রাত্রির শেষ প্রহর। শহর থেকে কিছুদূরের একটি
নির্জন রাস্তায় আকস্মাৎ আগন্তুক’দের গাড়ি থেমে গেল। প্রণয়ের সকল ইন্দ্রিয় চঞ্চল হয়ে ওঠল। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ করার পাশাপাশি হাত, পা’য়ের বাঁধন ছোটানোর চেষ্টা করল। আগন্তুক’দের মধ্যে কেউ টু শব্দটিও করল না। প্রণয়ের বুকের ভিতরটা কাঁপছে। মনে পড়ছে শাহিনুরের বলা শেষ কথা,
-‘ আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমাকে রেখে যাবেন না। আমার খুব ভয় হচ্ছে।’
বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল,
-‘তোমরা কারা? আমাকে ছেড়ে দাও। আমার নুর অপেক্ষা করছে, আমাকে ফিরতে দাও। আমার সন্তান আমার কাছে আসার জন্য ছটফট করছে। আমাকে যেতে দাও।’
কিন্তু বলতে পারলো না। তার শারীরিক সকল ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই নিষ্ঠুর মানুষ গুলো কারা? কী চায় এরা? মনে প্রশ্ন জাগার সঙ্গে সঙ্গে সহসা চার-পাঁচ’টা হাত তার বিশাল দেহ উঁচু করে ক্রিকেট বলের মতো ছুঁড়ে ফেলল পাকা রাস্তার মাঝখানে। চোখমুখ খিঁচে শরীর শক্ত করে কিছুক্ষণ পরে রইল প্রণয়। মাথায় শক্তপোক্ত আঘাত খাওয়ার ফলে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ল। মুহূর্তেই আবার কর্ণে প্রবেশ করল, গাড়ির হর্ণ। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠল। কী ঘটতে চলেছে তার সঙ্গে! এটুকু ভাবার সময়টুকুও দিলো না পাপাত্মারা। আজরাইল বুঝি তার জান কবজ করে দিলো গো। দু’টো মাইক্রোবাস তার দু’টো পা’কে পিষে দিয়ে চলে গেল নিমিষেই! বিকট এক গোঙানি দিয়ে ওঠল সে। মুহূর্তেই গলা কাটা গরুর মতো, তড়পাতে শুরু করল। সর্বাঙ্গ রক্তিম তরলে ডুবে পুরো রাস্তায় রক্তের বন্যা বয়ে গেল। দূর থেকে কুকুর, শেয়াল’রা এ দৃশ্য দেখে হাঁকডাক শুরু করে দিলো। রাতজাগা কিছু পাখির ডানা ঝাপটে উড়ে যাওয়ার শব্দ হলো। পুরুষালী অদ্ভুত গোঙানির শব্দে প্রকৃতিও যেন হুহু করে কেঁদে ওঠল। থরথর করে কেঁপে ওঠল মৃত্তিকা, আকাশের বুক ফেটে আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। অভিমানে লুকিয়ে গেল চাঁদ, মিলিয়ে গেল জ্বল জ্বল করে ওঠা অগণিত নক্ষত্ররা। কাঁদল আকাশ, ভাসলো মাটি। শেয়াল, কুকুর চিৎকার করে বুঝি সৃষ্টিকর্তার নিকট নালিশ জানাতে শুরু করল। আহ কী নিদারুণ যন্ত্রণা, কী বীভৎস দৃশ্যের সাক্ষী হলো প্রকৃতি!!!
দু’মিনিট অতিবাহিত হতেই পুলিশের গাড়ির শব্দ শোনা গেল। গাড়িটা এসে থামল, রক্তাক্ত দু’পা খণ্ডিত প্রণয়ের দেহের সম্মুখে। গাড়ির ভেতর থেকে তিনজন পুলিশ ছুটে বের হলো। দু’হাত, মুখ বাঁধা রক্তে নিমজ্জিত পুরুষালি দেহটির দিকে এগিয়ে গেল। মুখের বাঁধন খুলে দিতেই রমেশ চিৎকার করে ওঠল,
-‘প্রণয়!’
