মেঘ জমতে জমতে ঘন এক আস্তরণ ফেলেছে আকাশের বুকে ৷ হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। নিকষ কালো আধার জাপটে ধরেছে আলোকে ৷ যেনো কোনোভাবেই আলোকে পৃথিবীর বুকে যেতে দেবেনা। আলো প্রাণপণে চেষ্টা করছে বিধায় এখন অব্দি হালকা আলোর রেশ দেখা যাচ্ছে। বাতাসের ধাক্কায় রুমের পর্দা ভেদ করে রুমটাকে শীতল করে দিয়েছে।
সুফিয়ান চোখ খুলে কোনোমতে জানালাটা বন্ধ করে দিলো ৷ ঘরে বাতি নিভানো থাকায় ঝাপসা লাগছে সবকিছু । ঘুমের ঘোর একটু হালকা হতেই খেয়াল হলো প্রানেশার কথা। হাত দিয়ে পাশ হাতরাতেই দেখলো পাশের জায়গাটা খালি পড়ে আছে । ভ্রু কুচকে এলো৷ গায়ের চাদরটা ভালো করে টেনে উঠে চোখ কচলিয়ে আশেপাশে তাকালো। চোখ পড়লো সদ্য স্নান করে বের হওয়া প্রানেশার দিকে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছচ্ছে। গায়ে সুতির হলুদ শাড়ি। কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িতে রুপবতী লাগছে খুব। এতদিন বিয়ে হলেও বউ বউ ভাবটা আজ এসেছে। সুফিয়ান নিজ মনে হাসলো৷ পাশে থেকে টাওয়ালটা গায়ে পেচিয়ে প্রানেশার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। প্রানেশা আগেই সুফিয়ানকে উঠতে দেখেছে৷ কিন্তু কাল রাতে করা নিজের কান্ডে লজ্জায় আর কথা বলার সাহস করেনি৷ চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে চুল মুছে নিচ্ছিলো৷ সুফিয়ান লজ্জাটা বুঝে নিলো। চুলের পানিতে ভিজে থাকা পেটটায় হাত ছোঁয়ালেই প্রানেশা ছিটকে সড়ে গেলো। সুফিয়ান এখনো একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রানেশাকে সরতে দেখে প্রানেশার হাত ধরে কাছে নিয়ে এলো। হালকা রাগ কন্ঠে বললো-
‘ আমি কাছে এলে কখনো সরবেনা প্রাণ ‘
প্রানেশা চোখ তুলে তাকালো। সুফিয়ান হেসে বললো –
‘আরে! তুমি কী সিনেমার নায়িকা নাকি হ্যা! অত লজ্জা পেতে হবেনা ‘
প্রানেশা চোখ নামিয়ে ফেললো৷ সুফিয়ান প্রানেশাকে ঘুরিয়ে পেছনে থেকে জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখলো৷ অদ্ভুত ভঙ্গিতে বললো –
‘শুরুটা যদিও সিনেম্যাটিক ছিলো, কিন্তু শেষটা বাস্তব দিয়ে হবে। ইউ হ্যাভ টু রেডি ফর এভরিথিং ‘
প্রানেশা কথার মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে বললো –
‘মানে?সিনেমা! বাস্তব, এসব কী বলছেন? ‘
সুফিয়ান মৃদু হেসে বললো –
‘কিছু না প্রানেশ্বরী, যে যাই বলুক তুমি শুধু আমায় ভরসা করবে। বাকি সবকিছুর সঙ্গে আমি লড়াইয়ের করবো ‘ কিছুটা থেমে বললো-
‘ আমি শাওয়ার নিয়ে আসি তুমি কল দিয়ে খাবার অর্ডার করে নাও যা ইচ্ছে ‘
প্রানেশা তাকিয়ে রইলো সেদিকে। সুফিয়ানকে সে মেনে নিয়েছে এখন তো ভালোবেসেও ফেলেছে কিন্তু তাই বলে রহস্য উন্মোচনের ইচ্ছেটা এখনও বহাল৷ মনে মনে বারবার নানান চিন্তা ভাবনা আসে। সত্যি মিথ্যার এক গভীর জালে আটকে গেছে তা বুঝতে পারছে প্রানেশা। এতটাও বোকা নয় সে। কাউন্টারে কল দিয়ে খাবার অর্ডার দিলো৷ চুপ করে কিছু ভাবছিলো সে এমন সময় মোবাইলে একটা কল এলো৷ প্রানেশার কপালে ভাজ পড়লো। মনে মনে বললো ‘ এয়ারপোর্ট থেকে তো সিম চেঞ্জ করে দিয়েছে,এই নাম্বার তো কারো কাছে নেই। তাহলে কে কল করলো!’
কিছুটা সময় নিয়ে রিসিভ করেতেই কানে ভেসে এলো
আদুরে লাইন –
‘ কেমন আছেন স্রোতস্বিনী? ‘
‘কে বলছেন? ‘
‘আপনার কোনো এক শুভাকাঙ্ক্ষী ‘
‘ মানে! ‘
‘শুভাকাঙ্ক্ষী মানে বোঝেননি! আপনার ভালো চাই আমি ‘
‘ আমি ভালোই আছি। আপনাকে আমার ভালো চাইতে হবে না। ‘
‘আপনি কতটুকু ভালো আছেন আমি জানি। আপনি যাতে আগামীতেও ভালো থাকেন সেটাই চাই আমি। কিন্তু যার সাথে থাকছেন সে কতটুকু আপনাকে ভালো রাখবে তা সম্পর্কে আপনার কিছুটা জানা প্রয়োজন ‘
প্রানেশা অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। পরিচয় না দিয়ে কীসব কথা বলে যাচ্ছে। প্রানেশা রেগে বললো –
‘সমস্যা কী আপনার?কী বলতে চান সরাসরি বলুন ‘
‘শুধু এতটুকুই বলবো আপনি যার সাথে সংসার করছেন তিনি কতটা বর্বর, নিষ্ঠুর! ‘
‘মানে!’
‘হাঃ হাঃ, এখনো বুঝতে পারেননি। অবশ্য বুঝবেনই কীভাবে? ভালো মানুষির মুখোশ যে লাগিয়ে রেখেছে, ঐ সুফিয়ান একজন হ…..
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই কে যেনো ফোনটা কেড়ে নিলো৷ সামনে তাকাতেই দেখলো সুফিয়ান রক্ত চোখে তাকিয়ে আছে । প্রানেশা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো। সুফিয়ান ফোনটা সজোরে আছড়ে ফেলে পা দিয়ে পিষে গুড়ো গুড়ো করে দিলো। প্রানেশার গাল শক্তি দিয়ে চেপে ধরলো। খশখশে গলায় চিৎকার করে বললো-
‘ কোন সাহসে পরপুরুষের সাথে কথা বলছিলি!’
প্রানেশা ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের বের করতে পারছিলো না। সুফিয়ান ঘাড় বাকিয়ে সেই প্রথম দিনের ন্যায় হেসে বললো –
‘তুমি কী জানো প্রাণ? এর শাস্তি কতটা ভয়ংকর হতে পারে! ‘
প্রানেশা চোখভরা বিস্ময় নিয়ে বললো-
‘ কে আপনি? আপনার আসল পরিচয় কী? ‘
সুফিয়ান সঙ্গে সঙ্গেই প্রানেশার গালে চড় বসিয়ে দিলো। প্রানেশা হতভম্ব হয়ে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়লো। তার মস্তিষ্ক বোধ হয় সুফিয়ানের আসল রূপটা মেনে নিতে পারলোনা।