প্রেমাতাল | পর্ব – ১৫

আবার এলোযে সন্ধ্যা, শুধু দুজনে।
চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে…”
গানটা শেষ হতেই তিতির বলল,
-“উফফ সত্যি খুব ভাল গান আপনি। আর গানটাও এত জোস। একদম পারফেক্ট এখানে এই পরিবেশে।”
মুগ্ধ হাসলো আর খেয়াল করলো তিতিরের ভয়েসটা একটু অন্যরকম হয়ে গেছে। একদম ঘুমে জড়ানো। তিতির সেই ঘুমু ঘুমু ভয়েসে বলল,
-“সত্যি আমার আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছেনা এখান থেকে। আচ্ছা, এই গেস্ট হাউজটা সারাজীবনের জন্য ভাড়া দিবেনা?”
মুগ্ধ আবার হেসে ফেলল। বলল,
-“তোমার মাথাটা দেখছি পুরোটাই গেছে। আচ্ছা ভাল কথা.. শোনো, কাল সকাল ৮ টা নাগাদ আমরা নাফাখুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরবো।”
-“সাফি ভাইয়াদের জন্য ওয়েট করবো না?”
-“হুম ৮ টা পর্যন্ত তো ওয়েট করবো। তার বেশি সম্ভব না। বেলা বেড়ে গেলে হাটতে কষ্ট হবে। আর ওদের জন্য এত ভাবতে হবেনা। ওরা ২৬ জন আছে। আমরা দুজন যেসব বিপদে পড়েছি ওরা সেসব বিপদে পড়বে না।”
-“ও।”
-“আচ্ছা, যাও যাও ঘুমাতে যাও এখন।”
তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আরেকটা গান শোনান না প্লিজ! তারপর ঘুমাতে যাব।”
কটেজের বারান্দা থেকেই দেখা যাচ্ছে রেমাক্রি গ্রামের ঘরগুলোতে হারিকেন আর কুপির আলোগুলো মিটিমিটি তারার মত জ্বলছে। কটেজের সামনেই জ্বলছে জোনাক পোকা। আর জ্বলছে তিতিরের জন্য মুগ্ধর বুক!
হঠাৎ মুগ্ধর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। আর সাথে সাথে একটা দুষ্টু গান ধরলো,
“এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!
মায়াবী রাত মাতাল নেশাতে
আজ মনে মোরে চায় যে মেশাতে
দ্বীপ নিভিয়ে ঝড় যে বয়ে যায়..
এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!
আখিতে জ্বলে কামনারই বহ্নি
অঙ্গ যে চায় সঙ্গ যে তন্বীর
মনের কথা মনেই রয়ে যায়..
এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!
আলেয়াকে মিছে ভালবেসোনা
দূরে থাকো কেন? কাছে আসোনা
কোরো না ভুল কে যে কয়ে যায়?”
এত কাছে দুজনে প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়!”
গান গাওয়ার সময় মুগ্ধ ইচ্ছে করেই তিতিরের দিকে তাকালো না। শেষ করে তাকাতেই মুগ্ধ দেখতে পেল তিতির বারান্দার ফ্লোরে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। হায় খোদা! কখন ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটা! বাচ্চা কাকে বলে! লাভ কি হলো ডুষ্টু গানটা গেয়ে? ওর লজ্জা পাওয়াটাই দেখা হলো না। মুগ্ধ ডাকলো,
-“তিতির? এই তিতির?”
