ভালবাসার রাজপ্রাসাদ | পর্ব – ৩

বাড়ির সবাই নববধুকে বরন করে নেবার জন্য আগে থেকেই দরজায় উপস্থিত ছিল। অভির মা, দিদা, মেঘনা এবং আরও অনেকে। গাড়ি থেকে নেমে অভি লক্ষ্য করল যে পরী আর মৈথিলী দুজনের মধ্যে বেশ হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে। পরীর হাসিখুসি মুখ দেখে অভির বেশ ভাল লাগল। উৎসুক নয়নে অভি তাকিয়ে ছিল পরীর দিকে কখন একবার চারচোখ এক হয়। মায়ের দিকে গুটি পায়ে এগিয়ে গেল অভি। বাবা এককোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অভি কে দেখে কাছে ডাকলেন। কনের বাড়ির কুশল মঙ্গল আর রাতের কথা জিজ্ঞেস করলেন। অভি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে রাতে কোন অসুবিধা হয়নি।
মৈথিলীকে বরন করার পরে, পরী ওকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। বাড়িতে ঢুকে পড়ার আগে চোরা চাহনি দিয়ে গেল অভির দিকে।
কিছু পরে মৃগাঙ্ক এসে অভিকে ওদের সাথে যেতে বলল। মৃগাঙ্কর বাড়ি দিদার বাড়ির কাছেই। অভি উত্তরে জানাল যে ও জামা কাপড় বদলে ওদের সাথে ওদের বাড়ি যাবে।
বাড়ি ঢোকা মাত্রই মা জিজ্ঞেস করলেন যে ওর শালটার কি হল। অভি জানিয়ে দিল যে রাতে পরীর খুব ঠাণ্ডা লাগছিল তাই ওর শাল পরী নিয়ে নিয়েছে। মা ওর কথা শুনে খুশি হয়ে বললেন যে ভাল কাজ করেছিস। বাথরুমে ঢুকতে যাবে অভি, ঠিক এমন সময়ে পরী এসে মাকে জড়িয়ে ধরল। মায়ের কাঁধের পাশ থেকে অভির দিকে দুষ্টু মিষ্টি হেসে মায়ের গালে চুমু খেল। মা পরীকে এক মৃদু বকুনি দিয়ে বলল রাতের জামাকাপড় বদলে নিতে।
পরী মাকে জিজ্ঞেস করল যে মা ওর মায়ের সাথে কথা বলেছেন কি না। মা উত্তর দিলেন যে রাতের বেলা সবকিছু মিটে যাবার পরে তিনি দিদার সাথে পরীর ব্যাপারে কথা বলবেন।
পরী আদর করে মায়ের গালে চুমু খেয়ে বলল, “তুমি আমার খুব ভাল দিদি। আজ থেকে আমি তোমাকে ছোটমা বলে ডাকব।”
মা ওর গালে আদর করে বলল, “তুই মা, চিরকাল আমার চোখের মনি ছিলিস। কতদিন তোকে দেখিনি। আয় কাছে বস, তোকে দুচোখ ভরে একবার দেখি।”
অভি, বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে মা মেয়ের আদর দেখতে থাকে। মা ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কিরে কি দেখছিস? চুপিচুপি মা মেয়ের কথা শুনছিস?”
পরী মায়ের কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মা ওর চুলে বিলি কাটতে থাকে আর ছোট্ট বিড়ালের মতন পরী মায়ের আদর খেতে থাকে।
মা মেয়ের অতিরিক্ত প্রেম আর সহ্য হল না অভির। জামা কাপড় বদলানর জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল। বেশ খানিকক্ষণ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে, পরী মায়ের কোলে মাথা গুঁজে কাঁদছে আর মায়ের চোখেও জল। অভি মাকে জিজ্ঞেস করল যে কি হয়েছে। মা কিছু উত্তর দিলেন না, শুধু বললেন চলে যেতে।
ঠিক সেই সময়ে বাইরে থেকে মৃগাঙ্কর ডাক শুনে অভি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। ঘরের মধ্যে ক্রন্দন রত অভির ভালবাসার দুই প্রতিমা, এক মা এক পরী। মৃগাঙ্কর বাড়ির দিকে যেতে যেতে অভি ভাবতে চেষ্টা করে যে কি কারনে মা আর পরী কাঁদতে পারে। ওর মাথায় কোন কারন খুঁজে পেলে না। মৃগাঙ্ক জানাল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই সুব্রতও ওদের সাথে ড্রিঙ্ক পার্টিতে যোগদান করবে।
মৃগাঙ্কর বাড়ি পৌঁছে অভি লক্ষ্য করল যে সুব্রত আগে থেকেই বাড়িতে উপস্থিত। তিন তলার ঘরে মদের আসর বসেছে, সমির বারটেন্ডার, সবাই কে গ্লাসে মদ ঢেলে দিচ্ছে। সমির, মৃগাঙ্কর সুব্রতর আর অভির মাঝে শুধু মাত্র সুব্রতর বিয়ে হয়েছিল, বাকিরা অবিবাহিত। হাসি ঠাট্টা মজা মিলিয়ে মদ্য পান চলতে লাগল। সমির বেশ পটু হাতে গ্লাস ধরিয়ে দিচ্ছে ওদের কে। সুরার নেশা সুব্রতর আর মৃগাঙ্কর রক্তে লেগে গেছে।
মদের ঝোঁকে মৃগাঙ্ক বলে ফেলল, “গুরু, আমি শুচিস্মিতাকে ভালবাসি।”
সুব্রত ওর কাধ চাপড়ে বলল, “বোকা… তুই ত একটা মস্ত গাধা। এতদিন চুপ করে ছিলিস।”
কথা শুনে অভির মনে হল যেন কেউ ওর কানের ওপরে গরম সিসে ঢেলে দিয়েছে। গ্লাসে চুমুক দিতে ভুলে গেল, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মৃগাঙ্কর দিকে, “শালা বলে কি?”
মৃগাঙ্ক সুব্রতকে বলল, “তোর বড়দার ভয়ে ত আমি কিছু বলতেই পারিনি।”
সুব্রত, “বড়দা আমাদের বাবার মতন। বড়দা যতই রাগি হক না কেন, একদম নারকেল আমার বড়দা। ওপরটা শক্ত কিন্তু ভেতরটা একদম নরম আর জলে ভর্তি।”
মৃগাঙ্ক, “ঠিক আছে তাই হবে। আমি তাহলে তোর বড়দার সাথে কথা বলব।”
মৃগাঙ্কর কথা শুনে অভির মনে হল যেন টেনে এক চড় কসিয়ে দেয় মৃগাঙ্কের গালের ওপরে, “শালার কিনা আমার প্রেমিকার ওপরে নজর?” কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে, এক ঢোকে পুর গ্লাসটা গোলায় ঢেলে দেয়। রক্তের সাথে মদ মিশে গিয়ে মাথা ঝিনঝিন করে ওঠে।
সুব্রত অভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, “এই ছেলে, এই অভিমন্যু। কিছু বল…”
ধুক করে ওঠে অভির বুক। হাতের সামনে ছিল রামের বোতল, একটানে ছিপি খুলে নিয়ে কিছুটা গোলায় ঢেলে নিল। দাতে দাঁত পিষে জিজ্ঞেস করল, “আমার কি বলার আছে?”
