আশমিন নূরের কেবিনে আয়েশ করে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। শুভ্র পাঞ্জাবি পাজামায় অসাধারণ লাগছে তাকে।চোখে মুখে একটা নেতা নেতা ভাব আছে।নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিন কফি খাচ্ছে আর একটু পর পর নূরের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। নূর বিরক্তি তে মুখ কুচকে ফেললো।
অন্ধকার কোন ঘর থেকে কারো বিভৎস চিৎকার ভেসে আসছে। মস্তবড় এক গুদাম ঘরের বিলাসবহুল এক রুমে বসে আছে আশমিন। তার পাশের ই কোন রুম থেকে কারোর আর্তনাদ ভেসে আসছে। সোফায় বসে হাটুতে দুই হাত ভর দিয়ে পা নাচিয়ে যাচ্ছে আশমিন। সানভি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে।
ক্লান্ত পায়ে বাড়িতে ঢুকলো আশমিন।ড্রয়িং রুমে কামিনী চৌধুরী আর আমজাদ চৌধুরী বসে আছে। নিজেদের মধ্যে হয়তো কিছু আলোচনা করছে।আশমিন কে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে চিন্তিত চোখে তাকালো আমজাদ চৌধুরী।কামিনী চৌধুরীর কপালে ও ভাজ পরেছে।আশমিন কারোর দিকে না তাকিয়ে সোজা নূরের রুমে চলে গেলো।
ছাদের রেলিংয়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আশমিন।সব সময় গোছানো ছেলেটা আজ প্রচন্ড অগোছালো হয়ে নিজের জীবনের হিসেব মিলাতে ব্যস্ত। অনুভূতিহীন চোখ গুলো আজ পরাজিত সৈনিকের মতো নত হয়ে আছে।আমজাদ চৌধুরী এসে সন্তপর্ণে ছেলের পাসে বসলো।আশমিন বাবার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কালকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা লাইভ কনসার্ট আছে নূরের।সারাদিন অফিস সামলে গান নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পায় না নূর।তবে যতই বিজি থাক না কেন গান সে ছাড়বে না।মন খারাপের সময় গুলোতে এই গান ই ছিল একাকিত্ব ঘুচানোর একমাত্র সঙ্গি।তাই বাবার দেয়া দায়িত্ব সামলে ও নিজের ক্যারিয়ারে মন দিবে।
আশমিন কে হসপিটালে সিফট করা হয়েছে।খুব গোপনে ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে আশমিনের। অমি এখনো নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি। নূর এমন কিছু করবে তা স্বপ্নে ও ভাবতে পারেনি সে।সানভি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। শূন্য দৃষ্টিতে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরী কেউ জানায়নি।
নূর কে নিয়ে যাওয়ার পর আশমিন হালকা হাসলো। অমি নিয়ে গেছে নূর কে। সানভি নিস্তেজ নূর কে কোলে নিতে গেলেই আশমিনের ভয়ংকর ধমক খেয়ে থেমে গেছে। চাকরি জীবনে এই প্রথম আশমিন এভাবে হুংকার দিয়ে ধমক দিয়েছে ওকে।ভয় দ্বিধা সব নিয়ে যখন সানভি আশমিনের দিকে তাকিয়ে ছিল তখন আশমিন গম্ভীর গলায় অমি কে বললো নূর কে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিনের সেদিকে কোন ধ্যান নেই। সে একমনে কনফারেন্স মিটিং করে যাচ্ছে। চোখে গোল কালো ফ্রেমের চশমা। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি দেখে বোঝার উপায় নেই দু দিন আগে তার বুক সে ফুটো করে দিয়েছে।আশমেন আড় চোখে নূরের ভাবভঙ্গি দেখেও কিছু বললো না।
দিনের সূর্য ঢলে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে।কামিনী চৌধুরী প্রায় আট ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে ছিল।ততক্ষণ আমজাদ চৌধুরী তার পাশে তার হাত আকড়ে ধরে বসে ছিল।কামিনী চৌধুরীর জ্ঞান ফিরতে দেখেই তাকে কেবিন থেকে বের করে দেয় আশমিন।
কামিনী চৌধুরী ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে নিউজপেপারে চোখ বুলাচ্ছে।তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই কাল তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে বাসর ও সেরে ফেলেছে। আর কেউ এখনো ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসে নি।নূরের আজ কনসার্ট আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে। অসুস্থতার জন্য পোগ্রাম পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।আজ সারাদিন রিহার্সাল করবে।