হৃদ রোগ | পর্ব ১৩

আজকে মঙ্গলবার, দীর্ঘ দিন পর আবার কলেজ শুরু হয়েছে। এখন শীতকালের শুরুর দিকে তাই গরম ভাব নেই বললেই চলে। স্ট্যান্ডের ওপর দন্ডায়মান গাছ গুলোতে দেখা যাচ্ছে কয়েকটা সুন্দর পাখি বসে আছে , সম্ভবত অন্য দেশ থেকে আসা পরিযান পাখি। আজকের রোদটা তেমন বিরক্তিকর লাগছে না বরং ভালো লাগছে। সুদেষ্ণা হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো ১১ টা বেজে ৩৫ মিনিট , অতঃপর ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালো । এতক্ষণ সুদেষ্ণা ক্লাস করছিলো , তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা নিশ্চয়ই আড্ডা দিচ্ছে। কালকে রাতেই সুদেষ্ণার কথা হয়েছিলো তাদের সাথে তারপর সবার ক্লাস অনুযায়ী ঠিক হলো ক্যান্টিনে দেখা হবে সবার সাথে । সুদেষ্ণা ক্যান্টিনে প্রবেশ করে একদম শেষে কোনের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো,,,,,,।
আসুন বিদ্যাসাগর এর নাতনি, দয়া করে নিজের আসোন গ্ৰহন করুন,,,,,,,,,, এই বলে আকাশ সুদেষ্ণার দিকে একটা চ্যায়ার এগিয়ে দিলো ।
সবাই তাকালো সুদেষ্ণার দিকে , এতক্ষণ সবাই হাঁসি ঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলো । সুদেষ্ণা সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে ধপ’ করে বসলো আকাশের বাড়িয়ে দেওয়া চ্যায়ারে তারপর সামনে থাকা গ্লাস তুলে ঢক’ ঢক’ করে জল খেলো,,,,,, এবার মনে হলো দেহে প্রান এলো । গ্লাসটা টেবিলে রেখে সবার দিকে নজর দিলো , সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সু তুই নোটিস পেয়েছিস,,,? কয়মাস পর থেকেই তো পরীক্ষা,,,,,,,, মোহিত সুদেষ্ণাকে জিজ্ঞাসা করলো।
পেয়েছি,,,,।
তোর মন খারাপ?? স্নেহা চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,,,,,।
তেমন কিছু নয়,,,,।
আসলেই কি তেমন কিছু নয় ,,,,,,, হয়তো নয় আবার হয়তো তেমনি কিছু । সুদেষ্ণার মন খারাপ নয় তবে সে চিন্তিত হিমাদ্রকে নিয়ে । সুদেষ্ণার দিদিভাই এর কথা গুলো সে মাথায় রেখেছে। তার দিদিভাই বুঝিয়েছে মোহ আর ভালোবাসার মধ্যে তফাৎ। তবে হিমাদ্রর প্রতি সুদেষ্ণার অনুভূতি মোহ নয় ,,,,,,, এতটুকু তো নিশ্চিত সুদেষ্ণা। প্রথম দিকে ভালোলাগা ছিলো তারপর ধীরে ধীরে তা ভালোবাসার রূপ নিয়েছে। অবশ্য ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা হয় । সুদেষ্ণা খুব করে চায় হিমাদ্রকে ,,,,,,, কিন্তু তার ভালোবাসা সমেত । সুদেষ্ণা চায় না জোর করে কারোর ঘাড়ে চাপতে। এতদিনে সুদেষ্ণা বুঝেছে,,,,, জোর করে আর যাই হোক কারোর ভালোবাসা পাওয়া যায় না , আর না কারোর মনে জায়গা করা যায় । সুদেষ্ণা ভাগ্যে বিশ্বাসী , যদি হিমাদ্র তার ভাগ্যে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তার হবে । হিমাদ্র সুদেষ্ণার ধরা ছোঁয়ার বাইরে, পুরো আকাশের চাঁদের মতো যাকে না ধরা যায় আর না ছোঁয়া যায় শুধুমাত্র দেখা যায় আর অনুভব করা যায় । এতকিছুর পরেও সুদেষ্ণা শতবার হিমাদ্রকে চাইবে,,,,,,, চাইতে তো আর দোষ নেই। সুদেষ্ণা ভেবেছে হিমাদ্রকে আর বিরক্ত করবে না,,,,,,,,, থাক না সে নিজের মতো করে ক্ষতি কি ,,,,,,,,,।
হেই গাইস,,,,,,,, আমি কী তোমাদেরকে জয়েন করতে পারি ? তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে ?
