১৬ বছর বয়স | পর্ব – ১৮

শাওন আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি মাঝখানে বসে থাকা স্নোবেলের সাথে পায়ে বেধে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললাম। কারন স্নোবেলের গায়ে যেন পা না লাগে সেই ভাবে পা ফেলতে গিয়েই শাওনের বুকে এসে পরলাম।
আমি নিজেই চমকে গেলাম। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে সরে দাড়ালাম। শাওন এক টানে হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে গেল। আমি হা হয়ে গেলাম। শাওন গম্ভীর গলায় বলল, Get out। তারপর ফাইল নিয়ে বেলকোনিতে চলে গেল।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
সন্ধ্যার দিকে টিভি দেখতে বসলাম। কার্টুন চ্যানেলে এখন যেটা হচ্ছে সেটা আমি দেখিনা।
চ্যানেল চেঞ্জ করতে গিয়ে ক্রিকেট খেলার চ্যানেল চলে এলো। কত দিন পর ক্রিকেট। গ্রামের মাঠে বসে খেলা দেখার মজাই আলাদা ছিল। সেটা এখন টিভিতে দেখেই কাটাই, কি আর করার!
ইন্ডিয়ার নিজেদের মধ্যেই খেলা হচ্ছে। কিন্তু এরা ভালই খেলছে।
আমি মনোযোগের সাথে দেখছি। স্নোবেল আমার কোলে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে। ছক্কা মারার সাথে সাথে আমি খুশিতে লাফিয়ে জোরে বলে উঠলাম,”ছক্কা!”
স্নোবেল বেচারা উল্টো পরে গেল সোফায়। আমার সেদিকে খেয়াল নেই। পিছন থেকে শাওন বলে উঠল, হেই, শাট আপ। চিল্লাচ্ছ কেন?
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। উনি কিচেনে ছিলেন? কখন থেকে? যাই হোক আমি ওনাকে পাত্তা না দিয়ে খেলায় মনোযোগ দিলাম।
স্নোবেল আবার আমার কোলে এসে মাথা দিল। কিছুক্ষণ পর চার মারার সাথে সাথে আমি আবার লাফিয়ে উঠলাম। স্নোবেল এবার সোফা থেকে নিচে পরল। আমি এবার খেয়াল করে জলদি জলদি স্নোবেলকে সোফায় তুললাম।
শাওন বলে উঠল, তুমি কি বাচ্চা? সাধারণ ক্রিকেট দেখে লাফিয়ে বেড়াচ্ছ!
আমি শাওনের দিকে ফিরে বললাম, আপনার এত সমস্যা হচ্ছে কেন? আমার পা আমি লাফাচ্ছি। আপনি দয়া করে আপনার কুমড়ো ভাজেন আর খান।
বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ওনার চোখ গরম দেখার টাইম নাই। উনি ওনার রান্না শান্তিতে করলেই ত পারে!
স্নোবেল এবার আর আমার কোলে মাথা দিল না। সোফাতে বসে লেজ নাড়াতে লাগল। পরবর্তী খেলা আর বেশি জমল না কারন পিছনে এক জম আছে। লাফালাফি না করেই দেখতে লাগলাম।
রাতের খাবারে আবার কুমড়ো। সাথে আছে ডাল আর গাজর ভাজি। আমি আর স্নোবেল মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কি সমস্যা তোমার!
