১৬ বছর বয়স | পর্ব – ১১

পুরো রুমে এই রাত ২ টার সময় আলো জ্বলছে। আমি শাওনের বিছানায় বিরক্তির সাথে বসে আছি। শুধুমাত্র বলেছিলাম, “আমি আপনার সাথে ঘুমাব!” উনি মনে করেছে আমরা একসাথে ঘুমাব। তাই বলে দিলেন, “impossible.” হুহ আমি যেন বসে আছি ওনার সাথে ঘুমানোর জন্য।
আপাতত ভয় এর মা কে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য পুরো রুমে আলো জ্বালিয়ে আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বেলকোনিতে চলে গেছে। আমি এত তীব্র আলোতে ঘুমাতে পারিনা। কি অসহ্য। আমার ওই সোফাই ঠিক ছিল যদি ওই ছোটো লাইটটা যেটা পেইন্টিং এর উপর জ্বলত সেটা ফিউজ না হত। যাক বিছানা পাওয়া গেছে এই সুবাদে। এটাই ভাল। পায়ের কাছের চাদর টা টেনে নিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি ঢেকে শুয়ে পরলাম। অনেক দিন পর শান্তির ঘুম দিলাম।
অনেক দেরি করে উঠলাম ঘুম থেকে। চাদর সরিয়ে উঠে বসে হাত দুটো মেলে আড়মোড়া ভাঙলাম। তারপর সোফায় তাকিয়ে দেখলাম শাওন লেপটপ টেপাটেপি করছে সাথে মনে হয় চা বা কফি খাচ্ছে। কারন পাশেই একটা মগ রাখা। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। ব্যাপার কি! আজ ৯ টার বেশি বাজে উনি এখনো যাননি কেন? প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ঠিক তখন ই আমার দিকে তাকালেন। আমি সাথে সাথে একটু অন্য দিকে তাকালাম। শাওন লেপটপ বন্ধ করে উঠে দাড়ালো আর আমার দিকে আসতে লাগল। টের পেয়েও আমি তাকালাম না। উনি এসে এক টানে আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিলেন।
আমি চমকে উঠে বললাম,”কি করছেন আপনি!”
“গেট আউট” বলে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি মুখটা একটু ব্যঙ্গ করে বললাম,”হ্যা হ্যা এটা বাদে আর কি ই বা বলবেন।”
তারপর বিড়বিড় করে বললাম, “সারাদিন গেট আউট, গেট আউট করতেই থাকে।”
শাওন রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে গিয়ে ওনার চোখের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, “যাচ্ছি, যাচ্ছি। এভাবে তাকানোর কি আছে।”
হঠাৎ মাথায় এলো যা পরে আছি সেটার হাতার কথা। সাথে সাথে দুই হাত দুই কাধে রেখে অপ্রস্তুত হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলেন।
আমি জলদি করে ল্যাগেজ খুললাম। এই ছাতার ড্রেস আর পরে থাকা যাচ্ছেনা।
আজও নাস্তায় রুটি আর সবজি। খেতে বসলাম। এমনিই অনেক দেরি হয়েছে। শাওন সোফায় বসে সেই কি যেন আঁকছে একটা ফাইলে। মনে হয় নতুন বাসার ডিজাইন। কিন্তু আজ অফিস যাবে না কেনো?
উনি আছে বলে আমি শান্তিতে নড়াচড়াও করতে পারছিনা। ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো আজ শুক্রবার। অহ তারমানে এই গরিলাটা প্রতি শুক্রবার বাসায় থাকবে? কি বিরক্তিকর বিষয়।
আজ মনে হয় ডাইনিং টা তেই বসে কাটাতে হবে। ডাইনিং এ বসেই আজ ওনার কাহিনী দেখতে লাগলাম। আজ উনি পুরো ঘর গুছানো, ধোঁয়া মোছা, নিজের জামা কাপড় লন্ড্রি, সব কাজ করলেন। তারপর এখন শুধু রান্না করাই বাকি। আমি ডাইনিং থেকে উঠে এসে রান্নাঘরের সামনে দাড়ালাম।
উনি আমাকে দেখেও না দেখার মত ভান করে ছুড়ি দিয়ে পেয়াজ কুচি করতে লাগলেন। তাই আমিই একটু বিব্রত মুখ করে বললাম, আপনি চাইলে আমি রান্না করে দিতে পারি।
শাওন কোনো কথা বলল না। আমার দিকে তাকালোও না। আমিও ওনাকে পাত্তা না দিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম যে উনি আজ রান্না টা কি করবেন। মাছ আছে, এদিকে কুমড়ো আছে, আর ডাল। আমি ফট করে ডালের বাটি টা নিয়ে শাওনের উলটো পাশে থাকা ট্যাপে ধুতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। উনি এসে খপ করে আমার হাত ধরলেন। আর বললেন, “get out.”
