চোখের পলকেই অতিক্রান্ত হলো বিবাহিত ব্যাচেলর জীবনের কয়েকটা মাস। এই কয়েকমাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। নামী, সুহাসের সম্পর্ক মোড় নিয়েছে বন্ধুত্বে। প্রত্যহ কাজের পাশাপাশি নিয়ম করে তিনবেলা খুনশুটিও চলে তাদের। ওদের এই বন্ধুত্ব, খুনশুটির আড়ালে রয়েছে প্রগাঢ় ভালোবাসা। যা ওরা টের না পেলেও টের পায় আশপাশে থাকা প্রত্যেকে। সুহাস, নামী কেউই মুখে স্বীকার করেনি ওরা একজন অপরজনকে ভালোবাসে। অথচ অবলীলায় দু’জন স্বীকার করে তারা বন্ধু। তাদের ভেতরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তাদের সে কথায় বন্ধু মহল মুচকি হাসে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে গাঢ় বন্ধুত্ব থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। ওদের এই সম্পর্কটা বাকি বন্ধুদের কাছে বাচ্চা শিশুর মতোই অবুঝ। পৃথিবীতে কিছু মানুষ তো থাকেই যারা নিজের অনুভূতি সম্পর্কে নিজেই ভীষণ আনাড়ি হয়৷ এই দু’জনকে ঠিক ঐ মানুষদের তালিকাতেই রাখা যায়।
সোহান খন্দকার আর উদয়িনীর সম্পর্ক এখন শুধু কাগজে, কলমেই রয়েছে। নামী চলে যাওয়ার পর থেকে উদয়িনীর মুখোমুখি একবারই হয়েছিল সোহান খন্দকার। এরপর আর উদয়িনীর মুখোমুখি হয়নি। উদয়িনী ছুটিতে এলে সে চলে যায় ক্লিনিকে। ওখানে তার জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটায়ই সময় কাটায়। তবু স্ত্রীর সঙ্গে এক ঘরে থাকা তো দূরের কথা এক বাড়িতেও থাকে না৷ উদয়িনী চলে গেলে তখন বাড়িতে আসে। ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটায়৷ মায়ের শিক্ষায় বেঁকে যাওয়া দু’টো বাচ্চা যে এখন বাবার সান্নিধ্য পছন্দ করে বুঝতে পারে সে৷ তাই তো ভাগ্যের প্রতি শেষ ভরসা টুকু রেখেছে। নামীর সাথেও মাসে দু’বার দেখা করে। মেয়েটার কাছে সে অপরাধী। অথচ মেয়েটা তাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় রাখেনি। যতবারই দেখা করতে গেছে ততবারই শ্রদ্ধাভরে কয়েকঘন্টা সময় কাটিয়েছে। নিজ হাতে রান্না করে যত্ন নিয়ে খাইয়েছে। ঠিক নিলুর স্বভাবের হয়েছে নামী৷ মানুষের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা হয়েছে মায়ের মতোই দৃঢ়৷ ইদানীং সুহাসের আচরণ সোহান খন্দকারের মনে দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। সুহাস প্রতিষ্ঠিত হয়ে ঠিক নামীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবে। ঘরেও তুলবে৷ এটাও নিশ্চিত হয়েছে সুহাস নামীকে সম্মানের সাথে ঘরে আনতে চাইলে নামী তাকে ফিরিয়ে দেবে না৷ সে সুহাসের বন্ধু সৌধ, নিধির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে। ওদের দেয়া তথ্য মতে
এটুকু বুঝেছে তার ছেলে নামীর প্রতি ধীরেধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর নামী শুরু থেকেই দুর্বল তার আর সুহাসের সম্পর্কের প্রতি। ওদের দু’জনের এই দুর্বলতা যেদিন কঠিন ভালোবাসায় পরিণত হবে৷ সেদিন আর কারো সাধ্য থাকবে না ওদের আটকাতে। উদয়িনীর গড়ে তোলা দেয়াল যে ভাঙতে শুরু করেছে এ ব্যাপারে সে পুরোপুরি নিশ্চিত।
