অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৪০

64★

১০২
একপ্রকার বাধ্য হয়েই আরহাম মত দিলেন।উনার পরনে সাদা একটা শার্ট,কালো প্যান্ট মাথায় টুপি,এতটুকুই সাজ।মুখটা মলিন করে নিচুমুখ হয়ে আছেন।আদওয়ার বাড়াবাড়িতে আজই আক্বদ হবে।তার মতে,কখন আরহামের মুড সুয়িং না হয়ে যায়।আর এমন কিছু হলে,সে চোখ বুজে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সবাইকে ভয়ে তটস্থ করে রয়েছে।

বিবাহের খুতবা শেষে ইমাম নিকাহ নামা পড়ে শোনালেন।আরহাম সম্মতি দিয়ে সাইন করতে প্রস্তুত হলেন।
কলম চালাতে গেলে উনার হাত কেঁপে উঠে।জীবনে তৃতীয়বারের মতো এমন পরিস্থিতি।দূটো জিনিসের ভয় আচমকা আঁকড়ে ধরলো উনাকে।প্রথমত তিনজনের মধ্যে সমতা না করতে পারলে ওপারের জীবন কঠিন হবে,আল্লাহর জবাবদিহিতে আটকে যাবেন।দ্বিতীয়ত, দূই আহলিয়ার প্রতি ভালোবাসা কমার ভয়ে!উনারা যদি অসন্তুষ্ট হোন,সব পুণ্যই বৃথা।

ইমাম সাহেব তাড়া দিতে আরহাম উনার প্রিয় রবের প্রতি তাওয়াক্কুল রেখে সাইন করে দিলেন।আদওয়া তো কলম হাতে আগেবাগেই প্রস্তুত।কবুল বলতে আরহামের গলা কাঁপলো,সারা শরীর কাঁপলো, অথচ আদওয়া কবুল বলতে খুব একটা সময় নিলো না।

বিয়ে পড়ানো শেষে এখন দূজনকে আলাদা ঘরে দেওয়া হলো কথা বলার জন্য।
আদওয়ার হাতে এখনো ক্যানেলা লাগানো।সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন আরহাম।

আদওয়া কয়েকবার গলা খাঁকারি দিলো।তাও আরহামের কোনো নড়চড় নেই।শেষমুহুর্তে বাধ্য হয়ে নিজেই বলে উঠলো,’আ্ আমি জানি,আপনি না পারতে মত দিয়েছেন।আমি আপনার সব কথা মেনে চলবো।যেভাবে থাকতে বলবেন ওভাবে থাকবো,আপু দূজনের সাথে কোনো খারাপ আচরণ করবো না।আমি পর্দা করতে চাই পুরোপুরি।আপুদের মতো।’

এবার আরহাম একপলক তাকালেন।জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা।আমার সন্তুষ্টির জন্য না আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পর্দা করতে চাচ্ছেন?’

আদওয়া থতমত খেয়ে গেলো।এতক্ষণ তো ঠিকঠাক কথা বলছিলো।উনার কথাগুলো শুনে কথা আটকে গেলো কেন!

আরহাম বোধহয় আদওয়ার অস্বস্তি বুঝতে পারলেন।বললেন, ‘দেয়ার ইজ নাথিং টু বি নার্ভাস।বি ওকে।’

‘আ্ আপনার বাড়ি কবে যাবো?’

এ পর্যায়ে আরহাম হেসে ফেললেন।

‘শুক্রবার।ইন শা আল্লাহ।’

‘আরেকটা কথা বলব?’

‘হুমম।’

‘আম্মুকে নিয়ে যাব।কদিন থেকে চলে আসবেন।একা কোথাও গিয়ে থাকিনি।’

আরহাম কোনোমতে হাসি চেপে বললেন, ‘আচ্ছা।’

পকেট থেকে একটা রিং বের করে ওর হাতে পরাতে পরাতে বললেন, ‘বিয়ে নিয়ে শরীয়তের ভেতরে আপনার কোনো ইচ্ছে আছে?থাকলে বলুন।’

আদওয়া উৎসাহিত হয়ে বলল, ‘আছে আছে।’

‘কি?’

