এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৩৭

চোখ মুখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি আমি লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। শুধু মনে হচ্ছে এই মুহুর্ত টা কেনো এলো আমার জীবনে।এই মুহুর্তে এমন অনর্থ না হলেও পারতো।ঠাসস করে টাওয়াল এর গিট টা ও খুলে গেলো। এক হাত দিয়ে দ্রুত টাওয়াল টা ধরলাম। এইভাবে সব সমস্যা কি একসাথেই আসতে হলো।চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে দেখি উনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনাকে বললাম ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন কেউ এসে দেখে ফেলবে। এইভাবে দুজন কে দেখলে মান ইজ্জত আর কিছুই থাকবে না।বিহান ভাই শান্ত কন্ঠে বললেন তার আগে উত্তর দে কেনো আমার সাথে কথা বলিস না।
‘আমি কোনো উত্তর দিতে পারবো না।কথা বলি না আর বলবো ও না।’
উনি আমার হাতের কব্জির খানিক টা উপরে চেপে ধরলেন। উনার হাত এর আঙুল ডুবে গেলো মাংশল জায়গা তে।এমনিতেই উনি আমাকে রুটি বলেন মাঝে মাঝে আবার আটার বস্তা বলেন।মানে আমার হাত পা তুলতুলে নরম।ধরলেই সেখানে ডুবে যায় খানিক টা।হাতের উপর চেপে ধরে একটা ঝাঁকি দিয়ে উনার আরো খানিক টা কাছাকাছি নিয়ে এসে বলেন খুব সাহস বেড়েছে তাইনা?কথা বলিস না ইগনোর এর দুঃসাহস হলো কিভাবে?আর এখন বলছিস কথা বলবো না।হাউ ডেয়ার ইউ?
‘দেখুন ছাড়ুন আমাকে?কেউ এসে যাবে।’
আসুক বউ আমার ধরেছি আমি, যা দেখার আমি দেখছি।কে আসলো না আসলো হু কেয়ারস।কেউ আসলে বলে দিবো বিয়ে করেছি ব্যাস।আমি এত কিছুর তোয়াক্কা করি নাহ।ইউ নো ভেরি ওয়েল মিসেস বিহান।আমার কথার সোজা উত্তর না দিলে এই টাওয়াল খুলে এখানে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করবো।কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম কারণ আমি জানি এই মানুষের পক্ষে সব ই সম্ভব।যেভাবে রেগে আছেন সব ই পারবেন।কি বা করবো এখন।রাগে উনার চোখ মুখ ছুটে যাচ্ছে আর দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন।তোর জন্য রাতে ঘুম হয় নি আমার।কথা বলিস না কোনো কাজে মন বসে নি আমার।জীবনে এত অশান্তি লাগে নি আমার।কোথায় কার চিঠি তার ঠিক নেই তার জন্য আমাকে ইগনোর করছিস ক্যানো?আর চিঠি ফুপ্পির হাতে কিভাবে গেলো।চুপ থাকলে কিন্তু তোর খবর আছে দিয়া। উনি যেভাবে রেগে রেগে প্রশ্ন করছেন এক্ষুণি বাড়ির মানুষ এক জায়গা হয়ে যাবে।কি করি কিভাবে সামলাবো উনাকে।কিছু ভেবে না পেয়ে হুট করে এক দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপলো।উনি যে লম্বা আমি তো এমনি তে উনাকে নাগাল পাবো না।উনার ধবধবে ফর্সা পায়ের উপর আমার ভেজা পা উঠিয়ে উনাকে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম।উনার গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম যাতে উনার কথা বলা অফ হয়ে যায়।