ভালোবাসি তোমায় | পর্ব – ১

-“আমি আপনাকে ভালোবাসি ফারান। বিশ্বাস করুন আপনার গায়ের রং নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আপনাকে এই রূপেই ভালোবাসি।”
আ’কু’ল কণ্ঠে বলে উঠলো হুর।
-“পাগ’লামি বন্ধ করো হুর। আমি তোমাকে ভালোবাসি না। কেনো আমার পিছনে পড়ে থেকে সময় ন’ষ্ট করছো।”
গ’ম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো ফারান।
-“কেনো ভালোবাসেন না আমায়? আমার মাঝে কি কমতি আছে বলুন?”
চোঁখ জলে টইটুম্বুর হয়ে যাচ্ছে হুরের। তাও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। তার যে উত্তর চাই।
-“তোমার মাঝে কোনো কমতি নেই কিন্তু আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসতে পারবো না।”
ফারান ক’ঠি’ন স্বরে বলে উঠলো।
-“আ…আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা যে।”
ভা’ঙা গলায় বলে উঠে হুর।
এবার চি’ৎ’কা’র করে উঠে ফারান। টেবিলে থা’বা দিয়ে বলে উঠে,
-“Stop it Hur, তোমাকে আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর না কখনো বাসবো। এবার তুমি যা খুশি তাই করো। I don’t care…”
ফারানের চিৎ’কারে অনেকেই এখন তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ফারান যে হুর কে এভাবে অপ’মান করবে তা হুরের কল্পনার বাহিরে ছিলো। এতক্ষন ধরে সামলে রাখা জল এখন আর সামলাতে পারলো না। তারা আপন মনে গড়িয়ে পড়ছে। চোঁখের পানি মুছে হুর ফারান কে বলে উঠলো,
-“শেষ বারের মতো কিছু জানতে চাই শুধু এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিন। আর কখনো আপনার সামনে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসবো না। আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন? ”
ফারান শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষন হুরের পানে তাকিয়ে রইলো তারপর জবাব দিলো,
-“হ্যা ভালোবাসি, প্রা’ণে’র চেয়েও বেশি ভালোবাসি তাকে। তাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা। সে… ”
ফারান আর কিছু বলার পূর্বেই হুর দৌড়িয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেলো। হুর যে আর সহ্য করতে পারবেনা। ফারান অপলক দৃষ্টিতে হুরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ দেখা যায়।
ভার্সিটির মেইন গেট এর সামনে আসতেই হুর মুহিবের সামনে পড়লো। মুহিব তার সা’ঙ্গো’পা’ঙ্গ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। মুহিব হলো এই ভার্সিটির ছাত্রদলের নেতা। অবশ্য এই পদ সে বাপ আর টাকার জোরে পেয়েছে। তার বাবা ক্ষমতাবান একজন রাজ’নীতি’বিদ। মেয়েদের বি’র’ক্ত করা মুহিবের প্রতিদিনের কাজ। কতো মেয়ের যে জীবন ন’ষ্ট করেছে। কিন্তু ক্ষমতার কারণে কেউ মুখ খুলতে সা’হ’স পায় না।হুর এই ভার্সিটি তে এডমিশন নেয়ার পর থেকে সে হুরের পিছনে পড়ে আছে।হুর কে আসতে দেখে মুহিব তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হুরের এমনিতেই মে’জা’জ ভালো না তারপর আবার মুহিব সামনে আসাতে মে’জা’জ আরও বি’গ’ড়ে গেলো।হুর চুপচাপ পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই মুহিব আবার পথ আগলে দাঁড়ালো।
হুর রে’গে বলে উঠলো,
-“সমস্যা কি আপনার? বারবার পথ আট’কাচ্ছে’ন কেনো?”
