“কি করছেন আপনি? অসভ্য লোক একটা!”
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, হোয়াট!
“বুঝতে পারছেন না! হোয়াট হোয়াট করছেন কেন? কি করতে যাচ্ছিলেন আপনি?”
“ঠিক করছিলাম আমি ওটা।” শাওন ভ্রুকুচকে বলল।
“মানে?” আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন কিছু না বলে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নেমে গেল।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে আমার ওড়না খুজতে লাগলাম। কিন্তু পাচ্ছি না। ওড়না গেল কই আমার!
শাওনের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে বলে উঠলাম, ওড়না কি করেছেন আমার?
শাওন আমার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলল, মানে?
আমি চোখ নামিয়ে বিড়বিড় করে বললাম, আবার ‘মানে মানে’ করছে!
শাওন চোখ সরিয়ে খাটের পাশের মেঝেতে তাকালো। ওখানেই পরে আছে ওড়নাটা। তারপর আমার দিকে উপহাস মূলক চাহনি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ওড়নাটা তুলল আর আমার মুখের উপর মারল আর বলল, “তোমার So Called ওড়না। তালকানা কোথাকার!”
আমি ওনার কথা শুনে হা হয়ে ওড়নাটা মাথা থেকে নামালাম। তারপর রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম, তালকানা বললেন আমাকে!
শাওন কোনো উওর না দিয়ে ফ্রেস হতে ওয়াসরুমে চলে গেল। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ওড়না ঠিক করে বেলকোনিতে চলে এলাম।
আজকের আকাশে অল্প কয়েকটা তুলোর মত মেঘ উড়েছে। সত্যি আমার কাছে আলাদ্দিনের জিনি থাকলে তাকে দিয়ে এখানে একটা ঘর বানিয়ে নিতাম আর এখনেই থাকতাম।
সকালের নাস্তার পর আমরা আশেপাশের এলাকা আর একটা গ্রাম ঘুরে এলাম। এগারো টায় আমাদের বের হয়ে যেতে হবে। মিস করলে আবার তিনিটা অব্দি অপেক্ষা করতে হবে।
যদিও মিস করলাম না। এগারোটায় রওনা হলাম। মোহিত এখন আবার আগের মত পক পক করা শুরু করেছে। তার কোমড়ের ব্যথা মনে হয়ে পালিয়ে গেছে।
যাওয়ার পথে সাজেকের চারিপাশ মনোযোগের সাথে দেখতে লাগলাম। উচু নিচু পথ দিয়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে। সামনে পিছনে আরো অনেক গাড়ি সাড়িবদ্ধ ভাবে যাচ্ছে। আরকি এক সাইড দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে আর অন্য সাইড ফাকা রাখা হয়েছে যাতে ওদিক থেকে রওনা হয়ে আসা গাড়িগুলো যেতে পারে। কারন রাস্তা অত বড় না।
জিপ থেকে নেমে আমরা প্রথমে লাঞ্চ করলাম সেই আগের হোটেলেই। এখন সেই এসি বাসে করে বাকি রাস্তা যেতে হবে। আর ভাল্লাগে না।
আমি মন মরা হয়ে এসে মোহিতের পাশে বসলাম। মোহিত আমার মুখ দেখে বলল, কি হয়েছে!
আমি না সূচক মাথা নাড়িয়ে বুঝলাম কিছুই হয়নি।
পরক্ষণেই মোহিতকে বললাম, এসি বন্ধ করে জালানা খুলে দিলে কেমন হয়!
শাওন বাসে উঠতে উঠতে বলল, নেভার।
আমি নাক মুখ কুচকে শাওনের দিকে তাকালাম।
মোহিন এক টানে জালানা খুলে দিয়ে বলল, শাওন এভাবে গেলেই ভাল হয়। খোলা হাওয়া, I aslo agree with you Mila.
আমি হাসিমুখে মোহিতের দিকে তাকালাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমাদের দিকে তাকালো।
সুমনা উঠতে উঠতে শাওনকে বলল, সর এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?
শাওন সরে আমাদের সোজা ওপাশের সীটে বসল। সাধারণত মানুষ জালানার কাছের সীটে বসে উনি বসেছেন পরের টায়।
মোহিত উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে সুমনাকে বলল, আমরা এসি ছাড়া এমনি গেলে কেমন হয়!
