জগিংয়ে বেরিয়েছিল সৌধ৷ বাড়ি ফেরার সময় আকস্মিক তার কাঙ্ক্ষিত রমণীর দেখা মিলে। নিধি এসেছে! সাতসকালে প্রাণপ্রেয়সীর মুখ দর্শন। এক নিমিষে বক্ষঃস্থল চনমনে হয়ে ওঠল। চোখ, মুখে ছড়িয়ে পড়ল ভোরের স্নিগ্ধ জ্যোতি। ঝিমিয়ে পড়া হৃদয়টুকু সহসা তরঙ্গিত হলো। সীমাহীন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল কয়েক পল। ছোট্ট একটি লাগেজ হাতে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিধি। কানে ফোন ধরা৷ কারো সঙ্গে কথা বলছে সে৷ সৌধ ত্বরিত গতিতে এগিয়ে এলো। পলকহীন তাকিয়ে রইল ভোরের শান্ত নদীর মতো মুখটায়। সৌধর উপস্থিতি টের পেয়ে সংক্ষিপ্তে কথা শেষ করে ফোন কেটে দিল নিধি৷ দীপ্তি চোখে তাকাল সৌধর পানে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারল না৷ বুকটা ধড়াস করে ওঠল প্রেমময় পুরুষটার চাউনি দেখে৷ ও চোখের গভীরতা বরাবরের মতোই বুকে গিয়ে বিঁধল। প্রথম কথা বলল সৌধ নিজেই। অবাক কণ্ঠে বলল,
‘ কী ব্যাপার সাতসকালে কোথায় থেকে এলি তুই? ফুলবাড়িয়া থেকে এত্ত সকালে আসা তো সম্ভব না। তাহলে এলি কীভাবে ? ‘
থতমত খেল নিধি। কিয়ৎক্ষণ বিব্রত মুখে দাঁড়িয়ে থাকার পর আকস্মিক চোখ পাকিয়ে, ধমকানো সুরে বলল,
‘ সাতসকালে এসে কী অপরাধ হয়ে গেল? কেমন আছি জিজ্ঞেস করলি না। বাড়িতে ঢুকতে পর্যন্ত দিলি না৷ প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে বসলি। ওকে ফাইন ব্রো, চলে যাচ্ছি আমি। দুপুর না হওয়া পর্যন্ত আসছি না। ‘
শক্ত হাতে লাগেজ ধরে, রাগে গজগজ করতে করতে দু’পা এগুলো নিধি৷ তৎক্ষনাৎ চোখ দু’টো বড়ো বড়ো করে খপ করে তার হাতটা চেপে ধরল সৌধ। এত চাওয়া, এত অপেক্ষার পর যে মানুষটা তার দ্বারে উপস্থিত হয়েছে তাকে এত সহজেই ফিরে যেতে দেবে? সব সময়ের মতোই নিধি আজো তার কথার উল্টো মানে বের করল। এই মেয়েটা একবিন্দুও বোঝে না তাকে। আর না কখনো চেষ্টা করে এক চুল পরিমাণ বোঝার। হতাশা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে৷
আহত হলো হৃদয়, ব্যথিত হলো দৃষ্টি। কিন্তু মুখে স্বভাব সুলভ দৃঢ়তা বজায় রেখে বলল,
‘ ফটাফট কাজ করা বন্ধ কর৷ এতদূর থেকে এসেছিস নিশ্চয়ই শরীর ক্লান্ত? তাই মেজাজটাও দ্রুত খারাপ হয়ে গেছে৷ চল রেস্ট নিবি৷ ‘