সুব্রত ওর দিকে হেসে উত্তর দিল, “যা কিছু। তোমার কথা, তোমার গার্লফ্রেন্ডের কথা।”
ওর কথা শুনে যেন অভির প্রানে বাতাস এল, “যাক সুব্রত আমাদের সম্পর্কের কথা কিছু জানে না।”
হেসে জবাব দিল অভি, “না আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। কলেজের সবাই খালি বই পড়া মাগি।”
ওই কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে।
মৃগাঙ্ক নাছরবান্দা, “ভাই সুব্রত, আমি শুচিস্মিতাকে বিয়ে করব।”
ওর কথা শুনে সুব্রত বলল, “সে গুড়ে বালি। পরীর মাথায় নিশ্চয় কিছু একটা চলছে আর সেই জন্য”
অভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, “ওর মা, আমাদের উলুপিদি আমার বিয়েতে এখানে এসেছেন। আমি খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারছি যে আজ কালের মধ্যে এক বিশাল ঝড় আসবে বাড়িতে। আর সেই ঝড়ে অনেক কিছু বদলে যাবে। আমার ছোটবেলার কথা বিশেষ কিছু মনে নেই তবে মায়ের মুখে শুনেছি যে উলুপিদি আমাদের সংসার টাকে নিজের সংসারের মতন করে ভালবাসতেন, বিশেষ করে পরীকে। বাবা মারা যাওয়ার পরে উলুপিদি আমাদের সংসারটাকে টেনে ছিলেন। আমরা সবাই তখন খুব ছোটো।
আমাদের ভাত কাপড়ের যোগাড় তিনি করেছিলেন সেই সময়ে। অনেক জল গড়িয়ে গেছে, অনেক দিন কেটে গেছে। আমাদের মধ্যে নিশ্চয় কিছু একটা ঘটে ছিল যার জন্য আজ পর্যন্ত উলুপিদি আমাদের বাড়িতে আর পা রাখেননি। আমি হলফ করে বলতে পারি যে উনি যখন এ বাড়িতে পা রেখেছেন তখন বিশাল কিছু একটা ঘটতে চলেছে।”
অভির মাথা থেকে মদের ঘোর কেটে গেল। কথা বলার মধ্যে সুব্রত গ্লাস নিচে রেখে দিয়েছে। দু’চোখ লাল, কিঞ্চিত জলে টলটল করছে চোখ। সামির দেখল পরিবেশ বেশ সঙ্গিন হয়ে উঠছে। একথা সেকথা বলে পরিবেশটাকে একটু হালকা করতে চেষ্টা করল সমির। কিন্তু সুব্রত থামতে নারাজ, ওর রক্তে যেন আগুন লেগেছে।
অভির হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, “কেন এসেছে তোমার মা?”
এই প্রশ্ন শুনে সবাই অভির দিকে তাকিয়ে। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পেলনা, চুপ করে থাকে।
সুব্রত, “আমাকে বলতে দে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তার জন্য আমার দিদিরা ইন্দ্রানিদি আর চন্দ্রানিদি দায়ী। বড় লোকের বাড়িতে বিয়ে হয়ে যাবার পরে দেমাকে ওদের পা আর মাটিতে পরে না। অতীতে যারা আমাদের সাহায্য করেছিল তাদের সবাই কে ওরা ভুলে গেছে। উলুপিদি যে কারনেই হক আজ আমাদের বাড়িতে এসেছেন, আমি তার পাশে আছি।”
অগত্যা অভিকে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলতে হল, “মা পরীর জন্য এ বাড়িতে এসেছেন। পরী এম.এস.সি পড়তে চায় এবং মায়ের মতন টিচার হতে চায়। কিন্তু তোমার ফ্যামিলির দিক থেকে অনেক বাধা আছে বিশেষ করে তোমার দিদিদের কাছ থেকে।”
সুব্রত অভির পিঠ চাপড়ে উত্তর দেয়, “আরে কোন চিন্তা করোনা। পরী যা চায় তা করবে। আমি আজ পর্যন্ত চুপ করেছিলাম কিন্তু আজ আমি মুখ খুলব। আজ দিদিরা আমাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না।”
ঠিক সেইসময়ে দুষ্টু দৌড়ে এসে জানায় যে সুব্রতর আর অভির বাড়িতে ডাক পড়েছে। বাড়িতে খাবার ঘরে কিছুর আলোচনা চলছে। ওর মুখে এই কথা শুনে সুব্রতর আর অভির নেশার ঘোর একদম কেটে গেল। দু’জনে একে ওপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে দৌড় লাগাল বাড়ির দিকে।
খাবার ঘরে ঢুকে দেখে বাড়ির সব বড়রা একত্রিত। বাবা, মা তার পাশে দিদা, তার পাশে ইন্দ্রানি মাসি আর চন্দ্রানি মাসি। ওদের সাথে ওদের স্বামিরাও উপস্থিত। তার পরে সশাঙ্ক মামা আর মেঘনা বসে। সব শেষে বসে আছেন সুমন্ত মামা। পরী, মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
ইন্দ্রানি, “দেখ উলুপিদি, আমাদের পরিবারের কেউই গ্রাজুয়েশান করেনি তাও আমরা পরীকে পড়িয়েছি। পরীর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, এবারে ওর বিয়ে করা উচিত। আমরা ওর জন্যে ছেলে খুঁজছি। এতে ক্ষতি কি? দেখ, আমাকে আর চন্দ্রানিকে, আমাদের বিয়ে ঠিকঠাক বাড়িতে হয়েছে।”
মা, “আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, পরী যদি হাইয়ার পড়াশুনা করতে চায় তাতে ক্ষতি কি?”
চন্দ্রানি ঝাজিয়ে ওঠে, “না করবে না। ওর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে গেছিল।”
সুব্রত, “উলুপিদি যা বলছেন ঠিক বলছেন। পরীকে হাইয়ার পড়াশুনা করতে দেওয়া উচিত।”
ওর কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল। ইন্দ্রানি আর চন্দ্রানি হয়ত ভাবতে পারেনি যে সুব্রত এর মাঝে কথা বলতে পারে।
শশাঙ্ক, “তুই চুপ কর সুব্রত। এই সব ব্যাপারে তুই কথা বলিস না।”
চন্দ্রানি, “তোর মতামত কি কেউ জানতে চেয়েছে? তুই চুপ করে থাক।”
সুব্রত, “কেন আমি চুপ করে থাকব কেন? আমি কি এই পরিবারে কেউ নই?”