সুমনা আমাদের পিছনের সীটে বসতে বসতে বলল, ভালই হয়। আমার সমস্যা নাই।
শাওন কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। সবাই একে একে উঠতে লাগল।
মোহিত হেসে বলল, তাহলে ত ভালই!
মোহিত আমার দিকে তাকিয়ে বলল, Wanna sit beside the window?
আমি খুশিতে মাথা নাড়লাম। আমার জালানার পাশে বসতে ভালো লাগে।
মোহিত ইশারায় আমাকে বের হতে বলল। আমি বের হলেই ত ও বের হবে তারপর আমি জালানার পাশে বসতে পারব।
আমি খুশি মনে বের হয়ে দাড়াতেই ড্রাইভার গাড়ি ছাড়ল আর আমি তাল না সামলাতে পেরে শাওনের কোলে এসে পরলাম। শাওন ওর বাম হাত আমার পিঠে রেখে আমাকে ধরল আর আমি পরার সাথে সাথে ডান হাত দিয়ে ওনার কাধের কাছের শার্ট চেপে ধরলাম। আর আমার এক পাশের ওড়না গিয়ে পরল শাওনের মাথা উপর। আমি চোখ বড়সড় করে শাওনের দিকে তাকালাম। সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। মোহিত হা করে আছে। রবিন একটা হাতে তালি দিয়ে বলল, বাহ মামা! রাইট টাইমে, রাইট টান মেরেছো। যার জিনিস তার কাছে চলে গেছে!
শাওন নিজের মাথা থেকে ওড়নাটা নামিয়ে আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালো। আমি একটা ঢোক গিললাম।
ওদিকে রবিন উঠে এসে মোহিতের পাশে বসে পড়ল। মোহিত বের হবার জন্য দাড়িয়েছিল। রবিন বলল, ভাই তুই বসে পর। দুইজন আজ একজায়গায় থাকুক।
মোহিত হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বসে পড়ল।
“তুমি এভাবেই বসে থাকতে চাচ্ছ?” শাওন বলল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। তারপর চোখ বড়সড় করে না সূচক মাথা নাড়লাম আর উঠে দাঁড়ালাম।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে নিজের কাধের কাছের শার্ট ঠিক করল।
সুমনা বলল, শাওন বের হয়ে ওকে ঢুকতে দে!
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। শাওন উঠে দাড়ালো আর ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। আমি আস্তে আস্তে ঢুকে জালানার পাশে বসলাম। শাওন আমার পাশে বসলো। আমি আড়চোখে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ওর সামনের সীটে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখেছে।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম, জালানা খুলব নাকি খুলব না!
আমি আবার একটু আড় চোখ শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
আর মনে মনে বললাম, খুলি জালানা যা হয় হবে!
ভেবেই জালানা ধরে টান দিলাম। কিন্তু খুলছে না! আমি টেনেই যেতে লাগলাম। শাওন বলল, ভাঙতে চাচ্ছ?!
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, ভাঙতে কেন চাইব। খুলতে চাচ্ছি।
বলেই আবার চেষ্টা করলাম। হচ্ছেই না।
শাওন বলল, এত খাও সব যায় কই!
আমি রেগে তাকিয়ে বললাম, আমি এত খাই মানে?
শাওন বলল, নেও সরো। এটা ভাঙবে নাহলে।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম, আপনার সাহায্য চেয়েছি?
শাওন উপহাসের চোখে তাকিয়ে বলল, ok, whatever!
বলেই অন্যদিকে তাকালো।
এটা সত্যিই খুলছে না। তাই মুখ গোমড়া করে হাত গুটিয়ে বসে রইলাম।
শাওন একটা ব্যঙ্গাত্বক হাসি দিয়ে নিজের ফোন বের করে কি যেন করতে লাগল।
ভালো লাগছে না। এভাবে বসে থাকব? উনি খুলেই দিতে যাচ্ছিল, আমিই ত…।
আমি শাওনের দিকে ঘুরে তাকালাম। শাওন মনোযোগের সাথে ডান হাতে ফোনটা নিয়ে বাম হাতের একটা আঙুল দিয়ে ক্রিন স্ক্রোল করে সিরিয়াস হয়ে কিছু পড়ছে।
আমি একটু কেশে ওনার মনোযোগ আকর্ষন করতে চাইলাম। কিন্তু কাজ হলোনা। তাই আমি ওনার বাম হাতের বাহুর শার্টটা হালকা করে টানতে লাগলাম। শাওন আমার হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো।
আমি অন্য হাতের এক আঙুল দিয়ে জালানা দেখিয়ে করুন সুরে বললাম, এটা খুলতে পারছি না!