হঠাৎ এমন কথায় সবাই তাকালো সামনের আগন্তুকের দিকে । এ তো সেই দিনকার দাদাটা , প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে। তার কাঁধে ঝুলছে গিটার যেটা কালো রঙের আবরনে আবৃত। দাদাটার পেছনে আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ে রয়েছে, তারা সম্ভবত আগন্তুক লোকটার বন্ধু বান্ধব হবে ।
হ্যাঁ নিশ্চয়ই, বসুন না আমাদের কোনো আপত্তি নেই ,,,,,,, অনিক মুচকি হেঁসে বললো।
তারা একে একে সবাই বসলো , দূর থেকে দেখে যে কেউ ভাববে এখানে বৈঠক বসেছে। এবার সবাই গল্প শুরু করলো, পরিচয় থেকে নিয়ে কার কোন সাবজেক্ট সবই জানা হলো ওই সময়ের মধ্যে। গল্পের ফাঁকে আগুন্তক দাদাটার নাম জানা গেলো অয়ন। মূহুর্তের মধ্যে আড্ডাটা জমে উঠলো । অয়নদার বন্ধু অর্জুনদা সবার জন্য পেস্ট্রি আর কোলড্রিংস অর্ডার দিলো । সবাই গল্পে মগ্ন সুদেষ্ণা বাদে । তার বিরক্ত লাগছে এমন নয় তবে ভালো লাগছে এমনটাও নয়। সুদেষ্ণা চুপচাপ সবার কথা শুনছে আর মাঝেমধ্যে হুঁ’ হাঁ’ করছে । গল্পের একপর্যায় অনিক আবদার করলো অয়নদার গান শুনবে সঙ্গে সবাই মত দিলো । তারপর কী আর করার ,,,,, অয়নদাকে গান গাইতে হলো । এরপর খেয়ে দেয়ে অয়নদারা উঠে পড়লো , তাদের বাড়ি যেতে হবে । তারা সবার থেকে বিদায় নিলো এবং বেরিয়ে পড়লো ক্যান্টিন থেকে। যাওয়ার আগে অবশ্য বলেছিলো যে আর একদিন এরকম আড্ডা দেওয়া হবে । সুদেষ্ণা যতটা বাজে ভেবে ছিলো দাদাটা অতটা বাজে না , বেশ ভালোই।
এখন কলেজে ব্রেক টাইম চলছে , ব্রেকের পর সুদেষ্ণার কোনো ক্লাস নেই তাই সে বাড়ি যাবে ঠিক করলো । সুদেষ্ণা আর কেয়া বাদে সবার ক্লাস আছে , যদিও কেয়া আজকে অনুপস্থিত। সুদেষ্ণা অন্যান্য দিন নিজের বন্ধুদের অপেক্ষা করে কিন্তু আজকে সুদেষ্ণার শরীরটা একটু খারাপ তাই সে আজকে আর অপেক্ষা করবে না জানালো । তাতে অবশ্য কেউ আপওি করেনি । সবার থেকে বিদায় নিয়ে একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো সুদেষ্ণা।
সুদেষ্ণা আনমোনা হয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে চলেছে। তবে বেশি দূরে নয় কলেজের কাছাকাছি জায়গায় হঠাৎ কেউ সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখ তুলে চাইলো সুদেষ্ণা মুখে তার ভয় বর্তমান। সুদেষ্ণা সামনের ব্যাক্তিকে দেখে থমকালো , ভরকালো,,,,,,, এ যে হিমাদ্র তার সামনে দাঁড়িয়ে । সুদেষ্ণা কী স্বপ্ন দেখছে ? নাহলে এই পাষান মানব তার পথ কেনো আটকাবে ,,,,,,,?? সুদেষ্ণা বিস্ময় নিয়ে বললো,,,,,,,,,,,
আপনি,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।