তিতিরের কোনো সাড়াশব্দ নেই। মুগ্ধর আর ডাকতে ইচ্ছে করছিল না। কি ইনোসেন্ট যে লাগছিল! মুগ্ধ তিতিরকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর পাশে বসে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। চাঁদের আলোয় ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল। উফ এত কেন ভাল লাগে তিতিরের আনকোরা মুখটা! চুলগুলো এলোমেলো। নিচের ঠোঁটটা সামান্য ভেতরের দিকে ঢুকে রয়েছে। কি মিষ্টি! কি মায়াবী! মুগ্ধর খুব ইচ্ছে করছে তিতিরের কপালে একটা চুমু দিতে! কিন্তু ব্যাপারটা কি ঠিক হবে? তারপর আবার ভাবলো কপালেই তো, ক্ষতি কি! কিন্তু তিতির যদি জেগে যায় আর মাইন্ড করে! করলে করবে। তখন বরং বোঝা যাবে তিতির ওকে ভালবাসেনা। আর যদি জেগে যায় কিন্তু রাগ না করে তাহলেও বোঝা যাবে যে তিতির ওকে ভালবাসে। পরক্ষণেই ভাবলো, ধুর কিসব ভাবছে ও। তার চেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুম দিক। উঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করলো মুগ্ধ। দরজার কাছ পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এল। আবার ওর পাশে বসলো। তারপর নিচু হয়ে তিতিরের কপালে একটা চুমু দিল। নাহ তিতিরের ঘুম ভাঙলো না। ইশ! ঘুম ভাঙা উচিৎ ছিল। নেগেটিভ হোক পজেটিভ হোক ওর এক্সপ্রেশন টা থেকে তো অনেক কিছু বোঝা যেত। কয়েক সেকেন্ড বসে উঠে চলে গেল নিজের ঘরে।
মুগ্ধ চলে যাওয়ার পর তিতির পাশ ফিরে বালিশটা জড়িয়ে ধরলো। হাত পা রীতিমত কাঁপছিল, ঠোঁটে ছিল বিশ্ব জয় করার হাসি! ও ঘুমের ভান করেছিল এতক্ষণ। কারন, মুগ্ধ যেই গান গাইতে শুরু করেছিল তাতে লজ্জায় মরে যেত পরে চোখে চোখ পড়লে। তাছাড়া মুগ্ধর কোলে ওঠার জন্যও এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই। কিন্তু তার সাথে যে ওর ঠোঁটের ছোঁয়াটাও পাবে তা ভাবেনি। এবার ও শিওর যে মুগ্ধ ওকে ভালবাসে। লোভে পড়ে করলে ঠোঁটে করত, অন্য কোথাও করতো। ভালবাসা থেকে করেছে বলেই কপালে করেছে। উফফ, তিতিরের কি যে আনন্দ হচ্ছে!
বিছানায় শুতেই মুগ্ধর খেয়াল হলো তিতির তো ঘুমে, দরজা লাগাতে পারবে না। দরজাটা সারারাত ভেজানো থাকবে? তিতিরকে এতটা আনসেফ রেখে ও ঘুমাতে পারবে না। নিজের খুঁটিনাটি যেসব জিনিসপত্র যা ও বের করেছিল তা আবার ব্যাগপ্যাকে ভরে নিয়ে তিতিরের ঘরে চলে গেল। তিতির টের পেলেও কিছু বলল না। মুগ্ধ ভেতর দরজায় খিল দিয়ে ব্যাগপ্যাকটা ফ্লোরে রেখে ঘরের অন্য বিছানাটায় শুয়ে পড়লো। তিতিরের দিকে আর এক বারের জন্যও তাকালো না। ও মেয়ে না ও একটা মায়াজাল!
খুব ভোরে ঠিকমতো আলো ফোটেনি তখন তিতিরকে ডাকলো মুগ্ধ,
-“এই তিতির, ওঠো ওঠো।”
তিতির একটু কান্নার ভাব করে পাশ ফিরে শুলো। মুগ্ধ তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে ঝাকি দিয়ে দিয়ে ডাকছিল,
-“এই মেয়ে, ওঠো না প্লিজ। নাহলে খুব মিস করবা। ওঠো ওঠো।”
-“আয়ায়া, আমি ঘুমাচ্ছি তো.. উফফো।”
তিতিরের এই আহ্লাদী কথার সাথে ছিল সেই ঘুমু ঘুমু মাতাল করা ভয়েস! শুনে মুগ্ধর বুকের ভেতরটায় কিছু একটা চুরচুর করে পড়ছিল। ইচ্ছে করছিল ওকে কোলের মধ্যে নিয়ে অনেক অনেক আদর করতে! আবার ডাকলো,
-“ওঠো না। একটু পর নাহয় আবার ঘুমিয়ো।”
তিতিরের কোনো হেলদোল নেই। বাবারে বাবা কি ঘুম! মুগ্ধ তিতিরকে ধরে উঠালো। তারপর বিছানা থেকে নামিয়ে দাঁড় করাতেই লুটিয়ে পড়লো মুগ্ধর বুকে। কাল থেকে বুকের ভেতরটা যে খরায় খা খা করছিল তাতে যেন ঝুমবৃষ্টি নামলো। তিতির ঘুমে পুরো কাদা! মুগ্ধ তিতিরকে বুকে জড়িয়ে ধরেই টেনে টেনে বারান্দায় নিয়ে গেল। মুগ্ধ পারতো ওকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু তাতে তো এতক্ষণ তিতির ওর বুকের মধ্যে থাকতো না! বারান্দায় নিয়ে মুগ্ধ তিতিরের গালে হাত দিয়ে বলল,
