১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৩৭ (ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা)

“এখন ঘুমাবো আমি। লাইট অফ করো।” বলেই শাওন নিজের ল্যাপটপ বন্ধ করে রেখে বিছানায় শুয়ে পরলো।
আমি হা হয়েই রইলাম।
শাওন এক টান দিয়ে আমাকে শুইয়ে দিয়ে আমার পাশে থাকা লাইটের সুইচ অফ করে দিল।
আমি বলে উঠলাম, আমার আরো প্রশ্ন আছে।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আরো?
“হ্যা আরো।” বললাম আমি।
শাওন ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে বলল, বলো।
“আপনি… ভালোবাসেন আমাকে?” থেমে থেমে বললাম আমি।
উনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে রইলেন। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম আর বললাম, “এভাবে কি দেখছেন!”
উনি কোনো উওরই দিলেন না। আমি চোখ তুলে আবার তাকালাম। উনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
এটার উওর উনি দিচ্ছেন না কেনো? এর অর্থ কী?
আমি মুখ গোমড়া করে উল্টো দিকে ঘুরলাম।
“তোমার কি মনে হয়?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
আমি চোখ সরু করে সামনে তাকিয়ে বললাম, “আপনি না বললে জানবো কিভাবে?”
ওদিক থেকে শাওন আর কিছু বলল না। উনি কি তাহলে আমাকে ভালোবাসেন না? আমার চোখে জল চলে এলো। শাওন আমার এক বাহু ধরে নিয়ে ওর দিকে ঘুরালো। আমি চোখ নামিয়ে রাখলাম।
শাওন আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে এলো। আমি চমকে গেলাম আর বললাম, ”কি করছেন আপনি!”
“ভালোবাসলেই বলতে হবে কেনো? বুঝতে পারো না?” শাওন সিরিয়াস হয়ে বলে উঠল।
আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম। তারপর চোখ সরিয়ে নিলাম।
অর্থাৎ ভালোবাসে! আমার মুখে একটা হাসি চলে এল।
তখনি শাওন আমাকে আরো কাছে টেনে নিল। আমি চমকে বলে উঠলাম, “আ…আপনি এ…এখন কি ক…রতে চাচ্ছেন?”
“রিল্যাক্স, এত কাপাকাপি করার কি আছে?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
আমি শান্ত হয়ে গেলাম। যদিও অনেক লজ্জা লাগছে। কারন আমি জীবনেও কোনোদিনো কল্পনা করতে পারিনি যে উনি আমাকে এতটা কাছে টেনে নেবেন। আর আমাকে এত ভালোবাসবেন। সবটা স্বপ্নের মত। অনেক সুন্দর একটা স্বপ্নের মত!
আস্তে আস্তে চোখে ঘুম চলে এলো। আমি ঘুমিয়ে পরলাম।
কিন্তু মাঝ রাতের পরে খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। আমি ভয়ে অতি দ্রুত শ্বাস নিতে লাগলাম। সুইটি যদি ওনার ক্ষতি করে দেয়? আমি হাপাতে হাপাতে কাপতে লাগলাম। চোখে পানি চলে এলো। শাওন আমার দিকে ফিরে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আমি শক্ত করে শাওনকে জড়িয়ে ধরলাম আর ওর বুকে মাথা গুজে রাখলাম।
শাওনের ঘুম আমার কারণে ভেঙে গেল।
“কি হয়েছে!” শাওন অস্থির হয়ে গেল।
কিন্তু আমি কিছু না বলে ওকে শক্ত করে ধরে রাখলাম।
শাওন অস্থির হয়ে আমার মাথায় এক হাত রেখে বলল, রিল্যাক্স, এমন করছ কেনো?
আমি হাপাতে লাগলাম। আর ফুপিয়ে কেদে উঠলাম।
শাওন ব্যস্ত হয়ে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল, তোমার কি পিরিয়ডের কারনে পেইন হচ্ছে? কিছু ত বলো!