নিধি কীভাবে এলো? ভোররাতে রওনা দিয়েছিল কিনা। এসব প্রশ্ন মাথায় এলেও মুখে আর করল না৷ বেচারি জার্নি করে ভালো মুডে নেই একদম৷ বুঝতে পেরে ভেতরে নিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে ওঠল৷ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল নিধি। সৌধর দৃঢ় চোয়াল বিশিষ্ট মুখটায় তাকিয়ে ভেঙচি কে টে বলল,
‘ যাব না ভেতরে। নিব না রেস্ট। তুই আমাকে ইনভাইট করে এনে অপমান করেছিস হুহ। ‘
তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল সৌধ। অধর কামড়ে কিছু একটা ভেবেই ধরে রাখা নরম হাতটায় শক্তি প্রয়োগ করল৷ এরপর হেঁচকা টানে নিয়ে এলো একদম নিজের কাছে। টাল সামলাতে না পেরে সৌধর বুকে নাক ঠেকল নিধির। সৌধর পরনে ব্লু কালার জগিংয়ের পোশাক। আর নিধির পরনে গ্রে কালার সেলোয়ার-কামিজ। দোতলার বেলকনিতে আইয়াজ আর সৌধর কয়েকজন বন্ধু দাঁড়িয়ে। দূর থেকে তারা অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছি সৌধ, নিধিকে। আকস্মিক এমন একটি দৃশ্য হতেই আজিজ একছুটে গিয়ে ক্যামেরা নিয়ে এলো। তুলে ফেলল ফটাফট গোটা দশেক ছবি। এদিকে সৌধর হাতের শক্ত বাঁধন থেকে ছাড় পেতে ছটফট করে ওঠল নিধি৷ চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে ভীত কণ্ঠে বলল,
‘ সৌধ ছাড়। কেউ দেখে ফেলবে। আমি কিন্তু চ্যাঁচাব, আন্টি, আংকেলকে ডাকব। ‘
সৌধর বিন্দুমাত্র ভাবান্তর হলো না। ঠোঁট বাঁকিয়ে একপেশে হাসল কেবল। বুকটা তার শীতলতায় ভরে ওঠেছে৷ এই মোহিত মুখ দর্শন করে। শরীর জুড়ে পাচ্ছে অদ্ভুত এক প্রশান্তি। ইচ্ছে করছে, নিধিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। ওর আদুরে নরম ঠোঁটজোড়ায় উষ্ণ চুমুতে ভরিয়ে তুলতে। কিন্তু জায়গাটা বড্ড বেমানান। রোমান্সের জন্য এই স্থান উপযুক্ত নয়৷ গেটের ওপাশে দারোয়ান চাচাও বসে। সুতরাং, এক বুক আফসোস নিয়ে ছাড়তে হবে তার আগুন পোকাকে। সহ্য করতে হবে মন এবং মস্তিষ্কের তীব্র কিলবিলানো আর জ্বলুনি।
নিধি চ্যাঁচিয়েই যাচ্ছে,
‘ কী ছাড়বি না? ওকে দাদুনিকে ডাকতে হবে নিশ্চয়ই? ‘
সৌধর দাদুনির ব্যাপারে খুব ভালো করেই অবগত সবাই। অবগত নিধিও। তাই ভয় পাওয়াতে কথাটা বলল নিধি। এ পর্যায়ে নিজের মর্জিতেই ছাড়ল সৌধ৷ কিন্তু নিধি ভাবল, দাদুনিকে ডাকতে চাওয়ায় কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তাই হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল,
‘ আচ্ছা তাহলে এই ট্রিকস ফলো করতে হবে৷ ‘
.
.
