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তিনি যদি ভাগ্যে মৃ’ত্যু লিখে থাকেন তাহলে সে টা লঙ্ঘন করা সম্ভব নয়। হুর নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। এখন ফ্রেস হয়ে পড়তে বসবে সে।
——————————————————————
একটা অন্ধকার রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে একটা লোক কে। লোকটার মুখ বাধা থাকায় কিছুক্ষন পর পর গুঙিয়ে উঠছে লোকটা। হঠাৎ করে দরজা খুলে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো। দরজা দিয়ে আলো প্রবেশ করায় বেঁধে রাখা লোকটি চোঁখ খিচে বন্ধ করে নিলো। দীর্ঘক্ষন অন্ধকারে থাকায় হঠাৎ আলো চোঁখে পড়াতে চোঁখ মেলতে ক’ষ্ট হচ্ছে তার। মাথার উপর আলো জ্ব’লে ওঠায় ধীরে ধীরে চোঁখ খুললো লোকটা। প্রথমে স্পষ্ট না দেখলেও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগলো তার দৃষ্টি। সামনে তাকাতেই আঁ’তকে উঠলো লোকটা। সামনে একজন অচেনা লোক বসে আছে যার দেহ সম্পূর্ণ কালো পোশাকে আবৃত হয়ে আছে। চেহারা দেখার কোনো উপায় নেই। মুখটাও কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। শুধু দেখা যাচ্ছে তার জ্ব’লন্ত চোঁখ। সেই চোঁখে যেনো আগু’ন জ্বল’ছে। চোঁখ তার জ্ব’লন্ত হলেও আচার আচরণ তার একেবারেই শান্ত। এ যেনো ঝড় আসার আগের পূর্বাভাস। লোকটা শান্ত ভঙ্গিতে বেঁধে রাখা লোকটার দিকে তাকালো। এতেই যেনো আত্মা কেঁ’পে উঠলো লোকটার। বুঝতে পারলো হয়তো খারাপ কিছু হতে চলেছে তার সাথে। মুখ দিয়ে হালকা উম উম শব্দ করলো। অচেনা লোকটা হাত বাড়িয়ে লোকটার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো। শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“তোর নাম হাবিব তাই তো! আচ্ছা এসব বাদ। এটা বল কে পাঠিয়েছিল তোকে আমার হুরপরীকে মা’রার জন্য!”
হাবিব নামক লোকটা ঘামতে লাগলো। কিন্তু কোনো জবাব দিলো না। অচেনা লোক টা আবার শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“কে পাঠিয়েছিল তোকে আমার হুরপরীকে মা’রার জন্য! ভালোয় ভালোয় বলে দে। ”
হাবিব নামক লোক টা এবারও কোনো জবাব দিলো না। অচেনা লোক টা নিজের পকেট থেকে একটা ধারা’লো ছু’রি বের করে হাতে নিয়ে ঘোরাতে লাগলো। লোকটা ছু’রি দেখে শুকনো ঢোক গিললো। এই মুহূর্তে তার খুব করে পানির প্রয়োজন।
-“কি বলবি না কে পাঠিয়েছে তোকে হুম!”
হাবিব তারপরও কোনো কথা না বলায় হুট করে তার হাতের কব্জিতে ছু’রি বসিয়ে দিলো অচেনা লোকটা। ছু’রির ধারে কব্জি কে’টে ঝুলতে লাগলো হাবিবের। অসহনীয় ব্য’থায় চি’ৎকার করে উঠলো সে।
-“স… স্যা স্যার আমারে মাফ কইরা দেন স্যার। টাকার লো’ভে পইড়া গেসিলাম আমি। তাই এমন কাজ করতে গেসিলাম। আমারে আপনে মাফ কইরা দেন। ”
-“কে পাঠিয়েছে তোকে নাম বল। ”
-“নাম বলার অনুমতি নাই আমার স্যার। ডিল করার সময় সে আমারে বলে নিসিলো আমি যদি কারোর কাছে তার নাম কই তাইলে সে আমার ফামিলির সবাইরে মাই’রা ফালাবো। আমি তার নাম কইতে পারুম না স্যার। ”
অচেনা লোকটা গ’র্জে উঠে বললো,
-“নাম বল তার নাহলে এতো য’ন্ত্রণাদায়ক মৃ’ত্যু দিবো যে কল্পনাও করতে পারবি না। ”
লোকটা ভ’য়ে আঁ’তকে উঠে বললো,
-“ক… কইতাসি স্যার। আমারে আমারে…. মো.. মোস্তফা চৌধুরী পাঠাইসে ওই মাইয়াটারে মা’রার জন্য।”
হাবিব কথা শেষ করার সাথে সাথে পরপর কয়েকবার তার মাথায় শু’ট করলো অচেনা লোকটা। হাবিবের নিথর দেহের সামনে বসে আফসোস করে বললো,
-“সো সরি তোকে মাফ করতে পারলাম না। কি করবো বল আমার হুরপরির ক্ষ’তি যেই করতে চাবে তাকেই মর’তে হবে। তবে তোর ফ্যামিলির সেফটির দায়িত্ব আমার। ”
অচেনা লোকটা নিজের পার্সোনাল ইনফরমার কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
-“কিছু জানতে পারলে ওই মোস্তফার উদ্দেশ্য সম্পর্কে! আমি তো আগেই ধারণা করেছিলাম সেই এসব করছে।”
-“স্যার কিছুটা জানতে পেরেছি। ওই মোস্তফা চৌধুরীর ধারণা তার ছেলের মৃ’ত্যুর পিছনে হুর ম্যাম এর হাত আছে। কারণ লাস্ট বার হুর ম্যাম তার ছেলের সাথে খারাপ আচরণ করেছিল। তাই সে হুর ম্যাম কে মা’রতে চাচ্ছে। ”
-“ঠিক আছে তুমি এবার যেতে পারো। আর অবশ্যই সব খোঁজখবর রাখতে থাকবে আর আমাকে জানাবে। ”
-“ওকে স্যার। ”
অচেনা লোকটা নিজের গার্ড দের ডেকে তাদের বললো,
-“লা’শটা মোস্তফার বাড়ির সামনে ফেলবে। তারও জানা উচিত কার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছে আর এর পরিণতি কতটা ভ’য়ানক হবে।”
অচেনা লোকটা সিটি দিতে দিতে বেরিয়ে গেলো।