‘সাদা গাউন পড়বো,আর ঘোড়ার গাড়ি করে বিয়ে করবো,আর সারা বাড়ি লাইটিং করা থাকবে,আর অনেক অনেক ছবি উঠবো।’

‘সবকিছু ইসলাম বিরোধী বললেন।আমি বলেছি শরীয়তের ভিতরে।’

‘ওহ।চিন্তা করে বলব।’

‘আপনি এখন আমার স্ত্রী।বেপর্দায় চলাফেরা করবেন না।করলে,আমাকেও জবাবদিহি করতে হবে।আপনার বাসায় অনেক পুরুষ।বাবা,ভাই,ব্যাতীত কারো সামনে যাবেন না।খুব বেশী প্রয়োজন হলে আপন মামা,আপন চাচা এর সামনে বোরকা পড়ে পর্দা মেনে যাবেন।আর যতই প্রয়োজন হউক কারো সামনে যাবেন না।’

‘গেলে গুনাহ হবে?’

‘হ্যাঁ।’

‘চাচাতো ভাই বোন?’

‘বোনদের,মহিলাদের সামনে যাবেন।চাচাতো ভাই,অন্যান্য বয়ে’স কাজিনদের সামনে যাবে না।’

‘আচ্ছা।’

‘আর হাত কাটবেন?আর পাগলামি করবেন?’

‘উহু,আর করবো নাহ।’

‘প্রমিস?’

‘হুমম প্রমিস।’

‘আসি?’

আরহাম রুম থেকে বের হতেই সায়হান দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে রয়।আরহাম ওর দিকে স্থির কিছুক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে পারেন, এ বাড়ির একমাএ উত্তরাধিকারী সে।হাসিমুখে কোলে নিতে ছেলেটা লজ্জা পেয়ে যায়।কানে কানে বলে,’তুমার ছবি আদুর ফোনে দেখেছি।’

আদওয়া পেছন থেকে সায়হানের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই আরহামের চোখাচোখি হয়ে যায়। লজ্জায় দৃষ্টি অবনমিত হয় ওর।বিদায় নিয়ে আসার সময় আদওয়ার কাছে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নাম্বার তুলে দিতে।’

আদওয়া নাম্বার তুলে দিলে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যান আরহাম।গাড়িতে চুপচাপ এসে বসে ড্রাইভিং শুরু করলেন।অল্প জায়গা ড্রাইভিং করেই হঠাৎ ব্রেক কষে নেন।আহনাফ তাজওয়ার উঁকি মেরে দেখলেন আরহাম মাথা চেপে ধরে আছেন।

আব্বু দ্রুত এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঠিক আছো আরহাম?কিছু হয়েছে?’

আরহাম শুধু ইশারায় বুঝালেন,আব্বুকে ড্রাইভিং করতে।

সিট খুলে আব্বু সামনে এগিয়ে গিয়ে আরহামের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘সরি বাবা।’

আরহাম চোখ তুলে তাকাতে আহনাফ তাজওয়ার অসহায় ভঙ্গিতে বললেন, ‘আমার জন্য।ওইদিন আয়বীর…

‘আল্লাহর হুকুম ছিল।’

‘মানিয়ে নিতে পারবে।সময় নাও।’

‘মাইমুনা খুব শকড বাবা।মাসনা মেনে নিতেও কত হার্ট হয়েছেন এখন…

‘তুমি ভেঙে পড়ো না এখন।’

‘উনাদের সামনে যেতে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে।’

‘বি কোল।সময়ের সাথে সাথে মানিয়ে নিতে পারবে।ওখানে যেমন আদওয়ার সামনে নরমাল ছিলে,এভাবে থেকো।’

‘মনের বিরুদ্ধে থেকেছি আব্বু।আমি উনাকে হার্ট করতে চাই নি প্রথম সাক্ষাতে।’

‘আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রাখো।উনি ই সবকিছু সহজ করে দিবেন।’

****
বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখলেন,হাফসা মাইমুনা ড্রয়িং রুমে। আরহামকে ডুকতে দেখে দূজনে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায়।

আরহাম তাদের দিকে চোখ মেলাতেই পারছেন না।হাফসা উৎসুক হয়ে বলে, ‘ছোটো কোথায়?’