নিধির আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়তেই সকলে এসে ভীড় জমালো ড্রয়িং রুমে। শুধু সুহাস, নামী, সিমরান আর স্মৃতি আপু ছাড়া। তানজিম চৌধুরী নিধির সঙ্গে কথা বলছেন। তারা দু’জন সোফায় বসে। মায়ের পাশে সৌধ দাঁড়িয়ে। পকেটে একহাত গুঁজে দিয়ে অধর কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তাকিয়ে আছে প্রেয়সীর লাজুক মুখে৷ চোখের সামনে দু’জন প্রিয় নারী বসে৷ একে অপরের সঙ্গে গল্পে মশগুল তারা। পাশে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখতে সুন্দর লাগছে বেশ।
বাকি সদস্যরাও কেউ বসে, কেউ বা দাঁড়িয়ে। তাদের মধ্যে আইয়াজ এগিয়ে এলো। সৌধর কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ কী বন্ধু চোখের পলক ফেলবা না নাকি? ‘
সৌধ একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ না ফেললে দোষ কী তাতে? ‘
‘ নাহ কোনো দোষ নাই। ‘
‘ নজর দিস না। আগামীকাল ফারাহও আসবে। আমি নিজে গিয়ে ওর দুলা ভাইকে ইনভাইট করে আসছি। ‘
সহসা হৃদয় গভীরে কেঁপে ওঠল আইয়াজের৷ কাল ফারাহ আসবে? গুণে গুণে একশ একুশ দিন পর দেখা পাবে সে হৃদয় হরণকারী প্রিয়াকে? আকস্মিক একটা ঘোরের মধ্যে বিচরণ করতে থাকল আইয়াজ। সেলফোন বের করে সময় দেখে ভাবতে লাগল ঠিক কত ঘন্টা, কত মিনিট পর ফারাহর সঙ্গে তার দেখা হতে পারে। কাজের মেয়ে নিধির জন্য কয়েক প্রকারের হালকা নাস্তা নিয়ে এলো। নিধি নিষেধ করে বলল,
‘ এ বাবা আমি এত খাবার কী করে খাব? খেয়ে এসেছি আমি। প্লিইজ আন্টি আমি কিছু খাব না। ‘
তানজিম চৌধুরী সে কথা শুনল না। টি টেবিল টেনে সামনে এনে সবগুলো খাবার সাজিয়ে রাখল। সৌধ মায়ের পাশে বসতে বসতে বলল,
‘ অল্প অল্প করে সবগুলোই মুখে দিতে হবে। ‘
তানজিম চৌধুরী মাথা নাড়ালেন। ছোট্ট তাহানী ছুটে এলো দাদুনির রুম থেকে। পেছন পেছন দাদুনি নিজেও এলো। তাহানী এসে নিধির সামনে দাঁড়িয়ে চিকন কণ্ঠে বলল,
‘ বান্ধবী এসেছ বান্ধবী? ‘
ছোট্ট তাহানীর স্পষ্ট কথায় সকলেই চমকাল, ভড়কাল। আচমকা হেসেও ফেলল। নিধি এর আগেও অসংখ্য বার ভিডিয়ো কলে তাহানীকে দেখেছে। সাক্ষাতে দেখেছে মাত্র দু’বার। তাহানীর সঙ্গে তার খুব ভাব আগে থেকেই। তাই হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিল পিচ্চিটাকে। দুই গালে চুমু দিয়ে আদুরে ভঙ্গিতে বলল,
‘ হ্যাঁ গো তোমার বান্ধুবি এসেছে। ‘
খিলখিল করে হেসে ওঠল তাহানী৷ নিধিকে তার ভীষণ পছন্দ। তাই গলা জড়িয়ে ধরে সৌধর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ছোটো ভাইয়া তোমার বান্ধবী আমারো বান্ধবী। ‘
উপস্থিত সবাইও হেসে ওঠল। দাদুনি এলো সে সময়ই৷ নিধি খেয়াল করে তাহানীকে একপাশে বসিয়ে ওঠে দাঁড়াল। সালাম দিল নম্র স্বরে। দাদুনি বিগলিত হলো এতে৷ এই মেয়েটার শিষ্টাচার দেখে আগে থেকেই মুগ্ধ সে। আজ আবারো মুগ্ধ হলো। তানজিম চৌধুরী ওঠে শাশুড়িকে বসার জায়গা করে দিল। নিধি দাদুনির সঙ্গে গল্প করার ফাঁকে নাস্তা সেরে নিল৷ পুরোটা সময় জুড়েই সৌধ পাশে ছিল। তাকিয়ে ছিল নির্নিমেষ চোখে৷ যা খেয়াল করে হাসফাস লাগছিল নিধির৷ তাই গল্পের ফাঁকে হঠাৎ বলল,