আমি মনে মনে বললাম, আপনি আর আপনার কুমড়ো হলো আমার আর আমার স্নোবেলের সমস্যা।
যাক কি আর করার। একটা ম্লান হাসি দিয়ে বললাম, কিছুই না।
স্নোবেল না খেয়েই রইল। কারন আজ মাছ নেই। আর ডাল দিয়েও সে খাবেনা। কি আর করার।
তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে বসে টি-টেবিলের ওপর তাকিয়ে স্নোবেলকে পেলাম না। উঠে দাড়িয়ে এদিকে ওদিকে খুজতেই দেখলাম যে সে রাতের মাখা ডাল ভাতই খাচ্ছে। যাক ভালো। খিদে লাগলে সব ই খাওয়া যায়।
সকালে শাওন অফিসে চলে যাবার পর সুমনা ফোন করল। এটাই জানানোর জন্য যে কাল আমরা সাজেক যাচ্ছি আর সুমনা আমাদের দুইজনকে এখান থেকে পিক করে নিবে।
খুশি লাগার জায়গায় লাগছে অন্যরকম। তাও ব্যাগ প্যাক করে ফেললাম। এখন স্নোবেলকে কি করব? শাওন ত ওকে নিতে দিবে বলে মনে হয় না। আমরা ওখানে যাওয়া আশা বাদে এক দিন থাকব।
স্নোবেল বসে বসে লেজ নাড়ছে। আমি ম্লান চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
পরেরদিন খুব ভোরে শাওন আমাকে টেনে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিল। আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললাম, এখন আবার কি হলো!
শাওন একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সুমনা চলে এসেছে।
আমি ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললাম, ত আমি কি করব? সামনের সোফা দুটোতে বসতে দেন। আমি ঘুমাই।
শাওন ওর এক হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে ওর দিকে তুলে বলল, সাজেক যাচ্ছি আমরা আজ।
‘উফ’ বলে আমি শাওনের হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, আমার গাল টাও এখন ব্যথা করে দিল।
তারপর দুই হাত গালে দিয়ে ভ্রুকুচকে তাকালাম। শাওন গম্ভীর গলায় বলল, জলদি করো।
সাথে সাথে কলিং বেল বাজল। শাওন গিয়ে খুলে দিল। সুমনা এসেছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
“তুমি সোফায় বসে আছ কেন? রেডি হবে না?”
আমি জলদি করে উঠে দাড়িয়ে বললাম, হ্যা এখনি হব।
বলেই ল্যাগেজ থেকে একটা হলুদ থ্রিপিস নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরলাম।
সবাই রেডি হয়ে সুমনার গাড়িতে উঠলাম। এখান থেকে এগিয়ে গিয়ে সামনে এক জায়গায় যাবে যেখানে সব ফ্রেন্ডরা থাকবে। সবার জন্য একটা এসি বাস পুরো ভাড়া করা হয়েছে সেই বাসেই প্রথমে যাবে তারপর জিপ গাড়ি নিয়ে সাজেক যাবে। সুমনার ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে তার পাশে সুমনা। পিছনে আমি আর শাওন। আর আমার কোলে স্নোবেল। সুমনা স্নোবেলকে ড্রাইভারের সাথে ওর নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে। যদিও আমি নিয়ে যেতে চাই তাও গরিলাটার জন্য হবেনা।
সুমনার গাড়ি থেকে নেমেই আমরা বাস দেখতে পেলাম। দশ বারো জনের জন্য এই পুরো গাড়ি। নামার সাথে সাথেই অনেক জনকে গাড়ির সামনে দেখতে পেলাম। এরাই হয়ত আমাদের সাথে যাবে। অর্থাৎ এরাই শাওনের ফ্রেন্ড।
সবাই মনে হয় অনেক দিন পর এক জায়গায় হয়েছে। কারন তাদের কোলাকুলির শেষ নাই। শাওন কারো সাথেই কোলাকুলি করল না। এমনিই কথা বলছে৷ তাও দেখো মুখে কোনো হাসি নাই!