ঘরের পরিবেশ বেশ গরম হয়ে উঠেছে। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, পরীর চোখে জল। দিদা এক বার পরীর দিকে তাকাল। পরী মা’কে শক্ত করে ধরে আছে যেন কেউ ওর প্রাণ টাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে।
দিদা সুমন্ত কে জিজ্ঞেস করলেন, “তোর কি মতামত?”
সুমন্ত উত্তর দিলেন, “আমার মনে হয় পরীকে পড়াশুনা করতে দেওয়া উচিত। এর মাঝে আমরা পরীর জন্য ছেলে খুঁজি, এমন ছেলে যে কিনা পরীকে বিয়ের পরেও পড়াশুনা করতে দেয় আর ও যেন ভবিষ্যতে চাকরি করতে পারে।”
পরী জোরে মাথা নাড়ায়, “না আমি বিয়ে করব না। তোমরা সবাই চাও যে আমি এখান থেকে চলে যাই।”
মা পরীকে শান্ত হতে বললেন।
ইন্দ্রানি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এতদিন পরে আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে নাক গলাতে কেন এসেছ?”
দিদা ইন্দ্রানিকে এক বকুনি দিয়ে বললেন, “তুই চুপ কর, আর কোনদিন এইরকম ভাবে উলুপির সাথে কথা বলবি না। আমি শশাঙ্ককে বলেছিলাম উলুপিকে নিমন্ত্রন করতে।”
ইন্দ্রানি থামতে নারাজ, “আমরা দুই বোন এই পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছি। উলুপিদি কি করেছে আমাদের জন্য যে আজ উলুপিদি সতেরো বছর পরে আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে?”
ওর কথা শুনে মনে হল যেন কেউ ঘরের মধ্যে একটা অ্যাটম বম্ব ফেলে দিয়েছে। সবাই চুপ। মায়ের দু’চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরে পড়ছে।
গুরু গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন মা, “আমি কি করেছি না করেছি সেটা জিজ্ঞেস করিস না। আমি এখানে শুধু মাত্র পরীর জন্য এসেছি আর আমি তোদেরকে আমার কথা মানিয়ে ছাড়বো। জানতে চাস আমি কি করেছি এই পরিবারের জন্য?”
দিদা কেঁদে উঠে মাকে থামতে বললেন, “উলুপি দোহাই আমার, তুই চুপ কর। আমি পরীকে পড়াশুনা করতে দেব, কিন্তু তুই চুপ কর।”
মা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “তোরা কি জানিস? তোদের কি আর মনে আছে? মেসোমশাই মারা যাবার সময়ে পরী কোলের বাচ্চা আর অভি আমার পেটে। তোদের দেখার কেউ ছিলনা, তোরা সবাই ছোটো ছোটো। মাসিমা সবসময়ে কাঁদত, কি হবে ওনার পরিবারের। সুমন্ত স্কুল ছেড়ে দেয়, ধান কলে কাজ নেয় যাতে তোদের মুখে দু গ্রাস ভাত জোটে। আমার জীবনের সেই পাঁচ বছর আমি এই পরিবারকে দিয়েছি। আমার আয় আমার ভালবাসা সব কিছু। তোদের খাওয়া পরা তোদের জামা কাপড়। আজ তোরা একসাথে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস সেটা আমার ওই পাঁচ বছরের জন্য।”
দিদা মায়ের হাত ধরে কাতর মিনতি করেন, “দয়া করে চুপ কর, উলুপি।”
পরী নিস্পলক চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। সমানে গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে চলেছে। অভি আর সুব্রত একে অপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে। মায়ের কথা শুনে কারুর মুখে কোন কথা নেই।
মা, “ওই অভির সাথে, বুকের রক্ত আর দুধ দিয়ে আমি পরীকে বড় করেছি। তোরা সবাই বলতিস যে পরী অভিশপ্ত বলে দূর দূর করতিস, কেননা ওর জন্মাবার পরেই মেসমশাই দেহ রাখেন। আমি বুক কেটে দু টুকরো করে দিয়েছিলাম যাতে পরী বাঁচে।”
সুব্রত চুপ করে মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে বসে পরে। ঘরের মধ্যে সবার চোখে জল। ইন্দ্রানি চন্দ্রানি আর তাদের স্বামীরাও হতবাক। বাবা এর মাঝে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে গেলেন নিজের মনের অভিব্যাক্তি লুকানোর জন্য।
মা, “যদি আমি বুক কেটে দেখাতে পারতাম তাহলে আজ সেটাও তোদের দেখিয়ে দিতাম আমি। পরী আমার মেয়ে নয় কিন্তু আমার মেয়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমি এখানে তোদের জন্য আসিনি। আমি জানি তোরা সবাই এখন বড়লোক হয়ে গেছিস, পয়সার দেমাকে মাটিতে তোদের পা পরেনা।”
পরী আর দিদা সমানে কেঁদে চলেছে, অভির ও দু’চোখ জ্বালা করছে কিন্তু ছেলে বলে সবার সামনে কাঁদতে পারছে না।
মা, “কাল, বিয়ে বউভাত শেষ হয়ে যাবার পরে, আমি পরীকে নিয়ে কোলকাতা চলে যাব। আমি ওর এডমিশান কোলকাতা উনিভারসিটি তে করাব এবং ওর পরাশুনার দায়িত্ব আমার। তোদের কোন পয়সা আমার চাইনা আর আমি তোদের কোন কথার ধার ধারিনা।”
মায়ের বুক থেকে এক দীর্ঘশ্বাস নিঃসৃত হল। পরী মায়ের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। শশাঙ্ক আর সুমন্ত দুজনেই উঠে গিয়ে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করল। অভির মনে হল যেন একটা বিশাল পারিবারিক নাটক শেষ হল এইমাত্র। চারদিকে যেন চোখের জলের ছড়াছড়ি।
অবশেষে সুমন্ত বললেন, “উলুপিদি যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। পরীর ওপরে আমাদের চেয়ে বেশি অধিকার উলুপিদির আর তাঁর অধিকার আছে পরীকে নিয়ে যাওয়ার। আমরা সবাই ভুলে গেছিলাম যে উলুপিদি আমাদের পরিবারের জন্য কি করেছিলেন।”
কিছুক্ষণ থেমে সবার দিকে একবার দেখে বললেন, “কাল বাদে পরশু, আমি এই বাড়ির ভাগ করব। এই বাড়ি সাত ভাগে ভাগ হবে।”
ইন্দ্রানি জিজ্ঞেস করল, “সাত ভাগে কেন? আমরা তো ছয় ভাই বোন?”