‘ এই সৌধ, জগিংয়ের পোশাক পাল্টাবি না? সেই কখন থেকে বসেই আছিস। ‘
বন্ধু, আর কাজিনরা আশপাশেই ঘুরাঘুরি করছিল। তন্মধ্যে আজিজ হঠাৎ দাঁত ক্যালিয়ে এগিয়ে এলো। বন্ধুদের মধ্যে সবাই এখন জানে সৌধ নিধির প্রতি ভয়ংকর রকমের দিওয়ানা৷ তাই টিপ্পনী কে টে বলল,
‘ সৌধ তো মুডে আছে এখন। পোশাক আর পাল্টাবে কী? ‘
দাদুনি চোখের চশমা ঠিক করতে করতে আজিজের দিকে সুক্ষ্ম চোখে তাকাল। খেয়াল করে কিঞ্চিৎ ভয় পেল আজিজ। তাই ধড়ফড় করা বুক নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল আইয়াজদের কাছে। দাদুনি ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে তাকাল সৌধের দিকে। বলল,
‘ দাদুভাই যাও পোশাক বদলাও। ‘
এরপর নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তুমিও যাও বিশ্রাম নেও কিছু সময়। ‘
দাদুনি ওঠে চলে গেল। কাজের মেয়ে রুবি এসে নিধির লাগেজ নিতে উদ্যত হলো। কিন্তু সৌধ বাঁধ সেধে বলল,
‘ আমিই নিতে পারব। তুই অন্য কাজ কর। আপা ওঠেছে? আপাকে ঘুম থেকে তোল গিয়ে যা। ‘
এ বাড়ির সদস্যদের সংখ্যার থেকে কাজের লোকের সংখ্যা বেশি। তাই তারা থাকতে সৌধই লাগেজ নেবে। বিষয়টা বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য। তবু সেই বিষয়টিই ঘটতে দেখল সৌধর কাজিন মহল আর বাড়ির কাজের মেয়ে, মহিলারা। সেই সঙ্গে বুঝতে পারল সৌধর জীবনে নিধি নামক সুন্দরী রমণীটির স্পেশালিটিও।
সৌধর সঙ্গে একা উপরে যেতে ভয় করছে নিধির৷ দুরুদুরু বুকে এক একটা সিঁড়ি অতিক্রম করছে সে৷ এই ছেলেটার মাঝে এখন কোনো রাখঢাক নেই। আর না আছে একবিন্দু সংযম। ঢাকা থেকে আসার পর যে ভাবে এড়িয়ে চলেছে এতে করে আরো ভয়ংকর লাগামহীন হয়ে ওঠেছে। তা প্রতিক্ষণেই টের পাচ্ছে সে৷ একা পেলে নির্ঘাত ভুলভাল কিছু করে বসবে৷ ইতিপূর্বের ঘটনা গুলো তো সে আর ভুলে যায়নি। মনে মনে একাধারে বিপদের দোয়া পড়তে শুরু করল নিধি৷ বিপদটা খুব দ্রুত কেটেও গেল যখন দোতলায় ওঠতেই সুহাসের চিন্তান্বিত মুখাবয়বের সম্মুখীন হলো।
আধঘন্টা যাবৎ সিমরানের পাশে বসেছিল সে আর নামী। বোনটা তার কান্না করতে করতে চোখ, মুখ লাল করে ফেলেছে। কোনোভাবেই কান্না বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ কী কারণে এভাবে কাঁদছে, কী নিয়ে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে, কোনোটারি উত্তর দেয়নি। শুধু বলছে বাড়ি চলে যাবে। সুহাস, নামী দু’জনই এত করে বোঝাল কাল বাবা, মা আসবে। আজ শুধু শুধু বাড়ি গিয়ে কী করবে? তাছাড়া বিয়ে বাড়ির হৈ-হুল্লোড় ফেলে হঠাৎ বাড়িই বা কেন যাবে? কত কী জিজ্ঞেস করল, কতভাবে বোঝাল। কিন্তু মেয়েটা এক জেদে অটুট। শেষে নামীকে দিয়ে স্মৃতি আপুকে ডেকে তুলল। ঘুম থেকে ওঠে স্মৃতি আপু সিমরানের অবস্থা দেখে স্তম্ভিত। তার মস্তিষ্ক পুরোটাই ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। শেষে বাধ্য হয়ে সুহাস সৌধকে খুঁজতে শুরু করে।