আমি হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে কপাল কুচকে বললাম, “সারাদিন এত গেট আউট গেট আউট করেন কিসের জন্য!”
“কারন….”
শাওনকে থামিয়ে দিয়ে আমি বলে উঠলাম, এটা আমার বাসা। এটাই বলবেন ত? জানি এটা আপনার বাসা। তো? পিশামনি বলেছে এখন থেকে এটা আমারো বাসা।
শাওন চোখ পাকিয়ে বলল, “You really talk to much. আর একটা এক্সট্রা কথা বললে ছুড়ে বাইরে ফেলে দিয়ে আসব।”
আমি রেগে হাতের পাঁচ আঙুল নাচিয়ে বলে উঠলাম, “এত সস্তা না।”
শাওন রেগে এক পা এগুতেই আমি পিছিয়ে যেতেই নজর গিয়ে পরল গ্যাসের উপরের ফ্রাই প্যানে। তেল অনেক বেশিই গরম হয়ে গেছে। শাওনও তাকালো। তারপর সরে গিয়ে চুলার কাছে আসল। আমি ওনার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম, “আপনি কি সারাবছরই এমন? গোমড়ামুখো?”
শাওন একবার রেগে আমার দিকে তাকিয়ে সব গুলো মাছ একসাথে ফ্রাই প্যানে ঢেলে দিল। আর সাথে সাথে গরম তেল ছিটকে আমার ডান হাতের উপরিভাগে এসে পরল।
আমি ব্যথার “আহ” বলে চোখ মুখ কুচকে ওনার দিকে তাকালাম।
শাওন রেগে বলল, “বলেছিলাম না এখান থেকে যেতে!” তারপর আমার হাত টেনে নিয়ে ট্যাপের পানির নিচে ধরল আর রেগে বলল, “শখ মিটলে এখান থেকে যাও।”
আমিও রেগে বলে উঠলাম, আর শখ না মিটলে?
শাওন রেগে আমার হাতটা চেপে ধরল।
“আহ! একে ত হাত টা ঝলসে দিয়েছেন তার উপর আবার হাতটা ভেঙেও ফেলতে চাচ্ছেন। কোথায় মানুষ ভুল করলে সরি বলে আর এখানে দেখো!”
শাওন এক ঝটকায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে হাত টা ছেড়ে দিল। সেজন্য আমি খানিকটা পিছিয়ে এলাম।
রেগে ফুলে আশেপাশ তাকাতেই ময়দার ডিব্বা দেখলাম। সাথে সাথে এক বাটি ময়দা নিয়ে ওনার দিকে মেরে দিলাম। ওনার গলা থেকে শুরু করে ময়দা পুরো শার্ট পর্যন্ত লেগে গেছে। উনি রেগে এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। তারপর ওই এক ডিব্বা ময়দা পুরো আমার মাথায় উলটো করে ঢেলে দিলেন।
আমি ওনার এই কান্ডে পুরো হা হয়ে গেলাম। প্রচন্ড রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। উনি আমার কাছ থেকে সরে নিজের শার্ট ঝারতে ঝারতে ট্যাপের কাছে গেলেন।
আমি রেগে এসে ওনার সামনে দাড়িয়ে বললাম, কি করেছেন এটা আপনি?
“যেমন কুকুর তেমন মুগুর” উনি শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন।
-কি? আমি কুকুর?
-ত আর কি? কখন থেকে পিছেই পরে আছো!