দুই গালে দুইটা চুমু দিয়ে উনাকে আকস্মিক দুই হাত দিয়ে আষ্ঠে পিষ্টে জড়িয়ে ধরলাম।উনি ভাবতেই পারে নি আমি এমন কিছু করবো।উনি মনে হয় বাকশক্তি হারালেন নিমিষেই ভয়ানক সেই রাগ চোখ থেকে উধাও।ছেলেটা কেমন যানি অন্য জগতে চলে গিয়েছে।আহলাদি কন্ঠে বললাম,সব সময় এত বকেন কেনো আপনি?আমি যে একটা বাচ্চা মেয়ে জানেন না।এত বকলে ভয় লাগে আমার। আই লাভ ইউ রাক্ষস একটা।উনি মিনিট খানিক চোখ অফ করে কিছু একটা উপলব্ধি করলেন।উনার বুকে কান পেতে আরো একটু জড়সড় ভাবে জড়িয়ে ধরলাম।কেমন জানি ভাল লাগছে, ভেতরে ভেতরে এক আলতো পরশের সুন্দর অনুভূতি খেলা করছে।
উনি ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে বললেন আমাকে ভালোই ঠান্ডা করতে শিখেছো তুমি।ইচ্ছা করেও আর রাগ দেখাতে পারছি না আমি।এই পিচ্চি আমার এত সর্বনাশ করেছে ভাবা যায়।পিচ্চিকে তো শাস্তি দিতেই হচ্ছে।
এবার অভিমা নিয়ে বললাম,আপনি স্পর্শ করবেন না আমাকে।যান ওই যে সানজি চিঠি লিখেছে প্রিয় বি। ওকে গিয়ে স্পর্শ করেন।আমার কাছে কি?
হাত ধরে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে নিজেও বিছানায় আমার উপর ঝুঁকে গিয়ে বললেন তোর কাছে কি জানতে চাস ওয়েট। বলেই টাওয়াল খোলার চেষ্টা করছেন আর আমি হাত দিয়ে মুঠো করে ধরে রেখেছি।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা লক।ওহ মাই গড এখন কি করি এইভাবে উনার দখলে চলে গেলাম আমি।গলার নিচে হাত দিয়ে স্লাইট স্লাইট করতে করতে বললেন প্রচন্ড রেগে ছিলাম তোমার প্রতি।আজ ইচ্ছা ছিলো তুলে আছাড় দিবো।ফুপ্পি চিঠি ভাল ভাবে পড়লে বুঝে যেতো তার মেয়ের জামাই আমি।বুঝলেও সমস্যা না আমি এগুলা ভয় পাচ্ছি না কিন্তু আমাদের প্রেমপত্র বার বার অন্যর হাতে কিভাবে যায়।আজ এমন অবস্থা করবো না মনে থাকলে আর জীবনে এমন ভুল হবে না।
উনার এমন আদুরে স্পর্শতে নিমিষেই নিজের ভেতরে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেলো আমার।
এক ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
চোখ ইশারা করে প্রশ্ন করলাম,কি দেখছেন এভাবে।আমার লজ্জা লাগছে ছাড়ুন।।
এই ভেজা তোমাকে দেখছি।ভেজা পরী,ভেজা বউ।ওয়েট তোমার সাথে এখন রোমান্স এর মুহুর্ত টা আরো একটু সুন্দর করে তুলি।তুমি এখন যেভাবে আছো বিলিভ মি নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবা।মনে হচ্ছে মাত্র বৃষ্টি থেকে ভিজে এসছো।বলেই ফোনে গান চালিয়ে দিলেন।
Meri kismaton ko
Mile haath tere
Phir se lakeerein
Dikhne lagi
Dekha tumhe to
Aisa laga hai
Jaise ye aankhein
Dhadakne lagi
Rahein umr bhar
Tu meri main tera
Jab main baadal bann jaaun
Tum bhi baarish bann jaana
Jo kam pad jaayein saasein
Tu mera dil ban jana
Rimjhim saawan ki boondein
Tu har mausam barsana
Jo kam pad jaayein saasein
Tu mera dil ban jana
গানের সাথে কোথায় হারিয়ে গেলাম দুজনে জানিনা।