নামী, সুহাসের বন্ধুত্বের সম্পর্কটি স্বাভাবিকই চলছে৷ স্বাভাবিক আইয়াজ, ফারাহ এর সম্পর্কও। তারা একটি স্বাভাবিক প্রেমের সম্পর্কে রয়েছে। ফারাহর কোনো পরিবার নেই। সে বোনের পরিবারে আগাছার মতো জীবনযাপন করছে৷ মেয়েটা চাপা স্বভাবের হওয়াতে তেমন কিছুই শেয়ার করে না৷ কিন্তু বুদ্ধিমান আইয়াজ বুঝতে পারে অনেক কিছুই। তাই সে সবসময় ফারাহকে ভরসা দেয়। কোনো প্রকার দুঃশ্চিন্তা না করতে৷ মাত্র কয়েকটা বছর। ইন্টার্নির সময়ই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে তার আপু আর দুলাভাইয়ের কাছে। পারিবারিক ভাবে খুব ধুমধাম করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে তারা৷ আইয়াজের থেকে এই ভরসা পেয়ে ভারি বুকটা হালকা হয় ফারাহর। পরোক্ষণেই আবার সুক্ষ্ম আতঙ্ক জেঁকে বসে। এই আতঙ্কের পেছনে থাকা করুণ গল্পটা জানার পর আইয়াজ তাকে ভালোবাসবে তো? গ্রহণ করতে পারবে তো? সে যে কোনোকিছু গোপন রেখে আইয়াজের বউ হতে চায় না৷ পৃথিবীর সবার কাছে সেই নির্মম সত্যিটুকু গোপন রাখলেও আইয়াজের থেকে গোপন রাখার শক্তি ধীরেধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। তাদের ভালোবাসা যত গভীর হচ্ছে ভেতরের যন্ত্রণাটা ততই তীব্র হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতেই ফারাহ সিদ্ধান্ত নেয় আর এই সম্পর্ক এগোবে না৷ সে আইয়াজের যোগ্য না। আইয়াজ তার থেকে অনেক ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত অনড় থাকতে দেয় না আইয়াজ। দু’দিন কথা না বললেই কেমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যতক্ষণ না সে সবকিছু ঠিকঠাক করে, যতক্ষণ না স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবে, ততক্ষণ যেন পুরো দুনিয়াটাই অস্থির করে রাখে। এই পাগলটাকে কীভাবে ছাড়বে সে? কীভাবেই বা বলবে সেই ভয়ানক সত্যিটা? এসব নিয়েই প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তার মধ্যে জীবনযাপন করছে ফারাহ। সুযোগ পেলেই অদ্ভুত আচরণ করে। যেন আইয়াজ তাকে ভুল বুঝে দূরে চলে যায়। কিন্তু প্রতিবারই ছেলেটা তাকে ভালোবাসার বশীকরণ মন্ত্র দিয়ে বশে এনে ফেলে। এই ছেলেটার ভালোবাসার সম্মোহনী শক্তি এতটাই প্রখর যে চোখে চোখ রাখলেই পৃথিবী ভুলে গিয়ে শুধু ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
***
নিধির তরফ থেকে এখন পর্যন্তও সাড়া পায়নি সৌধ৷ রোজ রোজ এই নিয়ে অভিযোগ করতে করতে সৌধ বিরক্ত হয়ে ওঠেছিল। অভিযোগ শুনতে শুনতেও বিরক্তি এসে গিয়েছিল নিধির। তাই একদিন ক্লাস শেষে পুকুর ঘাটে গিয়ে দাঁড়ায় নিধি৷ সৌধকে একা আসার আহ্বান জানায় সে। কথানুযায়ী সৌধ একাই আসে। সেদিন নিধি ঠাণ্ডা মাথায় শান্ত সুরে সৌধকে বোঝায়,
