বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকালো এনোন। কপাল কুঁচকালো সবাই।
সর্ণালি বলেন,, কেন করেছিস এনোন?”
এনোন মুখের ভঙ্গি বিরক্ত করে বলল,, ড্রাইভ করছিলাম তখন এক বাচ্চা মেয়ে আমার গাড়ির সামনে চলে আসছিল…গাড়ি ঘুরাতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
মুখ বাজেভাবে বানিয়ে ফেলল সুজন। কি কে কি করে ফেলছে এনোন। নিনি না বুঝে ভ্রু কুঁচকালো। সাথে সবাইও।
সিনান বলল,, অদ্ভুত কম্বিনেশন!”
এনোন নিনির দিকে আড়চোখে তাকালো। নিনি মেঝের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।
এনোন মনে মনে ভাবলো,, এই মেয়েটা এতো চালাক কেমনে হয়ে গেল? এমনে তো পুরো বোকা!”
উজ্জল সাহেব বলেন,, তাহলে সুজন কোথায় ছিল?”
চমকে উঠে এনোন সুজন দিকে তাকালো তারপর আগে আগে বলল,, ও বাহিরে ছিল।”
সর্ণালি বলেন,, ওকে বাহিরে রেখে তুই একা একা যাচ্ছিলি?”
প্রশ্নের উপর প্রশ্ন শুনতে শুনতে মাথা ব্যথা করতে লাগলো তার।
কপালে দুই আঙুল ঘষতে ঘষতে বলল,, মাথা ব্যাথা করছে আর প্রশ্ন করিও না দয়া করে।”
চুপ করলো সবাই।
সন্ধ্যা নেমে আসতেই সুজন দাঁড়িয়ে বলল,, আমার যেতে হবে মা অপেক্ষা করছে।”
বিদায় জানালো সবাই। নিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এনোনের দিকে। সবাই উপস্থিত বলে সে একাকী কথাও বলতে পারছেন না এনোনের সাথে। সেও ফাঁকে ফাঁকে তাকাচ্ছে।
উজ্জল সাহেব কেবিনে ঢুকে বলেন,, দুদিন পর সে বাসায় যেতে পারবে।”
সর্ণালি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। অনেক যাবত এনোনের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আদুরে আদুরে ভাব রেখে। সিনান তাদের অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হেসে চলছে।
রাত সাড়ে নয়টা বেজে আসতেই হসপিটাল থেকে খাবার আসলো তার জন্য। খাবার দেখেই অদ্ভুত রকমের চেহারা বানিয়ে ফেলল সে। খেতে না চাইলেও জোর করে খাওয়ালো সবাই। ফেঁকাসে মার্কা খাবার।
এনোন বলল,, তোমরাও গিয়ে খেয়ে আসো কেন্টিনে।”
সর্ণালি নড়তে চেলেন না নিনি বুঝিয়ে খেতে পাঠালো। রুমে সিনান ও নিনি বসে রইল। তারপর এরা আসতেই সিনান ও নিনি গেল। সবাই কেবিনে বসলো আবারো সেই নিরবতা।
সবাই এনোনের দিকে চেয়ে আছে। নিরবতা ঠেলে এনোন বলল,, এভাবে তাকিয়ে আছ কেন তোমরা? আমার আনইজি ফিল হচ্ছে।”
দৃষ্টি সরালো সবাই কিন্তু এক সরলো না নিনির। সে চোখ কুঁচকে রেখে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এনোন পাত্তা না দিয়ে জানালার বাইরে তাকালো। কিন্তু বুঝতে পারছে নিনির নয়ন যুগল এখনো তার মধ্যে নিবদ্ধ।
এনোন আবারো বলল,, তোমরা বাসায় যাও! পুরো রাত এখানে বসে থাকতে হবে না।”
সর্ণালি সাফ মানা করে দিলেন। তিনি যাবেন না পুরো রাত এখানে বসে কাটিয়ে দিবেন। উজ্জল সাহেব নিনির দিকে তাকালেন মুখটা আরো ফেঁকাসে হয়ে গেল তার।
উজ্জল সাহেব নিনি কে উদ্দেশ্য করে বলেন,, তুমি এখানে থাকতে পারবে?”
ফট করে তাকালো সবাই। ভ্রুদ্বয় কুঁচকালেন সর্ণালি।
নিনি মাথা নেড়ে বলল,, হ্যাঁ পারবো।”
উজ্জল সাহেব বলেন,, তাহলে ঠিক আছে তুমিই এনোনের সাথে থাকো আমর সকালে আসবো।”
এনোন ভ্রু জোড়া হালকা উঁচু করলো। সিনান ও অবাক হলো। কিন্তু সর্ণালি মানতে নারাজ তিনি নড়বেন না। উজ্জল বোঝাতে লাগলেন সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। সর্ণালির মতে নিনি কোন কিছু সামলাতে পারবে না সে এখনো অবুঝ! যদি এনোনের হঠাৎ কিছু হয়ে যায় তাহলে নিনি সামলাতে পারবে। সে জন্য তিনি যেতে নারাজ সাথে একরোখা ও জেদি।
শেষে এনোন বলে উঠলো,, মা তুমি যাও আর রেস্ট নাও চিন্তা করার দরকার নেই।”
সাথে সবাইও উনাকে বোঝাতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তিনি রাজি হলেন। নিনি কে সাথে দশ গাইডের লেকচার শুনিয়ে দিলেন। চুপচাপ হজম করলো নিনি। এনোন কে আদর করে বেরিয়ে গেলেন সিনান যাওয়ার আগে নিনি কে বাহু তে হালকা ধাক্কা মেরে চোখ মেরে বেরিয়ে গেল। মাথার উপর উড়িয়ে গেল বিষয়টি নিনির।
দরজা আটকে দিয়ে এনোনের সামনে কোমড়ে দুহাত রেখে দাঁড়িয়ে বলে,, ইচ্ছে করে করিয়েছেন এক্সিডেন্ট?”
