–ঘড়িতে সময় ঠিক চার টা বাজে।সূর্য এখনো পূর্ণ তাপে উত্তপ্ত আছে।ভ্যাপসা গরম,দিনের সময় টা যেনো রাতের থেকে দ্বীগুন বেশী।বিহান ভাই হঠাত যেনো কোথাও নিখোজ।আমি সারাবাড়ি খুজে চলেছি কোথাও পাচ্ছিনা।ফোন ও তুলছেন না।কোথায় গিয়েছেন উনি।অপেক্ষার মতো ভয়ানক যন্ত্রণা কি আর কোনো কিছুতে আছে এই পৃথিবীতে। সেই অপেক্ষা যদি আবার প্রিয় মানুষের মুখের বিশেষ কিছু শোনার জন্য হয়ে থাকে।সারাদিন কয়েক লাখ বার ঘড়ি দেখেছি।কয়েক যুগের সমান ছিলো আজকের দিন টা।
বিভোর ভাই বাইক নিয়ে কোথাও বের হচ্ছেন।বিভোর ভাই কে ডেকে বললাম,
‘বিভোর ভাই বিহান ভাই কোথায় কিছু জানেন?’
‘দিয়া তুই এত ছটফট করছিস কেনো?আর এত ঘাবড়ে আছিস কেনো?কি হয়েছে আবার কি শরীর খারাপ করছে বোন।’
‘না না বিভোর ভাই আমি একদম ই ঠিক আছি।আসলে গরমে খুব খারাপ লাগছে।’
‘দিয়া প্রচুর গরম তার উপর তোর শরীর ঠিক নেই।যা গিয়ে ফ্যানের নিচে গিয়ে সুয়ে পড়।’
‘বিহান ভাই কে প্রয়োজন ছিলো।ঃ
‘প্রাইভেট কিছু না হলে আমাকে বলতে পারিস। কিছু আনতে হবে কি?’
‘না”না এমনিই।’
‘আচ্ছা আমি বিহান কে দেখছি কোথায়? বাট আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।’
‘কি কাজ বিভোর ভাই।’
‘প্লিজ বোন আমি না তোর ভাই।আমাকে রিয়ার সাথে রিলেশন করিয়ে দে প্লিজ।আমার ভীষণ ভালো লাগে রিয়াকে।বাট রিয়া আমাকে খারাপ মনে করে।ওর ধারণা আমি ফ্লার্টিং এর প্রিন্সিপাল। ‘
‘আপনারা কি রিলেশন এ নেই বিভোর ভাই।’
‘রিলেশন তোর বোন আমায় চান্স ই দিতে চাইছে না।সে রিলেটিভ এর মাঝে রিলেশন করবে না।’
‘আমার আর বিহান ভাই এর ধারণা আপনারা রিলেশন এ আছেন।রিলেশন এ নেই তাহলে রিয়া আপনাকে এত খোজে কেনো?আপনার নামে বিশাল এক লাভ লেটার লিখেছে কেনো?’
‘রিয়া আমার জন্য লাভ লেটার।’
‘নো চিন্তা বিভোর ভাই।আপনার প্রেম খুব শিঘ্রই হয়ে যাবে।’
বিভোর ভাই বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।ফোনে টুংটাং সাউন্ড হলো।মেসেজের টোন ছিলো।মেসেজ টা ওপেন করেই দেখলাম বিহান ভাই এর মেসেজ।
‘দিয়া সন্ধ্যার একটু আগেই বাসা থেকে বের হবি।বাড়ির গেইটে একটা ইজি বাইক থাকবে সোজা উঠে চিত্রা রিসোর্ট এ চলে আসবি।’
চিত্রা রিসোর্ট বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা মাত্র।বিহান ভাই ওখানে কেনো যেতে বললেন।যদিও অনুমান করতে পারছি বিশেষ কিছু নিশ্চয়ই আছে।
–রুমে এসে আলমারির সমস্ত শাড়ি মেলেও বুঝে উঠতে পারলাম না কোন শাড়ীটা পরা উচিত।বিছানা জুড়ে শাড়ীর সমাহার।সব শাড়ি বিছানায় ফেলেছি আলমারি থেকে বের করে।কোনটা রেখে কোনটা পরবো একটুও বুঝতে পারছি না।পাঁচবার শাড়ী পরে আবার খুলে রাখলাম।আমাকে কোন সাজে উনার কাছে ভাল লাগবে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।মাথায় কিছুই ঢুকছে না।জীবনে প্রথমবার কিছু পরা নিয়ে এত টেনশন আমার।লাল শাড়ীর দিকে চোখ পড়লো আমার।ভালবাসার প্রকাশ মানুষ লাল গোলাপ দিয়ে শুরু করে আই থিংক লাল শাড়ী পরাটায় বেটার হবে।কিন্তু উনি তো লাল কালার পছন্দ করেন না।এসব কালারের কিছুই পরেন না।আজ কি পছন্দ হবে।অনেক ভেবে চিনতে সুন্দর করে লাল শাড়ী পরে,দুহাত ভরে লাল কাঁচের চুড়ি পরলাম।খোপা করে মাথায় লাল গাজরা দিলাম।গাড় লাল লিপিস্টিক,চোখে কাজল দিয়ে মনের মতো করে সেজে নিলাম।সন্ধ্যার খানিক টা আগেই ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