-“একবার চোখটা খোলো না.. তিতিরপাখি.. ও তিতিরপাখি.. তাকাওনা একবার।”
তিতির একটু সজাগ হলো। ঘুমে জড়ানো চোখদুটো খুলতেই হালকা আলোয় যেন এক কল্পলোক দেখতে পেল। চারদিকে মেঘ আর নীল, সবুজ পাহাড়ের এক অপূর্ব সমন্বয়। প্রকৃতি যেন এখানে উজার করে রেখেছে এর রূপের ঝাঁপি। ছোট ছোট মেঘের ভেলায় চড়ে কোন এক অপরূপা রাজকন্যা যেন নেমে এসেছে পাহাড় রাজার দেশে। নীল আকাশ হতে সূর্যের আলো যেন সেই রাজকন্যাকে সোনার মুকুট পড়িয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে উষ্ণ পরশে সকলের ঘুম ভাঙাবে বলে।
তিতির তখনও মুগ্ধর বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিল। এসব দেখতেই সোজা হয়ে দাড়ালো। কটেজের সিড়ি বেয়ে নেমে গেল সামনে। এখান থেকেই একপাশে ঘুমিয়ে থাকা রেমাক্রি বাজার দেখা যাচ্ছে। ছোট-খাট একটি বাজার। দোকান প্রায় ৩০ টির মত। বাজারের চারপাশে দোকান আর মাঝখানটা ফাঁকা। আসলে এগুলো প্রত্যেকটি এক একটি বাড়ি। সামনের অংশটুকু দোকান আর পিছনের অংশে তারা বসবাস করে। অন্যপাশে দেখা যাচ্ছে সেই সাঙ্গু নদী। তার ওপাশে গহীন জঙ্গল। আরেকপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। খুব দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না, হালকা কুয়াশা ছিল। তিতির এসব দেখে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মেঘগুলো সামান্য উপড়ে। উড়ে গিয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। মুগ্ধ পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই তিতির একটা উঁচু পাহাড় দেখিয়ে বলল,
-“আমাকে ওই পাহাড়চূড়াতে নিয়ে যাবেন একবার?”
-“এত ঘুমালে কিভাবে নিয়ে যাব ঘুমকুমারী?”
তিতির এবার আর রাগ করলো না। চোখ বড় বড় করে তাকালো না। মুগ্ধর একটা হাত ধরে বলল,
-“নিয়ে চলুন না ওখানে? যদি সম্ভব হয় আরকি।”
মুগ্ধও ফাজলামো থেকে বেড়িয়ে এসে বলল,
-“আমি তোমাকে ওখানে নিয়ে যাব বলেই ডাকছিলাম। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। জাস্ট ৫ মিনিটে। নাহলে বিশাল মিস হয়ে যাবে।”
তিতির ৩ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে জাস্ট একটা শাল জড়িয়ে চুলগুলোকে হাতখোঁপা করতে করতে বেড়িয়ে এল,
-“চলুন।”
তিতিরের ওই হাতখোঁপা করার দৃশ্যটা মুগ্ধর চোখে আটকে রইলো। এই ছোট ছোট অতি সাধারণ ব্যাপারগুলো কেন যে মুগ্ধর এত ভাল লাগে! আর তিতিরের মধ্যেই বিধাতা যেন সব দিয়ে রেখেছেন যা মুগ্ধ সারাজীবন চেয়ে এসেছে।
মুগ্ধর কাধে ছোট একটা ব্যাগ দেখে তিতির জিজ্ঞেস করলো,
-“ব্যাগ নিচ্ছেন যে? আমারও নিতে হবে?”
-“নাহ, এত কথা বলার সময় এখন নেই। চলোতো।”
-“সময় নেই কেন? আর এত তাড়াহুড়োই বা কেন করছেন?”
-“বলবো, আগে তো চলো।”
মুগ্ধ তিতিরের হাত ধরে ধরে ওকে পাহাড়ের উপড়ে ওঠাচ্ছিল। অনেক খাঁড়া একটা পাহাড়। এটা কোন ট্রেইলের মধ্যে পড়েনা তাই রাস্তাও নেই। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে পা বাঝিয়ে বাঝিয়ে উঠতে হচ্ছে।
প্রায় ২০ মিনিট ওঠার পর ওরা সেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠলো। তিতির উঠেই বসে পড়লো, হাপাচ্ছিল। মুগ্ধ সেই ছোট ব্যাগটা থেকে পানির বোতল বের করে দিল তিতিরের দিকে। তিতির পানি খেয়ে বোতলটা মুগ্ধকে দিয়ে দিল। মুগ্ধ সেটা ব্যাগে রাখতেই তিতির বলল,
-“আপনি পানি খেলেন না যে? তৃষ্ণা পায়নি?”
-“নাহ, এটুকুতেই যদি হাপিয়ে যেতাম তাহলে কি উঁচু উঁচু পাহাড়ে ক্লাইম্বিং করে উঠতে পারতাম?”
-“তার মানে কি আমি কখনো ওসব পাহাড়ে উঠতে পারবো না?”