আমি দেখে মাথা নেড়ে মনে মনে বললাম, গরিলার ভবিষ্যৎ তিতা।
হঠাৎ ওর ফ্রেন্ডরা এখন আমার দিকে তাকালো। বুঝলাম আমি তাদের মধ্যে মঙ্গল থেকে আসা অতিথি। না জানি কি হবে! সুমনা এক ঝলক হাসি দিয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, গাইজ এটা মিলা। শাওনের লাইফ পার্টনার।
শাওন সুমনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
সব ফ্রেন্ডগুলো মুখ হা করে তাকিয়ে বলল, ওওওও।
তারপর এক এক জন আমার দিকে এগিয়ে এসে এসে নিজের নাম বলতে লাগল।
আমি দিয়া
আমি তন্ময়
আমি তিলক
আমি চঞ্চল
আমি জয়
আমি রবিন
আমি ইফান
আমি রোহান
আমি চোখ বড়সড় করে সবার নাম শুনতে লাগলাম। মেয়ে বলতে খালি সুমনা, আমি আর এই দিয়া।
পিছনে আর একটা ছেলেও আছে। সে নিজের নাম না বলে হা করে তাকিয়ে আছে।
সুমনা বলল, তোর কি হলো?
ছেলেটা চোখ দুইবার পলক ফেলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, ভাই, জোস কিউট।
ছেলেটা এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য দুই হাত বাড়াতেই শাওন পিছন থেকে ওর শার্টের কলার টেনে ধরে সরিয়ে দিল। তারপর ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল।
পিছন থেকে দিয়া ছেলেটার মাথায় একটা মারল। আর ফিসফিস করে বলল, তোর আক্কেল হবে কবে?
ছেলেটা কোনোদিকে পাত্তা না দিয়েই খুশি মনে বলল, আমি মোহিত।
পরোক্ষনেই হেসে বলে উঠল, আমাদের দুজনেই নাম ই ‘ম’ দিয়ে। ফ্রেন্ডস?
বলেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল হেন্ডসেক করার জন্য। আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। ছেলেটা হাসি মুখে হাতটা আর একটু বাড়িয়ে দিলো।
আমি ইতস্তত বোধ করেই হাত মিলালাম। ছেলেটা হাত ধরে মিষ্টি হাসিসহ তাকিয়েই আছে।
আমি মনে মনে বললাম, এ কি পাগোল নাকি!
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, তোদের পরিচয় পর্ব শেষ হলে আমরা রওনা দিই?
“অহ সিওর” বলেই ছেলেটা হাত ছেড়ে দিল। তবে ছেলেটাকে দেখে ছেচ্রা মনে হয়না। ভালই। কিন্তু গায়ে পরা। চেহারা বিদেশি আবার বাঙালী মিক্স।
সুমনা আমার কানে কানে বলল, ও একটু এমন ই। আক্কেল কম। বিদেশে বড় হয়েছে ত তাই এমন। ওর বাবা বাঙালী আর মা বিদেশি। তুমি কিছু মনে করো না।
আমি অবাক হয়ে বললাম, ওওওও।
মনে মনে বললাম, এজন্যই কথা বার্তা একটু কেমন যেন। বিদেশীরা বাংলা শিখে বললে যেমন লাগে শুনতে, তেমন।
আমরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম। সুমনা আমার পাশে বসল। আবার সেই এসি।
আমি আর সুমনা দ্বিতীয় সারিতে বসলাম। আমি জালানার পাশে বসলাম যদিও জানালা বন্ধ। আমার সোজা সামনে শাওন।
কিন্তু ঝামেলার বিষয় হলো শাওনের পাশেই মোহিত বসেছে। আর ঘাড় ঘুরিয়ে সীটের উপর দুইহাত রেখে তার উপর ওর মাথা রেখে আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।
আমি বিব্রতবোধ করে হাসলাম। শাওন ওর ফোনে কি যেন করছে।
মোহিত আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সুমনা ম্লান হাসি দিয়ে বলল, ভাই আমি সরে যাব এখানে এসে বসবি?
মোহিত সাথে সাথে বলল, সিওর।
শাওন মোহিতের দিকে তাকালো। শাওনের মনোযোগ পুরো ফোনের দিকে ছিল তাই সুমনাকে প্রশ্ন করল, কি হয়েছে?
সুমনা ঠোঁট উলটে বলল, কি আর হবে!
সুমনা আমার দিকে তাকালো। আমি মোহিতের দিকেই তাকিয়ে আছি। আমার সাথে বসে কি করবে! পাগোল নাকি?
