১৬ বছর বয়স | পর্ব – ২

(গত রাতের ঘটনা)
– ” ছাড়ুন আমাকে। লাগছে আমার।”
শাওন ওর আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিল। আমি ওনাকে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করে বললাম, “শাওন দা প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।”
*শাওন দা* কথাটা শুনা মাত্র শাওনের খেয়াল হলো যে এটা সুইটি না। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। শাওন উঠে দাড়ালো। সুইটি শাওনের এক্স গার্লফ্রেন্ড। নেশা করার কারনে সব উল্টা পাল্টা লাগছে শাওনের। সোফায় বসে মাথা নিচু করে রইল।
শাওন মনে মনে বলল, এটা আমি কি করতে যাচ্ছিলাম! যাই হোক এখান থেকে বের হতে হবে আমার। সকালে ত হবেই না। গেলে এখনি যেতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়ল শাওন। সুমনা কে ফোন দিল । প্রায় রাত ১ টা বাজে তখন। সুমনা শাওনের ক্লাসমেট ছিল, এখন অফিসের কলিগ। ওরা বেশ ভাল বন্ধু। সুমনা ওর গাড়ি নিয়ে শাওনের বাসার সামনে থামিয়ে নামতে নামতে বলল, “এত রাতে ফোন দিলি, কি হয়েছে?
– ঢাকা যাব এখনি। (শাওন)
– ত যা তুই।
– তুই ড্রাইভ করবি।
– what? পারব না। বিয়ে করেছিল এক মেয়েকে পালিয়ে যাবি অন্য মেয়ের সাথে! (সুমনা হাসতে হাসতে বলল)
– মজা করিস না।
– সিরিয়াসলি?! তুই এখন গেলে বাসায় ঝামেলা হবে।
– আমি ড্রিংক না করে থাকলে আমিই চালাতাম। এখন কথা বাড়ালে আমার একাই যাওয়া লাগবে নিজের।
বলেই শাওন গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসল। সুমনা তাই ড্রাইভিং সিটে এসে বসতে বসতে বলল, “সত্যি যাবি?”
– হ্যা
– আর তোর বউ এর কি হবে?
– that’s none of my business.
– তোর বিয়েতে আমার আসাই উচিত হয়নি।
– তুই ত এমনিও ছিলিনা। (শাওন)
– ছুটি ত নিয়ে এসেছিলাম শান্তির ভ্যাকেশন কাটাব বলে ওসব বিয়ে টিয়ে তে যেতে আমার ভাল্লাগে না ৷ ধুর আর হলো না।
শাওন বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
তাই সুমনা বলল, সুইটি কে ভুলে যা🙄।
একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে শাওন বলল, “ভুলে গেছি।”
– তাইলে কই পালাচ্ছিস?
শাওন বলল, টাইম লাগবে বাট সব নরমাল হয়ে যাবে।
সুমনা শাওনের কাধে হাত দিয়ে হাসি মুখে বলল, “জলদি হোক😎।”
শাওন কিছু বলল না।
সুমনা হঠাৎ খেয়াল করল শাওনের হাতে লিপস্টিক লেগে আছে।
– তোর হাতে এটা লিপস্টিক লেগে না?
শাওন নিজের হাতের দিকে খেয়াল করল। খেয়াল করে সুমনার দিকে তাকালো। সুমনা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে। সুমনা অনেক স্মার্ট। চটজলদি সব বুঝে যায়।
শাওন কথা ঘুড়িয়ে বলল, “গাড়ি স্টার্ট দে। ”
সুমনা বলল, “অহহহহহহ। বুঝেছি ”
সুমনা হাসতে লাগল।
– তুই যা ভাবছিস এমন কিছুই না।
– তাইলে? (সুমনা চোখ ছোট করে তাকিয়ে বলল)
কিহলো বল🤭।
– তোর মনে হয় এমন হবে?
– নিজের চোখে দেখতাছি।
– এমন কিছুই হয়নি।
– হয়েছে (সুমনা)
– হয়নি বললাম না।
– ওরে তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?
– তোকে ডাকাই ভুল হয়েছে।
– এখন আমার দোষ? বাহ বাহ। মেয়েটাকে এখন একা ফেলে যাচ্ছিস। কত সুন্দর। বাহ বাহ।
– ভুল হতে যাচ্ছিলো কিন্তু হয়নি। ড্রিংক করাই উচিত হয়নি। যাই হোক, খুশি তুই শুনে? চল এখন গাড়ি স্টার্ট দে।
সুমনা হা করে তাকিয়ে আছে যেন কি না কি করেছে শাওন।
শাওন আর মুখোভাব দেখে বিরক্তির সাথে বলল, হয়নি বললাম না।
– হলে ভাল হত। একটা ছোট্ট শাওন হত বা একটা ছোট্টো… মেয়েটার নাম কি? তোর বউ এর নাম?
