ফ্লোরেনসিয়া – ৩৩

গভীর রাত।সম্পূর্ণ কামরাজুড়ে প্রগাঢ় অন্ধকার।কোথায়ও কোনো বিন্দুমাত্র আলোর উৎস নেই।ধীরে ধীরে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী’টা মানুষের অবয়ব ধারণ করে।তার নীলকান্ত মনির ন্যায় দুর্লভ চোখজোড়া থেকে নীলাভ রঙের দ্যুতি ছড়ায়।অন্ধকারে একজোড়া বড় বড় উজ্জ্বল নীলবিন্দু দেখা যায়।অবয়ব’টা এক’পা দু’পা করে নিঃশব্দে বিছানার কাছে গিয়ে দাড়ায়।তার বক্ষস্থলে অজানা ভয়,অস্বাভাবিক অস্বস্তি হয়।রাতের অন্ধকারে কোনো মেয়ের বেডরুমে ঢুকে পড়া একজন রুলারের জন্য নিশ্চয়ই শোভনীয় কিছু নয়।এই কাজটা নিঃসন্দেহে অন্যায়।

-পি’শাচদের জীবনে ন্যায় অন্যায় বলে কিছু হয় না।__ভেতর থেকে তার দুষ্ট আত্মা বিদ্রুপাত্মক কন্ঠে বলে।

-হ্যাঁ,আমি পি’শাচ।কিন্তু ও’ মানুষ।একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে।

-তাহলে কেনো এসেছো?দুভিল কোটে সেই অপরূপ সুন্দরী যুবতিকে রেখে?

-জানি না।

-তুমি স্বইচ্ছায় একজন সুন্দরী মেয়েকে আজ রাতের শয্যাসঙ্গী করতে চেয়েছিলে।মেয়েটাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে।হয়তো তার মধ্যেই তুমি এই মেয়েটাকে খুঁজে পেতে।

-মুখ সামলে কথা বলো।ইনায়ার মতো কেউ হবে না।ওর সাথে কোনোদিনও অন্য কারো তুলনা করবে না।শেষ বারের মতো তোমাকে সাবধান করছি।___আব্রাহাম ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে।

-এই মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে?

-সামথিং স্পেশাল অ্যান্ড সেইক্রিড্।

-তোমাদের পরিচয় খুব বেশিদিনের না।সাক্ষাৎ হয়েছিলো মাত্র কয়েকবার।তাহলে কি করে বুঝলে ও আলাদা,বিশেষ এবং পবিত্র?

-তুমি কি ভুলে গেছো?আমি আব্রাহাম স্যাভেরিন।একজন র’ক্ত’চোষা পি’শাচ।এছাড়াও অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো।আমি সহজেই মেয়েদের বুঝে নিতে পারি।তাদের নাড়িনক্ষত্র জানি।

তার দুষ্ট আত্মা উচ্চস্বরে আওয়াজ করে হাসে।ব্যঙ্গ কন্ঠে বলে,,,

-এর আগে আমি তোমার চোখে অন্য কোনো মেয়ের জন্য এতোটা সম্মান দেখিনি।যাদের সাথে তুমি রাত্রিবাস করেছিলে।

-এটা কি স্বাভাবিক নয়?ওরা স্বইচ্ছায় আমার সাথে ইন্টিমেট হতে রাজি হয়েছিলো।আমি কাউকে বাধ্য করিনি।এতোটা সম্মান হয়তো করিনি,কিন্তু আমি কখনো কোনো মেয়েকে অসম্মানও করিনি।তবে যাই করিনা কেনো,তোমাকে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।

-তুমি পি’শাচ।তুমি অপবিত্র।তোমার সাথে এই মেয়েটার কোনো সম্পর্ক হতে পারে না।

-আমি চাইও না।আমি শুধু একবার দেখতে এসেছি ওকে।দেখা শেষ হলে ফিরে যাবো দুভিল কোটে।

-এভাবে কাপুরুষের মতো মেয়েদের কামরায় প্রবেশ করে একজন ঘুমে অচেতন মেয়েকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে যেতে তোমার লজ্জা করছে না?