‘বাসায়।’

‘আনলেন না আমরা অপেক্ষায় ছিলাম।’

আরহাম কিছু বলতে পারলেন না।চুপচাপ উপরে উঠে গেলেন কারণ মাইমুনার ধারালো দৃষ্টি উনি এভোয়েড করতে পারছিলেন না।

হাফসাও চুপ হয়ে সোফায় বসে পড়ে। আব্বু দূর থেকে এ দৃশ্য দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে দূজনের জন্য আনা ফুচকার প্যাকেট এগিয়ে রেডি করে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন।অন্যসব গল্পে মেতে উঠলেও বুঝতে পারলেন দূজনের মন একই ঘটনায় স্থির।ঠোঁটে ঝুলানো সৌজন্যমূলক হাসিটা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছে ভেতরে তীব্র বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস!

অন্যদিনের থেকে ব্যাতিক্রম হতে চাইলো না হাফসা।নাহলে স্বাভাবিক থাকবে কী করে।একমগ কফি নিয়ে আরহামের রুমে ডুকতে দেখে ওয়াশরুমে পানির শব্দ।কাবার্ডে উনার ফোন বাজছে।

আইরার ফোন হতে পারে দেখে এগিয়ে আসতে দেখে ‘আদওয়া❤️’ দিয়ে নাম্বার সেইব করা।চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে কাপ রেখে দ্রুত বেরিয়ে যায় সে!

খানিক পর আরহাম বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে দেখলেন, ফোন আসছে।না দেখেই ফোন তুলে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম কে?’

সালামের উত্তর দিয়ে আদওয়া বলল, ‘সেইব নাম্বার কি কেটে দিয়েছেন?’

আরহাম বুঝতে না পেরে ফোন নামিয়ে দেখলেন।তখন চোখ পড়ে কফির কাপে।কিছু একটা ভেবে তড়িৎ দরজা থেকে বাহির চেক করলেন।মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো উনার।ব্যস্ত ভঙ্গিতে আদওয়াকে বললেন, ‘একটু ব্যস্ত আছি। এখন রাখি।’

দ্রুত বেরিয়ে উমায়েরের রুমে গিয়ে দেখলেন, সে নেই।খুঁজতে খুঁজতে নিচে নেমে দেখলেন,আম্মুর সাথে গল্প করে করে কফি খাচ্ছে সে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে আসলেন তিনি।এ মেয়েটা পারেও বটে!নিজেকে যতটা শক্ত খোলসে আবৃত রাখে,একাকীত্বে ততটাই অসহায় হয়ে পড়ে।নিশ্চয়ই কাঁদবে,যখন আমি পাশে থাকবো না।

******
ডিনারের সময় খাবার খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লো হাফসা।একটু ঘুম দরকার।মানসিক শান্তি দরকার!অস্থিরতায় দূ চোখ লেগে আসছিলো প্রায়।তখন আরহাম আসলেন।পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কষ্ট পাচ্ছেন?’

‘উহু।’

আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। হাফসাকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে শুয়ে পড়লেন।

১০৩
লুকানো কিছু দূ:খ,অপ্রকাশিত কিছু অভিমান আর মিথ্যে হাসি নিয়ে চারটে দিন পেরিয়ে গিয়েছে কোনোভাবে।আজ শুক্রবার।উনার বিয়ে!বরপক্ষ থেকে দূই গাড়িই যাবে মাএ।তিনি,আব্বু,আলফাজ আর গুটিকয়েক শুভাকাঙ্ক্ষী।

গতদিন রাতে শপিং করে তাদের বাসায়ই পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সকালে নাস্তায় আসেননি।বাকি সময়টুকু মায়ের সাথে ছিলেন।মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছেন অনেক সময়।পুরো সময়টুকু মন খারাপ ছিলো।

উপরে উঠার সময় উমায়েরের রুম পেরিয়ে যেতে তাকে উনার রুমে যেতে বললেন।হাফসা কিছুসময় পর গেলো।উনি তখন টাওয়াল হাতে শাওয়ারে ডুকবেন।হাফসাকে আসতে দেখে টাওয়াল রেখে এগিয়ে এলেন।গালে হাত রেখে বললেন, ‘আমি যখন সামনে থাকি না তখন কাঁদেন না?’