-“অবশ্যই পারবে। প্রথমেই তো আর কেউ পারেনা। ট্রেনিং নিতে হয়।”
-“ওহ।”
মুগ্ধ হাত বাড়িয়ে বলল,
-“হয়েছে, এবার ওঠো।”
তিতির মুগ্ধর হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। মুগ্ধ তিতিরকে ঘুড়িয়ে দাঁড় করালো। তারপর ওর পাশে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে একটা পাহাড় দেখিয়ে বলল,
-“শোনো, ওই দিকে তাকিয়ে থাকো।”
হঠাৎ কিছু মেঘ এসে তিতিরের গায়ে লাগলো। আর তিতিরের গায়ের সেই অংশটা ভিজে গেল। তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এই মেঘ মেঘ! ইশ কি সুন্দর! আমার গায়ে এসে লাগলো।”
-“হুম নোড়োনা। এখনি তোমার গালে লাগবে।”
মুগ্ধর কথা শেষ না হতেই আবার মেঘ এসে লাগালো ওর গালে, মুখে, কানে। তিতির চোখ বন্ধ করে তা উপভোগ করলো। পরেরবার মেঘ আসতেই তিতির ধরতে গেল। আর মেঘ ওর হাতের উষ্ণতা পেয়ে গলে পানি হয়ে গেল। তিতির তা মুগ্ধকে দেখালো। মুগ্ধ হাসলো। মুগ্ধর মেঘের দিকে কোন মনোযোগ নেই। ওর সব মনোযোগ এখন তিতিরের দিকে। মেঘ ও জীবনে অনেক দেখেছে। এখন তিতিরকে দেখার পালা। তিতির বাচ্চাদের মত খালি মেঘ ধরার চেষ্টা করছে। হঠাৎ মুগ্ধ বলল,
-“এই তোমাকে না বললাম ওই পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে থাকো।”
-“কেন ওদিকে কি?”
একথা বলে পাহাড়টার দিকে তাকালো। কিছুই দেখতে পেলনা। তারপর মুগ্ধর দিকে ফিরে বলল,
-“পাহাড় তো সব যায়গা থেকে দেখা যায়। কিন্তু এত কাছে মেঘ কোথাও পাইনি। আমি মেঘই ধরবো।”
মুগ্ধ তিতিরের মাথাটা ঘুড়িয়ে ধরলো সেই পাহাড়টার দিকে। বলল,
-“জাস্ট আর কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকো।”
কয়েক সেকেন্ড পর তিতির দেখতে পেল বিশাল এক সূর্য থালার মত একটা মাথা জাগিয়েছে পাহাড়ের ওপাশ থেকে। তিতির কোনো কথা বলতে পারলো না। কি অসাধারণ! আস্তে আস্তে সূর্যের এক প্রান্ত পুরো পৃথিবীকে তাতিয়ে উপরে উঠছে। আরো একটু উপরে.. তারপর আরো একটু উপরে। এভাবে একটু একটু করে পুরো সূর্যটাই যখন উপরে উঠে গেল তখন তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“সূর্যটা অনেক বড়। একেবারে অন্যরকম! পাহাড়ের সূর্য বুঝি এমন ভয়ঙ্কর সুন্দর হয়?”
-“শুধু পাহাড়ে নয় সূর্যোদয়ের সময় সূর্য সব যায়গাতেই এমন থাকে। কিন্তু শহরের মানুষ সূর্য ওঠার অনেক পরে ওঠে বলে সূর্যের এই রূপের কথা জানতে পারেনা। তাছাড়া ইট পাথরের দেয়ালের ভেতর থেকে এই সূর্যকে দেখার সুযোগ কোথায় বলো? এই রূপটা পাহাড় আর সমুদ্র থেকে সবচেয়ে ভাল উপভোগ করা যায়।”
-“আপনি কি করে আগে থেকে বুঝেছিলেন ওই পাহাড়ের আড়াল থেকেই সূর্যটা উঠবে?”
-“আমি আগেও এখানে এসেছিলাম, কটেজ থেকে দেখে মনে হয়েছিল এখানে এলে মেঘ ধরতে পারবো, তাই এসেছিলাম। এসে হঠাৎই এইরকম সূর্যোদয় দেখে সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। সূর্যোদয় আমি আগেও বহু দেখেছি সমুদ্রের পাড় থেকে, এর চেয়েও অনেক উঁচু পাহাড় থেকে। কিন্তু তবু এই যায়গা থেকে কেন জানি সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছিল।”
-“আপনার সেই ভাললাগাটা আজ আমাকে দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“না না, ধন্যবাদ নেবনা।”
-“তাহলে?”
-“তোমাকে ঋণী করে রাখবো।”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।