-করছে।অস্বাভাবিক হলেও সত্যি,জীবনে এই প্রথমবার আমার লজ্জা করছে,অস্বস্তিবোধ হচ্ছে।

আব্রাহামের দুষ্ট আত্মা আবারও শব্দ তুলে হাসে।তাচ্ছিল্যভরা কন্ঠে বলে,,,,

-তোমার মতো অ’প’দার্থ র’ক্তপিপাসুর কাছে এরকমটাই আশা করেছিলাম।তুমি ভা’ম্পায়ার নামের কলঙ্ক।এই মেয়ে টাকে মে’রে ফেলো। ওকে হ’ত্যা করে প্রমাণ করো তুমি সত্যিই একজন পি’শাচ। ও তোমার স্বাধীন জীবনযাপনে বাঁধা দিচ্ছে।তোমাকে বদলে দিচ্ছে।তুমি আঁটকে যাচ্ছো একজন তুচ্ছ,নগন্য মেয়ের মায়াজালে।প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে চাও?ধ্বংস হয়ে যাবে।এই মেয়েটাই তোমার জীবনে ধ্বংস বয়ে আনবে।ম’রবে তুমি।ম’রবে।

-খামোশ বলছি।আর একটা শব্দও উচ্চারণ করবে না।____আব্রাহাম হিংস্র কন্ঠে গর্জন তুলে বলে।

-নিজের সত্তাকেই ধমকাচ্ছো?সাহস থাকলে ওর মুখোমুখি হও।

-যদি সম্ভব হতো,তোমাকে এখনই গ’লা টিপে হ’ত্যা করতাম।___আব্রাহাম উচ্চস্বরে বলে।

হঠাৎই কোনো পুরুষের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় ইনায়ার।ভয়াবহ চমকায়।সম্পূর্ণ কামরায় ঘুটঘুটে অন্ধকার।গলা শুকিয়ে আসে।বিছানার ডানদিকে হাতরে জায়গাটুকু শূন্য অনুভব করে।সিয়া নেই।

-সিয়া গেলো কোথায়?কামরায় কে কথা বললো?___ইনায়া মনে মনে ভাবে।বামদিকে হাত রেখে আর্নির অস্তিত্ব খুঁজে পায়।ওর থুতনির নিচে গলায় আর কপাল স্পর্শ করে।জ্বর কমে গেছে।ঠান্ডা হয়ে আছে শরীর।হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হয়।ইনায়া ভয় পায়।ভীত-সন্ত্রস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,,

-কে?কে আছো কামরায়?সিয়া!সিয়া তুমি কোথায়?

কোথাও কারো সাড়াশব্দ নেই।কেউ ইনায়ার প্রশ্নের উত্তর দেয় না।অন্তর আত্মা জুড়ে জেঁকে বসে ভয়।অজানা আতংকে বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে।বিছানা থেকে দ্রুত নেমে দাড়ায়।সজাগ কানে সাবধানী পায়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।চেয়ারটা খালি পড়ে আছে।সিয়া নেই।ইনায়া শঙ্কিত গলায় ডাকে,,,,,

-সিয়া। সিয়া তুমি কোথায়?____ইনায়া নিচু স্বরে ডাকে।যাতে করে ওর ডাক শুনতে পেয়ে অন্যকারো ঘুম না ভেঙ্গে যায়।সিয়া এমনিতেও রাতের বেলা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়।আজও কোথাও গেছে হয়তো।ইনায়া নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করে।কিন্তু ওর অবচেতন হৃদয় ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠে।

-সিয়া যদি কোনো বিপদে পড়ে যায়?

ইনায়া মনে মনে ভাবে।ত্বরিত নেত্রপল্লব বুজে নেয়।শ্রবণেন্দ্রিয় সজাগ রেখে ধীরে ধীরে গভীর নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে।সহসা একটা অপরিচিত সুবাশ এসে লাগে ওর নাকে।ঠিক অপরিচিত নয়।এর আগেও কোথায় যেন এই সুবাশটা পেয়েছিলো ও।কোনো পুরুষের ব্যবহৃত সুগন্ধির মতো।ইনায়া চোখ মেলে তাকায়।ভেসে আসা সুগন্ধি অনুসরণ করে পা টিপে টিপে হাঁটে।কয়েক পা হাঁটার পর চোখের সামনে একজোড়া নীল রঙের উজ্জ্বল আলো দেখতে পায়।ইনায়া ভয় পেয়ে দু’কদম পেছনে সরে দাড়ায়।পুনরায় সেদিকে তাকায়।

-কিছুই তো নেই।হয়তো আমার মনের ভুল ছিলো।____ইনায়া অনুচ্চ স্বরে বলে।

এই প্রগাঢ় অন্ধকারেও ওর মুখখানা রুলার আব্রাহাম স্যাভেরিন মন্ত্রমুগ্ধ চোখে দেখে।ইনায়ার সাথে লুকোচুরি খেলে।বাতাসের গতিতে এখান থেকে সেখানে ছুটোছুটি করে।আজ ইনায়ার মুখোমুখি হবে সে।শুধু আজ নয়।এরপর যতগুলো রাত বা যতগুলো দিন আসবে,প্রতিবারই এই নিষ্পাপ মেয়েটার মুখোমুখি হবে।পবিত্র এক যুবতীর উপর অপবিত্র যুবকের আকর্ষণ।এই আকর্ষণটা কিসের?ভালো লাগা?ভালবাসা?নাকি শুধুই মোহ?