শাওন কপাল কুচকে বলল।
আমি ক্ষেপে হাত মুঠ করে গ্যাসের চুলার পাশ তাকাতেই একটা জগ দেখতে পেলাম। সেটার অর্ধেক পানি ভরা ছিল। জগটা হাতে নিয়ে সেটার ঢকনা খুলে ওনার মুখে পানি গুলা মারলাম। উনি চোখ বন্ধ করে বা হাত দিয়ে নিজের নাকমুখের পানি গুলো সরালের। আমি জগটা রেখে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আর মুখ মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসছিলাম। পিছন থেকে উনি আমার হাত খপ করে ধরে টানতে টানতে আমি রুমে নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি বলতে লাগলাম, কি করছেন আপনি! হাত ছাড়ুন আমার। লাগছে আমার।
বলতে বলতেই উনি আমাকে বাথরুমের মধ্যে এনে শাওয়ার নিচে জোর করে দাড় করিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলেন। আমি সরে আসতে চাওয়ার সাথে সাথে আমাকে আবার টেনে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিলেন।
“কি করছেন আপনি! ছাড়ুন আমার হাত।”
ভিজে বিড়ালের মত অবস্থা হওয়া অব্দি আমাকে সরতেই দিলেন না। ৩মিনিট ওভাবে রেখে আমার হাত ছেড়ে দিলেন। তারপর উনি বের হবার জন্য আমার কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার মুহূর্তে আমি ওনার শার্টের কলার ধরে টেনে আমার সাথে দাড় করিয়ে দিলাম।
কারন এভাবে কীভাবে ওনাকে এত সহজে ছেড়ে দিব আমি? আমাকে ডবল গোসল না হয় করতেই হত কিন্তু ওনাকেও করিয়ে ছাড়ব।
উনি ভ্রুকুচকে আমার হাতের দিকে তাকালেন। আমি মুখে চাপা রাগ এনে আরো শক্ত করে কলারটা ধরলাম আর মনে মনে বললাম, “আমিও গুনে গুনে তিন মিনিটের আগে ছাড়ব না।”
আমার এই কাজের জন্য ওনার চোখেমুখে রাগ ছেপে উঠছে। তাতে কি! আমি ভয় পাইনা।
উনি আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে আসতেই আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম ওনার দিকে।
“তোমার আমার সাথে গোসল করার খুব শখ না! আসো পূরন করে দিচ্ছি আমি।”
এই কথা শুনে আমি সাথে সাথে ওনার কলার ছেড়ে পিছিয়ে গেলাম।
উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালেন। আমিও নিজের দিকে তাকালাম আর সাথে সাথে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম। শাড়ির মধ্যে দিয়ে সব বুঝা যাচ্ছে কারন শাড়ি পুরো গায়ে লেপ্টে আছে। যেমন শাশুড়ী তেমন শাড়ি।
আমি কি করব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। শাওন শাওয়ার টা বন্ধ করে ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। কি একটা পরিস্থিতি! কই যাব এখন আমি।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমি ভয়ে পিছাতে পিছাতে বললাম, “আ…আমার সাথে উল্টো পালটা কিছু করলে.. আমি কিন্তু…”
কথা শেষ হবার আগেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল।
শাওন স্বাভাবিক ভাবেই আমার কাছে এসে আমার পাশে ঝুলে থাকা তোয়ালে টা নিলো। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম।
শাওন তোয়ালে টা নিয়ে আমার মাথার উপর দিয়ে দিল।
“তোমার জন্য আমার সবকিছুতেই দেরি হবে আজ। জলদি করবা” বিরক্তির সাথে কথা গুলো বলে শাওন চলে গেল।
আমি তোয়ালেটা মাথা থেকে নামালাম আর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লাম।
এখন সমস্যা হলো আমি পরবো কি? বাহিরে ল্যাগেজ থেকে কাপড় আনতে হবে ত। তাই বাথরুমের দরজা হালকা খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিলাম। উনি মনে হয় বেলকনিতে।
আমি বের হয়ে আসার সাথে সাথে শাওন বলে উঠল, “এখনো কি করছ তুমি!” শাওন বেলকোনির দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল।
আমি হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে বললাম,”জামাকাপড় নিতে।”
শাওন বিরক্তির সাথে বেলকোনির ভিতরে চলে গেল।
আমি জলদি করে করতে চেয়েও অনেক দেরি করে ফেললাম। বের হবার আগে আগে উনি দরজায় টোকা দিয়ে বিরক্তির সাথে বললেন, “তোমার জন্য কত সময় এভাবে থাকব আমি!”