সুহাসের চিন্তান্বিত মুখ দেখে সৌধ, নিধি দু’জনই প্রশ্ন করে,
‘ তোর মুখ এমন কেন সুহাস এনিথিং রং? ‘
ত্বরিত কপালের ঘাম মুছে চিন্তান্বিত মুখেই সুহাস বলল,
‘ পুরোটাই রং। ‘
আঁতকে ওঠল নিধি। বলল,
‘ কী হয়েছে! ‘
সৌধর ভ্রূদ্বয় কুঁচকে গেছে। সুহাস অসহায় ভঙ্গিতে বলল,
‘ সিনু খুব কান্নাকাটি করছে। বাড়ি চলে যাবে বলছে। কী করব বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে কী হলো? ‘
এমন কথা শুনে সৌধর ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকাল। সিমরান চলে যেতে চাচ্ছে? এটা কী করে সম্ভব! ভেবেই প্রশ্ন করল,
‘ আপা কই? ওঠেছে? ‘
‘ স্মৃতি আপুও কিছু বুঝতে পারছে নারে। ‘
এদিকে সুহাসের কথা শুনে বিস্মিত হয়ে নিধি বলল,
‘ কিহ, সিমরান চলে যেতে চাচ্ছে? হাউ পসিবল ভাইই…! ‘
সুহাস নীরব৷ বোনকে নিয়ে সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেছে সে। আসলে আকস্মিক সিমরানের এত কান্না। চোখ ভর্তি এত পানি মেনে নিতে পারছে না সুহাস। তার মন বলছে, ‘ সিরিয়াস কোনো আঘাত পেয়েছে সিমরান। ‘ সিমরান তার আদরের বোন, কলিজার টুকরা। তার চোখে অশ্রুজল, কান্না কি সহ্য হয়?
সৌধ বলল,
‘ ঘাবড়াস না আমরা দেখছি, চল ও কোন রুমে? ‘
নিধিও বলল,
‘ টেনশন নিস না। আমি দেখছি বিষয়টা৷ চল ওর কাছে যাই ব্যাপারটা খতিয়ে দেখি। ‘
চোখের পানি মুছতে মুছতে ক্লান্ত হয়ে গেছে স্মৃতি আপু। তবু কান্না থামছে না সিমরানের। পৃথিবীর কঠিনতম ভার হচ্ছে কথার ভার৷ যা বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না৷ সিমরানের মতো অতিআদুরে, নরম মনের মেয়ের পক্ষে তো একেবারেই সম্ভব না। কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ রক্তিম হয়ে ওঠেছে মেয়েটার৷ নাকের ডগা পর্যন্ত লালচে হয়ে গেছে। বেচারি কী কঠিন দুঃখ পেয়েছে কেউ জানে না৷ শুধু জানে ওকে সামলাতে না পারলে উদয়িনী আন্টির ভয়ংকর প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হবে। বিছানার একপাশে নামী আরেক পাশে স্মৃতি আপু৷ মাঝখানে ক্রন্দনরত সিমরান। একটু পর পর স্মৃতি আপু টিস্যু দিচ্ছে নামী সেটা দিয়ে সিমরানের চোখের জল মুছছে৷ এমনই সময় সেখানে উপস্থিত হলো সুহাস, সৌধ আর নিধি৷ আচমকা সৌধর মুখোমুখি হয়ে সিমরানের কষ্টের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে ওঠল। দু-হাতে মুখ চেপে হুহু করে কেঁদে ওঠল সে। সৌধ বাদে উপস্থিত সবাই এহেন অবস্থা দেখে হতভম্ব, বাকরুদ্ধ শেষ পর্যন্ত ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ল। সুহাস অসহায় চিত্তে তাকাল সৌধর পানে৷ সৌধ ইশারায় শান্ত হতে বলল। ফিসফিস করে বলল,
‘ টেনশন ফ্রি থাক, আমি আছি, নিধি আছে। আমরা সবাই আছি পিচ্চিটাকে সামলে নিতে খুব কঠিন হবে না। শুধু জানতে হবে এই কান্নার সূত্রপাত কোথায়?‘