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কি?
“শার্ট ছাড়ো।” শাওন বলল।
আমি ফট করে ছেড়ে দিলাম।
শাওন হাত বাড়িয়ে সহজেই জানালাটা খুলে ফেলল। তারপর আবার তার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমি হাসিমুখে শাওনের দিকে তাকিয়ে তারপর জালানার বাহিরে তাকালাম। যাক এখন আর বোরিং লাগবে না।
সুন্দর বাতাস আসছে। হাত বাহিরে বের করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু গরিলাটা বকা দিবে। তাই আমি জালনাটা ঠেলে অনেক টুকু খুলে ফেললাম। অনেক বাতাসে মন যেন ফুরফুরে হয়ে গেল। কিন্তু এই বাতাসের কারনে আমার ওড়নার প্রান্তভাগ উড়ে শাওনের ফোনের উপর পরল।
শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে ওড়নাটা সরলো।
আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমি আমার মত বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি।
অনেক দূরে এসে গাড়ি থামাতে হলো। কারন একটা গাছ রাস্তায় পরেছে। আমাদের সামনেও কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আর পিছনেও অনেক বড় লাইন। সবাই বিরক্তির সাথে বসে আছে।
আমরা যেখানে এসে থেমেছি সেখানে চারিপাশে সবুজ মাঠ আর গাছগাছালি ভরা। আমার ত বসে না থেকে নামতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু গরিলাটাকে বললে ত চোখ গরম দেবে আমি সিওর।
শাওনের দিকে ঘুড়ে তাকালাম। মাথাটা আমার দিকে হেলিয়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ ওনাকে দেখলে জীবনেও বলতে পারবে যে এ একটা আস্ত গরিলা? হুহ।
আমি আবার জালানা দিয়ে বাহিরে তাকালাম। খানিক পরেই আমাদের গাড়ি ছাড়া পেল। অর্থাৎ গাছ উঠানো হয়েছে রাস্তা থেকে। যাক ভাল।
কিন্তু গাড়ি ছাড়ার একটু পরেই শাওনের মাথা আমার কাধে ঠেকল।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম।
এখন! এভাবে থাকতে হবে! এদিকে এই মহারাজাকে দেখো! শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। নাকি যাবার দিন আমি ঘুমিয়েছিলাম বলে এখন উসুল করে নিচ্ছে!
কিন্তু ওকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমি কিছুক্ষণ শাওনের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর চোখ সরিয়ে নিলাম। মাথা পুরো গেছে! কিসের সুন্দর!
তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ওভাবেই বসে রইলাম। গাড়ি থেকে নামার কিছুক্ষন আগে শাওন চোখ খুলল। তারপরই ফট করে মাথা উঠিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি ভ্রুকুচকে শাওনের দিকে তাকিয়ে নিজের অন্য হাতটা কাধে রাখলাম। কারন কাধসহ ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে।
শাওন চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, দেখো দেখো! যেন কিছুই জানেনা।
তাই আমি মুখ ঘুরিয়ে জালানার বাহিরে তাকালাম।
যখন গাড়ি থেকে নামলাম তখন দশটা বাজে। সবাই বলল একসাথে ডিনার করে তারপর যে যার বাসায় যাবে। সুমনার সহ আরো অনেকের গাড়ি আগে থেকেই পার্ক করা ছিল। গাড়িতে ব্যাগ রেখে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।
খাবার অর্ডার দিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। রেস্টুরেন্টটা অনেক সুন্দর। চারিদিকে আবছা আলো জ্বলছে। আর হালকা মিউজিক চলছে। কাচের জালানা দিয়ে বাহিরের শহর দেখা যাচ্ছে। আমার ঘুরে ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি চুপচাপ বসে আছি। কারন আমার ডান পাশেই শাওন বসে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের খাবার চলে এলো। আমি একবার নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে তারপর শাওনের প্লেটে তাকালাম। আমরা সবাই ফ্রাইড রাইসের সাথে চিকেন খাচ্ছি। আর ওনার প্লেটে কত গুলো ঘাস পাতা মানে সবজি।
আমি ওনার প্লেটের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছি দেখি শাওন আমাকে বলল, What!