যেন একটা সিংহ গর্জে উঠল, “তুই একদম চুপ করে থাকবি। ছয় ভাগ আমাদের ছয় ভাই বোনের আর এক ভাগ মায়ের। মা যাকে ইচ্ছে তাকে দিয়ে যাবেন।”
শশাঙ্ক সুমন্তর কথায় সায় দিলেন।
সুমন্ত, “আমি চাইনা এই কথা এই চার দেওয়ালের বাইরে যাক। কাল সুব্রতর বউভাত, আমি চাইনা ওর বউভাত মাটি হক। কথা শেষ, আর যেন এই নিয়ে বাড়িতে কোন কথা ওঠে না।”
এই সব তর্ক বিতর্কে অনেকটা সময় কেটে গেছে। অভি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, রাত ন’টা বাজে।
অভি আর সুব্রত দুজিনেই দাঁড়িয়ে পড়ল। ইন্দ্রানি আর চন্দ্রানি তাদের স্বামীদের নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
সুব্রত, “ভাই অভি, বড় মাথা ঝিমঝিম করছে। একটু গলায় ঢাললে বড় ভাল হত।”
সুব্রতর সাথে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এল অভি। ঘরের মধ্যে শুধু দিদা, মা আর পরী। পরীর মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে। মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কোলে মাথা রেখে আদর খাচ্ছে। অভির মন পরীর মুখে হাসি দেখে আবার ভাল হয়ে গেল। বুকখানি খুশিতে নাচতে শুরু করে দিল, পরী তাহলে ওর সাথে ওর কাছে কোলকাতায় থাকবে।
অভি আর সুব্রত ছাদে উঠে গেল। ওখানে আগে থেকেই সমির আর মৃগাঙ্ক উপস্থিত ছিল, দু’জনে এক কনে বসে মদ খাচ্ছিল। সুব্রতকে দেখে সমির জানতে চাইল যে কি হয়েছে।
সুব্রত অভির পিঠ চাপড়ে বলল, “এর মা একজন জলজ্যান্ত দেবী।”
পানীয় গলায় ঢালতে ঢালতে ওদের কাছে সুব্রত বিকেলের পুরো ঘটনার বিবরণ দিল। ঠিক সেই সময়ে নিচ থেকে কেউ খেতে ডাক দিল। অভি নিচে নেমে লক্ষ্য করল যে বাড়ির মধ্যে যে বিষণ্ণতার ছায়া পড়েছিল সেটা আর নেই। সবার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে। চন্দ্রানি মাসি আর ইন্দ্রানি মাসি ও বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে বসে আছে। অভি, পরী বা মাকে কোথাও দেখতে পেল না। মেঘনা কে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে মা আর পরী নতুন বউ, মৈথিলীর ঘরে আছে।
ইন্দ্রানি মাসি অভির পিঠে হাত রেখে বলল, “আজকের বিকেলে যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। রাগের মাথায় উলুপিদিকে আমি অনেক কিছু বলে ফেলেছি। মা’কে বলিস পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিতে।”
সুব্রত অভির হয়ে উত্তর দিল, “দিদি, তুই নিজে উলুপিদির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিস, সেটাই ভাল হবে। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে উলুপিদি তোকে ক্ষমা করে দেবেন।”
অভি মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল তারপরে বাবার কথা জিজ্ঞেস করল। ইন্দ্রানি মাসি জানাল যে বাবাকে আগেই খেতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতখনে বাবা হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছেন। অভিকেও ওদের সাথে খেতে বসতে বলল। অভি অনার কথা অমান্য করতে পারল না। ডাইনিং টেবিলের একধারে ইন্দ্রানি মাসি, অভি আর সুব্রত খেতে বসে গেল।
এমন সময়ে সবার চোখ গেল সিঁড়ির দিকে। অভি তাকিয়ে দেখে যে মা আর পরী নতুন বউ, মৈথিলীকে সাথে নিয়ে নেমে আসছে। মৈথিলীর পরনে টকটকে লাল রঙের শাড়ি আর পরী একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার পড়েছে। অভি মনে মনে তুলনা করতে চেষ্টা করল যে কে বেশি সুন্দরী, পরী না মৈথিলী? না ওর পরী বেশি সুন্দরী। এই সব কোলাহল, গলজগের পরে পরীর ফুটফুটে মুখে হাসি দেখে অভির মন খুশিতে ভরে গেল। সেই পুরান উচ্ছল পরী আবার ফিরে এসেছে।
অভি সুব্রতর কাধ চাপড়ে বলল, “ভায়া দারুন যোগাড় করেছো। মৈথিলী ব্যাপক দেখতে।”
সুব্রত, “হেই, আমি তোমার মামা আর সেই সম্পর্কে মৈথিলী তোমার মামি হন। ও আমার হয়ে গেছে, একদম ওর দিকে তাকাবে না।”
অভি, “ধুর, কে মামা? একসাথে বসে দারু গেলার সময়ে মামা ভাগ্নে মনে ছিল না?”
ইন্দ্রানি মাসি কথাটা শুনতে পেয়ে অভির কান ধরে টান দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি! তোমরা দু’জনে ছাদে বসে মদ খাচ্ছিলে?”
অভি, “না না মাসি, আমরা শুধু কফি খাচ্ছিলাম।”
ইন্দ্রানি, “হুম আমার নাক কিন্তু খুব শার্প বুঝলে…”
মা মৈথিলী কে চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসতে বললেন। মা, পরী আর মৈথিলী ঠিক অভির উলটো দিকে বসে। সুব্রতর সামনে মৈথিলী, অভির সামনে পরী আর মায়ের সামনে ইন্দ্রানি মাসি। বসতে গিয়ে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে পরে পরী, অভির নজর চলে যায় পরীর উন্নত বুকের খাজের মাঝে। কোমল বুকের খাঁজ দেখে অভির বুকটা ধুক করে ওঠে। গলা শুকিয়ে যায় কয়েক মুহুরতের জন্য। ফর্সা ত্বকের ওপরে ঘরের আলো যেন পিছল খেয়ে যাচ্ছে।
মা সুব্রতর দিকে তাকিয়ে বলল, “আজকে রাতে তোরা দু’জনে একসাথে শুবি না। কাল থেকে তোদের দিন শুরু।”
খাওয়া দাওয়া শুরু। কিছু পরে অভি ওর পায়ের ওপরে কারুর পায়ের নখের আঁচর অনুভব করল। থালা থেকে পরীর দিকে মুখ তুলে তাকাল অভি, পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। টেবিলের নিচে, নখ দিয়ে অভির পায়ে গভীর আঁচর কাটতে থাকে। সেই আঁচরের স্পর্শে অভির সারা শরীরে বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে বেড়ায়। পরীর চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি। পরীর নখ পা ছাড়িয়ে হাঁটুর কাছে এসে ঘোরাফেরা করছে। অভি দাতে দাঁত পিষে কোন রকমে নিজেকে সংবরণ করে রেখেছে। অগত্যা অভি চুপ করে খাবার গেলা ছাড়া আর কিছু করার শক্তি নেই।
সুব্রত বলল, “কাল অভিকে, ধুতি পাঞ্জাবিতে খুব হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিল। আমার ত একসময়ে ভয় ধরে গেছিল যে বর কে, আমি না অভি? মৈথিলী না ওর গলায় মালা দিয়ে দেয়।”
নতুন বউ, মৈথিলী ওই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। অভির কান লাল হয়ে গেল ওর কথা শুনে। মৈথিলী মায়ের দিকে লাজুক চোখে তাকাল।
পরী হেসে মৈথিলীকে আলতো ধাক্কা মেরে বলল, “বিয়ে হয়ে গেছে আর সেই উপায় নেই, বুঝলে। গত পরশু পর্যন্ত উপায় একটা ছিল ওর গলায় মালা দেবার, এখন সে গুড়ে বালি। আর অভির দিকে নজর দিও না যেন।”