আমি শক্ত করে ধরে রেখে ওর বুকে মাথা নিচু করে রেখে না সূচক মাথা নাড়লাম।
“আবার স্বপ্ন দেখেছো?” শাওন শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো।
আমি এবার চুপচাপ মাথা গুজে রইলাম। শাওন বুঝতে পারলো আর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি সত্যিই গাধা।”
আমি চেষ্টা করেও শান্ত হতে পারলাম না।
শাওন এবার জোর করে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানার সাথে আলতোভাবে চেপে ধরে আমার কাছে চলে এলো। তারপর আমার ঠোঁটে গভীর ভাবে কিস করতে লাগলো।
আমি অনেক চমকে গেলাম।
কিছু সময় পরেই আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাপাতে লাগলাম। ওনার নিঃশ্বাস আমার গলায় পরতে লাগল।
আমি এখন নিমিষেই শান্ত হতে লাগলাম। কিন্তু লজ্জায় শাওনের দিকে তাকালাম না। কিন্তু উনি আমাকে ওভাবেই ধরে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এতে আরো বেশিই লজ্জা লাগছে।
শাওন এবার আমার গলার কাছে মুখ নিয়ে গেল। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
কিন্তু শাওন আমাকে ছেড়ে দিল আর উঠে বসলো। আমি লজ্জায় লাল হয়ে উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম।
শাওন আমার গায়ে চাদর টেনে দিলো তারপর আমার দিকে ফিরে শুয়ে পরলো। যদিও আমি উল্টো দিকে ফিরে আছি তাও বুঝলাম যে উনি জেগে আছেন।
আমি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছি না। ঘরটা নিরবতায় ভরে গেল।
“মিলা।” শাওন নিরবতা ভাঙে বলে উঠল।
আমি অনেক চমকে গেলাম। এই প্রথম উনি আমার নাম ধরে ডাকলেন।
আমি অনেক খুশি হলাম আর মুখে একটা হাসি চলে এলো।
আমি আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম আর বললাম, কি?
উনি এগিয়ে এসে আমার বালিশে এসে শুয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি জলদি মুখ ঘুরিয়ে সামনে তাকালাম। হার্ট অনেক জোরে জোরে বিট করছে। ওনার এই হঠাৎ হঠাৎ করা কাজগুলোতে আমি অনেক ঘাবড়ে যাই।
“প্রথমে তোমাকে সহ্যই করতে পারতাম না। এখন চোখের আড়াল হতে দিতেই ইচ্ছে করে না।” শাওন শান্ত গলায় বলল।
আমি কিছু বললাম না শুধু মাথা নিচু করে রইলাম। ওনার কথা গুলোতে হার্ট আরো জোরে জোরে বিট করছে।
শাওন আরো বলল,”আগে একা ঘুমাতে সমস্যাই হত না কিন্তু এখন তোমার কাছে ঘুমোতে ইচ্ছে করে। নাহলে ভাল লাগেনা।”
আমি চুপচাপ শুনে যেতে লাগলাম। অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে যা বলে বুঝানো যাবে না।
“তুমি যেদিন চলে গেলা সেদিন থেকে সব উলটা পালটা হয়ে গেল। কিন্তু আমি মেনেই নিতে পারলাম যে আমি তোমাকে এত মিস করছি।” বলেই শাওন আমাকে পিছন থেকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
এদিকে আমার হার্ট বেচারা আর নিতে পারছে না। আমি আবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।
“কি হয়েছে?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
“আ…আমার অনেক গ…গরম লাগছে।” আমি থেমে থেমে বললাম।
শাওন নিঃশব্দে হেসে বলল, “সব খুলে ফেলো।”
আমি হকচকিয়ে গেলাম। কি বললেন এটা উনি! আমি একটা ঢোক গিলে নিয়ে কাচুমাচু হয়ে বললাম, “কি… ব…বলছেন এসব?”