জ্ঞান হারানোর পূর্বে আবছা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুমূর্ষু কণ্ঠে প্রণয় বলল,
-‘ আমি মরিনি, বেঁচে আছি। আমি বাঁচবো, বিশ্বাস কর আমি বাঁচবো। শাহিনুর অপেক্ষা করছে, কথা দিয়েছি, ফিরতে হবে।’
এটুকু বলে শাহিনুর কোথায় আছে সেটুকুও বলে শেষ করল এবং পুরোপুরি জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। ভয়ে শিউরে ওঠে রমেশ সহ বাকি দু’জন পুলিশ মিলে প্রণয়কে গাড়িতে ওঠিয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পথে রওনা দিলো।
[১০৮]
কেটে গেছে পনেরো দিন। এই পনেরো দিন শাহিনুর বাদে সবার কাছে শুধুই পনেরো দিন। অথচ শাহিনুরের কাছে পনেরো হাজার বছরেরও ঊর্ধ্বের সময়। ক্ষুধার্ত পেট, নিদ্রাহীন রাতগুলো কী বিষাক্ত!এই বিষক্রিয়া শাহিনুর ছাড়া অন্য কোন নারী সহ্য করতে পারতো কিনা সন্দেহ রয়েছে। তীব্র উত্তেজনায় প্রতিটা সেকেণ্ড অতিবাহিত করছে সে। এই বুঝি মানুষটা আসবে। প্রশস্ত হাসি ঠোঁটে লেপ্টে কোলে তুলে নেবে মেয়েটাকে। শাহিনুর ঝরঝর করে কেঁদে দিয়ে অভিযোগ করবে, অভিমানে গাল ভারী করে দূরে সরে থাকবে। মানুষটা আঁতকে ওঠে মেয়েকে বিছানায় শুইয়িয়ে দেবে। তাকে কাছে টেনে সন্তর্পণে বুকে জড়িয়ে নেবে। প্রশান্তি ভরে দীর্ঘক্ষণ শ্বাস নিয়ে আদুরে স্পর্শ দিতে দিতে জানাবে, ঠিক কি কি সমস্যা হয়েছিল। সবশুনে তার সমস্ত অভিমান পশ্চিমাকাশে মিলিয়ে যাবে। তারপর দু’হাতে জড়িয়ে ধরবে প্রিয়তম অর্ধাঙ্গ’কে, মেয়ের বাবা’কে। জমিয়ে রাখা কষ্টের কান্নাগুলোর সঙ্গে সুখ মিশিয়ে খুব খুব কাঁদবে। দুঃখ, সুখের কান্নায় গলা আঁটকে যাবে। তবুও ধরা গলায় বলবে,
-‘ডাক্তারসাহেব, নামহীন মেয়ের বাবা হয়েই থাকবেন, নাকি নাম রাখবেন?’
___
নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, ঘুম নেই আছে শুধু অপেক্ষা। স্বামীর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস। সন্তানের বাবার প্রতি আফসোস! যতবার মেয়ের মুখের দিকে তাকায় ততবার বুকের ভিতরটা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আর কত দিন? আর কত দিন এই দহনীয় জ্বালা সহ্য করবে?
টুনটুনি দাদির বাড়ির শেষ মাথায় সন্তান’কে বুকে চেপে দিনের পর দিন রাতের পর রাত কাটাচ্ছে। একটা মুহূর্তও ঘরে টিকতে পারছে না৷ মেয়েটার প্রতি মন ওঠে যাচ্ছে, নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। খুব বেশি দেরি নেই কবে জানি মেয়েটা পাগল হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। পথেঘাটে বহু পাগল দেখতে পাওয়া যায়। মাথা চুলকাতে চুলকাতে কি যেন খুঁজে বেড়ায়। আচ্ছা তাদের কেউ কি তার মতো করে হারিয়েছে? কোথায় তার স্বামী? কোথায় তার সন্তানের পিতা? এই সন্তান যে তার বহু ত্যাগ, সীমাহীন যত্নের ফল। তাদের আদরিনী, তাদের আহ্লাদীর কি শেষ পর্যন্ত হতভাগিনী হয়ে জন্ম হলো! সেদিন দাদা জমিলদের বাড়ি থেকে ফিরে বলল, প্রণয় সে রাতে জমিলের কাছে যায়নি। পরেরদিন বিকেলবেলা প্রণয়ের নিয়ে যাওয়া ছাতাটিকে ফেরত আনলো। অথচ মানুষ’টাকে এনে দিলো না। কষ্ট হলো, অভিমান হলো, যন্ত্রণা হলো, বলল,
-‘ দাদা আমার মেয়ের বাবাকে এনে দিলেন না?’