‘আপনার লেট হয়ে যাচ্ছে।’

‘আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে যতটুকু কান্না করবেন,এখন আমার সামনেই কান্না করে নিন।’

শক্ত মন,শক্ত স্বর গুড়িয়ে গেলো মুহুর্তেই।কান্নারা ঠেলেঠুলে বেরিয়ে আসলো।দূর্বল হয়ে পড়লো সে।আরহামের বুকে পড়ে সবটুকু জমা রাখা অশ্রু বেরিয়ে আসলো।আরহাম চমকে গেলেন,থমকে গেলেন।সত্যিই এত যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখেন?উমায়েরের বাঁধছাড়া কান্নার দকলে নিজের চোখ থেকে কখন অশ্রু গড়িয়ে গালে পড়লো,জানা নেই।হাফসাকে শক্ত করে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে সরল মনে বলে উঠলেন, ‘উনাকে নিয়ে না আসি?যতটুকু হয়েছে ভেঙে ফেলি।আর না এগোই?’

হাফসা মাথা তুলে চোখমুখ মুছে শান্ত হলো।তিরতির করে কাঁপা দূটো হাতে আরহামের গাল মুছে মুখে হাসি টেনে বলল,’আপনি ভাঙ্গার কথা বলছেন, আর সে হয়তো বউ সাজতে বসে গেছে!ওর স্বপ্নগুলো ভাঙ্গতে দেওয়ার আমি কেউ না।’

‘কিন্তু আপনি….’

‘সামান্য একটু কষ্ট লেগেছে।কিন্তু ওর প্রতি কোনো রাগ,অভিযোগ নেই।’

আরহাম অস্থির হয়ে পড়েছেন হঠাৎ।বিয়ে করতে যাবেন না বলছেন বারবার।হাফসা উনাকে সামলে শাওয়ারে নিলো।আরহামের মন ভালো করতে হাসি-আড্ডা সমেত চুলগুলো ব্রুশ করে দিলো।অতপর বেরিয়ে এসে আরহামের কাপড় গুছিয়ে রাখলো।তিনি শাওয়ার নিয়ে আসলে চুল মুছে দিতেই বাবা পারমিশন নিয়ে রুমে আসলেন।আরহামের শুভ্র সাদা পান্জাবির ওপর গায়ে শেরওয়ানি জড়িয়ে কপালে আঁতর লাগিয়ে দিলেন।হাফসার কষ্ট বাড়ছেই।বরবেশে আরহামকে দেখেই চক্ষু গোলক শান্ত হয়ে গেলো।আজকে যেনো উনার সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে গেছে।আজকের পুরো সৌন্দর্যটুকুই নতুন কারো জন্য! নতুন কারোর চোখে মুগ্ধতা লাগানোর জন্য!

শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরলেন।অনুরোধের সুরে বললেন, মাইমুনাকে দেখে রাখতে।

নিচে নেমে মাইমুনার রুমে থাকলেন বেশ কিছুক্ষণ।বেশি বেশি কান্না করা দূজনেরই নিষেধ।আম্মু বলে দিয়েছেন, এমন হলে পরে আরহাম মত চেন্জ করে নিবে।অতপর তাকে টলানো অনেক কঠিন হবে!’

বিদায় নিয়ে বেরোলেন তিনি।যাওয়ার সময় ছলছল চোখে একবার তাকালেন।আড়ালে চোখ মুছে বেরিয়ে গেলেন।হাফসা চুপচাপ ওপরে এসে দ্বি তলের বারান্দা থেকে দেখলো,বরের গাড়ি তাজা গোলাপে সাজানো।চোখদুটোর আর কিছু সহ্য করার ক্ষমতা হলো না,মাথা ভনভন করতে লাগলো।রেলিং ধরে ধরে কোনোমত রুমে এসে শুয়ে পড়লো সে।

******
বাড়িতে তখন উৎসবের আমেজ।বউ সাজা মাএ শেষ হয়েছে আদওয়ার।তাদের পাঠানো প্রতিটি অর্নামেন্টসসহ গাউন একেবারে মনমতো হয়েছে ওর।জানালার থাই সরিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকটায়।
কখন বরের গাড়ি আসবে!