-মোহ!! মোহ তো যেকোনো সময় কেটে যায়।কিন্তু ভালবাসা সারাজীবন হৃদয়ের গভীরে থেকে যায়। ভালবাসা? একজন পি’শাচ কি কখনো কোনো মানুষকে ভালবাসতে পারে? ____আব্রাহাম ভাবে।ভেবে মনে মনে বিদ্রুপাত্মক হাসে।

প্রথমে মোম জ্বালিয়ে কামরা আলোকিত করা প্রয়োজন।ইনায়া টেবিলের দেরাজ খুলে মোম আর দিয়াশলাই বের করে আনে।দু’টো মোম জ্বালিয়ে একটা টেবিলের উপর রাখে।অন্য মোম টা হাতে নিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায়।অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করে,,,,,

-আব্রাহাম স্যাভেরিন!

ইনায়ার সামনে একটুখানি দুরে সিঙ্গেল সোফায় রাজার মতো বসে ছিলো আব্রাহাম স্যাভেরিন।পরনে সাদা রঙের গলা ঢেকে রাখা হাই কলারের শার্ট,আকাশি রঙের কোট আর প্যান্ট।গলার কাছে এক টুকরো কালো কাপড়ের টাই।পায়ে কালো রঙের নী লেন্থ বুট।মাথার সোনালী চুলগুলো হালকা এলোমেলো হয়ে আছে তার।

ইনায়া বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে দেখে।অবরুদ্ধ ক্রোধে ওর মস্তিষ্ক জ্বলে উঠে।অসামান্য ঘৃণায় শরীর কাঁপতে শুরু করে।আব্রাহাম নিষ্প্রাণ চোখে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। ক্রোধের আতিশয্যে ইনায়া দু’চোখের নেত্রপল্লব বুজে নেয়। পুনরায় চোখ মেলে তাকায়।ভ্রম নয়,সত্যি।সত্যিই জা’নো’য়ার টা এখনো বসে আছে সোফায়।

-অ’সভ্য।জা’নো’য়ার।র’ক্তচোষা নরপি’শাচ। আমার কামরায় প্রবেশ করার দুঃসাহস কি করে হলো?___ইনায়ার রাগান্বিত কন্ঠস্বর।

দু’হাতে পরিধেয় কোট’টার বুকের অংশ ঠিক করে আব্রাহাম ত্বরিত উঠে দাড়ায়।প্যান্টের দু’পকেটে দু’হাত গুঁজে দিয়ে শান্ত গলায় বলে,,,,

-তাহলে তুমি সত্যিটা জানো।

-আমি সব সত্যি জানি।আমার মা’কে মে’রে ফেলেছো তুমি।

আব্রাহাম হতবাক।স্তম্ভিত হয় তার দু’চোখের দৃষ্টি।অন্ধকারে ছেয়ে যায় মুখাবয়ব।ক্ষণকাল সময় গড়ায়।ইনায়া ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,,,,

-মহান যিশুর নামে প্রতিজ্ঞা করে বলছি।আমার মা’য়ের হ’ত্যাকা’রীকে আমি নিজ হাতে না’শ করবো।

-আমি তোমার মা’কে হ’ত্যা করিনি।ইভেন আমি জানিও না তাকে কে হ’ত্যা করেছে।

-মিথ্যে বলবে না।আমি তোমার জিব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো এখুনি।___ইনায়া উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে।

ওর চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় আর্নির।ইনায়া নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মায়ের খু’নীকে চোখের সামনে দেখে বুদ্ধিমতী শান্ত প্রকৃতির মেয়েটাও কেমন অশান্ত হয়ে উঠে।এদিক সেদিকে কিছু একটা খুঁজে।সম্মুখ দরজায় করাঘাতের শব্দ শোনা যায়।আর্নি ঘুম ঘুম চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে বীভৎস চিৎকার দিয়ে উঠে।দরজার অপাশ থেকে স্ট্রিকল্যান্ড,ক্রিস্তিয়ান আর ফ্রাঙ্কলিনের কন্ঠস্বর শোনা যায়,,,,

-আর্নি?কি হয়েছে?চিৎকার করছো কেনো?

