অনেক্ষন পর মেঘলা আর শুভ রুম থেকে বের হল। মেঘলা কাপড় খোলে জামা পড়েছে এটা দেখেই আকাশের মন খারাপ হয়ে গেল।
লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ১৪
আকাশঃতারমানে মেঘলা ভাইয়ের সামনে ড্রেস চেঞ্জ করেছে ছি…. মেঘলা।
মেঘলা আর শুভ যখন নিচে যেতে চাইল
আকাশ মেঘলাকে ডাকল,
মেঘলাঃ শুভ কে বলল আপনি যান আমি আসছি।
শুভঃ ঠিক আছে।
মেঘলা আকাশের ঘরে যেতেই আকাশ গম্ভির গলায় বলল,মেঘলা তুই বিয়েটা সত্যিই করতে চাস?
মেঘলাঃ হুম….
আকাশঃ ভেবে বলছিস?
মেঘলাঃ ভাবার কি আছে?
আকাশঃ পড়ে কখনো মনে হবে না তো ভুল করেছিস…
মেঘলাঃ না এসব কেন মনে হবে ছেলেটা বেশ ভাল।
আকাশঃ তোর পছন্দ হয়েছে?
মেঘলাঃ হুম….
আকাশঃ ভাল, আচ্ছা এতক্ষন ঘরে কি করলি….তুই ভাইয়ের সামনে শাড়ি খুললি?
মেঘলাঃ অদ্ভুত প্রশ্ন….আপনি একটা ছেলে এগুলি আপনাকে কি করে বলব….
আকাশঃ হুম তাই তো আচ্ছা যা….
মেঘলাঃ এখন আমাদের বিয়ে পড়ানো হবে আপনি যাবেন না?
আকাশঃ আমি যদি না আসতাম আমাকে ছাড়াই তো বিয়ে হত তাহলে এখন ডাকছিস কেন? তুই যা….
মেঘলা আস্তে করে যেতে চাইল
পিছন থেকে আকাশ বলে উঠল মেঘলা……
মেঘলা খুব আগ্রহ নিয়ে বলল কিছু বলবেন…..
আমাকে ভালবাসেন বলুন না প্লিজ (মনে মনে)
আকাশঃ না কিছু না….. যা।
মেঘলা মন খারাপ করে চলে গেল।
আকাশঃ এতবার জিজ্ঞাস করলাম তবুও বল্লি তুই বিয়েটা করতে চাস? সত্যিই চাস বলেই তো বল্লি ঠিক আছে যা আর বাধা দিব না তোর ইচ্ছায় আমার ইচ্ছা তোকে খুশি রাখার ক্ষমতা আমার নেই মেঘলা। আমি এত বাধা ডিংগিয়ে তোকে নিজের করে নিলেও তুই কখনো সুখি হতে পাড়বি না। এই বাড়িতে সারাজীবন সবাই তোকে কাজের মেয়ে করেই রাখবে তার চেয়ে যা হচ্ছে ভালই হচ্ছে শুভ ভাই অনেক ভাল ছেলে তোকে খুশি রাখবে আমি নাহয় তোর খুশিতেই সুখি হব …..
মেঘলাঃ নিচে এসে বসেছে মনে মনে ভাবছে এখুনো বলবেন না আমায় ভালবাসেন আমি আপনার যোগ্য নই তাই সবার সামনে বলতে পারেন না তাই না? ঠিক আছে চলে যাব সত্যিই চলে যাব। আপনি কি আমায় ভালবাসেন নাকি সবি আমার মনের ভুল?
হুম এসবি আমার মনের ভুল আপনি তো ইরা আপুকে ভালবাসেন।আমাকে কেন ভালবাসতে যাবেন।
।
।
।
।
বিয়ে পরানো শুরু হল।
আগে রেস্ট্রি পেপারে সাইন হবে তারপর ধর্মমতে বিয়ে হবে।
কাজিঃ মা এখানে একটা সাইন করো।
মেঘলা বারবার ফিড়ে ফিড়ে দেখছে আকাশ আসে কিনা কিন্তু আকাশের কোন পাত্তা নেই মেঘলা হতাশ হয়ে হাতে কলম নিল।
সাইনের জন্য যেই কলম বাড়াল তখনি নাবিল এসে বলল থামো, কি করছো এসব মেঘলা?
নাবিলের মাঃ কেন কি হয়েছে বাবু? আর তুমি হটাৎ এখানে? তুমি তো কক্সবাজার ছিলে। এখানে আসলে কি করে?
নাবিলঃ দরকার আছে তাই এসেছি…
নাবিলের মাঃ কি দরকার?
নাবিলঃ আমি মেঘলাকে ভালবাসি মা….
কথাটা শুনে সবাই থমকে গেল।
মেঘলা অবাকে শেষ সীমায় পৌছে প্রশ্ন করল ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন?
নাবিলঃ তুমি কি সত্যিই কিছু বোঝনা মেঘলা? এতকিছু করলাম তবুও বোঝলে না?
