পরী আর সেখানে সময় নষ্ট করে না। এক প্রকার জোর করেই পরী হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। মেহনুবাকে কিছু না বলেই বাড়িতে চলে আসে। তুর্য অসহায়ভাবে পরীর যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে। এক সময় ঘন কুয়াশার আড়ালে পরী মূর্ছা যায়।
তোমাকে | মুন্নি আক্তার প্রিয়া | পর্ব – ২৩
বাড়িতে এসেই নিজের রুমে চলে এসে বিছানায় বসে পড়ে। মনের মধ্যে এ কেমন দ্বন্দ্ব। কেন বারবার মন তুর্যর ভালোবাসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। অতীতে তুর্যর কোনো দোষ না থাকলেও অতীত কাহিনী তো আর সব ভুলে যাওয়া যায় না। আর না তা কখনো সম্ভব। তাছাড়া এই ছয়টা মাসে পরী নিজেকে একাই মানিয়ে নিয়েছে। আর যখন একা থাকতে শিখে গেল তখন তুর্য ভালোবাসার সমাহার নিয়ে সামনে আসলো। তুর্য কি জানে না এই সম্পর্কের পরিণতি কতটা অপূর্ণতাময়?
“কীরে কখন উঠলি?”
ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে পরী দরজার দিকে তাকায়। ঘুমাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে পরীকে প্রশ্নটা করেছে রেহেনা বেগম। পরী মৃদু হেসে বলে,
“অনেকক্ষণ আগেই।”
“ওহ। মেহু কোথায়?”
“বাহিরে।”
“এত সকালে বাহিরে?”
“হাঁটতে বের হয়েছিলাম দুজনে।”
“ওকে একা রেখে চলে এসেছিস?”
“ও আসছে।”
“আচ্ছা কী খাবি?”
“কিছু না। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। কথা আছে।”
“কী কথা?”
“আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।”
রেহেনা বেগম চলে যাওয়ার প্রায় কিছুক্ষণ পরই মেহনুবা রাগে ফুঁসতে ফু্ঁসতে রুমে আসে। পরীর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,
“আমায় একা রেখে চলে আসলি কেন?”
“একা কই? সাগর তো ছিল।”
“তাই বলে না বলেই চলে আসবি?”
“কী হয়েছে তাতে?”
“তোর মন খারাপ নাকি?”
“না।”
মেহু এবার পরীর পাশে বসে বলে,
“তুর্য ভাইয়াকে দেখলাম।”
“ওর জন্যই চলে এসেছি।”
“নিজেকে তার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা?”
“দূরে সরানোর কী আছে? আমি তার থেকে দূরেই আছি। বরং সেই আমার কাছে ঘেষার চেষ্টা করছে।”
রেহেনা বেগম ফ্রেশ হয়ে আসেন পরীর রুমে। হাতে তিন কাপ চা। দু’কাপ মেহু ও পরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে এক কাপ নিজে নেন। তারপর আয়েশ করে বসে খোশগল্পে মেতে উঠেন। এবং জানান মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে। পরিবারও ভালো। মেয়ের বড় ভাই আছে একটা। পরীদের মতোই এক ভাই এক বোন। আজকে ছেলের বাড়ি থেকে প্রিয়মকে দেখতে আসবে সন্ধ্যায়। অনেক কাজ পড়ে আছে। সবার জন্য খাবার তৈরি করতে হবে। রুমটা গোছাতে হবে। তাই মেহুকেও আজ যেতে বারণ করে দিয়েছে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দুজনই রেহেনা বেগমের সাথে কাজে লেগে যায়। পরীর বাবা দেওয়ান আহমেদ আর প্রিয়ম দুজনে মিলে বাজারে যায় রোদ উঠার কিছুক্ষণ পরই।
———————
প্রান্ত ঘুম থেকে উঠে থম মেরে বসে আছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। প্রান্তর মা শাহানা বেগম প্রান্তর রুমে এসে বলেন,
“তিথি কখন থেকে এসে বসে আছে। আর তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস।”
“কখন এসেছে?”
“তাও তো ঘণ্টাখানেক হবে। শান্তর বউয়ের সাথে গল্প করছে।”
“ভাইয়া কোথায়?”
“কোন মিটিং নাকি আছে সেখানে গেছে।”
“আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।”
প্রান্ত ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংরুমে গিয়ে দেখে সবাই খেতে বসেছে। প্রান্ত একটা চেয়ার টেনে বসে বলে,
“আব্বু খাবে না?”
শাহানা বেগম টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বলেন,
“না। পরে খাবে। ঘুমাচ্ছে এখন।”
কথা বলার ফাঁকে প্রান্তর তিথির সাথে একবার চোখাচোখি হয়ে যায়।
প্রান্তই জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছো?”