-ইনায়া দরজা খোলো।

-সিয়া,ইনায়া।কেউ দরজা খোলো প্লিজ।____ক্রিস্তিয়ান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে।

হুশে নেই ইনায়া।শ’য়তানটাকে আজ মে’রেই ফেলবে।জীবিত ফিরে যেতে দিবে না।এরকমই মনোভাব পোষন করে লোহার তৈরী কিছু খুঁজতে শুরু করে।দৌড়ে বারান্দায় চলে যায়।আব্রাহাম দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে।ফিরে যাবে,নাকি এখনই এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাবে?আর্নি কাঁপতে শুরু করে।দরজা খুলে দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই ও।উপায়ান্তর না থাকায় ক্রিস্তিয়ান আর স্ট্রিকল্যান্ড মিলে দরজা ভেঙ্গে ফেলে।

-এই পরিস্থিতিতে হয়তো ইনায়ার ভুল ভাঙ্গানো সম্ভব হবে না।বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।

আব্রাহাম ভাবে।চোখের পলকে ধোঁয়ার কুন্ডলী হয়ে কামরার বাইরে বেরিয়ে যায়।বাকিরা দরজা ভেঙ্গে কামরায় প্রবেশ করে।ইনায়া সড়কি হাতে ফিরে আসে কামরায়।উদ্ভ্রান্তের মতো পুরো কামরার চারদিকে নজর বুলায়।নেই।শ’য়’তা’ন টা নেই।

-এখানে কি হয়েছিলো?সিয়া কোথায়?____আর্নিকে জিজ্ঞেস করে ক্রিস্তিয়ান।

আর্নির গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরোয় না।অবরোধ হয়ে আসে ওর কন্ঠস্বর।বিছানার একপাশে গুটিশুটি মে’রে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে ও।

-ইনায়া,কি হয়েছে?বলো।___ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন স্ট্রিকল্যান্ড কুরী।

ইনায়া কোনো প্রত্যুত্তর দেয় না।অস্থির চিত্তে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্রাহামকে খুঁজে।ওর একহাত শক্ত করে ধরে ফেলেন মাদাম ল্যারি।বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,,,

-তোমার হাতে সড়কি কেনো?এরকম পাগলের মতো আচরণ কেনো করছো?

-ও এসেছিলো।ঐ র’ক্তচোষা জা’নোয়ারটা এসেছিলো,যে আমার মা’কে হ’ত্যা করেছে।____ইনায়ার বিধ্বস্ত কন্ঠস্বর।

-কে?__শঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করেন ফ্রাঙ্কলিন।

-আব্রাহাম স্যাভেরিন।___আর্নি ভীত ভীত কন্ঠস্বরে বলে।

কামরায় থাকা মানুষগুলো ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায়।স্ট্রিকল্যান্ড কুরী তীব্র শঙ্কায় তটস্থ হয়ে যায়।

-পি’শাচগুলো এখানেও পৌঁছে গেছে?তবে কি বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে?

মনে মনে ভাবেন ফ্রাঙ্কলিন।তার চোখে মুখে ভয়াবহ আতঙ্কের ছাপ।ভীত-সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকান মাদাম ল্যারি।স্বামীর ভয় পাওয়ার কারণ বুঝতে পারেন।দু’চোখের পাতা নেড়ে ফ্রাঙ্কলিনকে শান্ত হতে বলেন।ফ্রাঙ্কলিনের আরও একটু কাছ ঘেষে দাড়ান।অনুচ্চস্বরে বলেন,,,,,

-ঈশ্বর আছেন।প্রতিবার শ’য়’তানের জয় হতে পারে না।এবার ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করার জন্য কাউকে পাঠিয়েছেন।শুধু তার সত্তা ফিরে পাওয়া বাকি।

_________

রাতের অন্ধকার বিদীর্ণ করে তৃণভূমির চারপাশে চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো সাদা আলো ছড়িয়ে পড়ে।বরফ আস্তরণের উপর নেমে আসে থ্যাসো।সিয়া পায়ে পায়ে এগিয়ে যায়।থ্যাসো শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ওর শিং থেকে সোনালী রঙের আলো বিচ্ছুরিত হয়।সিয়ার চোখে মুখে সীমাহিন বিস্ময়।লম্বা চুলের মেয়েটা অনেকটা উঁচুতে দাঁড়িয়ে শুন্যের উপর ভাসে।তার অস্বাভাবিক লম্বা চুলগুলো শ্বেতশুভ্র বরফের উপর গড়াগড়ি খায়ে।মেয়েটা খিলখিল করে হাসে।যেন তার হাসি থেকে মুক্তো ঝরে পড়ে।উজ্জ্বল বাদামী চোখজোড়া আগুনের শিখার মতো জ্বলছে।থ্যাসোর শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়া আলোয় মেয়েটার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখে সিয়া বিমোহিত হয়।মেয়েটা এতটাই সুন্দরী যে,নিজের রুপ আর সৌন্দর্যে মেয়েদেরকেও বশ করে নিতে পারে।