‘নিচে যেতেই মামি বললো,দিয়া তোকে তো কোনদিন এত সাজগোজ করতে দেখিনি।অনেক সুন্দর লাগছে কোথায় যাচ্ছিস দিয়া।’
‘তোমার ছেলের সাথে যাচ্ছি।যেতে বলেছে।মামিকে কথাটা বলতে বেশ লজ্জা লাগছে আমার।’
‘আচ্ছা যা!তবে আকাশে তো মেঘ।ছাতা টা নিয়ে যা।’
‘আবার কি বৃষ্টি নামবে মামি।’
‘এ সময়ে তো প্রতিদিন ই বৃষ্টি হচ্ছে।এই রোদ এই মেঘ এটা হতেই থাকে এ সময়ে।’
–মামিকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।গেটের সামনে অটো ও এসে গিয়েছে।অটো ওয়ালা আমাকে দেখেই বললো ভাবী আমাকে পাঠিয়েছে বিহান ভাই উঠুন।পাশের বাসার ই অটো চালক উনি।অটো থেকে নেমে ভাড়া দিতেই উনি বললো দেওয়া লাগবে না ভাই দিয়েছেন।জিজ্ঞেস করলাম কত দিয়েছে।ড্রাইভার বললো,একশ টাকা।মনে মনে বললাম,দশ টাকার রাস্তা একশ টাকা দিয়েছে টাকা কি বেশী হয়ে গিয়েছে।
অটো থেকে নেমে রিসোর্টের দিকে পা বাড়ালাম।রিসোর্টের পরিবেশ আজ যেনো অন্যরকম লাগছে।
“রিসোর্টে ঢুকতেই দুটো ছেলে বললো ভাবি কেমন আছেন?”
“এত বড় দুইটা ছেলের মুখে ভাবি ডাক শুনে বেশ লজ্জা পেলাম।সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন করলাম আপনারা..”
–ছেলে দুইটা হেসে বললো,বিহান এর ফ্রেন্ড আমরা।ওয়েলকাম ভাবি, আপনার জন্য এত সময় অপেক্ষা করছিলাম।সামনেই আছে বিহান এগিয়ে যান ভাবিজি।
সামনে আরো কয়েক জন ছেলে।চিকন সরু রাস্তার দুই সাইডে কয়েক জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, সবার হাতে একটা করে রশী।আমি ঢুকতেই তারা রশী ঝাকি দিতে শুরু করলো মাথার উপর থাকা নেট এর ভিতর থেকে পড়তে শুরু করলো ফুলের পাপরি।বেশ অবাক হয়ে আমি উপর দিকে তাকিয়ে দেখি শুধু লাল গোলাপের পাপড়ি অজস্র পরিমানে ঝরে পড়ছে।দু ‘হাত দিয়ে ফুলের পাপড়ি ধরার চেষ্টা করছি।
সামনে যত এগোচ্ছি ততটাই ফুলের বৃষ্টি এগিয়ে যাচ্ছে।আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না এটা বাস্তব নাকি কোনো স্বপ্ন।আনন্দে উল্লাসিত হয়ে হাসছি আমি।জীবনে এত খুশী কখনোই হই নি আমি।বরাবর আমি বৃষ্টিবিলাসী সেটা যদি হয় ফুলের বৃষ্টি এর থেকে বেশী সারপ্রাইজ আমার জীবনে আর কিছুই হতে পারে না।রাস্তা জুড়ে ফুলে ফুলে ভরে আছে।আমি পেছনে একবআর চোখ বুলিয়ে আনন্দে ভীষণ ভাবে উল্লাসিত হলাম।খানিক টা সামনে যেতেই লাল পাঞ্জাবী পরে পেছনে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।উনি লাল পাঞ্জাবী পরেছেন ভীষণ অবাক ব্যাপার।সুন্দরের একটুও কমতি লাগছে না উনাকে।উনি যে পোশাক ই পরে কেনো যেনো মনে হয় এটাই পারফেক্ট পোশাক উনার জন্য।