আমি চোখ সরিয়ে সুমনার দিকে তাকালাম। সুমনার মুখে মুচকি হাসি। ব্যাপার কি!
সুমনা হাসিমুখে উঠে দাড়ালো তারপর মোহিতকে ইশারা করে বসতে বলল।
মোহিত উঠে এসে প্রচুর খুশির সাথে আমার পাশে বসে পরল। আমি নড়েচড়ে বসলাম। শাওন ভ্রুকুচকে সুমনার দিকে তাকালো। সুমনা শাওনের পাশে বসতে বসতে বলল,
ওরা দুইজন গল্প করুক। আর আমি আর তুই ফোন টিপি চল।
শাওন ঘাড় ঘুরিয়ে মোহিতের দিকে তাকালো। কিন্তু মোহিত অনেক খুশির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আড়চোখে জালানার দিকে তাকিয়ে আছি। এ কেমন জ্বালা রে বাবা। আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন! এমন অদ্ভুত মানুষও হয় দুনিয়ায়?
সুমনা শাওনকে বলল, তুই এদিকে ফোনের দিকে তাকা। তোর ত কোনো সমস্যা হবার কথা না!
শাওন বিরক্তির সাথে সুমনার দিকে তাকিয়ে তারপর বাহিরে তাকিয়ে রইল।
মোহিন অনেক ক্ষন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, I really like you.
শোনার সাথে সাথে আমি চমকে তাকালাম। শাওনও ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রুকুচকে তাকালো মোহিতের দিকে।
ওদিকে সুমনা মুখে হাত দিয়ে হাসছে।
মোহিত একটু থেমে বলল, as sister in law. হাহা।
আমি অবাক হয়ে শুধু মাথা নাড়লাম যে আচ্ছা!
“কিন্তু তোমাকে দেখতে একটা হিরোইনের মত। আমার প্রিয় হিরোইন you know!”
শাওন বলল, তুই মুখ বন্ধ রাখ।
মোহিত শাওনের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, you are busy with phone always. So i better talk with someone who will listen to me.
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, রাইট সিস্টার ইন ল।
আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছি। এই ছেলের প্রকৃতি বুঝতে পারছি না।
পাশের সীটে বসা ছেলেদের মধ্যে একজন বলে উঠল, ও এমন ই। সমস্যা হলো পুরো পথ তোমার মাথা খেয়ে ফেলবে। এজন্য ওকে আমরা সাধারণত শাওনের পাশেই বসাই। হাহা।
আমি বললাম, ওওও।
গাড়ি একটু আগেই ছেড়ে দিয়েছে। জালানাটা খুলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু করার কিছুই নেই।
এদিকে মোহিত সত্যিই অনেক কথা বলতে পারে। এত সময় ওর বাপ দাদার চৌদ্দ গুষ্টির কাহিনী বলে শেষ করেছে। সামনে বসে শাওন আর সুমনাও শুনে বোর হয়ে গেছে। কিন্তু আমার বোর লাগছে না। কারন বকুলও এমন পক পক করত।
মোহিত হঠাৎ করে বলল, এবার তুমি বলো।
আমি হকচকিয়ে বললাম, আমি কি বলব!
“তোমার বিষয় বলবে। এত সময় ত আমি বললাম।” মোহিত বলল।
আমি হালকা হাত নাড়িয়ে বললাম, না না আপনি বলুন আমি শুনছি।
মোহিত হাত দিয়ে আমাকে আর শাওনে দেখিয়ে বলল, তাহলে তোমাদের ভালোবাসার গল্প বলো। তোমাদের প্রথম দেখা, you know! How you two met? How did you two fall in love?
শাওন কড়া চোখে মোহিতের দিকে তাকিয়ে বলল, you are irritating me now.
মোহিত ভ্রুকুচকে হালকা হেসে বলল, why?
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা তাহলে আমি আমার টা বলি। My First love!
সুমনা আর শাওন ঘাড় ঘুরিয়ে মোহিতের দিকে তাকালো। ওরা এই গল্পও মনে হয় কয়েক শত বার শুনেছে।
মোহিত খুশির সাথে বলতে লাগল, When I was in 8th grade a new girl got transfered in our school. She was really beautiful, you know. My seat was near her seat. But we never talked to each other.