সিয়া থ্যাসোর পিঠে চড়ে বসে।ধবধবে দু’টো সাদা ডানা মেলে থ্যাসো উড়তে শুরু করে।সিয়া ওর লাগাম টেনে ধরে।থ্যাসো লম্বা চুলের মেয়েটার সমান উঁচুতে দাড়িয়ে শূন্যের উপর ভাসে।মেয়েটা সহাস্যে বলে,,,,,

-তুমি এখন সাহসী হয়ে গেছো।

-কাজের কথা বলো।কেনো ডেকেছো?

-গল্প করতে।পরিচিত হতে।___মেয়েটার ঠোঁটে অসম্ভব সুন্দর হাসি।এতো সুন্দর হাসি কোনো মানুষের হতে পারে!!মেয়েটা নিঃসন্দেহে কোনো দেবী।সিয়া মনে মনে ভাবে।চোখ সরিয়ে নেয় অন্যদিকে।নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলে,,,,,

-তোমার সাহায্য প্রয়োজন।তোমাকে বিশ্বাস করে নির্দ্বিধায় এই রাতের অন্ধকারে এতো দুরে ছুটে এসেছি।আশা করি তুমি আমাকে সাহায্য করবে।

-কি সাহায্য চাইছো আমার থেকে?__মেয়েটা মিষ্টি হেসে সিয়াকে জিজ্ঞেস করে।

-ওরা কোথায় থাকে?সবগুলোকে কোথায় খুঁজে পাবো।আপাতত আমি ওদের পা’পিষ্ঠ চেহারাগুলো দেখে নিতে চাই।

-আমি কেনো তোমাকে সাহায্য করবো?__মেয়েটা এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে।

-তুমি ছাড়া আমাকে আর কে সাহায্য করবে?___সিয়ার কন্ঠে বিস্ময় ঝরে পড়ে।

মেয়েটা সিয়ার প্রশ্নের উত্তর দেয় না।নিশ্চুপ হয়ে থাকে।কয়েক পল সময় গড়ায়।চারপাশটা অদ্ভুদ নিস্তব্ধ।কোথাও কোনো পশু পাখির ডাক পর্যন্ত কর্ণগোচর হয়না।হঠাৎই ক্রুদ্ধ কন্ঠে আওয়াজ তুলে একটা কালো রঙের ভাল্লুক ছুটে আসে।সিয়া কপাল কুঁচকে নেয়।দানবীয় ভাল্লুক।মেয়েটা অদ্ভুত শব্দ করে ভাল্লুকটাকে কিছু একটা বলে।নিমেষেই ওটা শান্ত হয়ে যায়।সিয়া প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কিছুতে বিস্মিত হয়।ওর এই বিস্ময়ের শেষ কোথায়?সিয়া মেয়েটাকে কিছু একটা প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে যায়।কথা বলতে ভালো লাগছে না।এই মেয়েটা যদি ওকে সাহায্য না করে।তাহলে ওকে সাহায্য করবে কে?আরও কিছুক্ষণ সময় গড়ায়।সিয়া বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

-তুমি কি দেবী আর্টেমিস সম্পর্কে জানো?__অকস্মাৎ অকপটে জিজ্ঞেস করে লম্বা চুলের মেয়েটা।

-হ্যাঁ জানি।___সিয়া ম্লান কন্ঠে প্রত্যুত্তর দেয়।

-কতটুকু জানো?

সিয়া বিরক্ত হয়।অহেতুক ওর সময় নষ্ট হলো।এতক্ষণে ইনায়া জেগে গেছে কিনা কে জানে।দুশ্চিন্তায় কান্না করে দিবে ওকে খুঁজে না পেলে।সিয়া নীরব থাকে।মেয়েটার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না।মেয়েটা পুনরায় জিজ্ঞেস করে ওকে,,,,