‘ সৌধ, তোদের মতো আমার জীবন নয়৷ নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক স্ট্রাগল করতে হচ্ছে আমায়৷ জন্মদাতার বিরুদ্ধে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি। মা আর মামার সাহায্যে পড়াশোনা করছি। এই সময়টা আমি অন্যকিছুতে ব্যয় করতে পারব নারে। আজ যদি তোর সাথে সম্পর্ক গড়ি কাল আমার বিবেক আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে৷ আমি কি এসব করতে এসেছি? আজকাল অনেক মেয়ে আছে যারা পড়াশোনার জন্য পরিবার থেকে দূরে গিয়ে প্রেম, ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এসব মেয়েদের নিয়ে সমাজে খুব চর্চাও হয়। আমি নিজেও একসময় চর্চা করেছি৷ বাবা, মা যখন এসব ইস্যু দেখিয়ে আমাকে দূরে পড়তে পাঠাতে অমত করছিল। আমি জোর গলায় বলেছি, আমি অমন নই। আমি অমনটা কখনোই করব না৷ সেই আমি যদি আজ তোর সাথে সম্পর্কে জড়াই আর এসব যদি বাবা, মা বা মামা জানতে পারে পরিস্থিতি কতটা বিগড়ে ওঠবে জানিস না। তাছাড়া তোকে আরো একটা কথা বলা হয়নি, সেম এজ রিলেশনে আমি বা আমার পরিবারের কেউ ভরসা করে না। কারণ আমার বড়ো বোন ডিভোর্সি। নিজে পছন্দ করে ক্লাসমেটকে বিয়ে করেছিল আপু। দু’বছরের মাথায় বোঝাপড়ার অভাবে সে সম্পর্কটা আর টিকাতে পারেনি। তুই বুঝতে পারছিস আমার কথা? ‘
সৌধ সমস্ত কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল। এরপর অমায়িক ভঙ্গিতে হেসে বলেছিল,
‘ সব বুঝতে পারছি। ‘
নিধি ওর ভাবমূর্তি দেখে ব্যাকুল স্বরে বলল,
‘ আমি আমাদের বন্ধুত্বটুকু নষ্ট করতে চাই না সৌধ৷ চাই না তোর মতো বন্ধুকে হারাতে। ‘
নিধির সে কথা শুনে আচমকা ওর দুগালে আলতো করে দু-হাত রাখে সৌধ। চোখে চোখ রেখে দৃঢ় স্বরে বলে,
‘ আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে না। আমাকে তুই কখনোই হারাবি না নিধি। আজ আমি তোকে কথা দিচ্ছি, তোর বিবেক তোকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না৷ তোর পারিবারিক পরিস্থিতিও বিগড়াবে না। ঠিক এমন করেই তোকে আমার বউ করব৷ আর রইল সেম এজের বিষয়টা। এমন সময় তোকে বউ করব যে সময় এই ব্যাপারটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা থাকবে না। আজ আমি তুই মেডিকেল তৃতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট। আর মাত্র দু’টো বছর। এরপর আর এই পরিচয় থাকবে না। কার্ডিওলজিস্ট সৌধ চৌধুরী বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে যাবে গাইনোকলজিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস নিধির পরিবারে, ইনশাআল্লাহ। ‘
দৃঢ়চিত্তে বলা সৌধর সে কথা শুনে বিস্মিত হয় নিধি। রেগেমেগে বলে,
‘ তুই তোর জেদ অটল রাখবি? ‘
সৌধ স্মিত হেসে উত্তর দেয়,
‘ ভুল হলো ম্যাডাম, জেদ নয় ভালোবাসা অটল রাখব। ‘
‘ কিন্তু আমি তোর প্রতি ঐরকম ভালোবাসা ফিল করি না। ‘
অকপটে জবাব সৌধর,
‘ আপাতত ওসব ফিল করার প্রয়োজন নেই। মন দিয়ে পড়াশোনা কর, আর আমাকেও করতে দে। ‘
নিধির গাল টিপে কথাটা বলেই চোখ টিপল সৌধ। নিধি নাক ফুলাল এতে৷ তা দেখে পুনরায় বলল,