“নাকি আমি খুলে দেব?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
আমি এবার অনেক চমকে উঠলাম। আর ওনার হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে বললাম, “ছি। ছাড়ুন। অসভ্য। আপনি আগেই ভাল ছিলেন।”
শাওন বলল, “আমি কখনই ভালো ছিলাম না।”
আমি আবার ওনার হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলাম।
“তোমার হাতও ত গরম হয়ে গেছে! কি উলটো পালটা চিন্তা করছ তুমি?” শাওন বলল।
আমি সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিলাম।
“আ…আ…আমি কি.. চিন্তা করব?” কাপা গলায় বললাম আমি।
“তুমি যা চিন্তা করছ সেটা কয়েকদিন পর্যন্ত হবে না, তারপর আমি ভেবে দেখবো।” শাওন বলল।
আমি বুঝলাম যে উনি আমার পরিস্থিতির মজা নিচ্ছেন।
আমি আর কিছু বললাম না। সত্যিই অতিরিক্ত গরম লাগছে। নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ নিজেই শুনতে পাচ্ছি। শাওন ইচ্ছা করেই আমাকে ছাড়ছে না। এত খারাপ উনি! অসহ্য।

সকালে আমি আগে আগে ঘুম থেকে উঠলাম। শাওনের হাতটা কোনো রকমে ছাড়িয়ে নেমে পরলাম।
কিন্তু শাওন আমার হাত ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে এলো।
আমি চমকে গেলাম।
“কই যাও?” শাওন ঘুম ঘুম চোখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
“বা..বাথরুমে।” আমি এদিকে ওদিকে তাকাতে তাকাতে বললাম।
“জলদি আসবা আবার।” বলেই শাওন হাত ছেড়ে দিল আর চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেল।
আমি উঠে দাড়ালাম।
আজীব! উনি আজ অফিস যাবে না? সাতটা বাজবে একটু পরেই।
আমি জলদি ফ্রেস হয়ে নাস্তা বানাতে চলে এলাম। ফ্রিজ থেকে ওনার জন্য কুমড়ো বের করলাম।
এখন কুমড়ো দেখে আর বিরক্ত লাগে না। বরং ভাল লাগে।
আমি কুমড়ো ভাজতে ভাজতে ফ্রিজ থেকে আচারের বোতল বের করে আচার খেতে লাগলাম। যদিও এই সময় খাওয়া নাকি উচিত না কিন্তু আমি প্রতিবার এই সময়টাতেই আচার খাই।
আমি আচার কিছুটা বের করে বাটিতে নিয়ে তারপর বোতলটা ফ্রিজে রাখলাম। ফ্রিজ বন্ধ করে পিছনে ঘোরার আগেই শাওন এক হাত দিয়ে টেনে আমাকে ওর কাছে নিয়ে এলো।
আর রেগে বলল, “তোমাকে কি বলেছিলাম আমি? জলদি আসতে বলেছিলাম না? এখানে কি করছ?”
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,”চোখে দেখেন না কি করছি? কুমড়ো ত খান তাও কম দেখেন!”
“তোমাকে এখন রান্না করতে বলেছি? এখনি চলো।” বলেই শাওন আমাকে নিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম, “আপনার অফিস নেই! কি শুরু করেছেন আপনি?”
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, “আজ শুক্রবার।”
আমি বোকা সেজে গেলাম। এটা ত ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই চোখ মুখ শক্ত করে বললাম, “তাই বলে খাওয়া দাওয়া করব না? আমার ত খেতে ইচ্ছে করছে। খিদে পেয়েছে।”
শাওন এবার অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
“ওয়েট, আমি করে দিচ্ছি।” শাওন ব্যস্ত হয়ে বলল।
তারপর ফ্রিজ খুলে ডিম বের করলো।
আমি কুমড়োর ভাজি চুলো থেকে নামাতে নামাতে বললাম, “আজ আমি করব রান্না। আপনি শুধু দেখেন।”
শাওন গম্ভীর গলায় বলল,”কোনো দরকার নেই।”
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,”আমি করবো মানে করবই।”
তারপর ফ্রিজ থেকে রুটি বের করে নিয়ে চুলোর পাশে রাখতে রাখতে হাসিমুখে বললাম, “বলেন আজ কি খাবেন? দুপুরে আর রাতে। আমি করে দিব।”
“সত্যি, যা খেতে চাইবো সেটাই?” শাওন পিছন থেকে বলল।
আমার মনোযোগ দিয়ে রুটি ভাজার কড়াই এর দিকে তাকিয়ে সেটা গরম হয়েছে কিনা পর্যবেক্ষণ করে বললাম, “হ্যা, বলে ত দেখুন।”
“সিরিয়াস ত?” শাওন বলল।
“এত বার কেন জিজ্ঞেস করছেন? হ্যা সিরিয়াস।” রুটি কড়াইয়ে দিতে দিতে বললাম।
“তোমাকে খাবো।” শাওন বলল।
আমি ভ্রুকুচকে পিছনে ফিরে তাকালাম। উনি ঠোঁটের কোনে একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমার বুঝতে আর বাকি রইল না উনি কি উদ্দেশ্য করে একথা বলেছেন।
“মা…মানে টা কি!” এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বললাম আমি।
“দুপুরে দশটা কিস রাতে বিশটা কিস রেডি থেকো। আমি নিয়েই ছাড়বো।” শাওন মুচকি হেসে বলল।
আমি চোখ বড়সড় করে ওনার দিকে তাকালাম।
এমন হবে জানলে আমি জীবনেও বলতাম না।
আমি চোখ সরিয়ে বললাম, “আমি রান্নার কথা বলেছি, অসভ্যতা করবেন না একদম।”
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “তুমি বলেছ যা খাবো তাই ই দিবা।”
এ কেমন বিপদ! আমি পিছাতে লাগলাম। শাওন আমার হাত ধরে টেনে ওর কাছে নিয়ে এলো। তারপর আমার মুখের কাছে ওর মুখটা আনতেই আমি ওনাকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চুলোর দিকে ঘুরলাম। আর কাপা গলায় বললাম, “যান প্লিজ।”
বলেই আমি রুটির দিকে খেয়াল করলাম। এক সাইড পুড়ে যেতো প্রায়। আমি জলদি হাত দিয়ে ধরে উলটে দিলাম। আর এজন্য হাতেও ছেকা লাগলো।
আমি মুখ দিয়ে শব্দ না করেই নাকমুখ কুচকে আঙুলের দিকে তাকালাম।
শাওন হাত ধরে টেনে ট্যাপের কাছে নিয়ে এলো আর রেগে বলল,”গাধা তুমি? হাত দিয়ে করে কেউ?”