-কতটুকু জানো?বলো।আমিও তোমাকে কিছু বলতে চাই।

-আর্টেমিস একজন কুমারী দেবী।যিনি ছিলেন গ্রীকদের প্রকৃতি,জন্ম এবং শিকারের দেবী।তাকে রাত ও বনের দেবীও বলা হয়।তার সঙ্গী হরিণ,ভাল্লুক,শিকারী কুকুর।দেবী আর্টেমিস ছিলেন জিউস ও লেটোর কন্যা এবং এপোলোর জমজ বোন।আর্টেমিস জন্মের সময় নিজেই নিজের মাকে সাহায্য করেছিলেন।তিনি জন্ম ও মৃত্যুর চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।নারী শক্তির নিদর্শন দেবী আর্টেমিস স্বাধীনতা,সাহসিকতা,আত্মবিশ্বাস এবং শক্তির প্রতীক ছিলেন।

আর্টেমিসের বয়স যখন তিন বছর,তখন তিনি তার বাবা জিউসের কাছে নিজের জন্য তীর ধনুক চেয়েছিলেন।জিউস তার আদরের কন্যাকে খুব সুন্দর তীর-ধনুক উপহার দিয়েছিলেন।আর্টেমিসের শৌর্যে বিমোহিত হয়েছিলেন স্বর্গের সব দেব-দেবীরাও।তবে আর্টেমিস ছিলেন প্রতিহিংসাপরায়ণ ও আবেগপ্রবণ।

আর্টেমিসের বেশ কিছু মূর্তিতে তাকে হরিণ,চিতাবাঘ এবং সিংহের সাথে দেখা যায়।তবে তার মূর্তির মূল সৌন্দর্য হলো তার বিশাল বড় দু’টি ডানা।তাছাড়া বেশ কিছু মূর্তিতে আর্টেমিসকে দুই জোড়া হরিণের একটি রথেও দেখা যায়।আর্টেমিস রোমানদের কাছে ডায়ানা নামে পরিচিত।ডায়ানা রোমানদের চাঁদের দেবী।আর্টেমিস অর্থাৎ ডায়ানা কুমারী দেবী হলেও তিনি জন্ম নির্ধারণ করেন বলে,নারীরা গর্ভধারণের জন্য তার উপাসনা করে।

দেবী আর্টেমিসের সম্পর্কে আমি এতটুকুই জানি।কিন্তু তুমি কেনো হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করছো?

-আমি দেবী আর্টেমিসের অংশ।তোমার ঐশ্বরিক সত্তা।আমি তোমাকে একটা কথাই বলবো।প্রথমে নিজের সম্পর্কে জানো।জানার চেষ্টা করো।সত্যিগুলো খুঁজে বের করো।উদঘাটন করো সব রহস্য।অনেক কিছু জানতে হবে তোমার।তারপর আমি তোমাকে সাহায্য করবো।___মেয়েটা কঠিন কন্ঠে বলে।মুহূর্তেই তার হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা শক্ত হয়ে যায়।

সিয়া অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।ওর ঐশ্বরিক সত্তা মানে কি?কি বলছে মেয়েটা?কোনোকিছুই সিয়া বুঝতে পারে না।আজ মেয়েটার সাথে সবুজ রঙের অ্যানাকোন্ডা টা নেই।এটাও সিয়াকে বেশ অবাক করে।কিন্তু মেয়েটা সহাস্যে বলে,,,,

-তুমি ভয় পাও।তাই ওকে সাথে আনিনি।যেদিন তোমার মনের সমস্ত ভয় দুর হয়ে যাবে,তুমি আমার মতো সাহসী হয়ে উঠবে।সেদিন ওকে আবারও সাথে নিয়ে আসবো।

ভাবতে ভাবতেই সিয়া মেয়েটার দিকে তাকায়।কিন্তু নিমেষেই মেয়েটা গায়েব হয়ে যায়।নেই।কোথাও নেই।ওকে অনেকগুলো প্রশ্ন করার ছিলো।শেষ পর্যন্ত সিয়ার প্রশ্নগুলো প্রশ্নই থেকে যায়।

এদিকে রাত গড়িয়ে ভোর হতে চললো।তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।সিয়া থ্যাসোর গলার কাছে হাত বুলিয়ে দেয়।শক্ত হাতে লাগাম টেনে ধরে।দৃঢ় গলায় আদেশ করে বলে,,,,

-থ্যাসো।দ্রুত আমাকে ফ্রাঙ্কলিন দাদুর বাড়িতে নিয়ে চলো।

থ্যাসো আলোর গতিতে ছুটতে শুরু করে।চোখের পলকে ফ্রাঙ্কলিনের বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছায়।ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে আসে।সিয়া লাফ দিয়ে নেমে দাড়ায়।দ্রুতপায়ে হেঁটে যায় পশ্চাদ্ভাগের উঠোনের দিকে।

