এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৩০

“দিয়া স্বামির আদেশ ঠিকঠাকভাবে পালন না করলে আর স্বামির সেবাযত্ন না করলে জীবনেও জান্নাত পাবি নাহ।কিহ ভাবছিস তো এটা আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি তো সবার কাছে জিজ্ঞেস করে দেখ।এখনো সময় আছে দিয়া আমার সেবাযত্ন কর।আসলে আমি তোর ভালো চায় তাইতো তোকে ভাল বুদ্ধি দিচ্ছি।আমার পিচ্চি বউটা এমন পাপ করবে আমি কি আর তা হতে দিতে পারি।”

“তা এখন আমাকে কি করতে হবে বিহান ভাই?আসলে এসব কেনো বলছেন আসল কাহিনী কি?”

“সারাদিন বাইক চালিয়ে পা হাত শরীর প্রচুর ব্যাথা হয়েছে একটু টিপে দিবি।”

“পারবো না আমি।”

“দে না দিয়া এমন করিস কেনো?ছোট্ট আগুল গুলো দিয়ে চুলের মধ্য দিয়ে একটু চুল টেনে দে মাথা ধরেছে আমার।”

“পারবো না একটুও।”

“একটু দিলে কি হয় দিয়া।এমন করিস কেনো?”

“মোটেও পারবো না অনেক বাজে কথা বলেছেন আমাকে আপনি।”

“উনি তীক্ষ্ণ ভাবে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন? কি দেখছেন কি সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”

“আমার গায়ের উপর থেকে ছো মেরে শার্ট টা নিয়ে উনার বা হাত থেকে ওড়না টা আমার দিকে ছুড়ে মারলেন।”

“শার্ট টা নিতে নিতে বললেন,শুনলাম পুরা শহর তন্ন তন্ন করে ফেলছিস বয়ফ্রেন্ডের জন্য শার্ট কিনতেছিস।এই নাকি সেই শার্ট ওয়াও যাক তোর চয়েজ এর উন্নতি হয়েছে আর শার্ট টাও মারাত্মক সুন্দর হয়েছে।তা এত সুন্দর শার্ট তোর ওইসব পাতিশিয়ালের মতো বয়ফ্রেন্ডের গায়ে তো মানাবে না।শুধু শুধু টাকা নষ্ট করেছিস।এসব মানায় আমার গায়ে বুঝেছিস।কি আমার কথা শুধু গিলছিস বিলিভ হচ্ছে না জানি।ওকে তাহলে পরেই দেখায়।
শার্টের বোতাম খুলে আমার কেনা টা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন হাউ হ্যান্ডসাম ইওর হাব্বি দিয়া। নিজেকে দেখে ভীষণ বিস্মিত হচ্ছি ছেলেটা এত হ্যান্ডসাম কিভাবে হতে পারে।”

উনার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলাম আমি।উনি কিসব বলছেন আর বয়ফ্রেন্ড ই বা কে?

“কি ব্যাপার ওভাবে পেত্নির মতো তাকিয়ে কি ভাবছিস? তোর বয়ফ্রেন্ড কে কি উপহার দিবি।পুরাণ মার্কেট থেকে লেডিস প্যান্ট কিনে দিস।”

“আপনাকে বলেছি নাকি বয়ফ্রেন্ডের জন্য কিনেছি।”

“সে তুই যার জন্যই কিনিস এটা মানিয়েছে ভালো আমার গায়ে। এটা আমি গায়ে দিয়েই ঘুমোচ্ছি যেনো রাতে খুলে নিস না।”

“এখন ঘুমোবেন। ”

“হ্যাঁ তার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আছে করতে হবে?”