আমি ভিতর থেকে বললাম,”হয়ে গেছে।”
তারপর বের হতে যাবার আগের মুহুর্তে মনে হলো ওনাকে একটু জব্দ করলে কেমন হয়!
চিন্তা করেই একটা নিঃশব্দ ভিলেনী হাসি দিলাম।
আমাকে বিনা কারনে এত জ্বালাতন করা।
আমি বাথরুমের মধ্যে ইচ্ছা করে দাড়িয়ে রইলাম। শাওন আবার নক দিল। আমি ভনিতা করে বললাম, “আর একটুখানি সময় লাগবে।”
উনি যে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছেন বুঝতে পারছি। শুধু যদি মুখখানা দেখতে পেতাম। কারন আজ অনেক মেজাজ দেখিয়েছেন আমার উপর। আমিও কম যাই না হুহ!
“তুমি ইচ্ছে করে এগুলা করছ, Right?”
ওনার এই কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম,” বটে, আপনার বুদ্ধি আছে ঘটে।”
আমি মুখ চেপে হাসতে লাগলাম। শাওন তাও হয়ত শব্দ পেল।
রেগে জ্বলে বলে উঠল,”You are getting on my nerves right now.”
আমি কিছুই বললাম না। অনেক শান্তি লাগছে।
শাওনের রাগ ওদিকে বাড়ছে। ও রাগে কটমট করে বলল, “তোমার সাথে সত্যিই ভালোভাবে কিছুই করা সম্ভব না। Now I will let you know how dangerous I can be. So just wait and see.”
আমি চিন্তায় পরে গেলাম। কি করবেন উনি? দরজায় কান পেতে বুঝতে চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।
তাই অল্প করে দরজা খুলে বের হয়ে এসে আমার চোখ কপালে উঠে গেল আর মুখ হা হয়ে গেল।
উনি এক জগ পানি আমার ল্যাগেজে খুলে ঢেলে দিয়েছেন! আমি রেগে হাত মুঠ করে ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, “আপনি কি করেছেন এটা!”
“এখনো ত কিছুই করিনি।” বলেই শাওন আমাকে আবার বাথরুমে টেনে নিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দিল।
এতে আমার মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। আমি এক ধাক্কা দিয়ে ওনাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,”আপনার মাথা ঠিক আছে? কি করেছেন এটা? এখন আমি কি পরব!”
“That’s none of my business.” বলে আমাকে টেনে নিয়ে একদম বাসা থেকেই বের করে দিলেন।
এই পরিস্থিতিতে আমার কেমন লাগা উচিত নিজেও জানিনা। খুব অসহ্য আর বিরক্ত লাগছে। তাই আমি ছাদের দিকে রওনা হলাম।
ছাদে অনেক রোদ। চিন্তা করলাম এখানেই বসে থেকে গা শুকিয়ে নিব। কিন্তু অনেক অতিরিক্ত রোদ। যদিও করার কিছুই নেই।
দুপুর গরিয়ে বিকাল হয়ে গেল আমি দুই হাটুর মধ্যে মাথা গুজে বসে আছি। এখন অনেক খারাপ লাগছে। একটা মানুষ এতটা খারাপ কি করে হতে পারে!
সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘ করলো। বুঝলাম আজ বৃষ্টি হবে। কিন্তু জেদ হচ্ছে প্রচুর। একদমই যাব না আমি।
ঘন্টাখানেক পরে সত্যিই অনেক জোরে বৃষ্টি শুরু হলো। ভিজতে আমার ভাল লাগে কিন্তু আজ অনেক ঠান্ডা লাগছে। কড়া রোদে ওভাবে বসে থাকা ঠিক হয় নি।
এখনো এভাবে ভেজা ঠিক হচ্ছে না। তাও নড়তে ইচ্ছে করছে না।
শাওন সন্ধ্যা থেকেই লেপটপে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। বৃষ্টি শুরুর খানিক পরেই ওর খেয়াল হলো আমি বাহিরে।
লেপটপ বন্ধ করে গিয়ে দরজা খুলল। কিন্তু সেখানে আমি নেই।
“oh shit” বলে শাওন বের হয়ে নিচে গেল। রিসিভশনে জিজ্ঞাসা করে কিছু জানা গেল না। তাই বৃষ্টির মধ্যেই বের হয়ে দারোয়ান এর কাছে গেল শাওন। দারোয়ান একটা বড় ছাতার মত জিনিসের নিচে দাড়িয়ে ছিল। শাওন ভিজতে ভিজতে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল,”একটা মেয়েকে দেখেছ? শাড়ি পড়া। পিংক।”
দারোয়ান বৃষ্টির প্রবল শব্দের কারনে জোরে জোরে বলতে লাগল,”না স্যার। আমি ত দুপুর থেকেই গেটে আছি। এমন কেউ যায়নি। আপনি এভাবে ভিজলে ত অসুখ চলে আসবে।”
শাওন দারোয়ানের কথা পাত্তা না দিয়ে বলল, “Are you sure?”