পরীর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল। মৈথিলীর লজ্জা দেখে মা ওকে মৈথিলীকে খ্যপাতে বারন করল। রাতের খাবার পর্ব অনেক হাসি অনেক কথা নিয়ে শেষ হল। সবাইকে পুনরায় খুশি দেখে অভির মন ভাল হয়ে গেল। এতক্ষণ যেন বাড়িতে এক গুমোট হাওয়া বইছিল। মা আর ইন্দ্রানি মাসিকে একসাথে দেখে খুশি হল অভি। খাবার পরে ইন্দ্রানি মাসি মাকে একটা ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। অভি বুঝতে পারল যে আরেক চোট কান্না কাটির পালা শুরু হবে। এই বঙ্গ মহিলাদের চোখে যেন মা গঙ্গা বসবাস করেন।
খাবার পরে অভি হাত ধোয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল আর ঠিক পেছন পেছন পরীও ঢুকল হাত ধুতে। পরী ওর কানে কানে বলল, “আধ ঘন্টা পরে ছাদে থেকও।” একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিল অভি, অদেরকে কেউ দেখছে কিনা। তারপরে হটাত করে পরীকে জড়িয়ে ধরল। এক হাত দিয়ে ঘাড় খানি নিজের মুখের কাছে টেনে নিল আর এক হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিল অভি। ওর এই অকস্মাৎ আচরনে ঘাবড়ে গেল পরী। বুকের ওপরে হাত রেখে ঠেলে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কিন্তু অভির আলিঙ্গন বড় দৃঢ়, নিজেকে ছাড়াতে পারল না পরী।
ডান হাতে ওর কোমর জড়িয়ে আরও নিবিড় করে নিয়ে বলল, “প্লিস প্লিস প্লিস, একটা ছোট্ট কিসি দাও না। অনেক ক্ষণ থেকে আমি তোমার গন্ধ পাইনি সোনা।”
আঁতকে উঠলো পরী, “কি করছ তুমি? ছাড় আমাকে, যে কেউ চলে আসতে পারে।”
অভি অনুনয় সুরে বলে, “পরী শুধু একটা ছোট্ট কিস।”
পরী, “না না এখন নয়, প্লিস ছেড়ে দাও। বলেছি ত আধ ঘন্টা পরে ছাদে থেক।”
অভি, “আধা ঘন্টা অনেক বেশি পরী। অতক্ষণ আমি বেঁচে থাকতে পারব না। শুধু একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে যাও।”
পরী, “তুমি না একদম যাকে বলে, বল্গাহীন গরু। দেখ সোনা, সবুরে মেওয়া ফলে, তাই আমাকে এখন যেতে দাও, কথা দিচ্ছি আমি আধ ঘন্টার মধ্যে ছাদে তোমার সাথে দেখা করব।”
দু’হাতে পরীর পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে আরও কাছে টেনে নেয়। পরী দুহাতে অভির গলা জড়িয়ে ধরে। কোমল বক্ষ আলত করে চাপ দেয় অভির প্রসস্থ বুকের ওপরে। পরীর হৃদয়ের ধুকপুকানি অনুভব করতে পারে নিজের বুকের ওপরে। পরীর বুকের মাঝে যেন এক ঝড় উঠেছে, কাজল কালো চোখ তুলে তাকায় অভির দিকে। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে। নাকের ডগায় নিজের নাক ঘষে দিল পরী। মুখখানি উচু করে নিজের ঠোঁট নিয়ে আসে অভির ভিজে ঠোঁটের কাছে। অভি ওই লাল ঠোঁটের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেনা, নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁতে যায় পরীর ভিজে ঠোঁট।
ঠিক সেই সময়ে মেঘনা ডাক দেয়, “পরী, কোথায় তুমি?”
দু’জনে ওপরে যেন বিদ্যুৎ ঠিকরে পড়ল। ঝট করে একে অপরের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে সরে দাঁড়াল। বাথরুম থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে অভির হাতের মধ্যে একটা রুমাল গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমি না আসা পর্যন্ত আমার গন্ধ নিও।”
পরী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা হাসি দিল আর ইশারা করল যেন ছাদে থাকে। আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিল অভি।
পরী মেঘনা কে বলল, “এই তো আমি, কি হয়েছে, ডাকছো কেন?”
অভিকে পরীর পেছন পেছন বেড়িয়ে আসতে দেখে, ভ্রুকুটি নিয়ে ওদের দিকে তাকায় মেঘনা। পরী মেঘনার চোখের চাহনি দেখে বুঝতে পেরে বলে, “ওই রকম ভাবে দেখছ কেন? বাথরুমে কি করে মানুষে। আমরা হাত ধুতে গেছিলাম আবার কি।”
মেঘনা পরীকে মৈথিলীকে সঙ্গে নিয়ে ওর ঘরে যেতে বলে গেল। অভি কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে সুব্রতকে খোঁজার চেষ্টা করল, কিন্তু সুব্রতর দেখা পাওয়া গেলনা। অভি চন্দ্রানিকে সুব্রতর কথা জিজ্ঞেস করতে, চন্দ্রানি জানাল যে মৃগাঙ্ক এসে সুব্রতকে ওদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখল অভি, বাড়ির বেশির ভাগ লোকজন শুয়ে পড়েছে।
কিছু যখন আর করার নেই তখন কি করে অভি, এই ভেবে ছাদের দিকে পা বাড়াল। একতলার সিঁড়ি দিয়ে যাবার সময়ে যে ঘরে মৈথিলী রাতে থাকবে সেই ঘরের দিকে চোখ পড়ল অভির। পা টিপে টিপে পর্দার আড়ালে এসে দাঁড়িয়ে ঘরের মধ্যে দেখতে চেষ্টা করল অভি। ঘরের মধ্যে পরিকে দেখতে পেল আর কাউকে পেল না। পরী একবার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করল যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা। একবারের জন্য ওর মনে হল কেউ যেন দরজার আরালে দাঁড়িয়ে ওদের কথাবার্তা শুনছে। বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে এল। অভি দেখল এযে ধরা পরে যাবার উপক্রম, তাড়াতাড়ি ছাদে পালিয়ে গেল।
ছাদে উঠে এককোণের রেলিঙ্গের ওপরে বসে পড়ল অভি। মাথার ওপরে শীতকালের ঘন নীল আকাশ। ঠান্ডা হিমেল হাওয়া বইছে দূর মাঠের দিকে থেকে। বাড়ির পেছনের আমের বাগান যেন অনেক গুলো ভুতের মতন একা একা দাঁড়িয়ে আছে। দুরে তাল আর নারকেল গাছ গুলো যেন হাওয়াতে মাথা দুলিয়ে ওকে কাছে ডাকার হাতছানি দিচ্ছে। আকাশের দিকে তাকাল অভি, ঘন নীল আকাশ যেন একটা বিশাল পর্দা আর তার ওপরে কেউ যেন সহস্র কোটি হীরের টুকরো ছড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগেই অমাবস্যা গেছে, আকাশে বাঁকা এক চিলতে চাঁদ।
রেলিঙ্গে বসে বাইরের দিকে পা করে দিগন্তের দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে থাকে অভি। ঘন কালো অন্ধকারের মধ্যে ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর সুগভীর বক্ষ বিভাজন। মন আনচান করে উঠল সেই দৃশ্য মনে করে, মনে হল যেন হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় ওই বক্ষ বিভাজন, নাক মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে ঘষে দেয় পরীর বুকে। অন্ধকারের বুক চিড়ে যেন পরীর গভীর কালো চোখ ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
চুপিচুপি ছাদে উঠে আচমকা অভির কাঁধে হাত রাখে পরী। মধুঢালা গলায় বলে, “কি ভাবছে আমার ছোট্ট রাজকুমার?”
পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে দেয় অভি, কাঁধের দুপাশ থেকে হাত গলিয়ে অভির মাথা নিজের বুকের ওপর চেপে ধরে পরী। পাতলা পাতলা আঙ্গুল দিয়ে অভির মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে আর কপালে ছোটো চুমু খায়।
ফিসফিস করে বলে অভি, “তোমার কথা ভাবছিলাম আমি।”
কাঁধে মাথা নামিয়ে গালে গাল ঘষে দেয় পরী। অভির মনে হল যেন কেউ ওর গালে চন্দনের প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে। কানের কাছে ভ্রমরের মতন গুঙ্গন করে, “আমার রাজকুমার আমাকে সারা রাত ঠিক এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকে যেন। আমি চাই না এই রাত কখন শেষ হক।”
অভি ওর দিকে ঘুরে পা ফাঁক করে বসল। দু’পায়ের ফাঁকে পরীকে টেনে নিল। পরী ওর গলা জড়িয়ে ধরে অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরল। অভির চিবুক পরীর কোমল বক্ষের ওপরে চেপে গেল। বুক ভরে টেনে নিল পরীর মাদকতাময় ঘ্রান। নিবিড় করে পরীর কোমর জড়িয়ে ধরল অভি। জামা কাপড় বদলে নিয়েছে পরী, ওর পরনে একটা সিল্কের নাইটড্রেস, গায়ে অভির শাল।
পরীর বুকের ধুকপুকানি কান পেতে শুনল অভি। কোমল আঙ্গুল দিয়ে মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করে পরী, “আমার বুকের মাঝে কি শুনছো?”
অভি, “হুম্মম্ম…” বুকের মাঝে দুষ্টুমি করে নাক ঘষে দিল অভি।
পরী, “প্রত্যেক হার্টবিট শুধু তোমার নাম বলছে।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা একটা কথা বলবে, সবসময়ে আমার শালটা গায়ে জড়িয়ে থাক কেন বলতে পার?”
পরী, “তোমার গায়ের গন্ধ পাই। মনে হয় যেন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো। শালটা গায়ে থাকলে আমার বড় নিরাপদ লাগে মনে হয় যেন তুমি আমার কাছে আছো, তাই এটা আমি সবসময়ে কাছে রাখি।”
অভি লক্ষ্য করল যে পরীর গলায় একটা মোটা সোনার হার। হার খানি দেখে চিনতে পারল অভি, ওটা ওর মায়ের হার। পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এই হার তুমি কোথায় পেলে?”
কালো চোখের গভীর চাহনি অভির বুকের ভেতর পর্যন্ত পুড়িয়ে দিল, “ছোটোমা দিয়েছে আমাকে।”
ছোটোমা, শেষ পর্যন্ত ওর মাকে পরী ছোটোমা বলে ডাকতে শুরু করেছে।
অভির করতল পরীর পিঠের ওপরে ঘুরতে থাকে, আদর করতে থাকে পরীর মসৃণ পিঠ। দু’হাতে আঁজলা করে তুলে ধরে অভির মুখ। প্রেমের গভীর চাহনি পরীর দুচোখে মাখা।
প্রেমঘন স্বরে বলে, “অনেক অনেক দিন পরে আজ মনে হচ্ছে যেন আমাকে ভালবাসার কেউ আছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধর আমাকে, অভি। আমি তোমার কাছ থেকে কোথাও যেতে চাইনা।”
অভি, “এই রকম করে কেন বলছ। বাড়ির সবাই তোমাকে খুব ভালবাসে।”
পরী, “আর বুঝিয়ে কি হবে আমাকে। আজ আমি আমার সত্যি টুকু যেনে ফেলেছি যে কে কত ভালবাসে আমায়।”
অভি, “আমি তোমার জন্য থাকব, পরী।”
ওর কথা শুনে কেঁপে উঠল পরী, “আমি জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে। আমাকে মিথ্যে কথা বলে ভুলাতে চেষ্টা করোনা।”
কপালে কপাল ঠেকাল পরী, নাকের ডগার সাথে নাকের ডগা। চোখ দুটি একটু ভাসাভাসা। আলতো করে ভিজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল অভির ঠোঁটের ওপরে। একত্রিত হল দুই জোড়া ঠোঁট, কোন কামাগ্নির জ্বলায় নয়, এ যেন এক অনাবিল আনন্দের ঢেউ। কিছুটা যেন শান্তির হিমেল বাতাস, চিরন্তন প্রেমের আভাস। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে কতক্ষণ ওরা ওই ভাবে ছিল তাঁর ইয়াত্তা নেই। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে ওদের চারপাশে। ধিরে ধিরে যেন ওরা নিজেদের খুঁজে পায়, পরী ওর কাঁধে মাথা গুঁজে দেয় ফুফিয়ে ওঠে। অভি ওর পিঠের ওপরে হাত বোলাতে শুরু করে।
কান্না থামানর জন্য পরীকে আসস্থ করে বলে, “কাঁদছ কেন সোনা? কেঁদো না প্লিস। দেখ কাল তুমি আমাদের সাথে, তোমার ছোটোমায়ের সাথে আমাদের বাড়ি যাচ্ছও। সেখানে আমি থাকব, তোমার ছোটোমা থাকবে।”
কিছুক্ষণ পরে মাথা উঠাল পরী, গোলাপি গাল বেয়ে সরু জলের দাগ। মুখখানি আঁজলা করে নিয়ে, বুড় আঙ্গুল দিয়ে জলের দাগ মুছিয়ে দিল অভি।
পরী, “আমার মা, মৈথিলী, মেঘনা বৌদি সবাই মিলে ছোটোমা’কে অনুরধ করেছে যাতে আমি আরও কিছু দিন ওদের সাথে থাকি। আমি কাল তোমার সাথে যেতে পারছি না, অভি।”
অভি, “ঠিক আছে। কয়েক মাস পর থেকে’ত তুমি আমার সাথে থাকবে। এ নিয়ে চিন্তা করোনা আর মন খারাপ করেনা। দেখ এখন তুমি তোমার ছোটো মাকেও পেয়ে গেছ।”
বিষণ্ণ চেহারায় আবার হাসি ফুটে উঠল।
অভি, “এই ত সোনা মেয়ে।”