মুহিব বি’শ্রী একটা হাসি দিয়ে বললো,
-“হুর রাণী আর কতকাল অপেক্ষা করাবে বলো তো!কি আছে ঐ কালো ছেলের মাঝে যা আমার মধ্যে নেই। আমি ওর তুলনায় কতো গুণ সুদর্শন। এবার আমাকে মেনে নাও। আমার হয়ে যাও সোনা।”
আজ আর হুর সহ্য করতে পারলো না। রে’গে বলে উঠলো,
-“তার গায়ের রং কালো কিন্তু মন কাঁচের ন্যায় স্বচ্ছ, পবিত্র। আর তুই তার চেয়ে লক্ষ গুণ সুদর্শন হলেও তুই আমার কাছে কালোই থাকবি। কারণ তুই একটা জ’ঘ’ন্য লোক। তোর মন কুচ’কুচে কালো।”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হুর আবার পাশ কাটিয়ে যেতে ধরলো কিন্তু এবার মুহিব হুরের হাত ধরে বসলো আর দাঁত কি’ড়’মি’ড় করে বললো,
-“আমাকে দে’মা’গ দেখাস, এই মুহিবকে। তোর মতো হাজারটা মেয়ে আমার আগে-পিছে সারাক্ষন ঘুরে।তোকে আমার চাই মানে চাই।”
হুর হাত মু’চড়াতে লাগলো ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু মুহিবের শক্তির সাথে পেরে উঠছিলো না। তাই সে বুদ্ধি খাটিয়ে মুহিবের পায়ে সর্বশক্তি দিয়ে পা’ড়া দিলো। এর ফলে মুহিবের হাত আলগা হয়ে গেলো। সে ব্যা’থা’য় গু’ঙি’য়ে উঠলো। আর এই সুযোগে হুর নিজের হাত ছাড়িয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
মুহিব চিৎ’কার করে বলে উঠলো,
-“পালিয়ে যাবি কই। আবার তো এখানেই আসতে হবে। তখন দেখবো তোকে কে বাঁ’চা’য়।”
এতক্ষন ধরে এই সমস্ত ঘটনা একজন পর্যবেক্ষণ করছিলো। রা’গে তার চোঁখ লাল হয়ে রয়েছে। যেনো এই চোঁখ দিয়ে এখনই সবকিছু জ্বা’লি’য়ে দেবে। সে হাত মুষ্ঠী’বদ্ধ করে নিজের রা’গ নি’য়ন্ত্রণ এ আনার চেষ্টা করতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
-“আমার হুরপরীকে যেই হাত দিয়ে স্পর্শ করেছিস সেই হাত আমি ভে’ঙে গু’ড়ি’য়ে দেবো। যেই চোঁখ দিয়ে তার উপর কু’নজর দিয়েছিস সেই চোঁখ আমি গে’লে দিবো।যে যে আমার হুরপরীর ক্ষ’তি করার চেষ্টা করবে তাকেই ম’র’তে হবে।”
বলেই বাঁকা হাসি দিয়ে কাউকে কল দিয়ে কথা বলতে বলতে প্রস্থান করলো।
——————————————————————–
বাড়ি ফিরে কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো হুর। ওড়না আর কাঁধের ব্যাগ বিছানায় ছু’ড়ে ফুঁপিয়ে কেঁ’দে উঠলো হুর। কাঁ’দতে কাঁ’দতে ফ্লোরে বসে পড়লো।
হুরের পুরো নাম ‘হুমাইরা জান্নাত হুর’। বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের রাজকন্যা হুর। হুরকে তার বাবা-মা মা’রা’ত্ম’ক ভালোবাসেন কারণ অনেক অপেক্ষার পর তারা হুরকে পেয়েছেন। হুরের বাবা হাসান সাহেব হুরের মা হেনা কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। হুরের বাবার অবস্থা ভালো হওয়ায় আর ভালো পরিবারের ছেলে হওয়াতে কেউ আপত্তি করেনি। কিন্তু বিয়ের আট বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও যখন তাদের কোনো সন্তান হয় না তখন তারা হাল ছেড়ে দেন। তার ছয় মাস পরই হুরের মা জানতে পারেন তিনি মা হতে চলেছেন। এই খবর পাওয়ার পর তাদের দুইজনের খুশির সীমা ছিলো না। অতঃপর হুরের জন্ম হয়। হুর প্র’চ’ন্ড সুন্দরী হওয়ায় হুরের বাবা হাসান মেয়ের নাম হুর রাখেন।