‘ যা বাসায় যা। ওরা দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য। ‘
নিধি উঁকি দিয়ে দেখল কয়েকহাত দূরে আম গাছের পেছনে দশবারো জন ছেলে দাঁড়িয়ে। আইয়াজ, সুহাস নেই ওখানে৷ আজিজ সহ আরো অনেক পরিচিত মুখ। নিধির ভালো লাগে না ওদের। কিন্তু সৌধর আশপাশে সব সময় এসব ছেলেপুলে থাকেই। যতই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকুক। সেফটি নিয়ে চলতেই হয় ওকে।
***
আজ মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে নামীর। পড়ার টেবিলে দু’হাতের কনুই ভর করে হাতের তালুতে থুতনি রেখে বসে আছে সে৷ প্রাচী তিন মগ কফি বানিয়ে একটা নামীকে দিয়ে বলল,
‘ মুড অফ নাকি বনু? এটা খাও মন, মাথা সবই ফ্রেশ হয়ে যাবে। ‘
মৃদু হেসে কফির মগ হাতে নিল নামী। বলল,
‘ থ্যাংকিউ সো মাচ আপু, খুব প্রয়োজন ছিল এটার৷ কিন্তু আলসেমির জন্য করা হচ্ছিল না। ‘
‘ মেয়ে, ফর্মালিটি রাখো। ক্যাম্পাসে সিনিয়র হলেও এখানে ওসব মেইনটেইন করার প্রয়োজন নেই। আলসেমি লাগছিল মুখে বলতেই পারতে, এই প্রাচী যা এক মগ কফি বানাই আন। ‘
নামী হেসে ফেলল। বলল,
‘ তাই বলে নাম ধরে তুই, তুকারি করতে বলো না। এটা আমাকে দিয়ে হবে না। ‘
বিছানায় বসে পড়ছিল নিধি। হঠাৎ ঘড়ির টাইম দেখে প্রাচীকে ধমক দিল,
‘ কিরে কফি দিবি না ওখানেই দাঁড়াই থাকবি। ‘
‘ আসতেছি, আসতেছি। ‘
প্রাচী ছুটে গেল। নামী দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা দু’টো ভাঁজ করে চেয়ারে তুলে বসল। এরপর কফিতে চুমুক দিতে দিতে মোবাইল হাতে নিল। সুহাসের নাম্বার ডায়াল লিস্টে দেখে ভাবল কল করবে কিনা। আবার কি যেন ভেবে আর কল করল না। ইয়ারফোন খুঁজে বের করে কানে গুঁজল। ইউটিউবে ঢুকে রবীন্দ্র সংগীত বের করে শুনতে লাগল একের পর এক।
প্রাচী, নিধি বিছানায় পাশাপাশি বসে। নামীকে খেয়াল করে মিটিমিটি হাসছে দুজন। চুপিচুপি নিজেদের মধ্যে ম্যাসেজিং করে কথাও বলছে তারা। প্রাচী বলল,
‘ আর দেড়ঘন্টা দোস্ত। ‘
প্রাচীর ম্যাসেজের রিপ্লাই করল নিধি,
‘ সিনু আর সৌধ প্র্যাক্টিকেলে সুহাসকে বোঝাচ্ছে। আমি বলেছি ভিডিয়ো ক্লিপ পাঠাতে। ‘
কথাটা বলতে বলতেই হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিয়ো পাঠাল আইয়াজ। যেখানে সৌধ সিমরানকে প্রপোজ করে সুহাসকে শেখাচ্ছে ঠিক কীভাবে নামীকে মনের কথা জানাবে৷ ধূসর রঙের টিশার্ট পরনে সৌধর। সিমরানের পরনে কালো রঙের টিশার্ট আর জিন্স প্যান্ট৷ গলায় একটি জর্জেট ওড়না ঝুলানো৷ ব্রাউন কালার থ্রি স্টেপ চুলগুলো ছেড়ে দেয়া। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সৌধর মুখোমুখি। সৌধ ধীরেধীরে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতেই সিমরান চিল্লিয়ে ওঠল।
‘ না না এভাবে না। এটা এখন ওল্ড স্টাইল তুমি দাঁড়াও, দাঁড়িয়ে বলো। ‘
সৌধ দাঁড়াল। একহাত পকেটে ঢুকিয়ে অন্যহাত মুঠো করে সিমরানের দিকে এগিয়ে কিছু বলতে উদ্যত হতো সে মুহুর্তে আবারো চ্যাঁচিয়ে ওঠল সিমরান,