65★

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গেট দিয়ে ঢুকলো ব্ল্যাক মাজিন কারসহ আরেকটি গাড়ি।উঠোনে এসে থামলে সবাই বর নিয়ে হামলে পড়লো।আরহাম আগে থেকেই জানিয়েছেন কোনো অনুষ্ঠান না করতে।বিয়েতে আগত মেহমান দের খানাপিনা পাশের একটা সেন্টারে করা হয়েছে।যার সম্পূর্ণ খরচ আরহাম নিজেই নিয়েছেন।

গাড়ি থেকে আরহাম নামতেই বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে যায় আদওয়ার।পাথর বসানো ডার্ক ব্লু শেরওয়ানির সাথে সবুজ পাগড়ি।একদম ওর মনমতো!

বাবা এগিয়ে গিয়ে তাদের রিসিভ করে আনলেন।আদওয়া জানালা থেকে সরে এলো।হার্ট এত দ্রুতবিট করছে কেন!

****
সেন্টারে নারী পুরুষের আলাদা খাবারের কড়াকড়ি ব্যবস্থা ছিল।খানাপিনা শেষে শুধু মাহরাম নিয়ে আলাদা একটি কক্ষে দূজনকে বসানো হলো।মিষ্টিমুখসহ করমর্দন হলো,বন্ধু সম্পর্ক থেকে বেয়াই-তে উন্নীত হওয়ায়।আদওয়ার পরনে সবুজ গাউন!গতরাতে ঠিক এই কালারগুলো মেসেজে আরহামকে বলেছিল,উনার শেরওয়ানি-পাগড়ি,আর ওর হিজাব গাউন এমন রঙ্গের হবে।লোকটা নীরবে সব আবদারই রেখেছেন ঠিক,কিন্তু তিনি খুশি না।

আদওয়াকে নগদ দেনমোহর বুঝিয়ে দেওয়া হলো।তিন আহলিয়ার বেলায়ই তিনি সমতা করেছেন।আংটিবদল শেষে বেলা তখন আসরের টাইম ছুঁইছুঁই।পুরো সময়টুকু আরহাম চুপচাপ ছিলেন।একটা কথা বলা তো দূর,ঠিক করে তাকাননি অবধি।আদওয়ার মন খারাপ হলো খুব।বিদায় বেলা বাবার বুকে পড়ে বেশ জোরেই কেঁদে ফেললো সে।আপনজনের থেকে বিদায় নিতেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।এখন আর এ বাড়িতে সে মেহমান হয়ে আসবে,ভাবতেই চোখ ছাপিয়ে ভারী বর্ষণ হলো।

যাওয়ার সময় পুরোপুরি পর্দায় আবৃত ছিলো সে।গাড়িতে উঠার সময় হেঁচকির মাএা সামলাতে পারছিলো না।আরহাম এগিয়ে এসে হাত ধরে গাড়িতে বসান।আদওয়ার বাবার কান্নারত আকুতি; অবুঝ মেয়েটাকে কখনো কষ্ট না দেওয়ার আবদারে স্নেহের সহিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে অতপর সম্মানার্থে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে আসেন।

গাড়ি ছুটছে নিজ গন্তব্যে।আদওয়ার চোখমুখ মুছে দিয়ে একহাত মুঠোবন্দি করে আছেন আরহাম।আর এতটুকুই যেন আদওয়ার ভরসার শক্তি।তাজা গোলাপের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।

আরহাম গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, ‘কোনো ইচ্ছে বাকি আছে?’

আদওয়া উত্তর দিলো না।বরং অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে বলল,’আপনি কি খুব বেশীই অখুশি বিয়েতে?’

আরহাম বুঝে গেলেন ওর প্রশ্নের কারন।বললেন, ‘না তো।আমি খুশি।কেন?’

‘বিশ্বাস হলো না।’

‘হয়ে যাবে।’

আদওয়া শুনতে না পেয়ে বলল,’হু?’

‘ওইদিন যখন রাস্তায় একটা ব্যাড সিচুয়েশনের স্বীকার হয়েছেন,তখনই ভেবেছি আপনার একজন বিশ্বস্ত মানুষ দরকার।’

‘আপনি সত্যি খুশি তো?’