“এখন সব দোষ আমার?” আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
শাওন কোনো উওর না দিয়ে ব্যস্ত হয়ে আমার হাত ট্যাপের নিচে ধরে রাখলো আর আঙুল গুলো দেখতে লাগল। আর আমি ওনাকে দেখতে লাগলাম।
“বার্নের জন্য ক্রিমটা কোথায় যেন ছিল!” শাওন আমার হাত ধরে রেখে এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে খুজতে খুজতে বলল।
“আমি ঠিক আছি, আপনি সবসময় বেশিই চিন্তা করেন।” হাসিমুখে বললাম আমি।
শাওন আমার কথায় কান দিলো না। তাই আমি হাতটা হুট করে টেনে নিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, কি সমস্যা তোমার?
“আমার সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি। আপনি দয়া করে বিশ্বাস করেন যে আমি ঠিক আছি।” আমি আশ্বাস দিয়ে বললাম।
শাওন আমার হাত ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই আমি হাত পিছনে নিয়ে হালকা হেসে পিছিয়ে গেলাম।
উনি এতে আরোই রেগে গেলেন।
“এদিকে আসো।” রেগে বলল শাওন।
আমি না সূচক মাথা নেড়ে বললাম,”পারলে ধরে দেখান।”
বলেই আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।
শাওন আমার পিছু না নিয়ে চুলা অফ করল। এই রুটিটা ফেলে দিতে হলো। উনি অন্য একটা রুটি কড়াইয়ে দিলেন।
আমি গুটি গুটি পায়ে এসে আবার রান্নাঘরে ঢুকলাম। আর একটু কেশে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনি তাকালেন না।
বুঝিনা সামান্য বিষয় নিয়ে এত রেগে যায় কেনো! আমি এগিয়ে গিয়ে ওনার পাশে দাড়ালাম আর কাদো কাদো গলায় বললাম,”আমি করতে চাই আজ রান্না। প্লিজ আমাকে করতে দিন।”
“চুপচাপ গিয়ে বসে থাকো, যথেষ্ট দেখেছি তোমার রান্না। পারো ত না কিছু।” শাওন রুটি খুন্তি দিয়ে উলটে দিতে দিতে বলল।
আমি রেগে তাকিয়ে বললাম,”আমি পারিনা?”
বলেই আমি ওনার হাত থেকে খুন্তি নিতে গেলাম।
কিন্তু উনি তার আগেই হাত সরিয়ে নিয়ে খুন্তিটা সরিয়ে রাখলেন। তারপর আমার হাত ধরে টেনে চুলা সোজা এক কোনায় নিয়ে গেলেন যেখানে টাইলসের তাকের মত জায়গায় জিনিসপত্র রাখা যায়।
আমি হকচকিয়ে গেলাম আর বললাম, কি করছেন?
শাওন আমার কোমড় ধরে উঠিয়ে সেখানে বসিয়ে দিল। আর চোখ পাকিয়ে বলল, “বেশি কথা বলো তুমি। তাই চুপচাপ এখানে থাকো।”
আমি মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন রুটি করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিলাম। আর মনে মনে বললাম, অসভ্য গরিলা।!