তিথি না তাকিয়েই বলে,
“ভালো। তুমি?”
“ভালো। অনেকদিন পর আসলে বাড়িতে।”
“জি না। এর আগেও এসেছি।”
“কই? আমি তো তোমায় শুধু ভাইয়ার বিয়েতেই আসতে দেখলাম।”
“কথা তো এই জায়গাতেই। তুমি ব্যস্ত মানুষ তাই খেয়ালই করো না।”
প্রান্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
“কী জানি! হয়তো।”
এরপর তিথির সাথে প্রান্তর আর বিশেষ কোনো কথা হয় না। খাওয়া শেষ হলে প্রান্ত নিজের রুমে চলে যায়। শাহানা বেগম আর শান্তর বউ মিলা মিলে টেবিল গোছাচ্ছে। তিথি মিনিট কয়েক বসে থেকে প্রান্তর রুমে চলে যায়। প্রান্ত তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিল। আয়নাতেই তিথিকে দেখে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বলবে?”
তিথি দৌঁড়ে গিয়ে প্রান্তর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আর কত পরীক্ষা নেবে তুমি? তুমি বোঝো না আমি তোমায় কত ভালোবাসি? আমার পরিবর্তন কী তুমি দেখো না?”
প্রান্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এখন কী করবে বা বলবে বুঝতে পারছে না। একটা সময় অনুভব করতে পারে তিথির চোখের পানিতে শার্ট ভিজে যাচ্ছে। প্রান্ত আলতো করে তিথির চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
“এভাবে কান্নাকাটি কোরো না।”
তিথি কান্নারত অবস্থাতেই বলে,
“আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না প্রান্ত।”
“আচ্ছা। কান্না থামাও। আমি দেখছি কী করা যায়।”
তিথি এবার মুখ তুলে ফু্ঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“আর কী দেখবে তুমি? আর কী দেখার বাকি আছে? আমার মরণ?”
“বাজে কথা বলা বন্ধ করো। আর কান্না থামাও।”
তিথি প্রান্তকে ছেড়ে গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রান্ত বিছানার ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে বাহিরে চলে যায়। এমন প্রত্যাখানে তিথির অভিমান পাহাড় সম হয়ে যায়। রাগে, জিদ্দে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তিথির।
.
.
সন্ধ্যার দিকে মেয়েপক্ষরা পরীদের বাসায় আসে। কথাবার্তা বলে। পরীরা ঠিকমতোই অতিথি আপ্যায়ন করে। এবং অতিথিরা যাওয়ার আগে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে যায়। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহেই শুভ কাজটা তারা সেরে ফেলবেন। হাতে সময় শুধু এই মাসটাই। বিয়ে মানেই তো প্রচুর কাজ আর ঝামেলা। পরীর অবস্থা এখন সবচেয়ে বেশি শোচনীয়। পড়ার টেনশনে ঠিকমতো বিয়ের আনন্দটাই বোধ হয় আর করা হবে না। দেওয়ান আহমেদের কথা অনুযায়ী প্রিয়ম পরেরদিন গিয়েই বিয়ের কার্ড বানাতে দিয়ে আসে। এরমধ্যে কাছের আত্মীয়-স্বজনদেরও ফোন করে সু-খবরটা জানিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে এখন অন্য রকম আনন্দ। তবে এতকিছুর মধ্যেও পরীকে পড়াশোনা ঠিক রাখতে হচ্ছে। সবাই যখন বিয়ের আনন্দে মাতামাতি করছে পরী তখন পড়ার টেবিলে মুখ গুঁজে বসে থাকে। ইচ্ছে করে গিয়ে ওদের সাথে আড্ডা দিতে। কিন্তু সেটা তো আর হবে না। দেওয়ান আহমেদের কড়া আদেশ পড়াশোনায় কোনো ফাঁকি দেওয়া যাবে না। তাই অগত্যা পরীকে বই নিয়েই বসে থাকতে হয়। সপ্তাহ খানেক এভাবেই চলে যায়। তুর্যর সাথে আর পরীর দেখা হয়নি। তবে মেহনুবা তিথির সাথে কথা বলে তুর্যর খোঁজ নিয়েছে আর পরীকেও জানিয়েছে। এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে এসেছিল তুর্য। ছুটি শেষ তাই চলে গেছে। পরী পাত্তা না দিয়ে বলেছিল,
“ভালোই হয়েছে। মিছে মায়ায় পড়ার আগেই চলে গেছে।”
মেহনুবা কিছু বলে না। শুধু মলিন মুখে বসে থাকে। এভাবে চলে যায় আরো সপ্তাহ্ খানেক। এবার দূরের আত্মীয়-স্বজনদেরও আসা শুরু হয়েছে। কাজিনরা সব চলে এসেছে। এখন মোটামুটি পড়াশোনায় ঢিলেমি করা যাচ্ছে। কাজিনরা সব একসাথে থাকা মানেই আড্ডার আসর। এই আসরে পড়াশোনা বড্ড বেমানান। কলেজ থেকে এসে কাজিনদের সাথে আড্ডা, রাতে একসাথে ঘুমাতে গিয়ে গল্পের আসর জমানো। এভাবেই দিন যাচ্ছিল। রেহেনা বেগম পরীকে ডেকে বলেন,
“তুর্য আর তিথিকেও কার্ড দিয়ে আসিস।”
“কেন?”
