১৬ পৃষ্ঠায় | পর্ব – ১৭

পুরো ঘর জুড়ে নিনি কে খুঁজে না পেয়ে ‌ছাদে উঠলো এনোন। নিনি দোলনা মধ্যে বসে ফুলের টপে নকশা করছে। রেগে গেল এনোন। কঠিন গলায় বলল,,
“ছাদে আসছো কেন আমাকে না বলে?” তার আওয়াজে আঁতকে উঠে নকশার লাইন বেঁকে গেল। বিরক্ত হয়ে রেগে ফিরে তাকালো নিনি। টপটি পাশে রেখে দাঁড়িয়ে বলল,,
“তো কি হয়েছে?”
এ প্রশ্নে যেন আরো বেশি রেগে গেল এনোন। তাও নিজেকে শান্ত করে হালকা রাগ নিয়ে বলল,,
“তোমাকে কতবার মানা করছি ছাদে না আসতে, এখানে রেলিং নেই যদি কোন এক্সিডেন্ট ঘটে যায়!
আর এখানে কেন দুনিয়ার আঁকাআঁকি করতে হচ্ছে নিচেও তো করতে পারো।” বলে সামনে এসে তার হাত ধরলো তাকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,
“চার মাস চলছে একটু তো কেয়ারফুল হোও।”
“তো আপনি আছেন কিসের জন্য?” কথার পিঠে বলতেই এনোন তাকালো।
“আমি যদি না থাকি?” কথাটি কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই বুক মুচরে উঠলো নিনির। এ কথাটি যেন তার কানে ঝংকার তুলেছে। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে উঠলো। হঠাৎ-ই নিনিকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে এনোন ঘুরে তাকালো। তার চোখ ছলছল করছে। এনোন চমকে উঠলো একটুখানি কথাটি তার এতোই লেগেছে! এনোন তাকে সামলানোর জন্য কাছে আসতেই সেই অশ্রুজল গড়িয়ে নিচে মাটির সাথে মিশে গেল। এনোন তার গালে হাত রেখে বলল,,
“এত সিরিয়াস হচ্ছো কেন? আমি তো এমনিই বললাম” গাল থেকে হাত সরিয়ে দিল নিনি। ক্রন্দন যেন থামার নাম নিচ্ছে না। থতমত খেয়ে গেল এনোন। তার বলা ভুল হয়েছে সে এটা বুঝতে পারলো নিনি কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আদুরে গলায় বলল,,
“আমি তোমাকে রেখে কোথাও যাচ্ছি না তো কান্না থামাও, নিনি।” তার মুখে আবারো নিজের নাম শুনতেই ধীরে ধীরে কান্না থেমে গেল। তাকে শক্ত করে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরল। এ যেন ছেড়ে দিলেই দূরদেশে পাড়ি জমাবে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো এনোন। আস্তে আস্তে মাথা উঠে তাকালো নিনি। চোখ ফুলে গেছে ইতিমধ্যে। ভাঙা ভাঙা আওয়াজে নাক টেনে টেনে বলে,,
“নেক্সট টাইম থেকে এসব কথা আর বলবেন না একদমও।” এনোন স্মিত হেসে মাথা নাড়লো। শান্ত হয়ে গেল সে। নিজের শার্টের দিকে তাকালো এনোন তারপর তাকে দেখিয়ে বলল,,
“আমার শার্টেই নকশা করে দিয়েছো তুমি।” ফিক করে হেসে দিল নিনি। এখন তার লজ্জা করছে। এনোন আবারো তার হাত ধরে নিচে নিয়ে এসে ছাদ তালাবদ্ধ করে দিল।
____________
গোসল শেষে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো এনোন। নিনি গোমড়া মুখে বাহিরে তাকিয়ে আছে হয়ত কিছু ভাবছে। নিনির পাশে তাকালো খাবার রেখে গিয়েছিল সে। নিনি এখনো খায়নি যেমন ছিল ঠিক তেমনি রয়ে গেছে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে কাপড় পড়ে প্লেট টা হাতে নিয়ে তার পাশে বসল। নিনি এখনো এক মনে বাহিরে চেয়ে আছে। তার পাশে যে কেউ বসেছে বোধহয় খেয়াল হয়নি তার। এনোন শব্দ করে উঠতেই হুশ ফিরে তাকালো বলল,,