ছেলে গুলো এগিয়ে এসে বললো,বিহান সব ঠিকভাবে হয়েছে তো।বিহান ভাই হেসে উত্তর দিলেন ধন্যবাদ ভাই তোদের সবাইকে।আমাকে এইভাবে সাহায্য করার জন্য।তোদের জন্য তাকে আমি সারপ্রাইজ দিতে পেরেছি।
‘ওকে ভাই আমরা গেলাম।ভাবিজির সাথে সময় পার কর।আমরা এখন কাবাবে হাড্ডি হতে চাইনা।’
উনার চোখের ইশারায় ছেলে গুলো চলে গেলো।
–ধরনীতে মাত্রই সন্ধ্যা নেমেছে।মনে হচ্ছে এই সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করেছি কয়েক জনম।দু-ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।মাথার উপর ঘোলাটে মেঘ চাঁদ কে ছেয়ে ফেলেছে,হালকা বাতাস শুরু হয়েছে।বাতাসে উনার চুল গুলো কপালে এসে পড়ছে।পাতলা চুল গুলো ঝিরিঝিরি করে উড়ে চলেছে ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে।ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন আমার কাছে।এমন সুন্দর মুহুর্তে কিভাবে কথা বলা শুরু করবো দুজনের কেউ বুঝতে পারছি না।দুজনের নিষ্পলক চাহনি দুজনের দিকে।
বিহান ভাই পেছন থেকে হাত টা সামনে নিয়ে এলেন।বিশাল এক গুচ্ছ লাল গোলাপের তোড়া।গোলাপের তোড়া এক হাতে রেখে আরেক হাত দিয়ে খোপা করা চুল আর গাজরা খুলে দিলেন।সাথে সাথে চুল গুলো গাড় বেয়ে নিচে পড়লো।এলোমেলো বাতাসে চুল উড়ে চলেছে,সাথে শাড়ীর আঁচল ও উড়ে চলেছে।উনি এক নজরে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।দুজন মানব মানবী দাঁড়িয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে তাদের ভালবাসার সাক্ষী হিসাবে কি প্রকৃতির এত উথলতা। শাড়ির আঁচল নৌকার বাদাম এর মতো উড়ে উনার মুখে পড়লো।উনি আস্তে করে আঁচল টা সরিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন আমার সামনে।আনন্দ শরীর কাঁপছে আমার।চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছাস।
এক গুচ্ছো গোলাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“শ্যামাপাখি আমি জানিনা কিভাবে ইমপ্রেস করে কথা বলতে হয়,কিভাবে কথা বললে একটা মেয়েকে ভালবাসা বোঝানো যায়।আমার একটা হাত টেনে নিয়ে উনার হার্টবিট বরাবর ধরে বললেন,দেখো কেমন বেড়ে গিয়েছে আমার হার্টবিট কত দ্রুত রেসপন্স করছে।জীবনে প্রথমবার আমার হার্টবিট এত দ্রুত রেসপন্স করছে।যদি ভুল কিছু বলে ফেলি আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ,আমার বলায় অনেক ভুল থাকবে জানি।দীর্ঘদিনের জমানো তোমাকে ঘিরে অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে চাই শ্যামাপাখি আজ।সেই ছোটবেলা আমি তখন প্রেম ভালবাসা বুঝতাম না এটা ঠিক তবে ছোট বেলা থেকেই রাগ,ইগো,জেদ অনেক বেশী আমার।ছোট বেলা থেকেই মেয়েমানুষ থেকে যথেষ্ট দূরে থেকেছি আমি এককথায় ভাল লাগতো না মেয়েদের সঙ্গ।আমার বয়স তখন সাত বছর ফুপ্পি অসুস্থ ছিলো তখন।আমি আবির আর বিভোর উঠান থেকে কাঁন্নার আওয়াজ শুনতে পাই।আম্মু বললো ফুপ্পি আমাদের জন্য বোন কিনে এনেছে।