‘ থামো থামো। আমাকে তোমার থেকে বেশিই শর্ট লাগছে। নামী আপু ব্রোর চেয়ে এত্ত শর্ট না৷ ওয়েট আমি হিল পড়ে আসছি। ‘
কথাটা বলেই সিমরান দৌড় দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। সৌধ চোখ কটমট করে তাকাল সুহাসের দিকে। আর ভিডিয়ো করতে থাকা আইয়াজের দিকে। বলল,
‘ এত আয়োজন করার কী আছে বুঝতে পারছি না। মেয়েদের এই এক সমস্যা সবকিছুতে বাড়াবাড়ি। ‘
সুহাস বলল,
‘ এই একদম সিনুর ওপর বিরক্ত হবি না। ও যে আমাদের হেল্প করতে রাজি হয়েছে এই তো অনেক। ‘
আইয়াজ বলল,
‘ অভিনয় নিখুঁত না হলে সুহাসের মতো আনাড়ি প্রেমিক শিখবে কীভাবে? সিনুর আয়োজন ঠিকই লাগছে আমার। মেয়েদের বুদ্ধি ছাড়া পুরুষ অচল আবারো প্রুফ হলো। ‘
সৌধ ঠোঁট কামড়াল। আইয়াজ যেদিন থেকে ফারাহর প্রেমে পড়েছে সেদিন থেকে মেয়েদের নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের প্রশংসা করে। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল সে। এখন এসব ভাবার সময় নয়। তাই বলল,
‘ আমি বা সিনু কেউই প্রেমটেম করিনি। তবু আমরা এই শা’লাকে প্রেম শেখাচ্ছি। তোর তো বুড়িগঙ্গা নদীতে ঝাঁপিয়ে মরা উচিতরে। ‘
শেষ কথাটা সুহাসকে ভর্ৎসনা করে বলল সৌধ। সুহাস চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘ কথায় কথায় শা’লা বলবি না। তোর নিধি আমার বোন না যে আমি তোর শা’লা হবো। আর আমার বোনকে তোর মতো অশ্লীলের কাছে দিবও না। ‘
সৌধ তেড়ে এলো সুহাসের দিকে। বলল,
‘ এই শা’লা আমি অশ্লীল? তাহলে তুই কি তুই তো ইমরান হাসমির সিকোয়েন্স! ‘
দু’জনের মা’রামারি লাগল প্রায় মুহুর্তে হিল পড়ে ত্বরিত সামনে এসে দাঁড়াল সিমরান। দুই বন্ধু মুখে শরীর, মুখ উভয়তেই লাগাম টানল। সৌধ আর সময় নষ্ট না করে প্রপোজ করে দেখাল সিমরানকে,
‘ ইহজনম এবং পরজনম দু’জনমের জন্যই আমার হৃদয়কে মুঠো ভর্তি করে তোমার তরে সমর্পণ করলাম। ‘
সিমরান বিগলিত চিত্তে সৌধর মুঠো ভরা হাত শক্ত করে চেপে ধরে বারকয়েক ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়ল। এরপর নিজের হাত মুঠো করে বুকের বা’পাশে চেপে ধরে বলল,
‘ গ্রহণ করলাম। ‘
পাশ থেকে আইয়াজ চ্যাঁচিয়ে ওঠল,
‘ ফাটাফাটি। ‘
ভিডিয়োর শেষ হতেই নিধি, প্রাচী দু’জনই চিল্লিয়ে ওঠল,
‘ দারুণ অভিনয়। ‘
***
ঠিক বারোটা সময় নামীর ফোনে একটি ম্যাসেজ এলো,
‘ হ্যাপি ফার্স্ট মিটিং নামীদামি। ‘
বই থেকে মুখ তুলে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই বুকের ভেতর ধড়াস করে ওঠল নামীর। এরপর আরো একটি ম্যাসেজ এসে হৃদয় নাড়িয়ে তুলল তার।
‘মিসেস সুহাসিনী… হ্যাপি ফার্স্ট ওয়েডিং এনিভার্সারি। ‘
দ্বিতীয় ম্যাসেজটা দেখে থরথর করে কেঁপে ওঠল সে। অতিরিক্ত কম্পনের ফলে দু’হাতে ফোন ধরে রাখতেও হিমশিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় এলো
তৃতীয় ম্যাসেজটি। যেটা দেখে দু’চোখ উপচে জল গড়াতে গড়াতে আকস্মিক হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল নামী।
‘ টু ডে ইজ দ্য ডে টু কিস ইয়র ফরহ্যাড মাই বেগাম‘