______

খারকিভ,ওয়াভেল কোট।

সকাল আটটা।একাডেমিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরী হচ্ছিলো এদুয়ার্দো।প্যান্টের সাথে সবে মাত্র শার্ট পরেছে সে।সহসা দরজায় করাঘাতের শব্দ হয়।এদুয়ার্দো অনুমতি দেয়,,,

-এসো।

দরজা ঠেলে কামরায় প্রবেশ করে অ্যাভোগ্রেডো।মুখখানা ভীষণ শুকনো হয়ে আছে তার।শ্রদ্ধার সাথে মাথা নত করে বলে,,,,

-অনারেবল ওভারলর্ড।

চিরুনী চালিয়ে মাথার ঘন মসৃণ কুচকুচে কালো চুলগুলো পরিপাটি করে পেছন ঘুরে দাড়ায় এদুয়ার্দো।মাত্রই গোসল শেষ করে এসেছে সে।ভীষণ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।আদি-অন্ত অপার্থিব সৌন্দর্য।অ্যাভোগ্রেডো একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।কিছুক্ষণ আগে হওয়া দুশ্চিন্তার কথা ভুলে যায়।মনে মনে বলে,,,

-মেয়েরা এই ব্যক্তির থেকে প্রশিক্ষণ নেয় কি করে?

-বলো।_____এদুয়ার্দোর থমথমে ভরাট কন্ঠ।

পূর্বের ন্যায় ফের অ্যাভোগ্রেডোর মুখখানা শুকিয়ে যায়।ভীত ভীত কন্ঠস্বরে বলে,,,,

-অনারেবল ওভারলর্ড।আশা করি আমাকে ক্ষমা করবেন।আপনি অভয় দিলে আমি নির্ভয়ে বলতে চাই ঘটনাগুলো।

-নির্ভয়ে বলো।

-স্যাভেরিন ক্যাসলের সবার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে,বেশকিছু দিন আগে অনারেবল এমপ্রেস,জনাব উড্রো উইলসন,প্রিন্সেস ক্যারলোয়েন,প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া,প্রিন্সেস অ্যালিস,জনাব জ্যাসন মিকারলি,স্যান্ড্রি,প্রিন্স ব্রাংকো সবাই মিলে একসাথে একদিন ক্যাসল থেকে বেরিয়েছিলেন।সাথে আরও একজন মুখ ঢেকে রাখা কালো পোশাকধারী ব্যক্তি ছিলো।যার দু’চোখের মনিগুলো ছিলো হালকা নীলাভ রঙের।আপাতত আমি এতটুকুই জানতে পেরেছি মহামান্য মহারাজ।

-মা বলেছিলেন সবাই মিলে শিকারে গিয়েছিলেন।তুমি এর সত্যতা যাচাই করো।আমি শুধু আমার মনের ঈষৎ সন্দেহটুকু দুর করতে চাই।ভুল প্রমাণিত হতে চাই।এখন যাও।

অ্যাভোগ্রেডোর মনে হয় কথাগুলো বলার সময় এদুয়ার্দোর কন্ঠস্বর মৃদু মৃদু কাঁপছিলো।

-এই কঠিন ব্যক্তিত্বের পুরুষটারও কি গলা কম্পিত হতে পারে?

অ্যাভোগ্রেডো ভাবে।কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।এদুয়ার্দো রাশভারি কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,,

-এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

-আরও একটা বিষয়ে আপনাকে জানানোর ছিলো।

এতটুকু বলে অ্যাভোগ্রেডো নত মাথাটা আরও নত করে নেয়।

-হুম।বলো।

-গতকাল মাঝরাতে রুলার গিয়েছিলেন ইম্যূভিলে।

-ইম্যুভিলে?___এদুয়ার্দোর বিস্মিত কন্ঠস্বর।

-জ্বি অনারেবল ওভারলর্ড।ফ্রাঙ্কলিনের বাড়িতে।ইনায়ার সাথে দেখা করতে।তাকে কোনো কিছুতে বাঁধা প্রদান করার ক্ষমতা আমার নেই।কিন্তু আমি নজরে রেখেছিলাম।তিনি কারো কোনো ক্ষতি করেননি।দেখা করে ফিরে এসেছেন।

এদুয়ার্দো শুধু ইনায়ার নাম জানতো।কিন্তু গতকাল ওকে দেখেছিলো একাডেমিতে।সিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো।ইনায়াকে দেখে যতদুর বুঝতে পেরেছিলো,মেয়েটা ভালো।তাহলে ওর সাথে আব্রাহাম কেনো দেখা করতে যাবে?এদুয়ার্দো ভাবে।তার ভ্রু-কুঞ্চিত হয়।অকপটে জিজ্ঞেস করে,,,,

-ঐ কালো পোশাকধারী মুখ ঢেকে রাখা ব্যক্তি আব্রাহাম নয়তো?