– জানিনা।
– what?
– নাম জানিনা কিন্তু এতটুকু জানি যে ও নিজেই একটা বাচ্চা আর ওর কোনো বাচ্চা হবে না। তোদের ষড়যন্ত্রের জন্য এই অবস্থা আমার।
সুমনা এখন আমতা আমতা করে বলল, আমি কি জানতাম নাকি যে আন্টি এক বাচ্চা মেয়েকে…
– হয়েছে থাক চল এখন।
– রাগ করিস না৷ (সুমনা)
– রাগ করেও বা কি হবে(শাওন)
তারপরের ঘটনা ত সবাই জানেন।
শাওন চলে যাবার পর ২ মাস শাওনের কোনো খবর নেই। তার মা তাকে ফোন করে আসতে বললেই সে বলে কাল আসব, পরশু আসব, ১সপ্তাহের মধ্যে আসব। আমি বিন্দাস আছি। আমার কোনো চিন্তা নেই। তবে শাশুড়ী মা আমাকে দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন। ছেলের বিয়ে উনি দিয়েছেন সত্যিই বাচ্চা মেয়ের সাথে যার শাওনের ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথাই নাই।
মূলত বিয়ে হঠাৎ দেবার কারন হলো সুইটি নামক মেয়েটার ভুত শাওনের মাথা থেকে সরানো। সেইজন্য সুমনার আর রবিনের (শাওনের বন্ধুর) হেল্প নিয়ে, শাওনের মা অসুস্থতার নাটক করে বাসায় ওকে এনে বিয়ে দিয়ে দিল। ছেলে ত রাজি ই না। অনেক কষ্টে তিনি ছেলের বিয়েটা দিয়েছেন। মেয়ে দেখে দিয়েছেন শাওনের পিসামশাই। তিনি শাওনের সাথে খুব ফ্রি। শাওনের জন্য পিসামশাই ভালো মেয়েই ঠিক করবে এই বিশ্বাসে বিয়ে দিয়ে এখন পস্তাতে হচ্ছে শাওনের মায়ের। তাই একদিন পিসামশাইকে তিনি বলে বসলেন, “ওকে শাওনের কাছে রেখে আসো। শাওন আর আসবে না, ভাল মত চিনি ওকে আমি। তুমি রেখে আসো মিলা কে।”
– তা না হয় কাল ই দিয়ে আসব। (পিসামশাই)
– আজ ই (শাশুড়ী)
– আজই?!
– এক নয় শাওনের কাছে দিয়ে আসো নাইলে ওকে আমি আজ ই ওর কাককাকীর কাছে পাঠাই দিব।(রেগে এই কথা বললেন শাশুড়ী মা)
– যথা আজ্ঞা। তুমি রাগ করোনা। আমি যাচ্ছি।
পরে পিসামশাই আমাকে এসে বললেন, ব্যাগ গুছা, বেড়াতে যাব আমরা।
– বেড়াতে? (আমি)
আমি ত খুশিতে শেষ এই ঘরে সারাদিন ভাল্লাগে না। পিসামশাইকে আমি ছোট থেকে চিনি। উনি একজন যার সাথে আমি গল্প করি।
খুশির ঠেলায় ৫ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে এলাম। শাশুড়ী মা বললেন তোমার এসব শাড়ি পরা আর চলবে না, আমি যা দিব তাই ই এখন থেকে পরবে। বলে এক টান দিয়ে আমার হাতের ব্যাগ টা নিলেন।
তিনি নিজের রুমে গিয়ে একটা ট্রলি ব্যাগ আমার হাতে ধরালেন। আর বললেন, যাও এখন। শাওনের খেয়াল রাখবে।
“মানে??” এটা বুঝলাম না আমি। তাই প্রশ্ন করে উঠলাম।
“মানে আবার কি? শাওনের কাছে পাঠানো হচ্ছে তোকে” পিসিমনি বলল।
আমার মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল।
– আমি যাব না। (বলে উঠলাম আমি)
– যাবেনা মানে?(শাশুড়ী মা)
তার চোখ গরমে ভয় পেলাম। সেই ভয় কাটাতে পিসামশাই বলল, “আরে মাত্র কয়েকদিনের জন্য যাব আবার চলে আসব।”
– কয়েকদিন আবার কি….(কাকিমনি)
কাকিমনিকে থামিয়ে দিয়ে পিসামশাই বলল, আরে এত কিসের কথা। যাই এখন।
আমার তাও যেতে ইচ্ছা করছিল না। মোটামুটি চোখ গরম আর মিথ্যা আশ্বাসে রওনা হলাম।
সন্ধ্যার দিকে শাওনের বাসায় পৌছলাম। অন্য রকম ভয় কাজ করছে। পিসামশাই কলিং বেল দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শাওন দরজা খুলে দিল।
দরজা খুলেই বলল, পিসা তুমি?