বুকের ওপরের অনাবৃত অংশে নাক ঘষে দিল অভি। বক্ষ বিভাজনের মাঝে নাক ডুবিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিল, বুক ভরে পরীর গায়ের গন্ধ বুকের মধ্যে টেনে নিল। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল বুকের ওপরে। উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে ওঠে পরী।
বারংবার কেঁপে মৃদু কন্ঠে বলে, “উম্মম্মম্মম্মম… কি করছ তুমি?” অভির মাথা নিজের বুকের ওপরে শক্ত করে চেপে ধরে থাকে। অভির জিব বুকের অনাবৃত অংশে চেটে দেয়। কম্পিত স্বরে ককিয়ে ওঠে পরী, “আমার কাতুকুতু লাগছে যে, থামো না প্লিস…”
নাইট ড্রেসের ওপর দিয়ে সারা পিঠের ওপরে হাত বুলাতে থাকে অভি, পিঠ থেকে কোমর পর্যন্ত। রুক্ষ চুলের ওপরে গাল ঘষতে থাকে পরী। সারা শরীরে প্রেমের আগুন জ্বলে ওঠে। অভির হাত নেমে আসে পরীর কোমল নিতম্বের ওপরে। একটি গোল নিতম্ব হাতের থাবায় নিয়ে পিষে দেয় অভি। নাক দিয়ে তখন আগুন ঝরে পড়ছে।
উষ্ণ শীৎকার করে ওঠে পরী, “উম্মম্মম্ম… অভি, প্লিস ছাড়, কেউ এসে যাবে সোনা।”
অভি, “কেউ ছাদে আসবে না, সোনা।”
পরী, “ছোটো মা চলে আসবে।”
অভি, “তোমার ছোটো মা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।”
পরী, “মেঘনা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসবে।”
অভি, “মেঘনাও এতক্ষণে শুয়ে পড়েছে সোনা।”
পরী, “বাড়ি ভর্তি লোক জন, অভি। কেউ না কেউ আমাদের দেখে ফেলতে পারে। প্লিস বেবি ছেড়ে দাও আমাকে।”
পরী কাতর স্বরে মিনতি করে কিন্তু অভির মাথা নিজের আলিঙ্গনের কবল থেকে মুক্ত করে না, শক্ত করে চেপে রাখে বুকের ওপরে। অভির নিষ্ঠুর হাতের থাবা, পরীর কোমল গোলগাল নিতম্ব দুটিকে পিষে ফেলতে থাকে। পাগলের মতন অভির মাথার ওপরে গাল ঘষে পরী। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয় পরীর নিঃশ্বাস, প্রেমের আগুন ঝরে নিঃশ্বাসে।
ককিয়ে ওঠে পরী, “বেবি প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আর পারছিনা।”
অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়, বক্ষ বিভাজনের মাঝে মুখ ঢুকিয়ে চুমু খাবার চেষ্টা করে। বক্ষের কোমল তুলতুলে নারী মাংসের ছোঁয়ায় অভির শরীরে যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।
পরী, “সোনা না…… কোরো না এই রকম… আমি মরে যাব সোনা… কি যে হচ্ছে না, সারা শরীরে…”
প্রগাড় আলিঙ্গনে বদ্ধ এক জোড়া কপোত কপোতী, সময়ের বাঁধ যেন ওদের কাছে নেই। আশেপাশের ব্যাপারে অবিদিত, দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে ভেসে চলেছে প্রেমের ভেলায়। অভির কামুক হাতের তালু পরীর নিতম্বদ্বয় পেষণ করে চলেছে। নিতম্ব হাতে নিয়ে বুঝতে পারে যে নাইট ড্রেসের নিচে পরীর নিম্নাঙ্গে কোন বস্ত্র নেই। অভির সিংহ কেশর ফুলিয়ে উঠেছে, পরী সিংহের অবয়াব নিজের পেটের ওপরে উপলব্ধি করতে পেরে কেঁপে ওঠে। অভির শয়তানি একটু বেড়ে যায়, খিপ্ত সিংহটিকে পরীর জানু মাঝে চেপে ধরে। নিজের জানু মাঝে অভির খিপ্ত সিংহের ধাক্কা অনুভব করে পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে। কামাগ্নিতে জ্বলে ওঠে দুই প্রান। মাথার চুল ছিঁড়ে দেবার পালা, এমন ভাবে খামচে ধরে অভির মাথা।
পরী, “আমাকে পাগল করে দিচ্ছ অভি। আমার বুকের মাঝে কি যেন হচ্ছে… উফফফ… না… আর পারছিনা সোনা…”
ঠিক যেই সময়ে দুই তৃষ্ণার্ত প্রান প্রেমের খেলায় মগ্ন, সেই সময়ে মেঘনা নিচে থেকে পরীকে ডাক দেয়। মেঘনার গলা শুনে দুজনে এঁকে অপরকে ছেড়ে দাঁড়ায়। দুজনেই হাঁপাতে থাকে, বুকের মাঝে যেন কামারের হাপর টানছে।
পরী দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে বলে, “দেখলে ত, আমি বলেছিলাম না যে মেঘনা বৌদি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসবে।” তারপরে গলার স্বর উঁচু করে উত্তর দেয় মেঘনাকে, “হ্যাঁ কি হয়েছে, আমি ছাদে।”
মেঘনা ছাদে উঠে এসে দুজনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এই অন্ধকার রাতে, একা একা ছাদে কি করছ?”
পরী, “কিছু না। অনেক দিন পরে দেখা পেলাম তাই দু’জনে গল্প করছিলাম।”
সিঁড়িতে আরও একজনের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। কিছু পরে সুব্রত এসে মেঘনার পেছনে দাঁড়াল।
সুব্রত অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি ভায়া, ছাদে কি করছ? আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজে খুঁজে হন্য হয়ে গেলাম আর তুমি ছাদে?”
মেঘনা পরীকে বলল, “বদমাশ মেয়ে, নিচে যাও। মৈথিলীর ঘুম পেয়েছে, তোমাকে ওর সাথে শুতে হবে।”
মেঘনা পরীকে কে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। যাবার আগে চোরা চাহনিতে এক চোরা হাসি ছুঁড়ে গেল অভির দিকে।
সুব্রত অভির কাঁধে হাত রেখে বল, “ভায়া, দু বোতল ওল্ড মঙ্ক যোগাড় করেছি। উঠোনে বসে চলবে নাকি রাতে?”