“মনে মনে আমাকে গালি দেওয়া বন্ধ করো নাহলে আমি এসে শার্টের বাকি বোতাম গুলো খুলে দিব।” শাওন সিরিয়াস হয়ে রুটি উলটে দিতে দিতে বলল।
আমি চমকে শার্টের দিকে তাকালাম।
সাথে সাথে আমার চোখ বড়সড় হয়ে গেল। আমি বুকের কাছের শার্ট দুই হাতের মুঠোয় চেপে ধরলাম।
বোতাম একটা খুলে গেছে। খুলে গেছে মানে খোলাই ছিল। কতক্ষণ ধরে খোলা ছিল? ছি, আবার সেই একই অবস্থা। আগের মত। লজ্জায় মরে যেতে মন চাচ্ছে।
অন্যদিকে ঘুরে তাড়াতাড়ি বোতাম লাগিয়ে নিলাম।
এখন ওনার দিকে লজ্জায় তাকাতেই পারছি না।
“এত লজ্জা পাওয়ার কিছুই হয় নি, সব আমার আগে থেকেই দেখা।” শাওন আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল।
ওনার এই কথাটা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। কিভাবে এত সহজে বলে দিলেন উনি!
“আ…আপনি অনেক অসভ্য।” বলেই আমি নেমে কিচেন থেকে বের হয়ে রুমে চলে এলাম।
থ্রিপিস টা এখনো শুকায় নি পুরোপুরি। আর একটু হলেই শুকিয়ে যাবে। বেলকোনিতে ভালই রোদ উঠেছে। কি করব এখন! ওনার সামনে আমি আর যাবই না।
কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই। ব্রেকফাস্ট করতে ডাকবে একটু পরেই। উফ, আমার বেচারা হার্ট। অনেক জোরে জোরে লাফাচ্ছে আবার।
বলতে না বলতেই ডাক পরে গেল ব্রেকফাস্ট এর জন্য। তবে ডাক শুনে আমি সব ভুলে গেলাম কারন এই দ্বিতীয় বার উনি আমার নাম ধরে ডাকলেন।
“মিলা, ডাইনিং এ আসো।” শাওনের বলা এই কথাটা শুনেই আমি খুশি হয়ে গেলাম।
আমি ডাইনিং এ চলে এলাম। আমার জন্য ডিম আর রুটি। দেখে ত আমি আরোই খুশি হয়ে গেলাম।
শাওন আমাকে টেনে মাঝ বরাবর এক চেয়ারে নিয়ে বসালো আর আমার পাশে বসলো। আগে মুখোমুখি দুই প্রান্তে দুইজন বসতাম। এখন পাশাপাশি। এখন না, বরং এখন থেকে প্রতিদিন পাশাপাশি। আমি মুচকি হেসে চিন্তা করছিলাম হঠাৎ শাওন আমার গালে কিস করে দিলো।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে ওর দিকে তাকালাম। শাওন ঠোঁটের কোনে একটা হাসি রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি চোখ সরিয়ে প্লেটের দিকে তাকালাম। খাবার যে হাত দিয়ে খাব তাও পারছি না। হাত নড়ছেই না এখন। আমি সত্যিই ওনার হঠাৎ হঠাৎ করা কাজ গুলোতে আর বলা কথাগুলোতে অনেক অপ্রস্তুত হয়ে যাই।
“এত নার্ভাস হও কেনো?” শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।
শাওন আমার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলল, খাও এখন।
আমি হাত দিয়ে মাথা ডলতে ডলতে ওনার দিকে রেগে তাকালাম। উনি ততক্ষনে আমার প্লেটের রুটি ছিড়ে ডিমের সাথে নিলেন। আর আমার মুখের সামনে ধরলেন।
আমি অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি খেতে ইশারা করলেন।
আমি খুশি হয়ে মুখে পুরে নিলাম। উনি এভাবে আমাকে খাওয়াতে লাগলেন। তাই আমি ওনার প্লেট থেকে রুটি ছিড়ে নিয়ে কুমড়োর সাথে নিয়ে ওনার মুখের সামনে ধরলাম। তারপর খেতে ইশারা করলাম।
শাওন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে খাবার মুখে নিল। এই হাসিটা এত সুন্দর যে মনে হয় তখনি ওকে খেয়ে ফেলি।

খাওয়া শেষ করে আমি আগে রুমে এসে ঢুকলাম। আর বিছানার কাছে যেতে না যেতেই শাওনের ফোন বাজতে দেখলাম। যদিও শব্দ হচ্ছে না কারণ সাইলেন্ট করা কিন্তু আলো জ্বলছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। সাথে সাথেই সুইটি নাম দেখে মনটা কেমন যেন করে উঠলো।
কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে শক্ত মুখ করে ফোনটা তুলে কানে দিলাম। আর রেগে বলে উঠলাম, “আমি বলেছি না আমি ওকে ছাড়বো না! কেন বার বার ওকে জ্বালাচ্ছেন? অসভ্য অভদ্র!”
