হৃদ রোগ | পর্ব ১৫

কুয়াশার চাদরে মোড়ানো সুন্দর সকাল, পুরো রাস্তাঘাট ফাঁকা। এখন চলছে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে তাই হাড় কাঁপানো শীত এখনো পড়েনি তবে ঘুমানোর সময় লেপ তো লাগেই। এখন ঘড়িতে সকাল ৫ টা’ বেজে ৩০ মিনিট , এই সময় সুদেষ্ণার বাড়ির সবাই ঘুমে কাদা একমাত্র সুদেষ্ণা বাদে । আজকে সুদেষ্ণার ইকোনমিকস পরীক্ষা আছে বেলা ১১টা’ থেকে । সবে একসপ্তাহ হলো সুদেষ্ণার পরীক্ষা শুরু হয়েছে , ইতিমধ্যে তিনটে পরীক্ষা হয়ে গেছে আরও দুটো বাকি আছে । আজকে একটা হয়ে গেলে আরও একটা থাকবে ।
দুই দিন পর পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে ভেবে সুদেষ্ণা বেশ খুশি আছে । তার বন্ধুদের ভাষায় সে আবার তার হৃদপিন্ডকে দেখতে পারবে । কত দিন তার পাষান পুরুষটাকে দেখা হয়নি। সে কেমন আছে , কী করছে , কোথায় আছে সুদেষ্ণা জানে না। সুদেষ্ণার প্রথম পরীক্ষা দিয়ে হিমাদ্রর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু নিজের পড়াশোনার কথা ভেবে আর যায়নি। সুদেষ্ণার কাছে অবশ্যই পড়াশোনা থেকে হিমাদ্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাথে নিজের বাবা-মাও । কিন্তু তার বাবা-মা র কাছে সুদেষ্ণার সাথে সাথে সুদেষ্ণার পড়াশোনা ও তার ভবিষ্যৎ এর গুরুত্ব বেশি ।সুদেষ্ণার বাবা-মা এত কষ্ট করে তাকে পড়াচ্ছে তার জন্য সুদেষ্ণার কাছে খুব বেশি কি আশা করতে পারে,,,,,, ভালো রেজাল্ট। তাই সুদেষ্ণা ভালো করে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তা বলে সুদেষ্ণা ভালো আছে তেমন নয় ,,,,,,,,,,, সুদেষ্ণা আগের থেকে বেশ রোগা হয়ে গেছে আর চোখের নীচে কালি বসেছে। সুদেষ্ণার বাবা-মা ভেবেছেন পরীক্ষার চিন্তায় সুদেষ্ণার এই অবস্থা,,,,,,,, সত্যি কি তাই ??
————————————————————————-
মেইন ক্যামপাস সোনালি আলোয় ঝলমল করছে , চারিদিক থেকে গাড়ির হর্নের আওয়াজ আসছে সাথে শোনা যাচ্ছে পাখিদের গুঞ্জন । ক্যামপাসে সব স্টুডেন্টরা আড্ডায় ব্যস্ত , ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টরা বাদে । তারা তো উওর মেলাতে ব্যস্ত আবার যাদের পরীক্ষার একেবারে কোনো চিন্তা নেই তারা তাদের মতো কাজে ব্যস্ত। এখন দুপুরের মাঝামাঝি সময় , সুদেষ্ণারা একটু আড্ডা দিয়ে বাড়ি চলে যাবে কেনোনা পড়ের দিনের পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে হবে । সুদেষ্ণাদের আড্ডার মাঝে অনিক একটা আশ্চর্যজনক খবর দিলো,,,,,,,,,,
এই তোরা জানিস , হিমাদ্র ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে । তাও আবার প্রিন্সিপালের বন্ধুর কোন মেয়ের সঙ্গে ।
সুদেষ্ণা অনিকের কথা শুনে বিরক্তিতে মুখ বেঁকালো , একবার তাকালো অনিকের দিকে তারপর বললো…… আমার ইয়ার্কি ভালো লাগছেনা,,,,,,,, ।
এইটা ইয়ার্কি করার সময়,,,,? স্নেহা রেগে বললো,,,,,,,।
সত্যি বলছি ভাই,,,,,,,,,,,।
মূহুর্তে পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেলো , কারোর মুখে কোনো কথা নেই। কেনোনা তারা জানে অনিক মিথ্যে বলবে না , ইয়ার্কি করলে ওর মুখ দেখে বোঝা যেতো। তাছাড়া এই বিষয় কেউই ইয়ার্কি করবে না , সবাই জানে তাদের সু হিমাদ্রকে নিয়ে কতটা সিরিয়াস। সবাই সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে আছে ,,,,, এই বুঝি কেঁদে ভাসিয়ে দেবে । কিন্তু সুদেষ্ণা তাদেরকে ভুল প্রমাণিত করে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না । সবাই অবাক চোখে সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে আছে, আর সে একভাবে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই সুদেষ্ণার মনের কথা না বুঝতে পারলেও স্নেহা ঠিক বোঝে । স্নেহা জানে তার সু কষ্ট পেয়েছে তাই সে সুদেষ্ণার একটা হাত আঁকড়ে ধরে।ফিরে তাকায় সুদেষ্ণা ফলে দুই বান্ধবীর চোখাচোখি হয়,,,,, । এতেই স্নেহার যা বোঝার বুঝে যায়।
তুই কবে জানলি ???,,,,,,, আকাশের কথায় সবার ধ্যান ভাঙলো।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তো জানলাম, দাদাভাই যখন মা কে বলছিলো তখন আমি শুনেছি । দাদাভাই বলছিলো যে হিমাদ্রভাইয়ের বাড়িতে এই নিয়ে অশান্তি চলছে।
এই কথা তুই আগে জানাসনি কেন,,,,? অনু বললো ।
পরীক্ষার কথা ভেবেই তো বলিনি। আগে বললে সুদেষ্ণার পরীক্ষা নিশ্চয়ই খারাপ যেতো।
তো এতদিন যখন বলিসনি আজকে কেনো বলছিস । লার্স্ট পরীক্ষার পর বলতিস, অত্যন্ত শেষ পরীক্ষাটা ভালো যেতো ,,,,,,,,,,,, মোহিত বললো।
সু এর অবস্থা দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারিনি। ওর তো জানার অধিকার আছে সব,,,,,, তাছাড়া পরে তো আবার তোরা সবাই আমার দোষ দিতিস যে আমি জানাইনি তোদের ।
স্নেহা বললো,,,,,,,,,,বিয়ে কবে ঠিক হয়েছে???
এপ্রিল এ,,,,,,,,।
এই সবের মধ্যে সুদেষ্ণা হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো, কাউকে কিছু না বলে কলেজের গেটের দিকে হাঁটা দিলো,,,,,,,।
অনিক সুদেষ্ণাকে আটকানোর চেষ্টা করলে স্নেহা বাঁধা দিয়ে বললো,,,,,,,,,আমাদের ওকে একটু একা থাকতে দেওয়া উচিৎ ।
তারপর সবাই একভাবে তাকিয়ে রইলো সুদেষ্ণার যাওয়ার দিকে । মেয়েটা যে ভীষন কষ্ট পেয়েছে,,,,, আদেও তার এত কষ্ট প্রাপ্য ছিলো ??? সবার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো,,,,,,,,,,,,।
চলবে,,,,,,,,

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।