“কেন আবার কী? ওরা আসবে না প্রিয়মের বিয়েতে?”
পরী কিছু বলতে চেয়েও বলে না। তুর্য তো এখানে আর নেই। তাই ইনভাইট করলেও তো সমস্যা নেই। তাই এই বিষয়ে পরী আর কথা বাড়ায় না।
পরী কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছে সপ্তাহ্ খানেক। বিয়ের শপিং করা শুরু করে দিয়েছে সবাই। দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিনও চলে আসে। সবাই সাজগোজ করে কমিউনিটি সেন্টারে চলে যায়। মেয়েরা সবাই কলাপাতা পাড়ের হলুদ সুতী কাপড় পরেছে। খোঁপায় গাদা ফুলের মালা।ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি। এতজন ছেলের মধ্যে পরীর চোখ আটকে যায় একজনের দিকে। এখানে তুর্যও আছে। প্রান্তর সাথে কী নিয়ে যেন হেসেহেসে কথা বলছে। কিন্তু তুর্য আসলো কখন! তিথি পরীর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“কী ভেবেছিলে ভাইয়া আসবে না?”
পরী নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে তিথির দিকে। তিথি হেসে হেসে বলে,
“খুশি হওনি তুমি?”
পরী হাসার চেষ্টা করে বলে,
“তেমন কিছু না। মেহুকে দেখেছ?”
“হ্যাঁ। সাগরের সাথে ছবি তুলছে।”
পরী বিরক্ত হয়ে বলে,
“এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না! বয়ফ্রেন্ড পাগলী!”
পরীর কথা শুনে তিথি হাসে। দিশান এসে পরীকে বলে,
“হেয় কুইন, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”
তিথি দিশানের কান মলে দিয়ে বলে,
“এভাবে কথা বলিস কেন হু?”
দিশান ব্যথা পেয়ে বলে,
“আহ্! ছাড়ো আপু। আর শোনো, তুর্য ভাইয়া যদি আমাদের মাঝে না আসতো তাহলে পরী আপু এতদিনে আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যেত বুঝেছ? কিন্তু ভাইয়াটাই তো ঝামেলা। কী আর করব বলো? শত হলেও ভাই। তাই কিছু বলতে পারি না।”
দিশানের কথা শুনে পরী আর তিথি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়। দিশান মুচকি হেসে বলে,
“ওভাবে হেসো না ললনা। আমার বুকের মাঝে চিনচিন করে।”
পরী হেসে বলে,
“তুমি তো ভারী দুষ্টু হয়ে গেছ দেখছি।”
দিশান চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
“দেখতে হবে না কার ভাই!”
“হুম সেটাই! যেমন গুরু তার তেমন শিষ্য।”
“এখন চলো তো। ছবি তুলব।”
দিশান তিথি আর পরীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। ফটোগ্রাফারের কাছে গিয়ে বলে,
“ভাইয়া আমাদের ছবি তুলে দিন।”
তারপর পরী আর তিথির মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে,
“নিন। তুলুন।”
ফটোগ্রাফার হেসে বলে,
“ভাইরে আমি এখনো সিঙ্গেল পড়ে রইলাম। আর তুমি এই বয়সেই দুজন সুন্দরী নিয়ে ছবি তুলছো।”
দিশান মনমরা ভাব ধরে বলে,
“ভাই খালি ছবি তোলার জন্য ধরে এনেছি। উনারা অন্যদের সম্পত্তি।”
পরী আর তিথি দুজনে দিশানের গাল টেনে দেয়। ফটোগ্রাফার তিনজনের অনেকগুলো ছবি তুলে দেয়। কোথা থেকে তুর্য এসে পরীর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“এবার তুলুন।”
পরী তুর্যর দিকে তাকাতেই ফটোগ্রাফার ছবি তুলে ফেলে। তুর্য পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার দিকে কী? সামনে তাকাও।”
তিথি মুচকি হেসে দিশানকে নিয়ে সেখান থেকে সরে যায়। পরী অনিচ্ছা সত্ত্বেও তুর্যর সাথে অনেকগুলো ছবি তোলে। তুর্য ফটোগ্রাফারকে ধন্যবাদ দিয়ে পরীকে শূন্য জায়গায় নিয়ে যায়। দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরী। তুর্য পাঞ্জাবির হাতা উপরে তুলতে তুলতে বলে,
“কী ভেবেছিলে তুমি? আমি একেবারের জন্য চলে গেছিলাম? আমি ট্রান্সফার নিয়ে আবার এখানে চলে এসেছি।”
পরী দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“কে আসতে বলেছিল আপনাকে?”