আমি ক্লান্ত গলায় বললাম, “কিছুনা। কিন্তু আপনার প্লেটে আমি কুমড়ো দেখতে পাচ্ছি না।”
শাওন কপাল কুচকে তাকালো।
রবিন হাসতে হাসতে বলল, অহ মিলা ভালো জিনিস লক্ষ্য করেছ। হাহা। ওর একটা ভালো নাম আছে। জানো?!
শাওন কড়া চোখে রবিনের দিকে তাকালো।
রবিন সেটা গায়ে লাগালো না। আমি প্রশ্ন করলাম, কী নাম?
শাওন রেগে রবিনকে বলল, Shut up Robin.
রবিন হাসতে হাসতে বলে ফেলল, “কুমড়োপটাশ।”
বলেই রবিন জোরে জোরে হাসতে লাগল। শুধু রবিন না, রবিনসহ সবাই হাসছে। আমিও শাওনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম। শাওন রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর রবিনের দিকে তাকালো।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা নেমে এলাম। তখন মোহিত বলল, How about Ice cream!
আমি হাসিমুখে মাথা নাড়লাম। সুমনা বলল, মন্দ না।
সবাই একটা কুলফির দোকানে বসলাম। সবার হাতে হাতে আইসক্রিম দিল মোহিত। শাওন খেল না তাই ওর টা আমার হাতে ধরিয়ে দিল মোহিত। আর আমিও নিয়ে নিলাম। এখন আমার দুই হাতে দুইটা আইসক্রিম। এক হাতে একটা ধরে রেখে অন্য হাতের টা খাচ্ছি। শাওন আমার পাশে বসে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে।
আমি লক্ষ্য করে বললাম, খেলে ওখান থেকে নিয়ে আসুন। আমি দেব না।
“আমি খাবও না।” বলল শাওন।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে নিজের খাওয়ার মনোযোগ দিলাম।
কিন্তু এখন হলো আরেক কান্ড। ওড়নাটা সরে যাচ্ছিল। তাই আমি আইচক্রিমগুলো এক হাতে খানিকটা উঁচু করে ধরে ওড়না ঠিক করছিলাম। তখনি আইচক্রিম গিয়ে লাগল শাওনের মুখে। আমি বুঝতে পেরে হকচকিয়ে গেলাম আর আইচক্রিম গুলোও পরে গেল। শাওন এখন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অপ্রস্তুত হয়ে তাকালাম।আর মনে মনে বললাম, হায় হায়! এখন?
সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। শাওন মুখ দিয়ে বিরক্তির শব্দ করে আমার থেকে চোখ সরিয়ে নিল আর হাত দিয়ে মুছতে গেল কিন্তু তার আগেই আমি আমার কোলের উপর থাকা টিস্যু নিলাম। আর শাওনের বাহু ধরে টান দিয়ে ওনাকে একটু কাছে নিয়ে এসে মুখ মুছে দিতে লাগলাম।
শাওন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো তারপর নিজের ভ্রুকুচকে ফেলল।
ওদিকে সবাই গলার সুর টেনে বলে উঠল, “ওহো~~~।”
আমি শাওনের চোখের দিকে তাকিয়ে হাত ফট করে ছেড়ে দিলাম আর অন্য দিকে তাকালাম।
মোহিত হেসে হেসে বলল, Don’t feel shy!
আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
মোহিত বলতে লাগল,”You know তোমাদের দেখে একটা ঘটনা মনে পরে গেল।” সবাই বোরিং লুক দিয়ে মোহিতের দিকে তাকালো। আমি পরে থাকা আইসক্রিমের দিকে তাকালাম। দুটোই নষ্ট হল।
“আমার First kiss আইসক্রিম খাওয়ার পরেই হয়েছিল।” গর্বের সাথে মোহিত বলল।
সবাই হকচকিয়ে মোহিতের দিকে তাকালাম।
রবিন বলল, যাক তুই ইন্টারেস্টিং কিছু বললি। “আমারো হয়েছিল।” তিলক বলে উঠল।
আমি ভ্রুকুচকে এক এক জনের মুখের দিকে তাকাচ্ছি আর শুনছি।
চঞ্চল বলে উঠল, “আমার ত ফার্স্ট কিস সহ আরো বেশি কিছু হয়েছিল।”
বলেই সে মাথা নিচু করে হাসতে লাগল।
বাকিরা সুর টেনে বলে উঠল, “অহ ও~~~। কি হয়েছিল!”
তখনি শাওন গম্ভীর গলায় বলল, “Enough! এখন যাওয়া উচিত আমাদের।”
সবাই বিরক্তির সাথে শাওনের দিকে তাকালো।
সুমনা বলল, দিলি ত মুড টা নষ্ট করে!
সবাই ই বিরক্ত হলো।
শাওন উঠে দাড়ালো আর বলল, চল এখন।
সবাই উঠতে দাড়াতে দাড়াতে একে অপরকে বিদায় জানাতে লাগল।
কিন্তু আমি আরো শুনতে চাচ্ছিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ওঠো! বসে আছো কেন?
আমি ওনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে তারপর উঠে দাড়ালাম। মোহিত আমার দিকে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “গুডবাই। আবার নেক্সট ভ্যাকেশনে দেখা হবে।”
আমি হাসিমুখে হাত মিলিয়ে বললাম, “হ্যা। গুডবাই।”
শাওন ভ্রুকুচকে মোহিতের দিকে তাকিয়ে বলল, বিদায়পর্ব শেষ হলে, যাই এখন?
মোহিত বলল, অহ ইয়া!
আমরা সুমনার গাড়িতে উঠে পরলাম। ও আমাদের বাসাতে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। আর স্নোবেলকে কাল পাঠিয়ে দিবে।
আমি গাড়িতে বসে চিন্তা করতে লাগলাম,”ফার্স্ট কিস!”
তারপর শাওন দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম। সে জালানার কাচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মনে মনে বললাম, এই কুমড়োপটাশ সব কিছুতে নাক গলায়।
বাসায় ঢুকেই আমি সোফাতে শুয়ে পরলাম। কারন অনেক ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু সাথে সাথে শাওন এক টান দিয়ে আমাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিল আর বলল, আগে ফ্রেস হও।
আমি বিরক্তির সাথে তাকালাম। শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কি হলো!
আমি বিরক্তির সাথে উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল। আরকি এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম। শরীরটা কেমন কেমন যেন লাগছে। জ্বর আসবে হয়ত।
সেদিন সারারাত বাহিরে বসে থাকার ফল এটা।
ফ্রেস হতে শাওনের রুমে চলে গেলাম। শাওন রুমে নেই! গেলো কই!
যাক ভাল। ফ্রেস হয়ে বের হয়ে সোফাতে বসতেই শাওন ওই পেইনটিং এর রুম থেকে বের হয়ে এলো।আমি ওনার দিকে তাকালাম। শাওন আমার দিকে তাকিয়ে তারপর পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
আমি মুখ ঘুরিয়ে ডাইনিং এ তাকালাম। না জানি আজ আবার কুমড়ো কিনা!
শাওন একটা সাদা শার্টে আর কালো প্যান্ট পরে বের হলো। ডাইনিং এ এসে কালো কোটটা চেয়ারের পিছনে রেখে চেয়ারে বসল। আমি সোফা থেকে উঠে গিয়ে চেয়ারে বসলাম।
বসেই প্লেটে তাকাতেই চোখ গোলগোল হয়ে গেল আমার। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ওর মত খাচ্ছে।
আমি আবার প্লেটের দিকে তাকালাম। আজ আমার প্লেটে ডিম, আলুভাজি আর রুটি। কোনো কুমড়ো মুমড়ো না!