“কি কাজ আছে আপনার।”

উনি আলমারি খুলে সমস্ত ভাজ করা কাপড় সোফার উপর ভাজ ভেঙে ফেলতে শুরু করলেন।আলনার সমস্ত কাপড় টেনে টেনে সোফায় রাখলেন।আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে দেখছি উনি আসলে কি করতে চাইছেন টা কি।উনি এসব ভাজ করা কাপড় সব এলোমেলো করছেন কেনো?সমস্ত কাপড় এলোমেলো করার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–আচ্ছা দিয়া আমি ভীষণ ক্লান্ত ঘুমোচ্ছি।তুই আলনা গোছাতে থাক।

কি আশ্চর্য বিহেভ উনার।গোছানো জিনিস নষ্ট করে বলছেন আবার গোছাতে।

–আমি খানিক টা চটে গিয়ে বললাম গোছানো আলনা নষ্ট করলেন কেনো?আর আলমারির কাপড় ফেললেন কেনো সব।

–কারণ গোছানো আলনা নিয়ে মিথ্যা বলেছিস যে তুই আলনা গোছাচ্ছিলি।

–তাই আপনি আলমারির সমস্ত ভাজ করা কাপড় ভাজ ভেঙে এলোমেলো করবেন।

–ইয়েস যাতে ফিউচারে আমি আসলে তরতর করে নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস।আর আলনা গোছানোর নামে মিথ্যা না বলিস ওকে। আমি কেমন সেটা চিনতে এখনো অনেক বাকি আছে তোর।ঘুমোচ্ছি আমি স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে দে।উফফ নড়াইলে এত গরম ক্যানো এসি লাগাতে হবে দেখছি।

–এরই মাঝে উনার ফোনের ভাইব্রেশন বেজে উঠলো।প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিয়ে বললেন,হ্যাঁ আবির বল আসলি না কেনো বাড়িতে।

–ফোনের ওপাশ থেকে ভাইয়া বলছে,গেছিলাম তো তুই আসার খানিক টা আগেই। কাল বাসায় আসবি কখন তাই বল।

–যাবো ভাই।তার আগে ট্রিট দে গার্লফ্রেন্ডের দেওয়া শার্ট পরেছিস এই উপলক্ষে ট্রিট চাই আমার।

–তোকে তো ছবি পাঠিয়েছিলাম কেমন লাগছে ভাই।

–ভাই সেরা মানে সেরা লাগছে।ওর আসলেই চয়েজ আছে।তোকে কোনটা পরলে ভাল মানাবে বুঝে গিয়েছে।

–আর বলিস না দিয়া কেমন সন্দিহান ভাবে তাকাচ্ছিলো।আমি তো ধরাই খেয়ে যাচ্ছিলাম।

–তোর বোন সিআইডি ভাই।

–হাহাহাহা এখন রাখি তাহলে ঘুমো।

–আচ্ছা।

–আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,ভাইয়া কি প্রেম করছে বিহান ভাই।

–উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তো প্রব্লেম কি করতেই পারে।

–কার সাথে করছে?মেয়েটা কেমন।দেখতে কেমন?

–দেখতে কেমন এটা জিজ্ঞেস করলি কেনো?রুপ কি ধুয়ে ধুয়ে খাবি।হাউ চিপ মেন্টালিটি।

–দেখুন আমি ওভাবে ভেবে বলি নি।এমনি জিজ্ঞেস করেছি।মেয়েটা কে।

–তোর পেট পাতলা তাই তোকে বলা যাবেনা।সবাইকে বলে বেড়াবি।দেখা গেলো কাল সকালে মোড়ে মোড়ে এই নিউজ টা পাওয়া গেলো।

–কি বললেন, আমার পেট পাতলা।আমি কবে কথা লাগিয়ে বেড়িয়েছি বলেন।

–তোকে আমি আবিরের রিলেশন এর কথা বলি তুই এক্ষুনি রিয়াকে জানাবি,আর রিয়া বিভোর কে।

–সেতো রিয়া আমার বেষ্টি তাই।

–আবির ও আমার বেষ্টু ওকে পেট পাতলা মহিলা।গুড নাইট।

উনি কি আশ্চর্যজনক একটা মানুষ। মিথ্যা বলেছি বলে সেই কাজ করিয়েই ছাড়বেন।আবার ভাইয়া কার সাথে রিলেশন করছে সেটাও বললো না।