হামি তুলে এনোন বলল,, ঘুমিয়ে পড়ো!”
সে শুয়ে যেতে লাগলে নিনি তার হাত ধরে উঠিয়ে বসায়। তারপর দৃষ্টি কোঠর করে বলে,, আমার কথার উত্তর দেন নাহলে ঘুমাতে দিব না।”
মোটেও ভয় পেল না এনোন। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,, হ্যা ইচ্ছে করে করিয়েছি।”
নিনি তাচ্ছিল্য হেসে বলল,, আগেই বুঝে গিয়েছিলাম, আপনার মতো ঢিলা মানুষ আমি আর কোথাও দেখি নাই।”
ফিক করে হেসে দিল এনোন। যা দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো নিনি হাতের কাছে কাপড় টেনে বলে,, হাসছেন কেন? আমি আপনাকে জোকস্ শুনিয়েছি?”
এনোন হাসতে হাসতে বলল,, তোমাকে পুরো টমেটো লাগছে।”
কাপড় ছেড়ে দিল নিনি দূরে সরে দাঁড়ালো তারপর বিড়বিড় করে বলল,, কচু!”
এনোন উঠে দাঁড়ালো চমকালো নিনি অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে বলল,, আপনার পা…!”
বলে হা হয়ে গেল।
“ব্যাথা তেমন নেই” হাঁটতে হাঁটতে বলল এনোন।
নিনি তাকে ধরে বলল,, তাও বসেন আবার কিছু হয়ে গেলে!” সে যে ভয় পাচ্ছে বুঝতে বাকি রইল না তার। ব্যাথা করছে না অনেক বার বলার পরেও বিশ্বাস করছে না নিনি। অতি শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় এনোন। তার অস্থিরতা দেখছে সে।
নিনি বলল,, ঘুমিয়ে পড়েন।” বলে স্মিত হেসে গিয়ে এক্সট্রা বেডে শুয়ে পড়লো।
______________
ঘুমের ঘোরে কারো উষ্ণ আলিঙ্গনে ছোঁয়া পাচ্ছে নিনি। সাথে মাতাল করা এক ঘ্রাণ। ধীরে ধীরে চোখ খুলল। নিজের মাথার অবস্থান কারোর বুকে পেল সে। হালকা উঠিয়ে তাকালো এনোন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। হা হয়ে গেল সে। এনোন নিজের বেড ছেড়ে ওর বেডে এসেছে! ড্যাপ ড্যাপ চোখে তাকিয়ে আছে তার ঘুমন্ত মুখশ্রী দিকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে আছে। দেখতে পুরো বাচ্চা মানুষ লাগছে। নিনির হঠাৎ কি মনে হলো যেন মাথা উঠিয়ে অধর ছোঁয়ালো তার গালে।
নিজের এহেন কাজে নিজেই থ হয়ে গেল। মাথা গুজে দিল তার বুকে ঠোঁট চেপে মুচকি হাসছে।
গালের কাছ থেকে চুল সরিয়ে নিল এতে প্রচন্ড কেঁপে উঠলো নিনি। মাথা উঠিয়ে তাকালো এনোন জাগ্ৰত!
গাল ও গলা থেকে চুল সরিয়ে নিতে নিতে বলল,, আমি ঘুমালে তুমি এমন করো বুঝছি এবার!”
তার কথায় প্রচন্ড লজ্জা পেল নিনি। বেশ অদ্ভুত রকমের তিনি। আজকাল কোন কথার আচগাছ নেই! মুখে যা আসে তাই বলে দেয়।
মাথা হালকা ঝুঁকিয়ে এনোন শীতল কন্ঠে বলে,, লুকিয়ে লুকিয়ে না করে সরাসরি করতে পারো, আই ডোন্ট মাইন্ড।”
নিনি এক পলক তাকিয়ে বলে,, দিন দিন অসভ্য পেরিয়ে যাচ্ছেন আপনি।”
“অসভ্যতামি করলাম কই? করতে আসলেই তো অভদ্র ট্যাগ পেয়ে গিয়েছিলাম।” তুচ্ছ ভাবে বলল এনোন।
নিনি দোষী গলায় বলল,, আচ্ছা হয়ছে তো এক কথা আর কতবার শোনাবেন! তখন হুট করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল।”
“ওহ আচ্ছা” বলে তার গালে হাত রাখলো এনোন। চমকে উঠে নিনি। গাল থেকে হাত সরিয়ে গলায় ডুবিয়ে দিল হাত। শিউরে উঠে চোখ বুজে ফেলল সে। একে অপরের কিঞ্চিৎ দূরত্ব। অধর ছোঁয়াবে এমন সময় কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো কেউ। দূরে সরতে গিয়ে নিচে নেমে পড়ে গেল এনোন নিনি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।
এনোন ভালোই পায়ে ব্যাথা পেয়েছে নিনি ধরে উঠালো তাকে উঠানোর সময় এনোন কানে আস্তে করে বলল,, রাতে দরজা ভালোভাবে বন্ধ করোনি কেন প্রিভেসি নষ্ট করে দিছে।”
লজ্জায় লাল হয়ে গেল নিনি।
সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রণালি ও সৌরভ এসেছে।
চলবে…
[ কালকে গল্প দিব। গল্প কেমন হয়েছে মন্তব্য করবেন। ]