“তুমি।”
“কবে?”
“মুখে বলোনি। তবে আমি তোমার মন পড়ে বুঝেছি।”
“আপনি আজকাল বেশি বোঝা শুরু করেছেন।”
“তাই?”
“একদমই তাই।”
তুর্য আস্তে আস্তে পরীর দিকে এগিয়ে যায়। পরী তুর্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। তুর্য দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসে।
তিথি আর দিশান মিলে দুষ্টুমি করছিল। তখন প্রান্ত এসে তিথির হাত ধরে বলে,
“চলো।”
তিথি একবার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কোথায়?”
“আমরাও ছবি তুলব।”
তিথি অবাক হয়ে প্রান্তর দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
প্রিয়মদের বাড়ি থেকে মেয়েদের বাড়িতে যাবে হলুদ দিতে। কয়েকজন আত্মীয়, পরীর কয়েকজন কাজিন, পরী, তিথি, মেহু,তুর্য, প্রান্ত আর সাগর যাবে হলুদ দিতে। তুর্য যাবে শুনে পরী যেতে চায়নি। কিন্তু কাজিনরা জোর করে নিয়ে গেছে। রোজ অর্থাৎ কনের যেই কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে সবাই সেখানে পৌঁছে যায়। সবাই রোজকে হলুদ দিতে গেলে পরী তখন থেমে যায়। রোজের পাশে সেই পুলিশ অফিসার দাঁড়ানো। পরীর সাথে পু্লিশ অফিসারের চোখাচোখি হলেই পুলিশ দ্রুত এগিয়ে আসে। পরী তখন উঠেপড়ে দৌঁড়ে গিয়ে এক কোণায় লুকিয়ে পড়ে। উঁকি দিয়ে পুলিশ অফিসারকে দেখতে গেলে ধাক্কা খায় তুর্যর সাথে। তুর্য কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিল। কান থেকে ফোন নামিয়ে বলে,
“হবু ভাবির গায়ে হলুদে এসে এমন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছ কেন?”
পরী দ্রুত তুর্যকে টেনে নিয়ে আড়ালে দাঁড়ায়। ফিসফিস করে বলে,
“আরে ঐযে ঐ পুলিশ অফিসারটা।”
“কীহ্! সে এখানে কেন?”
“আমি কী করে বলব?”
“ওয়েট! উনাকে দেখে তুমি লুকাচ্ছ কেন? আমি তো বলেছিলাম তুমি আমায় লাভ ইউ বলেছিলে।”
পরী ধমক দিয়ে বলে,
“চুপ করেন! আমার বান্ধবীরা সত্যিটা তাকে বলে দিয়েছে।”
“হায় আল্লাহ্! তাহলে আমায় দেখলে তো আমারও খবর আছে।”
“ঠিকই আছে। খুশি হয়েছি।”
“আমি ফেঁসে গেলে তুমি তো খুশি হবেই।”
কথার মাঝে পরীর চাচি ফোন দেয় পরীকে। এবার বাধ্য হয়ে পরীকে যেতেই হয়। পরীকে দেখে চাচি বলেন,
“তুই তো রোজের ভাইয়ের সাথে পরিচিত হোসনি। এইযে রোজের ভাই রেহান তোর বেয়াই হয় বুঝলি। আর রেহান, ও প্রিয়মের ছোট বোন পরী। তোমার বেয়াইন।”
পরী আলগোছে শাড়ির আঁচল চেপে ধরে। মনে মনে বলে,”এই পুলিশ অফিসারটাকেই ভাবির ভাই হতে হলো? শালায় তো এবার জীবন শেষ করে দিবে রে! ছিঃ! শালা বলছি কেন! সে তো ভাইয়ার শালা। কিন্তু এখন আমি করব কী? এ তো মরার ওপর খাড়া ঘা!”