আমি ঘরে ছুটে গেলাম বোন দেখতে।তখন মনে হয়েছিলো কিনে এনেছে আমাদের রক্তের তো কেউ না বোন বলবো না কখনো।বোন ভাবতাম ই না।তোমাকে প্রথমবার দেখেছিলাম সেই সদ্য শিশু অবস্থায়।আমার কোলে ও তুলে দিয়েছিলো তোমাকে।আমি কি ভাগ্যবান তাইনা আমার অর্ধাঙ্গীনী পৃথিবীতে আমার জন্য এসেই তার কাঁন্নায় আমাকে জানান দিয়েছিলো সে এসছে।তখন এসব তো বুঝতাম না তবে এখন এইসব ই মনে করি আমি।ভীষণ ভাল লাগে আমার এটা ভেবে সেই প্রথমদিন ই তোমাকে কোলে নিয়েছিলাম আমি।ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমাকে বোঝানোর জন্য বলা হয়েছিলো কিনে এনেছে। একটা বয়সের পর বুঝতে পারলাম বাচ্চা আসলে কেউ কিনে নাহ।ভেবেই হেসেছি কতবার।আমার সাথে মিল রেখেই নাম রাখা হলো দিহান দিয়া।আমার এই হাতের উপর বড় হয়েছো তুমি।কোলে নেওয়ার জন্য ছুটে যেতাম।আসতেই চাইতাম না ফুপ্পির মেয়ে কোলে নেওয়ার জন্য।দিন দিন তুমি বড় হতে শুরু করলে।যদিও ছোট বেলার সব স্মৃতি মনে নেই,তবে একেবারে যে সব ভুলে গেছি তাও নয়।আমি জানিনা কেনো ছোট বেলা থেকে আমার যেনো কেনো তোমাকেই বিরক্ত করতে ভাল লাগতো।যখন আধো কথা শিখলে আমি বুলি শিখাতাম তোমাকে,বাড়ির সবাই শিখাতো।যখন তোমার চার বছর বয়স যা বললে চেতে যেতে সেটাই বেশী বলতাম।তুমি চেতে যেতে খুব ব্যাপার টা আমাকে বেশ মুগ্ধ করতো।আমার মুড অফ হলেই ভাবতাম যায় পিচ্চিকে একটু ক্ষেপিয়ে আসি।আমি খুব আনন্দ পেতাম তোমাকে রাগিয়ে দিয়ে।ডেকে বলতাম এই পিচ্চি থাপ্পড় খাবি আয় তাহলে কাছে আয়।সাঁতার শিখাতাম তোমাকে আমি আর আবির।তুমি বুঝতে শেখার পর থেকে এমন করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছিলো।এক কথায় তুমি আমার অভ্যাস দিয়া, ভয়ংকর রকমের অভ্যাস।যে অভ্যাস মিশে গিয়েছে আমার রক্তে শিরায় শিরায়।যেমন রাত হলে সূর্য ডুবে যায়,চন্দ্র ওঠে,আবার রাতের আঁধার কেটে গেলে সূর্য ওঠে প্রকৃতির এমন নিয়মের মতোই তুমি যেনো রোজকার রুটিন হয়ে গেলে আমার জীবনে।এর মানে বুঝি ভালবাসা ছিলো আমি সেটা ভেবে দেখিনি।তুমি চোখের সামনে না থাকলে ভেতরে ছটফট করতো ভীষণ যন্ত্রণা করতো কেনো করতো জানিনা।প্রেমের ভীষণ সর্বনাশ ভেতরে ভেতরে কিভাবে হয়ে গেছিলো বুঝতেই পারিনি।আমি কখনো এমন কোনো দিন, সময়,বলতে পারবো না যে সময় থেকেই তোমাকে আমার অস্তিত্ব মনে হয় বা ভালবাসি।কবে কখন কিছুই জানিনা।তুমি বউ সেজে এসে বলতে বিহান ভাই বর বউ খেলবেন আপনি আমার বর আমি আপনার বউ।আমি একটা ধমক লাগিয়ে দিতাম।দিয়া তুমি বেত লাফাতে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম,স্কার্ট পরে সারাবাড়ি ছুটতে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম,এক গাল হেসে সবার সাথে গল্প করতে মুগ্ধ হয়ে দেখতাম।আমি সেই ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধ তোমার প্রতি।মুগ্ধতার প্রতিমা তুমি দিয়া।এত মুগ্ধতা সৃষ্টিকর্তা তোমার মাঝে কেনো দিয়েছে বলতে পারো?”