আলমারি গোছাতে গিয়ে দেখি ড্রয়ারের মাঝে একটা শুকানো গোলাপ সাথে আর একটা কড়ি। গোলাপ টা শুকিয়ে গিয়েছে।সেই কত বছর আগের সেই গোলাপ।সেই ছোট বেলায় আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি,সেদিন ছিলো মুসল ধারে বৃষ্টি।একুশে ফেব্রুয়ারী ছিলো সেদিন।সকালে ভোরে স্টেডিয়াম মাঠে যাচ্ছিলাম আমরা।আমার ছিলো লাল শাড়ি যার পাড় ছিলো সবুজ।বিহান ভাই এর পরণে ছিলো লাল পাঞ্জাবী।উনি আমার হাতে একটা ফ্লাগ আর মাথায় পরিয়ে দিয়েছিলেন রাবার এর পতাকা আকা লাল সবুজের ব্যাড়। তাছাড়া আমার হাতে এই গোলাপ টা দিয়েছিলেন।আমি সেদিন বলেছিলাম এই কড়ি টা ফুটলেও অনেক ভাল লাগতো বিহান ভাই দেখতে।উনি সেদিন বলেছিলেন, দিয়া এই কড়িটা একদিন ফুটবে সুবাস ছড়াবে এই বড় ফুলটায়।এই বড় ফুল টা হলো পুরুষ ফুল মানে আমি আর এই কড়িটা আমার পুচকি প্রেয়সী বুঝেছিস কিছু।তখন এসব কথার কিছুই বুঝতাম না আমি।সেই ফুল টা আমি হাতে নিয়ে উনাকে আবার দিয়েও দিয়েছিলাম সেটা আজ ও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।কত যত্নশীল মানুষ উনি ভাবা যায়।

সমস্ত কাপর ভাজ করে আলনা গুছিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম।ফ্যানের বাতাসে কপালের চুল গুলো উড়ছে আমার কেনা শার্ট টা সত্যি সুন্দর মানিয়েছে উনাকে।যাক আমার আর বলা লাগেনি যে এটা আপনার জন্যই আনা।ডিম লাইটের কৃত্রিম আলোতে এই সুন্দর পুরুষ টাকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।এজ জনম দেখলেও মন ভরবে না।

উনার ফোন টা হাতে নিয়ে স্ক্রল করছি সারাদিন কি দেখেন উনি ফোনের মধ্য।এর আগে সেইভাবে উনার ফোন আমি খেয়াল ই করিনি।উনার ডিসপ্লেতে আমার চুড়ি পরা হাতের ছবির মতো লাগছে।হাত টা দেখতে আমার মতোই লাগছে।কিন্তু আমি তো কখনো এ ছবি উঠাইনি।তাহলে কিভাবে উনি আমার হাতের ছবি উঠালেন।নাকি অন্য কারো ছবি। এটা উনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার এটা নিয়ে প্রশ্ন করাও ঠিক হবেনা বলে মনে হচ্ছে।কি করবো একদম ই ঘুম পাচ্ছে না।কয়েক টা কসমেটিক্স এর পেইজ সার্চ করলাম।উনার ফোন দিয়েই কত গুলো কসমেটিক্স অর্ডার করে দিলাম।

–পেইজ থেকে রিপ্লে এলো কি চাই বলুন স্যার!

–আমার স্যাডো বক্স,আর বার্বি ডল আর্ট করা গেঞ্জি আর অরেঞ্জ কালার লিপিস্টিক লাগবে।

–এগুলো কিন্তু মেয়েদের জিনিস স্যার।

–অদ্ভুত আমি কি মেয়ে ছাড়া ছেলে।

–না আইডির নাম ছেলে তো তাই।আগের দিন একজন এমন ভুল করেছিলো তাই জিজ্ঞেস করে নিলাম।

–না আমি মেয়ে।

–সিওর তো।

–হ্যাঁ আমি ছেলে আর আমার এটাই লাগবে।আমি এগুলোই ইউজ করবো।আমি টাকা দিয়ে কিনবো ছেলে হয়ে পরতে পারলে আপনার সমস্যা কোথায়?আপনারা টাকা পেলেই হলো।এত প্রশ্ন করেন কেনো?আমি বিহান আমি মেয়েদের লিপিস্টিক,স্যাডো, গেঞ্জি এইগুলা পরি। আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন।আশ্চর্য।

ফোনটা রেখে গায়ের গাউন চেঞ্জ করে একটা গেঞ্জি পরে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকাল টা শুভ নাকি অশুভ হবে কিজানি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।