চোখের পানি মুছে নিঃশব্দে চলে গেলেন দাদা। টুনটুনি দাদির চোখ বেয়েও অশ্রু ঝড়ল। খুব কাঁদলো বৃদ্ধাটি অথচ সে কাঁদল না। কারণ সে জানে মানুষ’টা ফিরবে, ফিরবেই। তার এই জানা বিশ্বাসটুকুর মান মানুষটা রাখবে তো? এই সংশয় তৈরি হলো পনেরো দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর! মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করল। ভয়ে বুকের ভিতর চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত মা’য়ের মতো হতভাগিনী হয়ে জন্ম হলো মেয়েটার! কিন্তু কাঁদতে পারলো না। তার যে কান্না আসবে না। মানুষ’টা তাকে কাঁদতে নিষেধ করেছে। মানুষ’টার নিষেধ অবজ্ঞা করার ক্ষমতা তার যে আর নেই। সে ক্ষমতা সেদিনই হারিয়েছে, যেদিন তার করা দু’টো খু’নের দায় মানুষটা নিজ কাঁধে নিয়ে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছে।
আরো দু’দিন পর – সারারাত ঘরের বাইরে প্রণয়ের অপেক্ষায় বসে ছিল শাহিনুর। সকাল হতেই মেয়েকে খাওয়িয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো৷ শরীর’টা ভালো লাগছে না। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে, কলপাড়ে গিয়ে পানি ঢালবে মাথায়। তাই দুর্বল শরীরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে উঠান পর্যন্ত যেতেই সহসা খুব পরিচিত একজন পুরুষ’কে সশরীরে সামনে দেখে কেঁপে ওঠল। ত্বরান্বিত হয়ে আঁচল টেনে মাথায় ঘোমটাও দিলো। বিস্ময় কাটিয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলল,
-‘ অঙ্গন ভাই! ‘
থমথমে মুখে অঙ্গন বলল,
-‘ কেমন আছেন ভাবি? আমি আপনাকে নিতে এসেছি।’
অঙ্গনের এমন কথায় শিউরে ওঠল শাহিনুর। থরথর করে কাঁপতে শুরু করল সে। বলল,
-‘ তুমি নিতে এসেছো? তুমি কেমন আছো ভাই? তোমার শরীর কেমন? ‘
-‘ আমি একদম ঠিক আছি। আমার কথা পরে হবে ক্ষণ।’
শাহিনুর ত্বরিত বেগে ঘরে গেল। একটা কাঠের মোড়া বের করে বসতে দিলো অঙ্গন’কে। চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,
-‘পুলিশ নিয়ে আসোনি?’
ম্লান হেসে অঙ্গন বলল,
-‘আর কত পাপ করব নতুন ভাবি?’
মৌন রইল শাহিনুর৷ টুনটুনি দাদি এসে এক গ্লাস পানি দিলো অঙ্গনকে। সে পানি খেয়ে বলল,
-‘চলুন ভাবি সবাই অপেক্ষা করছে।’
-‘তোমার ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করছো না কেন?’
সন্দিহান হয়ে প্রচণ্ড উত্তেজিত কণ্ঠে প্রশ্নটি করল। রুদ্ধশ্বাস ত্যাগ করে মাথা নিচু করল অঙ্গন। বলল,
-‘আপনি আমার সঙ্গে ফিরে চলুন।’
-‘ডাক্তারসাহেব’কে ছাড়া এক পা’ও নড়ব না আমি।’
-‘বেয়াদবি মাফ করবেন। আপনাকে আমার সাথে যেতেই হবে। আর কোন উপায় নেই।’
-‘তোমার ভাইয়ের কোন খোঁজ নেই অঙ্গন ভাই। আমি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি। আর তুমি বলছো তোমার সঙ্গে যেতে? মানুষ’টা যখন এসে আমাদের না পাবে তখন কী হবে?’
চমকে ওঠল অঙ্গন। আমাদের কথাটা শুনে উৎফুল্ল নয়নে বলল,
-‘আমি কাকা হয়েছি ভাবি!’