তখন ই আমার চোখে ওনার চোখ পরল। আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।
পিসামশাই দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, “তুই ত আর এলি না, তোর মা ও বায়না করল ছেলের কি হলো। তাই চলে এলাম।”
– কিরে ভিতরে আয় বাহিরে থাকবি দাড়িয়ে?(পিসামশাই সোফায় বসতে বসতে আমাকে বললেন)
শাওন দরজার কাছ থেকে সরে এসে সোফায় বসল। আমি আস্তে আস্তে ঢুকলাম আর দাড়িয়ে রইলাম।
– এখন তোমরা নতুন করে কি চাইছ বলো ত!(শাওন)
“দুর থেকে আসলাম এখন বিশ্রাম নিতে চাচ্ছি আপাতত। (হেসে বললেন পিসামশাই)
তারপর আমাকে বললেন, দেখে নে এই তোর বরের ঘর। এখন থেকে এটা তোরও ঘর। টোনাটুনির সংসার যাকে বলে আর কি! হাহাহা।
শাওন তীক্ষ্ণ চোখে পিশামশাই এর দিকে তাকিয়ে রইল।
” ভুল বললাম কিছু? যাই হোক। তোরা গল্প কর আমি কাবাব মে হাড্ডি না হই।” বলতে বলতে পিসামশাই গেস্টরুমে চলে গেলেন তার ছোট ব্যাগ নিয়ে।
শাওন আমার দিকে তাকাল। আমি তাই চোখ আবার নামিয়ে নিলাম। শাওন তখন সোফা থেকে উঠে আমার দিকে আসতে লাগল। আমার সেদিন রাতের কথা মনে পরে গেল। উনি কি আবার উল্টাপাল্টা কিছু করবেন আমার সাথে! আমি ল্যাগেজের হেন্ডেল শক্ত করে ধরলাম। শাওন আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করল।
শাওন নিজেও বুঝছে না কি করবে। শাওন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। এই ভাড়া বাসাতে রুম ৩টা। একটা তে শাওনের জিম করার রুম সেটাতে কোনো খাট নাই। অন্যটা গেস্ট রুম যেখানে পিসা আছে। আর একটা শাওনের নিজের বেডরুম। তাছাড়া কিচেন, ড্রইং রুম ত আছেই। পিসা ত অবশ্যই শাওনকে বাহিরে শুতে দিবে না সেটা শাওনও জানে। চিন্তার বিষয় এখানেই।
হঠাৎ পিসামশাই এসে বললেন আমাকে, এভাবে আর কতক্ষন দাড়িয়ে থাকবি। অই রুমে যা গিয়ে ফ্রেস হ। তিনি আমাকে শাওনের রুম টা দেখিয়ে দিলেন। আমি ত আর জানিনা এটা ওনার রুম। আমিও ল্যাগেজ নিয়ে চলে গেলাম। গিয়ে দরজা এগিয়ে দিলাম।
শাওন পিসা মশাই এর সাথে একা কথা বলার সুযোগ ই খুজছিল। পিসামশাই এর সাথে গেস্ট রুমে গেল।
– কাল ই ফিরে যাও দয়া করে। (শাওন)
– হাহা। ৭ দিন থেকে তবেই যাব।
– আমি ভাল করেই জানি তুমি, মানে তুমি আর মা, তোমরা কি চাইছ। but আমাকে জোর করে লাভ হবে না।
বলেই শাওন উঠে যেতে লাগল।
“মেয়েটার মা বাবা নেই।” (পিসা)
শাওন থেমে দাড়াল।
“কাকাকাকীর কাছে বড় হয়েছে। আমি ওকে ছোট থেকে দেখছি। তোর অকে ভালো অবশ্যই লাগবে।” পিসা বলল।
“আমি নিজের লাইফ নিজেই গুছিয়ে নিতে পারব।” শাওন বলল।
“তোর মা কে ত চিনিস, ওকে নাকি কাকাকাকির বাসায় আবার দিয়ে আসবে। ওর কাকাকাকি ভাল মানুষ না। ওকে হয়ত অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। টাকার জন্য যার তার সাথেই দিয়ে দিবে। গ্রামে ত বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ থাকে। হাহা। এত সুন্দর একটা মেয়ের সাথে যদি অই বয়স্ক কারো সাথে বিয়ে…”
শাওন বেরিয়ে এলো।
আমি ল্যাগেজ খুলে ল্যাগেজের সামনে বসে আছি। এগুলা কি পাঠিয়েছেন আমার শাশুড়ী। কি পরব এখন আমি?
শাওন দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল। আমি তাকালাম। শাওনকে দেখে আমি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
উনি এখানে কেন! আমার কি ওনার সাথে এক রুমে থাকতে হবে এই ৭ দিন?

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।