উনি হাতের আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে বললেন,,এই পিচ্চি হাত এ রোজ আদর দিবো। অজস্র চুম্বনে ভরিয়ে দিবো রোজ। তোমার রেশমি চুড়ি পরা হাতের রিনিঝিনি আওয়াজে পাগল হয়ে যাবো।রোজ আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে এক সমুদ্র ভালবাসার স্বপ্নে ডুব দিবো।বলেই কপালে চুমু দিলেন, কপাল থেকে নাক, নাক থেকে ঠোঁট অতঃপর গলাতে এসে ঠোঁট ডুবিয়ে পাগলামি করছেন।মারাত্মক লজ্জায় উনাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে উঠে গেলাম।ইস কি লজ্জা।যে বিশ্রি ভাবে আজ উনার সামনে আমি আর যা সব হলো।বিহান ভাই উঠে এসে গলার উপর দিয়ে লাল গাউন ঢুকিয়ে দিলেন।গাউনে পা পর্যন্ত ঢেকে গেলো।টাওয়াল টা আমার মাথায় সুন্দর ভাবে পেচিয়ে দিয়ে বললেন আর কিছু পরার থাকলে পরে নে।আলনা থেকে একটা জিন্স নিয়ে গাউনের নিচে পরে নিলাম ওয়াশ রুমে গিয়ে।ধ্যাত উনার দিকে তাকাতেই পারছি না।কি সব হলো আজ।
এমন সময় বাইরে থেকে দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলাম আমি।বিহান ভাই দেখছি চিল মুডেই আছেন।রুমের মধ্য বিহান ভাই এর রিয়া প্রবেশ করলো।ওদের দেখে কি বিশ্রি লজ্জা পেয়ে গেলাম।ছিঃকি ভাবলো ওরা আমাকে নিয়ে। আর রিয়া ওকেই বা কি বলবো।বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন চিন্তার কিছুই নেই বাসায় কেউ নেই।রিয়া আর বিভোর কে বাইরে সিকিউরিটি হিসাবে রেখেছিলাম।কেউ আসলে যাতে সতর্ক করতে পারে।তোর বাবা কুষ্টিয়া যাচ্ছে ফুপ্পি আর রিয়ার আম্মু তোর বাবাকে এগিয়ে দিতে গিয়েছে।তুই ওয়াশ রুমে ছিলি তখন আমরা সবাই খেয়ে নিয়েছি।রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়েই যাচ্ছে।যা বোঝার রিয়া তো সেটা বুঝেই গিয়েছে। আমাদের মাঝে যে কিছু আছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই উনার।
বিভোর ভাই বললেন দিয়া তুই বিহানের সাথে রাগ করেছিস দেখে ও বাড়িতে নিজের ফেভারিট মগ টা ভেঙে ফেলেছে।
রাগ তো করবোই বিভোর ভাই।উনার নামে চিঠি আসে কি জন্য।আমার সামনে ওই মেয়েকে উনি বকা ঝকা না দিলে আমি বুঝবো উনার ও ইচ্ছা আছে।তাই আর উনার সাথে কোনো কথা নেই আমার।
বিহান ভাই বিভোর ভাই কে বললেন ওই নাম্বারে কল দিয়ে বল আগামিকাল আমরা মিট করতে চাই।দেখা যাক মেয়েটা কি বলতে চায়।আমিও মনে মনে এটাই চাইছিলাম বিহান ভাই উনাকে বকা দিয়ে দিক।এটা হলেই শান্তি আমার।
আম্মুকে বিহান ভাই আর বিভোর ভাই ভাল ভাবে বুঝিয়ে বললে আম্মু শান্ত হলো।
______________________
পরের দিন সকাল দশ টা।মনে মনে যা খুশি আমি তা বলার বাইরে।বিহান ভাই মেয়েটাকে মারাত্মক বকা দিবেন ভাবতেই ভাল লাগছে।
এর ই মাঝে হুট করেই উনার মেজাজ ভীষণ খারাপ।উনি ভিডিও কলে মেডিকেলের এক স্যার এর সাথে কথা বলছিলেন তখন ই নাকি ভয়ানক এক কান্ড ঘটেছে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।