এটুকু শুনে আমি বলে উঠলাম, আপনি এত কথা বলেন তাও ওই মেয়েটার সাথে কোনো কথাই বলে নি?
আশেপাশের সবাই হেসে উঠল আমার প্রশ্ন শুনে। একটা ছেলে বলে উঠল, ওয়াও! গুড পয়েন্ট মিলা। আমরা এতদিনে এই পয়েন্ট ধরতেই পারিনি।
মোহিত বলল, I was a shy guy you know.
আরেকটা ছেলে বলে উঠল, ইহাও বিশ্বাস যোগ্য নয়।
সবাই আবার হেসে দিল।
মোহিত আবার গল্প শুরু করল। শুনে যা বুঝলাম তা হলো, মেয়েটাকে মোহিত তার মনের কথা কোনোদিনো বলতে পারেনি। কারন যেদিন সে একটা চিঠি লিখে দিবে বলে মনে করেছিল সেদিন জানতে পারে মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে। সেই বয়ফ্রেন্ড ছেলেটা মেয়ের সামনের বেঞ্চে বসত।
এটা গেল ফার্ট লাভ। এরপর সেকেন্ডটা যেই বলতে যাবে তখনি শাওন মোহিতকে থামিয়ে দিয়ে বলল, সামনে আয় তুই।
সুমনা বলে উঠল, “হালকা রোমান্টিক কিছু শুনলে তোর বউ মরে যাবে না। এমনিও বেচারিকে তুই কোনো মুভি ত দেখতে দিবিনা। এখন গল্প শুনেই শিখুক।”
মোহিত আর আমি কিছু না বুঝে তাকিয়ে আছি। শাওন সুমনার দিকে রেগে তাকিয়ে তারপরই মোহিতের দিকে তাকালো। আর বলল, এখনি ফালতু গল্প বন্ধ করবি।
আমি শাওনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, আমি শুনব।
শাওন রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি একটা ঢোক গিললাম।
মোহিত শাওনকে রেগে যেতে দেখে বলল, ওকে রিলাক্স। আমরা অন্য গল্প করি ওকে?
আমি রেগে বলে উঠলাম, না যেটা বলা শুরু করেছেন সেটাই শুনব।
শাওন কড়া চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি মুখ ঘুরিয়ে জালানার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকালো।
মোহিত কি করবে বুঝতে না পেরে আমাকে ইশারাতে এদিকে আসতে বলল কারন কানে কানে কিছু বলবে। আমি একটু মাথা এগুতেই মোহিত ফিসফিস করে বলল, সাজেক গিয়ে বলব। ওকে?
বলে বুড়ো আঙুল দেখালো। আমিও হাসিমুখে বুড়ো আঙুল দেখালাম।
আশ্চর্য বিষয় হছে গরিলাটার ফ্রেন্ড গুলা অনেক ভাল আর হাসিখুশি। কেমন করে এরা এর মত এক গরিলার ফ্রেন্ড হলো কে জানে।
মোহিত এখন অন্য গল্প শুরু করেছে। কিন্তু আমার এখন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। তাই আমি মাথাটা সীটে হেলিয়ে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম। শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম বুঝলাম না। অনেক বড় ঘুম দেওয়ার পর চোখ খুললাম। জালানা দিয়ে হালকা রোদ এসে চোখে পরছে আমার। কিন্তু এক মিনিট! আমি এটা কার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলাম এত সময়!সাথে সাথে মাথা তুলে পাশে তাকালাম।
“আ..আপনি?” আমি হকচকিয়ে গেলাম। শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ঘাড় ব্যথা করে দিয়েছ তুমি আমার।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। আরেকটা আশ্চর্যকর বিষয় হলো বাসে কেউ নেই। একটা মানুষও নেই। কিন্তু কেন! শুধু আমারা দুইজন কেন?

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।