মেঘলা চুপ হয়ে গেল।
নাবিলের মাঃ যখন ফোন করেছিলে তখন কেন বল্লে না? এখন বিয়ের ঠিক আগ মুহুর্তে এসে কি বলছো এসব?
নাবিলঃ বিয়েটা তো হয় নি মা তাই এখনো সময় আছে।
নাবিল গিয়ে আকাশের বাবা কে বলল আংকেল প্লিজ এই বিয়ে দিবেন না।
।
আকাশের বাবা অবাক হয়ে বলল আমি তো ওকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিনা যখন বিয়ে ঠিক করলাম মেঘলা আমায় এ ব্যাপারে কিছু বলল না কেন?
।
নাবিলঃ ও নিজেই তো জানে না আংকেল আপনাকে কি করে বলবে? ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই কিন্তু আমি ওকে ভালবাসি।
নাবিল এবার শুভর কাছে গিয়ে বলল মেঘলা অনেক ভাল মেয়ে ওকে বিয়ে করলে আপনি খুব সুখি হবেন আর এই বিয়ে হলে মেঘলারও কোন অসুবিধে নেই। কিন্তু আমি মেঘলাকে ছাড়া থাকতে পাড়ব না ভাই। আমার উপড় দয়া করুন প্লিজ। দেখুন ভাই আপনি দেখতে ভাল তাছাড়া সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন।আপনার পাত্রীর অভাব হবে না।
শুভঃ মেঘলা তুমি কি চাও…..???
মেঘলা কি বলবে বোঝতে পাড়ছে না তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
নাবিল শুভ কে ডেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে শুভকে কিছু ছবি দেখাল যাতে মেঘলা নাবিলের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। এই ছবিগুলি আকাশ সেদিন তুলেছিল বাসে যখন মেঘলা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তখন।
নাবিলঃ ভাই বোঝতেই পারছেন মেয়ে মানুষ তার উপড় আশ্রিতা মুখ ফোটে বলার সাহস ওর নেই। ও বড়দের মুখের উপড় কথা বলতে পারবে না। যা করার আপনি করুন প্লিজ।
শুভ ব্যাপারটা বোঝতে পেড়ে বলল, মেঘলাকে আমার পছন্দ হয়েছে এটা ঠিক কিন্তু আমাদের মধ্যে তেমন কোন সম্পর্ক নেই যার জন্য বিয়েটা হতেই হবে। আর তুমি আকাশের বন্ধু মানে আমার কাছে আকাশের মতই।
আমি কি পাড়তাম আকাশের ভালবাসাকে কেড়ে নিতে? তাহলে তোমার কাছ থেকেই বা কি করে কেড়ে নিব? আর মেঘলারও যখন তোমাকে পছন্দ করে তখন এ বিয়ে হবে না চিন্তা করো না।
শুভ এসে সবাইকে বোঝিয়ে বলল আর নাবিল ছেলে হিসেবে ভাল, তারউপড় আজাদ সাহেবের ঘনিষ্ট বন্ধুর একমাত্র ছেলে তাই আকাশের বাবা শুভর সাথে বিয়ে ভেংগে দিলেন।
আজাদ সাহেবঃ নাবিল শোন বাবা তুমার যেহেতু পড়াশুনা এখুনো শেষ হয় নি আর মেঘলাও এত বড় হয় নি তাই যতদিন না তোমার পড়া শেষ হচ্ছে আর মেঘলাও উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে ততদিন বিয়ে হওয়ার দরকার নেই মেঘলা এখানেই থাকুক।
নাবিলঃ অবশ্যই আপনারা যেমনটা চাইবেন। অনেক ধন্যবাদ আংকেল।
নাবিল তার বাবা মার একমাত্র ছেলে হওয়ার তার বাবা মাও নাবিলের কথা মেনে নিল।
শুভ আর তার পরিবার চলে গেল।
কি ঘটল মেঘলার মাথায় কিছুই ঢুকল না। নাবিল ও কিছু না বলে চলে গেল।
মেঘলাঃ কাল কলেজে গিয়ে নাবিল ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে।
রাতে সবাই খেতে বসেছে কিন্তু আকাশ আসল না।
মেঘলাও আকাশের খোঁজ নেয় নি।
.
.
.
.
.
.
.
.
পরদিন মেঘলা কলেজে গেল। আকাশ আর নাবিল দাঁড়িয়ে কথা বলছে তখনি ট্যুর থেকে সবাই ফিরে আসল।
ইরা এসে আকাশ কে বলল আকাশ তুমি আমাকে এভাবে রেখে কেন চলে আসলে আরো হাজারো প্রশ্ন করছে। আকাশ ইরার সাথে কথা বলছে তখনি
মেঘলা কোথা থেকে দৌড়ে এসে মাঠের সবার সামনে নাবিলকে আঁশটে পিশটে জড়িয়ে ধরল।
সবার কেন্দ্রবিন্দু এখন মেঘলা আর নাবিল। যাকে বলে বিনা টিকিটে সবাই বাংলা সিনেমার রোমান্টিক সিন দেখছে।
এমন পরিস্থিতিতে পড়ে নাবিল স্বব্ধ হয়ে গেছে। কি করবে বোঝতে পাড়ছে না আর কি ঘটল মাথার সভ উপড় দিয়ে গেল। নাবিল হতবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাল।
আকাশ এটা সহ্য করতে পাড়ল না। এসে জোর করে টেনে মেঘলাকে নাবিলের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল লজ্জা সরমের কি মাথা খেয়ে ফেলেছিস সবার সামনে কি করছিস এসব?