ওপাশ থেকে সুইটি বলল, “excuse me?!”
আমি রেগে আরো বললাম,”আমাদের মধ্যে সব ঠিক আছে। আর উনি শুধু আমার। উনি আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন। আর আমাদের দুইদিন পর বাচ্চাও হবে, তাই ওর ধারে কাছে যদি আমি তোকে দেখি সত্যি চুল ছিড়ে দিব লুচ্চা মেয়ে কোথাকার!”
আমি ফোন কেটে দিয়ে রাগে ফুলতে লাগলাম।
“দুইদিন পর বাচ্চা হবে?” শাওন শান্ত গলায় বলল।
আমি রেগে ওনার দিকে তাকালাম। উনি বুকে হাত গুজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমার চোখে রাগে পানিই চলে এলো। আমি বলে উঠলাম, “আপনি কেন ওই মেয়ের সাথে….।”
এটুকু বলেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম আর চোখ মুছলাম। শাওন গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমার চোখ দিয়ে এখনো পানি পরছে। আমি মাথা নিচু করে রইলাম।
“আমার কোম্পানিতে সুইটি নামের employee চারজন। তার মধ্যে এখন যে ফোন করেছিল, সে ওই সুইটি না, যাকে তুমি ভাবছ।” শাওন গম্ভীর গলায় বলল।
আমি নিজের গাধামি বুঝতে পেরে কান্না ভেজা চোখ বড়সড় করে ফেললাম। কিন্তু শাওনের দিকে তাকালাম না।
কিন্তু উনি কি রেগে গেছেন? এভাবে গোমড়া মুখ করে কথাগুলো বলছেন! রেগে যাবারই কথা অন্য একজনকে কি সব বলে ফেলেছি।
“I want a lifetime with you.” শাওন সিরিয়াস হয়ে বলল।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
“তাই ডিভোর্স এর কথা দ্বিতীয়বার কোনো দিনো ভুলেও চিন্তা করো না।” শাওন অনেক বেশিই সিরিয়াস হয়ে বলল।
হঠাৎ এসব কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে তারপর চোখ সরিয়ে নিলাম। আর মাথা নিচু করে বললাম, “আমি সেদিন দরজার কাছে থেকে আপনার আর আপনার মায়ের কথা শুনে ফেলেছিলাম। সুইটিকে পছন্দ করেন কিনা আর এটাও যে আপনি আমাকে… ডিভোর্স দিতে চান। এজন্য ভুল বুঝে…” এটুকু বলেই আমি থেমে গেলাম।
“আমার সুইটির সাথে কিছুই নেই। এখন আমার সব তোমার কাছেই শুরু, তোমার কাছেই শেষ।” গম্ভীর গলায় বলল শাওন।
আমি খুশি হয়ে ওনার দিকে তাকাতে না তাকাতেই উনি দ্রুত কাছে এসে, দুইহাতে আমার দুই গাল ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন।
আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম তারপর আস্তে আস্তে বন্ধ করে নিলাম।
কিন্তু একটু পরেই আমি ওনাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে হাপাতে লাগলাম। আমি কিস করার সময় দম নিতে পারিনা। অথচ ওনাকে দেখো কেউ! একটুও হাপাচ্ছে না। রাক্ষস একটা।
এদিকে হার্টও জোরে জোরে বিট করছে। হয়তো উনিও শুনতে পাচ্ছেন।
শাওন আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি কয়েকপা পিছিয়ে গেলাম আর বললাম, “আর না, প্লিজ।”
শাওন মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে পিছনে পিছিয়ে যেতে লাগলাম।
“কয়দিনের মধ্যে যেন বাচ্চা হবে আমাদের?” শাওন বলল।
আমি বুঝলাম যে উনি এখন এগুলো নিয়ে আমাকে জ্বালাবেন। আমি চোখ সরু করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। উনি আমার একদম কাছে এসে থামলেন। তারপর ওনার হাত দিয়ে আমার মুখ ওনার দিকে তুলে ধরলেন।
আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলাম।
শাওন বলল, “দুইদিনের মধ্যে কিভাবে বাচ্চা হবে? আমি ত এখনো কিছুই করি নি?”

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।