শাহিনুর মাথা নাড়িয়ে ছুটে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে এলো। অঙ্গনের কোলে দিয়ে বলল,
-‘আমার আর ডাক্তারসাহেবের মেয়ে। নামহীন মেয়ে।’
প্রণয়কন্যাকে কোলে তুলে ম্লান হেসে অঙ্গন বলল,
-‘আপনি ফিরে চলুন নতুন ভাবি। আপনাকে ফিরতেই হবে৷’
সহসা শাহিনুর বলল,
-‘তুমি আমাদের ঠিকানা পেলে কোথায়!’
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল শাহিনুর। অঙ্গন সে দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখতে পারলো না। ভাতিজির ফুটফুটে মুখের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
-‘উপরওয়ালা এক উপায়ে আপনার খোঁজ দিয়েছেন। তার কাছে শুকরিয়া জানাই। এবার চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
-‘তুমি ফিরে যাও। জোর করে আমায় তুমি নিতে পারবে না৷’
অঙ্গন বুঝল এভাবে সম্ভব না তাই কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে বলল,
-‘আপনার কি মনে হয় সেজো ভাই সুস্থ অবস্থায় থাকলে এতদিনে আপনার কাছে ফিরতো না?’
হৃৎস্পন্দন থেমে গেল শাহিনুরের। সারাদেহ অবশ হয়ে আসলো। দু-চোখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। কাতর স্বরে বলল,
-‘চুপ করো ভাই। আমার ডাক্তারসাহেব আমার কাছে ফিরবে। উনি বলেছেন উনি ফিরবেন।’
-‘তার আগে আমাদের উচিৎ তাকে খুঁজে বের করা। আপনি এখানে থাকলে তা কোনভাবে সম্ভব না ভাবি। আপনি আমার সঙ্গে চলুন, আপনাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেবো আমি। আম্মা, বড়ো ভাবিরা অপেক্ষা করছেন। ফিরে চলুন।’
অনেকটা সময় নিথর দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ মেয়ের কান্নার শব্দে চমকে ওঠল শাহিনুর৷ টুনটুনি দাদি এসে তার কাঁধ চেপে ধরল। বলল,
-‘নাতবউ তুমি ফিরা যাও নাতিনডারে খুঁইজা বের করো।’
দাদাও বললেন,
-‘ তুমি যাও নাতবউ ফিরা যাও। নাতিনডারে খুঁজো। এইভাবে নিখোঁজ হইয়া কই গেল নাতিনডা। আর বইসা থাইকো না।’
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শাহিনুর। মেয়েটা যদি বুঝদার হতো, বড়ো হতো নিশ্চয়ই সবার মতো সেও বলতো, তাকে ফিরে যেতে। তার বাবার খোঁজে সেও উতলা হয়ে পড়তো। কান্নাকাটি করে বুক ভাসাতো। আহারে অবুঝ মেয়েটা এখনো বাপের মুখ দেখল না! ভাবতেই বুকটা ভার হলো। পুনরায় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। অঙ্গন’কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-‘তুমি বসো আমি তৈরি হয়ে আসছি।’
প্রণয়কে ফিরে পাবার আশায় অঙ্গন’কে বিশ্বাস করে শেষ ঝুঁকিটা নিলো শাহিনুর। ফিরে চলল পাঁচফোড়ন গৃহে।
লেখকের কথা: চেয়েছিলাম আরো বড়ো করে দিতে। পারলাম না। তাই আরো দু’টো পর্ব বাড়বে। তারপরই দীর্ঘ সময় ধরে চলা উপন্যাসটির সমাপ্তি। আমার পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সত্যি আমি অবাক! সবাই এত সাপোর্ট করছে আসলে দুঃসময়ে এই সাপোর্টটুকুর খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। আপনাদের এত এত ভালোবাসায় আজ আমি আবেগি হয়ে পড়েছি। আমি আমার পাঠকদের নিরাশ করব না ইনশাআল্লাহ। সকলকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসা রইল। বিষাদ বিষাদ অনুভূতি’তে শাহিনুরের পাশাপাশি এক টুকরো সুখের দেখা সবারই মিলবে আশা করি❤