মেঘলা মুখে কিছু না বলে সবাইকে অবাক করে, সবার সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
থাপ্পড়ে আকাশের কিছু না হলেও ধাক্কাটা সে ভালই পেয়েছে সবার সামনে কিছুটা অপমান তো হয়েছে সেটাও ব্যাপার ছিল না কিন্তু কিছু কথা ভেবে আকাশ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পাড়ল না চোখের পানি ছেড়ে দিল
আকাশঃ তবে কি নাবিল যা বলেছিল সেটাই হল? মেঘলা নাবিল কে ভালবেসে ফেলেছে? আমার এতদিনের বিশ্বাস তুই কি করে ভেংগে দিলি মেঘলা?কি করে পারলি এটা করত?একবারো আমার কথা ভাবলি না?
নাবিলঃ আমার কি বলা উচিত জানি না আকাশ তবে আমি তোকে আগেই বলেছিলাম আগুন আর ঘী পাশাপাশি রাখতে নেই।
আকাশঃ চোখ মুছতে মুছতে জোর করে মুখে হাসি টেনে বলল আমি হেরে গেছিরে নাবিল আজ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় হার হল। আমি হেরে গেছি….সত্যিই হেরে গেছি…. বলতে বলতে সেখান থেকে চলে গেল আকাশ।
।
।
।
।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে, আকাশের বাড়ি ফিড়ার নাম নেই। গভীর রাতে আকাশ বাড়ি ফিরল সবাই তখন ঘুমিয়ে গেছে।
কিন্তু মেঘলার চোখে ঘুম নেই সে আকাশের জন্য অপেক্ষা করছিল হয়ত অথবা সবার সামনে এমন করায় অনুশোচনা হয়েছে তাই ঘুমাতে পারেনি তাই আকাশ ফিড়তেই সে আকাশের ঘরে গেল। গিয়ে দেখল, আকাশ ঘরে নেই।
আকাশ অন্ধকারে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘলা বেলকনিতে গিয়ে লাইট অন করে দিল। আলো ফোটে উঠতেই মেঘলা চমকে উঠল কারন আকাশ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আকাশের চোখ ২ টি লাল টকটকে হয়ে গেছে অনেক্ষন কাঁদলে যেমনটা হয়। নাক মুখ ফুলে গেছে।
আকাশকে সিগারেট খেতে দেখে মেঘলা খুব অবাক হল কারন আকাশ যে সিগারেট খায় সেটা মেঘলার জানা ছিল না। মেঘলা অবাক হলেও মেঘলাকে দেখে আকাশ একটুও বিচলিত হল না সে সিগারেটের নেশায় ব্যাস্ত একের পর এক টান দিয়ে যাচ্ছে যেন সিগারেট খাওয়াটা তার কাছে নিতান্তই সাধারন বিষয়।
মেঘলাঃ আপনি সিগারেট খান?আগে তো কখনো দেখি নি….
আকাশ গম্ভির গলায় উত্তর দিল আগে খেতাম না এখন থেকে খাব…ছাড় এসব তুই এতরাতে এখানে কি করছিস?ঘুমাস নি কেন?
মেঘলাঃ খাবার নিয়ে এসেছিলাম।
আকাশঃ আমি খাব না খাবারগুলি তুই নিয়ে যা। আর ঘুমা গিয়ে অনেক রাত হয়ে গেছে।এখন তোকে এখানে কেউ দেখলে খারাপ বলবে।
মেঘলাঃ অল্প কিছু খেয়ে নিন প্লিজ। কাল রাত থেকে কিছুই খান নি।
আকাশ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল আচ্ছা রেখে যা পড়ে খেয়ে নিব।
মেঘলাঃ রাগ করে আছেন তাই না?
আকাশঃ না তো কিসের রাগ?
মেঘলাঃ কলেজে সবার সামনে আমার এমন করাটা উচিত হয় নি….
আকাশঃ এটা নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না মেঘলা তুই প্লিজ এখান থেকে যা।
মেঘলা চলে যেতে চাইলে আকাশ পিছন থেকে বলল মেঘলা…..
মেঘলাঃ হুম….
আকাশঃ আলমারিতে একটা বক্স আছে যাওয়ার সময় নিয়ে যাস।
মেঘলাঃ কি আছে বক্সে….
আকাশঃ তেমন কিছু না রুমে গিয়ে দেখিস হয়ত ভাল লাগবে অথবা খুব খারাপ লাগবে।ভাল লাগলে রেখে দিস খারাপ লাগলে ফেলে দিস।