“হ্যা স্যার।”
শাওন এদিক ওদিক তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগল কি করবে।তারপর ছাদের কথা মাথায় এল। সাথে সাথে ছাদে এলো। ছাদে ঢুকে সামনের দিকে তাকিয়ে তারপর বাম দিকে মুখ ফেরাতেই আমাকে দেখতে পেলে। আমি হাটুর মধ্যে মাথা গুজে বসে আছি। শাওন আমার কাছে এসে আমার কাধে হাত রাখল।
আমি মাথা তুলে ওনার দিকে তাকালাম। আমার সারা গা কাপছে।
শাওন ভ্রুকুচকে বলতে লাগলেন, “তুমি কি ষ্টুপিড? এখানে বসে আছো!”
আমি কোনো উওর দিলাম না। প্রচুর ঠান্ডা লাগছে। জ্বর আসবে হয়ত।
“রুমে চলো।” শাওন বলল। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতেও পারছি না। আমি ওনার হাত ঠেলে আমার কাধ থেকে সরিয়ে দিলাম। উনি কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালেন।
উনি নিজেও রীতিমতো অনেক ভিজে গেছেন। উচিত ভেজা। উনি আমার সাথে আজ যা করেছেন তার জন্য আমি কোনোদিনো ওনাকে ক্ষমা করব না। আর আমি যাবও না ওনার সাথে।
উনি আমার দিকে আবার হাত বাড়াতেই আমি সরে বসলাম। তাই উনি রেগে বললেন,”Enough of your drama.” আর বলেই জোর করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
ওনার রুমে নিয়ে এসে আমাকে সোফার সামনের টি-টেবিলে বসালেন। তারপর নিচু হয়ে আমার গলায় হাত দিলেন। পুরো গা ঠান্ডা হয়ে আছে।
শাওন উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল,”Damn you. কত সময় ছিলে অইভাবে তুমি! গা বরফ হয়ে গেছে। সব এখনি চেঞ্জ করতে হবে। সব খোলো।”
আমি কোনো উওর না দিয়ে চুপ করে রইলাম। মাথা ঝিম মেরে যাচ্ছে।
যখন চোখ খুললাম তখন সকাল। অনেকটা রোদ উঠেছে। গায়ে একটা মোটা কম্বল আমার। তাও এখনো ঠান্ডা লাগছে। হয়ত অল্প জ্বর আছে। বেলকোনি দিয়ে রোদ এসে রুমের ভিতরে পরেছে। আমি সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটু পাশে তাকালাম। আমার শাড়ি ব্লাউজসহ সবকিছু ওখানে পরে আছে। আর তার একটু পাশেই শাওনের ব্লু শার্ট টাও নিচে পরে আছে।
আমি চোখ বড়সড় করে চিন্তা করলাম তাহলে আমি এখন কি পরে আছি? সাথে সাথে কম্বলের নিচে ডুব দিতেই দেখলাম আমি শুধু একটা সাদা শার্ট পরে আছি। এটা অবশ্যই শাওনের কিন্তু আমি এটা কখন পড়লাম। ফট করে গায়ে কম্বলটা টেনে নিয়ে উঠে বসলাম।
উনি কাল রাতে আমার… আমার শাড়ি… না না।
তখনি দরজার টোকা পরল। আমার কানে যেন কিছুই যাচ্ছে না। স্তম্ভের মত বসে রইলাম। শাওন দরজা খুলে ঢুকলো।

চলবে…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।