‘জ্বী,খুশি।’

নিকাবের আড়ালে আদওয়ার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।

*****

বাড়িতে এসে সাধারণ কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আদওয়াকে আলাদা একটা রুমে নিয়ে বসানো হলো।একটু পর সুদর্শিনী,সুশ্রী এক সুন্দর মুখ দেখতে মেমোরি ঘাটতে শুরু করে সে।ইনাকে কোথাও দেখেছে সে!

হাফসা মুচকি হেসে এসে বলল, ‘আমি হাফসা।’

আদওয়া মুচকি হেসে আড়চোখে চেয়ে রইলো খানিক সময়।এত সুন্দর নারীর সামনে সে তো নির্ঘাত কুৎসিত।কোনো প্রসাধনী ব্যতীতই যার রূপসৌন্দর্য্য ঝলমল করছে,সেখানে প্রসাধনী ব্যবহার করেই খাদ নিচেই পড়ে আছে সে।

হাফসা এসে প্রফুল্লিত স্বরে বলল, ‘মাশাআল্লাহ এতো কিউট আপনি।’

এমন সুদর্শী নারীর থেকে প্রশংসা যেনো আদওয়ার লজ্জা বাড়িয়ে দিলো।

আমি আপনাকে তুমি করে ডাকি?রাগ করবেন না তো?’

হাফসার প্রশ্নে আদওয়া উত্তর দিল, ‘অবশ্যই ডাকতে পারেন।রাগ কেন করব?’

‘আচ্ছা।’

বোরকা-নিকাব খুলেই বসে ছিলো সে।আচমকা পুরো রুমে চোখ বুলাতে দেখলো,ড্রেসিং,হ্যাঙ্গার কেবিনেট ওর কাপড়ই।

ওর তাকানো দেখে হাফসা অনুতপ্ত সুরে বলল,’আই এম সরি।গতকাল তোমার বাসা থেকে মেহমান এসে ইনভাইটেশন কার্ডসহ লাগেজ দিয়ে গেছেন।রুমটা যেহেতু এখন থেকে তোমার-ই তাই গুছিয়ে রেখেছি।রাগ করেছো?’

আদওয়া মুচকি হেসে বলে,’জ্বী না।’

‘খিদে লেগেছে?’

‘উহু।’

হাফসা বেরিয়ে গেলো।কিছুক্ষণ পরে এসে জেলী মিক্সড দূইপিস ব্রেড মুখে তুলে বলল, ‘মুখটা শুকনো লাগছে।খেয়ে নাও।’

আদওয়া মানা করেও করলো না।সত্যিই ওর খিদে লেগেছে।আপু বুঝলেন কী করে!

যাওয়ার আগে মুচকি হেসে বলে গেল, ‘আসলে ওয়েলমিক্সড কিছু দেইনি।খালি পেট থাকলে গ্যাসে প্রবলেম হবে।’

*******
সন্ধ্যার পর তিনি রুমে আসলেন।কাবাডে কিছু একটা খুঁজছিলেন তখন।উনার পরনে সাদা সুতি পান্জাবি।একেবারেই সাধারণ বেশেও মানুষকে এত সুন্দর লাগতে পারে জানা ছিল না আদওয়ার।

আদওয়াকে বিছানা থেকে নামতে দেখে পিছ ঘুরে বললেন, ‘থাকুন।নামতে হবে না।’

‘সালাম করব না?’

‘মুখে বললে হবে।’

১০৪
সালাম বিনিময় হতে আরহাম খানিক চুপ থেকে বললেন, ‘আই নীড সাম টাইম টু ওবজার্ভ ইউ।’

(আই নো, বাস্তবে এমন কখনো হবে না।আর আমি বলেছি’ই যে,গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ।বাস্তবে এগুলো হয় না আমি জানি।এটা যাস্ট একটা গল্প’ই।আর যারা আদওয়াকে পছন্দ করছেন না বা মেনে নিতে পারছেন না বিশেষ করে তাদেরকে অনুরোধ করবো গল্পটা শেষ পর্যন্ত পড়িয়েন)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।