হুরের অবশ্য একটা ভাই আছে। বয়স ১২ বছর। ক্লাস সেভেন এ পড়ে। যদিও সেটা হুরের আপন ভাই না। তবে এই কথা হৃদ কে কেউ কখনো জানতে দেয়নি। এর পিছনেও একটা ঘটনা আছে। হুরের তখন ১০ বছর বয়স। সেইবার তার দাদির মৃ’ত্যুবার্ষিকী তে একটা অনাথ আশ্রমে যায় তারা।সেখানেই তারা হৃদ কে পায়। হুর তো কিছুতেই হৃদ কে ছেড়ে আসতে চাচ্ছিলো না। হৃদ তখন ৬ মাসের বাচ্চা।মিষ্টি একটা বাচ্চা যে দেখবে তারই আদর করতে ইচ্ছা করবে। হুরের পা’গ’লা’মি দেখে হুরের বাবা হাসান আর মা হেনা সিদ্ধান্ত নেন তারা হৃদ কে এডপ্ট করবেন। তারা জানতে পারেন ৬ মাস আগে হৃদ কে আশ্রমের গেটে ফালানো পায় আশ্রমের লোকেরা । তারপর থেকে সে এখানে।
———————————————————————-
কাঁ’দ’তে কাঁ’দ’তে হুরের চোঁখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। এমন সময় হুরের মা মিসেস হেনা দরজা নক করে বলে উঠলেন,
-“হুর মা কি হয়েছে তোর? ভার্সিটি থেকে এসে সেই যে রুমে ঢুকলি আর বের হলি না। দরজা খোল।”
হুর মায়ের কথা শুনে তড়ি’ঘড়ি করে চোঁখ মুছে বলে উঠলো,
-“আসলে মাথা ব্য’থা করছিলো তো, তাই শুয়ে ছিলাম। তুমি যাও আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।”
হুরের মা মেয়ের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে গেলেন তবে কিছু বললেন না। মেয়ে বের হলে তখন দেখবেন কি সমস্যা। হুর নিজেকে স্থির করলো সে আর ফারানের জন্য কাঁ’দ’বে না। কিন্তু মন যে মানতে চায় না। এইসব চিন্তা করতে করতে সে ফ্রেস হতে চলে গেলো।
———————————————————————
একটা অ’ন্ধকার ব’দ্ধ রুমে বেঁ’ধে রাখা হয়েছে একদল ছেলেকে। তার মধ্যে মুহিব ও বিদ্যমান। সে বি’শ্রী বি’শ্রী গা’লি দিয়ে কিছুক্ষন পর পর চি’ল্লি’য়ে উঠছে,
-“কোন শা’লা’রে, আমাকে এই মুহিবকে তু’লে এনেছে। সামনে পাই একদম জা’নে মে’রে দেবো।”
এমন সময় রুমের দরজা খুলে কেউ একজন ভিতরে প্রবেশ করলো।
———————————————————————–
শাওয়ার নিয়ে এখন কিছুটা শান্তি লাগছে ফারানের।কিছুক্ষন পূর্বে বাসায় ফিরেছে সে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সকালের ঘটনা মনে পড়ে গেলো তার। সে চিন্তা করতে লাগলো,
-“কি এমন দেখেছে মেয়েটা আমার মাঝে!সে তো আমার মুখ টাও দেখে নি। আমার দেহের কালো রং, গ’ম্ভীরতার জন্য যেখানে সবাই আমাকে এড়িয়ে চলে সেখানে সে কিনা আমাকে পা’গ’লে’র মতো ভালোবাসে।”
সবাই যে রূপ খোঁজে না হুর তার প্রমান কথাটা চিন্তা করে আলতো হাসলো ফারান।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।