“উনি আমার মাঝে কি মুগ্ধতা দেখেছেন সেটা তো জানিনা।তবে আমি ভীষণ মুগ্ধ আজ উনার কথা শুনে।এর থেকেও কি উত্তম আর কিছু হতে পারে ভালবাসা প্রকাশের ধরণ।ভীষণ লাজুকতা নিয়ে বললাম,আপনার চারপাশে তো অনেক সুন্দর মেয়ে আছে তাদের থেকেও কি বেশী মুগ্ধতা আমার মাঝে।শুনেছি প্রেম নাকি কোন মোহ।মোহ কেটে গেলে ছেলেদের ভালবাসা ফুরিয়ে যায়।আপনার ক্ষেত্রে এমন ব্যাতিক্রম কেনো বিহান ভাই।”
“উনি হালকা হেসে বললেন,মোহ কি দিয়া।আমি তো তোমার বিশেষ কোনো কিছু দেখে প্রেমে পড়িনি মোহ কেটে যাবে।
আমি তোমাকে তেল চিপচিপে চুলে দেখেছি,শ্যাম্পু করা চুলে দেখেছি,শীত কালে ফাঁটা ঠোঁটে ও দেখেছি,আবার লিপিস্টিকে রাঙানো ঠোঁটে ও দেখেছি,গরমে ঘেমে তৈলাক্ত মুখে দেখেছি,আবার মেকাপ করা মুখেও দেখেছি,তোমাকে দেখেছি খোলা চুলে, আবার কখনো দেখেছি বেনী করা চুলে, দেখেছি ঘুম থেকে উঠে ফোলা চোখে দাঁড়াতে,আবার কাজল দেওয়া চোখেও দেখেছি।বাসায় পুরণো কাপড়ে দেখেছি,আবার ভীষণ গরজিয়াস ড্রেসেও দেখেছি,সব সময় গোছানো তুমি টাকে দেখিনি,এলোমেলো তুমিটাকেই বেশী দেখেছি।আমার চোখের সামনেই বড় হয়েছো তুমি।তোমাকে সব রূপেই দেখেছি আমি দিয়া।তোমার সাজগোজ হীন রূপে,মেকাপ হীন রুপে কেমন লাগে সেটা দেখে দেখে অভ্যাস্ত আমি।তোমাকে কখন কেমন লাগে সব ই মুখস্থ আমার।তাহলে কিসের মোহ কাটবে আমার।এই সাধারণ তুমিটার মায়ায় পড়েছি আমি।এ মায় কাটিয়ে উঠতে গেলে যে আমাকে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নারী আমার তোমাকে মনে হয়।কারণ তুমি পাশে থাকলেই পৃথিবীর সব সুখ আমার ভেতরে বিরাজ করে।আমার জীবনের সুখপাখি টাকে মনের ভেতর ভীষণ যত্নে লালন পালন করেছি আমি।
তুমি সেই নারী নও দিয়া যার বিশেষ কোনো সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ভালবেসেছি।তোমাকে ভালবাসার জন্য বিশেষ একটা কারণ ও দেখাতে পারবো না দিয়া।আমি শুধু এই টুকু জানি আমি তোমাকে ভালবাসি দিয়া,ভীষণ ভালবাসি যাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালবেসে যাবো।তুমি আমার পাশে থাকলে ভীষণ শান্তি পায় আমি,মানসিক শান্তি।তুমি আমার জীবনের সেই একজন নারী যাকে আমি নিজের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি।আমি ফিলিংস প্রকাশ করতে পারি না হয়তো,রাগী জেদী হাত জোর করছি আমাকে মানিয়ে নাও প্লিজ।আমার জীবনের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা করে তোমার জীবনে গ্রহন করে নাও।আই লাভ ইউ দিয়া,ভালবাসি তোমাকে।তুমি আমার শ্যামাপাখি,তুমি আমার পিচ্চি,তুমি আমার শ্বশুরের মেয়ে।কখনো ছেড়ে যেও না আমায়।”
“ভালবাসি কথাটা শুনে কেঁপে উঠলাম আমি।উনার দুই ঠোঁটে উচ্চারিত ভালবাসি কথাটি সাধারণ কোনো কথা ছিলো না।বিশেষ কিছু তো ছিলোই ওই কথাতে।আনন্দে আমি বাকরুদ্ধ।আমার পৃথিবী রঙ্ধনুর সাত রঙের মতো রাঙিয়ে গেলো। এত মাধুর্য ভরা কথার কি উত্তর দিবো আমি।