আমি খুশিতে কয়েকটা হাতেতালি দিয়ে বলে উঠলাম, অহ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যিই!
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি একটা হাসি দিয়ে খেতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
আজ সারাদিন অনেক একা একা লাগবে কারন স্নোবেল নেই। তাই এখন একমাত্র সঙ্গী টিভি।
সুমনার বাসা চিনলে একাই গিয়ে নিয়ে আসতে পারতাম স্নোবেলকে। কিন্তু কিছু করার নেই। তাই টিভি দেখতে লাগলাম।
বিকালের দিক থেকে জ্বর জ্বর ভাব আরো বেশি লাগছে। আজ আবার অনেক সময় গোসলও করেছি। উফ, ভাল্লাগে না।
দুপুরের খাবার ফ্রিজে কিন্তু গরম করতে ইচ্ছে করছে না। এখন শান্তিতে শুধু টিভি দেখতে ইচ্ছে করছে। “কো কো” নামের একটা এনিমেশন হচ্ছিল
খুবই মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখলাম আমি। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বার বার। মাথাও ঘুড়ছে। নিজের গায়ে হাত দিয়ে বুঝলাম জ্বর আছে। কিন্তু কত কে জানে।
কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে খেয়ে আবার টিভির সামনে বসলাম। আর একটা নিউ ইংলিশ মুভি শুরু হয়েছে। দেখতে লাগলাম। কলেজ লাইফ লাভ স্টোরী।
কিছুক্ষন যেতে না যেতেই আরো খারাপ লাগতে শুরু করল। গা দিয়ে আগুন বের হচ্ছে এখন। আমি কিচেনে এসে আবার কয়েক গ্লাস পানি গিলে নিলাম। তারপর কিচেন থেকে বের হতে হতে টিভির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম।
একটা মেয়ে একটা ছেলের গলা জড়িয়ে ধরে একটা একটা কিস করল তারপর একটু থেমে ছেলেটার দিকে তাকালো। তখন ছেলেটা মেয়েটাকে কিস করতে লাগল।
আমি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এটাই তাহলে…। আমি মুখের উপর এক হাত দিলাম।
সাথে সাথে শাওন দরজা খুলে ঢুকলো। আমি চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। শাওনও আমার দিকে তাকালো। আমি শাওনকে দেখে চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে সাথে সাথে ওর রুমের মধ্যে ঢুকে দাঁড়িয়ে গেলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বিষয় টা বুঝতে চেষ্টা করল কিন্তু বুঝল না। তাই রুমের দিকে খানিক টা আসতে লাগল। কিন্তু মাঝ বরাবর এসে থমকে দাঁড়ালো আর ঘাড় ঘুরিয়ে টিভির দিকে তাকালো। সাথে সাথে বলে উঠল, What the hell!
তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে সোফা থেকে রিমোট নিয়ে টিভি বন্ধ করল।
আমি এখনো টিভির সিনেমার কাহিনীর জন্য হা করে আছি। এদিকে জ্বরের কারণে শরীর অনেক দুর্বল লাগছে সাথে মাথা আরো ঘুড়ছে। শাওন রুমে ঢুকল। রুম পুরো অন্ধকার। আমি ঘুরে শাওনের দিকে তাকালাম।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, এগুলো দেখে বেড়াচ্ছো তুমি?
শাওন আমার কাছে চলে আসতেই আমি একটু পিছাতে গিয়ে পরে যেতে লাগলাম সাথে সাথে শাওন এক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল। আমি দুই হাত ওনার কাধে রাখলাম।
শাওন আমাকে ছোয়ার সাথে সাথে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, তোমার গা এত গরম কেন!
তারপর ওর অন্য হাত আমার কপালে দিয়েই চমকে গেল আর বলে উঠল, ”অহ শীট, এত বেশি জ্বর বাধিয়েছো কিভাবে!”
ওনার কোনো কথা আমার কানে যাচ্ছেই না। কারন আমার এখন একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জাগছে। কেন তা জানিনা। আর সেই ইচ্ছেটা হলো…. এটা-
আমি দুই হাত দিয়ে শাওনের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ওর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম। শাওন অনেক বেশিই স্তম্ভিত হয়ে গেল।
চলবে…