অভি উত্তরে বলে, “ধুর কি যে বল, কেউ দেখে ফেললে?”
সুব্রত, “আরে বাবা মাঝ রাতে কে আর আমাদের দেখবে। সবাই খেয়ে দেয়ে টেঁসে গেছে।”
উঠোনে বউভাতের মেরাপ বাঁধা, দুজনে ছাদ থেকে নেমে উঠোনের প্যান্ডেলে ঢুকে পড়ল। বাড়ির অধিকাংশ লোকজন শুয়ে পড়েছে, সারা বাড়ি নিস্তব্ধ, গুটিকয়েক আলো ছাড়া সারা বাড়ি অন্ধকারে ঢেকে।
সুব্রত গ্লাসে রাম ঢেলে একটা গ্লাস অভির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “আজ যেন বেশ একটু ফুরফুরে লাগছে। এই দুই দিন যেন ঝড় বয়ে গেল।”
অভি মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল, “ত তুমি কি করে খুঁজে পেলে তোমার স্বপ্নের সুন্দরীকে।”
সুব্রত জানাল যে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে ওদের দেখা হয়েছিল, সেইখানে থেকে দুজনের মধ্যে প্রেম শুরু হয়। একদিকে রাম এক দিকে গল্প, সমান তালে চলতে থাকে। ও আগে মৈথিলীকে প্রপোস করতে চেয়েছিল, কিন্তু বড়দার ভয়ে আর করেনি।
অভি, “তা ম্যানেজ করলে কি করে?”
সুব্রত, “আমি মেঘনা বউদিকে সব জানাই। তারপরে একদিন দুষ্টুর জন্মদিনে ওদের ডাকা হয়। সেখানে বড়দা মৈথিলীকে দেখে পছন্দ হয়। তারপরে মেঘনা বৌদি আর শশাঙ্ক দা মৈথিলীর বাবা মাকে বিয়ের প্রস্তাব জানায়।”
অভি, “হুম বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।” রক্তে ততক্ষণে মদের নেশা। “কাল রাতে বিড়াল মারছ তাহলে। ত হানিমুনে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
সুব্রত, “হুম কাল রাত্রি…” হেসে ফেলল সুব্রত “হানিমুনে গোয়া যাব ঠিক করেছি।”
অভি, “হ্যাঁ গোয়া হানিমুনের জন্য একদম ভাল জায়গা।”
সুব্রতর কাধ চাপড়ে বলে, “মৈথিলীকে দারুন দেখতে।”
সুব্রত, “খালি সুন্দরী? আর কিছু না? বল আমার বউ দারুন সেক্সি!”
শিরায় শিরায় রক্তের চেয়ে বেশি যেন সুরা চলাচল করছে। গলার আওয়াজ জড়িয়ে আসছে দুজনারই “এটা আমাদের সেকেন্ড হানিমুন। আসল হানিমুন ত কবেই সেরে ফেলেছি আমরা।”
অভি, “তাই নাকি?”
সুব্রত, “হ্যাঁ ভাই। আমার বউ খুব মিষ্টি আর খুব সেক্সি। তুমি তোমার কথা বল, কেউ আছে নাকি মনে মনে?”
অভি, “না আমার মনে কাউকে নেই। তবে হ্যাঁ আমার স্কুলের ফিসিক্স ম্যাডামকে আমার খুব ভাল লাগত। সেও দারুন সেক্সি, একটু শর্ট হাইটের, কিন্তু খুব সুন্দরী ছিলেন। আমি ওনার ক্লাসে ঠিক ভাবে পড়াশুনা করতে পারতাম না, খালি ওনাকে দেখে যেতাম।”
সুব্রত, “তারপরে কি হল?”
অভি, “তারপরে কি হবে?”
সুব্রত, “ধুর পাগলা, আমি শুনেছি কলকাতার ম্যাডামরা ছাত্রদের সাথে অনেক কিছু করে।”
অভি, “না না, ওই রকম কিছু ঘটেনি বাবা। তবে হ্যাঁ অনার রুপ দেখে আমার ফিসিক্স পড়া বেড়ে যায় আর আমি গ্রাজুয়েসানে ফিসিক্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি। তা তোমাদের প্রথম হানিমুন কোথায় হয়?”
সুব্রত, “আমরা শান্তিনিকেতন ঘুরতে গেছিলাম।”
মদের নেশায় চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে দুজনেরই, কিন্তু গলায় রাম ঢালা ছারেনা কেউ। অভির চোখ বুজে আসে। সুব্রত ওর পিঠে থাপ্পর মেরে বলে, “আজ আমার জীবনের সব থেকে বড় দিন আর তুমি ঝিমিয়ে পড়ছ? তুমি আমার সব থেকে ভাল বন্ধু।”
অভি চিৎকার ওঠে, “ধুর শালা, আমার মাথা ঘুরছে।”
সুব্রত, “আজ আমি পাগলা ঘোড়া, আমার ঘোড়ি চাই, আমার ঘোড়ি ওই ওপরে ঘুমুচ্ছে।”
সুব্রত টলতে টলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল, চিৎকার কর উঠল, “আমি যাচ্ছি আমার প্রেমিকার কাছে।”
অভি হাত বাড়িয়ে সুব্রতকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল, “আজ রাতে নয়, বসে পর ভায়া।”
ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল সুব্রত, “চূর্ণই কে আমার কাছে নিয়ে আস।”
অভি, “এই চূর্ণই টা আবার কে?”
সুব্রত, “আমার সুন্দরী বউয়ের ডাক নাম চূর্ণই। আমাকে ছেড়ে দাও আমি চুরনির কাছে যাব।”
অভি, “না একদম নড়বে না”
টলতে টলতে আবার সুব্রত চেয়ার ছেড়ে উঠতে চেষ্টা করে, অভি আবার এক ধাক্কা মেরে ওকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
অভি, “ভাই একরাতের ব্যাপার, কোন রকমে কাটিয়ে দাও, কাল থেকে তোমার চূর্ণই তোমার কাছে।”
“ঠিক আছে” এই বলে হেঁড়ে গলায় গান ধরে সুব্রত, “মেরি জান মেরি জান মুরগি কে অন্ডে…”
অভি, “ধুর শালা, এ আবার গান নাকি। আমার গান শোনো তবে।”
“সেদিন দুজনে হেগে ছিনু বনে,
ছুছবার জল ছিল না
বিচুটি পাতায় পোঁদ মুছেছিনু
সে জ্বলুনি আজ গেল না গেল না…”
সুব্রত, “উরি বাস… দারুন গান গুরু… জ্বলুনি আজ গেল না…”
ওরা দুজনে হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, তারপরে কারুর কিছু মনে নেই কি হলো।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।