“আপনি এসে গেছেন?”
“না আমি এখনো বাথরুমে।” আড়চোখে তাকিয়ে বলল এনোন। নিনি চেহারা বানিয়ে ফেলল। এনোন খাবার দেখে বলল,,
“খাওনি কেন তুমি? খেতে বলছিলাম না?”
বলে তার মুখের কাছে খাবার তুলে ধরলো। নিনি মাথা হালকা পিছিয়ে নিয়ে বলল,,
“খিদে নেই আমার।”
“না থাকলেও খেতে হবে, নাদুসনুদুস বাচ্চা চাই আমার তোমার মতো কাঠি না।” চোখ বড়বড় করলো নিনি অবাক হয়ে বলল,,
“আপনি আমাকে কাঠি বলছেন?”
“তো কাঠ বলবো?” রেগে গর্জরিত হয়ে উঠলো নিনি। বলল,,
“আপনি কাঠ চিনেন? আপনি আমাকে কাঠ বলবেন কেন? আমাকে কোন দিকে কাঠ মনে হয় আপনার? দিন দিন মোটা হয়ে হাতি হয়ে যাচ্ছি আপনি আমাকে কাঠ কাঠি ডাকছেন!” হেসে উঠলো তার আবারো মুখের কাছে খাবার তুলে বলল,,
“আরো বড় হাতি হতে হবে তোমার।” কথাটি আস্তে বলাতেই শ্রবণ করতে পারলো নিনি। শুধু বুঝতে পারছে এনোন কিছু বলেছে তাই সে জিজ্ঞেস করল,,
“কি বললেন?”
“কিছু না।”
খাবার খেতে খেতে নিনি বলল,,
“আমি নাম সিলেক্ট করে ফেলছি, বলবো?”
“হুম”
“মেয়ে হলে ‘এনি’ রাখবো ছেলে হলে ‘আনরান’ রাখবো, কেমন?” ভ্রু কুঁচকালো এনোন বলল,,
“এনি?”
“হ্যা, আপনার নাম ও আমার নাম মিক্স।” উৎসুক কন্ঠে বলল নিনি।
“এ পর্যন্ত তুমি একবারও আমার নাম ধরে ডাকলে না।” আফসোস হয়ে বলতেই চুপ করে গেল নিনি। এনোন তার দিকে তাকিয়ে আছে সে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে আস্তে করে বলল,,
“আমাদের গ্ৰামে এ পর্যন্ত কোন মহিলা তার স্বামীর নাম ধরে ডাকে নাই।”
“ওহ আচ্ছা বুঝি তুমি ওদের ট্রেন্ড ফোলো করছো?”
চোখ তুলে তাকালো নিনি। কিছু বলার ভাষা নেই।
এনোন উত্তরে অপেক্ষা না করে বলল,,
“কিন্তু তোমার ডাকতে হবে আমার নাম ধরে, আমার ‘এই যে’ ‘শুনছেন’ এসব শোনার মোটেও পছন্দ না।”
হাসি পেয়ে বসলো নিনির। তাও হাসলো না। নাম ধরে ডাকার চিন্তা করতেই কেমন যেন করে উঠল তার।
এনোন কানে কাছে আস্তে করে বলল,, বলো এনোন!”
হিম শীতল বয়ে গেল পুরো শরীরে। দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে আসলো। কথার দল যেন পেকে বসলো গলায়।
হাত কচলাতে লাগলো সে। পায়ের বৃদ্ধা আঙুল জোরে জোরে ফ্লোরের সাথে ঘষতে লাগলো।
নিনি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,
“এ..এ…ন”
এনোন গালে হাত রেখে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ যেন দৃষ্টি যেন তাকে আরো বেশি অস্বস্তিতে ফেলছে। কিছুটা সাহস জুগিয়ে চোখ বন্ধ করে আস্তে করে মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,,
“এনোন”
এনোন শুনলেও না শোনার ভান ধরে বলল,,
“কোন ভালো শ্রোতা ও তোমার কথা শুনতে পারবে না।”
“আপনি ঠিকই শুনেছেন আমি জানি।” বলে সে উঠে দাঁড়ালো সাথে এনোন ও দাঁড়ালো। তার কোমড় আকড়ে ধরে ঝুঁকে ধীরে বলল,,
“এখন যদি না বলো তাহলে তোমাকে কোথাও যেতে দেব না।” এ যেন ফেসে গেল নিনি। সরতে চাইলেও সরতে পারলো না সে। নিনি আর উপায়ন্ত না পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর বলল,,
“এনোন।”

চলবে…

[ কেমন হয়েছে জানাবেন। ]

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।