-ক্ষমা করবেন।আমি তা ভাবিনি।যদিও রুলারের দু’চোখের মনি হালকা নীলাভ রঙের,কিন্তু তিনি কেনো নিজের মুখ ঢেকে রাখবেন?

অ্যাভোগ্রেডোর কথার মাঝখানেই দরজায় করাঘাতের শব্দ শোনা যায়।এদুয়ার্দো অনুমতি দেয়।উচ্চস্বরে রাগান্বিত কন্ঠে বলে,,,,

-এসো।

ক্রুদ্ধ হয়ে কামরায় প্রবেশ করে আব্রাহাম।অনিচ্ছা সত্ত্বেও এদুয়ার্দোকে নত মস্তকে সম্মান জানায় সে।আক্রোশপ্রসূত কন্ঠে বলে,,,,

-অনারেবল ওভারলর্ড। এসবকিছুর পেছনে আপনি দায়ী তাইনা?ভাম্পায়ার সেনা লাগিয়ে ইনায়ার মা-দাদিনকে হ’ত্যা করে আমাকে অপরাধী বানিয়েছেন।

-তোমার এতোবড় দুঃসাহস!আমাকে অপবাদ দিচ্ছো?ইনায়ার কাছে তুমি কেনো গিয়েছিলে?কোন উদ্দেশ্যে?

এদুয়ার্দো ক্ষিপ্র পায়ে হেঁটে গিয়ে একহাতে আব্রাহামের গলা চেপে ধরে।অন্যহাতে বুক বরাবর ধাক্কা দিয়ে আছড়ে ফেলে পাথুরে দেয়ালে।আব্রাহাম মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে।বুকে ব্যথা পায়।উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু তার আগেই এদুয়ার্দো আব্রাহামের গলায় পা চেপে ধরে।শক্তি আব্রাহামেরও আছে।পাল্টা আঘাত সেও করতে পারে।কিন্তু যথেষ্ট সম্মান করে বলে মুখ বুঝে সব মা’র সহ্য করে নেয়।

-আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিস?আমাকে প্রশ্ন করছিস?আমাকে?কোন উদ্দেশ্যে ফ্রাঙ্কলিনের বাড়িতে গিয়েছিলিস তুই?

অ্যাভোগ্রেডোর ক্ষমতা নেই এদুয়ার্দোকে বাঁধা দেওয়ার।কিন্তু এই দুই ভাইকে এখুনি থামাতে হবে।নাহলে যেকোন মুহূর্তে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।এখন ইজাবেলই একমাত্র ভরসা।অ্যাভোগ্রেডো ঝড়ের গতিতে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ায়।দরজা খুলে কামরার বাইরে বেরিয়ে যায়।আব্রাহাম দু’হাতে নিজের গলা থেকে এদুয়ার্দোর পা সরাতে চায়।দৃঢ় গলায় বলে,,,

-আপনিই আছেন সবকিছুর পেছনে।এখন ধরা পড়ে নিজের দোষ লুকাতে অহেতুক আমাকে আঘাত করছেন।

এদুয়ার্দো আব্রাহামের গলা থেকে পা সরিয়ে নেয়।নিচু হয়ে দু’হাতে আব্রাহামের দু’কাঁধ খামচে ধরে।শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে পুনরায় তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ালে।ঠিক তখনই সশব্দে দরজা খুলে ইজাবেল কামরায় প্রবেশ করে।বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকায় দুই ভাইয়ের দিকে।ওর চোখজোড়া অশ্রুতে টইটুম্বুর হয়ে উঠে।চিৎকার দিয়ে বলে,,,,

-এসব কি হচ্ছে?কেনো ঝামেলা করছেন নিজেদের মধ্যে?

লেখকের কথা: দেবী আর্টেমিস সম্পর্কিত তথ্যগুলো গ্রীক মিথলজি থেকে নেওয়া। গল্পটা কোনো ইংলিশ বইয়ের বাংলা অনুবাদ নয়। কোনো ড্রামা, সিরিজ, মুভির কপি নয়। সম্পূর্ণ গল্পের সবকিছুই শুধুমাত্র আমার কল্পনা থেকে সৃষ্টি। যা পুরোপুরি কাল্পনিক। দয়া করে কেউ কোনো ধর্ম বা বাস্তবের সাথে তুলনা করবেন না।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।