নিমিষেই ঝরে পড়লো আকাশ থেকে বৃষ্টি।এলোমেলো বাতাস,ঝিরিঝিরি বৃষ্টি,সাথে প্রিয় মানুষের মুখে উচ্চারিত ধ্বনি ভালবাসি।বার বার আমার কানে এই কথাটি বেজে চলেছে।সন্ধ্যা টা নিমিষেই এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় পরিণত হলো।”
উনি আমার পা উনার হাঁটুর উপর তুলে দুই আঙুলে দুইটা আঙ্গুট পরিয়ে দিলেন। বাম পায়ে বাধা কালো সুতার নিচে একটা পায়েল পরিয়ে দিয়ে ওষ্টর স্পর্শ দিলেন আর বললেন,ঘর্নায়মান এই সন্ধ্যার অপরূপ সৌন্দর্য সাথে বৃষ্টি,এই বৃষ্টিস্নাত তোমাকে জানায় শুভেচ্ছা দিয়া।আমার জীবনে আসার জন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
উনার ওষ্টের ছোয়ার তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ খেলে গেলো আমার শরীরে।লজ্জায় দুই’হাতে মুখ ঢেকে ছুটে পালালাম।রিমঝিম বৃষ্টিতে আমার পেছনে উনি ছুটে চলেছেন আর ডাকছেন, দিয়া দাঁড়াও আমার আরো কিছু বলার আছে।দিয়া দাঁড়াও বলছি।আমি আনন্দে ছুটে চলেছি,পৃথিবীর সব লজ্জা যেনো আমার উপর ভর করেছে।কোন ভাবেই উনার দিকে তাকাতে পারছি না।খানিক টা দূরে গিয়ে হাঁপিয়ে গেলাম।ফুলের দিকে তাকিয়ে আবার ও লজ্জায় মুখ ঢাকলাম।ইস!কি লজ্জা।
“হঠাত উনি পেছন থেকে এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন।আচমকা ভীষণ কেঁপে উঠলাম।উনি আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,এই বৃষ্টি ভীষণ পছন্দ তাইনা তোমার?”
“মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দিলাম হুম।”
“তোমার প্রিয় বৃষ্টির মতোই কি আমিও তোমার প্রিয়।কত দিন অপেক্ষা করছিলাম,ফোনে ওয়েদার চেক করছিলাম।যে সন্ধ্যায় বৃষ্টি হবে তোমার সাথে বৃষ্টিবিলাস করবো।বৃষ্টিবিলাস করতেই আজকের দিনটা পছন্দ করা।”
ক্রমশ শুরু হলো বৃষ্টি। দুই একবার মেঘের গর্জন ও শোনা যাচ্ছে।হঠাত মেঘের গর্জনে কেঁপে উঠে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।বিহান ভাই দুই হাতে আমাকে আকড়ে ধরলেন।কিছু সময় পরে এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে রিসোর্টের একটা ঘরে নিয়ে গেলেন।টিনের চালের এই ঘরের চারপাশ খোলা যেখানে বসে সবাই গল্প করে।টিনের চালে ঝুম বৃষ্টির শব্দ।আমি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরছি।আরেক বার ভেজার জন্য বাইরে বের হতে গেলেই বিহান ভাই হাত টেনে ধরে বললেন এই যে বৃষ্টিবিলাসী আমাকেও একটু সময় দিন। শুধু বৃষ্টিতে ভিজলে হবে।লজ্জায় আবার ও মুখ ঢাকলাম আমি।উনি মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে উনার সম্পূর্ণ কাছে টেনে নিয়ে ওষ্ঠের সাথে ওষ্ট ছুইয়ে গভীর চুম্বনে ডুব দিলেন।বাইরে এই ভীষণ বৃষ্টি ই কি তবে এই দুজন মানব মানবীর ভালবাসা গভীর করতে আগমন ঘটিয়েছে।