বিতৃষ্ণায় ভরে উঠেছে পরীর কোমল মন। বিষাক্ত ধোঁয়া যেন সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে যার দরুন শ্বাস নিতে ভিশন কষ্ট হচ্ছে পরীর। আর কতভাবে সে আজ ভাঙবে?? শায়ের ও শেষমেশ এর সাথে যুক্ত ছিলো! বিশ্বাস করতে চাইছে না পরীর মন। যাকে এতোটা ভালোবাসলো এবং যার থেকে এতো ভালোবাসা পেলো সে’ই কিনা পরীকে খুন করার জন্য বিয়ে করলো!!পরক্ষণে পরীর মনে হলো শায়ের ওকে সত্যি ভালোবেসেছে তো? নাকি ওটাও ওর অভিনয় মাত্র? শায়েরের কথা ভেবে কেঁদে উঠল পরী। নিজেকে আর দমন করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। একসময় সে সাহসি ছিলো। কিন্ত ওই পুরুষ টার জন্য যে একজন নরম এবং ভালোবাসাময় নারীতে পূর্ণ হয়েছিল। সে ভালোবাসার কাছে যে পরী আজ প্রতারিত। এতো ষড়যন্ত্রের মধ্যে শায়েরের নামটা থাকা কি খুব জরুরী ছিল? এই নামটা বাদ দিলে খুব কি ক্ষতি হতো? কোন যুদ্ধ তো হতো না! পৃথিবী ধ্বংসও হতো না। সবশেষে কেন এই নামটা নিলো নওশাদ?? সব ভাবনার মাঝে চোখের পানি ফেলছে পরী। মনে হচ্ছে ওরা মারার আগেই পরী দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে। এমন আপনজন থাকার থেকে মরে যাওয়াই উত্তম।
পরীকে এবারে কাঁদতে দেখে নওশাদ আর কবির কোন কথা বলে না। চুপ থেকে পরীকে একটু সময় দিলো। পরী কান্না শেষ করে বলল,’আর কি কি বাকি আছে? সব জানতে চাই আমি।’
নওশাদ আফসোসের সুরে বলে,’তোমাকে এভাবে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে পরী। কতো ভালোবাসলে তুমি শায়ের কে। কিন্ত সে তোমাকে ধোঁকা দিয়ে মোটেও ভালো করেনি।’
-‘আমি সব জানতে চাই??তারপর কি হয়েছিল?’
-‘সবকিছুতে সম্পানের হাতটা বেশি ছিলো। সে বিন্দুর সাথে ভালোবাসার নাটক করে তোমার সব খবর আমাদের কাছে দিতো। তোমাকে সর্বপ্রথম হত্যা করার দায়িত্ব পড়ে শায়েরের উপর। সম্পান আর বিন্দুর সাথে রাত্রি বেলা তুমি নদীতে ঘুরতে যেতে সেটাও সম্পান শায়ের কে বলেছিল। তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তোমাকে মারতে শায়ের সেদিন গেলো। কথা ছিল সেদিন বিন্দু আর তোমাকে খুন করে নদীতে ভাসানোর। কিন্ত শায়ের পারলো না তোমাকে মারতে। সে পরিষ্কার বলে দিলো তার পক্ষে তোমাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। কারণটা সেদিন শায়ের বলেনি। তবুও তোমার বাবা শায়ের কে কড়া হুকুম দেন তাতেও লাভ হলো না। শেষে ঠিক হলো আমার সাথে বিয়ে হবে তোমার। আর তারপর আমিই তোমাকে হত্যা করবো। এছাড়া তোমাকে হাতে পাওয়ার কোন উপায় ছিলো না। সেটাও ভেস্তে দিলো শায়ের। কেন জানি আমার মনে হয়েছিল শায়ের তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আমার সন্দেহ টাই ঠিক হলো। আমি কলপাড়ে এমনি এমনি পড়িনি শায়ের পরিকল্পনা করেই সাবান মেখে রেখেছিল আর আমি পা পিছলে পড়ে যাই। পরে সব জানাজানি হলে আমার আর শায়েরের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় অনেক। তোমার বাবা নিশ্চুপ থাকলেও তোমার কাকা শায়ের কে অনেক বকাবকি করেন। যেদিন তোমরা কবির ভাইয়ের বাড়িতে গেলে ওইদিন সব কিছুই পরিকল্পনার মতো হয়েছে। আমাদের মাঝে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঝগড়া হয়। এবং সেদিন তোমাদের গাড়ির সামনে আমাদের লোকই যায়। ওইদিন কথা ছিল শায়ের ওদের হাতে তোমাকে তুলে দিবে। কিন্ত নাহ শায়ের আবারও পাল্টি খেলো। তোমাকে বাঁচিয়ে নিলো। ইচ্ছে করছিল শায়ের কে তখনই শেষ করে দেই কিন্ত পারলাম কই?
এর মধ্যেই আরেক ঝামেলা ঘাড়ে এলো। শহরের ডাক্তার তিনজন এসে হাজির হলো। তখন তোমরা ঠিক করেছিলে পশ্চিমের জঙ্গলে বিন্দু আর সম্পানের বিয়ে দেবে। সব ঠিক করা ছিলো সেদিন। সেবার আর শায়ের কে পাঠানো হলো না। শহরের ডাক্তারদের দিয়ে যাত্রা দেখতে পাঠানো হলো। কিন্ত এখানেও গন্ডগোল হয়ে গেল। বিন্দু যখন তোমাদের অপেক্ষা করছিল আমরাও দূর থেকে ওত পেতে ছিলাম। কিন্ত আমাদের ছেলেদের তখন বাসনা হলো বিন্দুর প্রতি। কি আর করার? সবার ইচ্ছা পূরণ করতেই হলো। তবে সম্পান তখন ছিলো না। ও যখন এলো বিন্দু তখন মরণ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলো। বিন্দুর ওই অবস্থা দেখে সেদিন সম্পানের ভয়ংকর রূপ দেখেছিলাম। তখনই আমাদের দলের দুজনকে ছুরির আঘাতে শেষ করে দিয়েছিলো। পরে বুঝতে পারলাম সম্পান মিথ্যা না সত্যি সত্যি বিন্দুকে ভালোবাসতো। অভিনয় করতে গিয়ে বিন্দুকে সে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছিলো। এজন্য সম্পান বারবার বলেছিল বিন্দুর যাতে ক্ষতি না হয়। ওরা যেন শুধু তোমাকেই হত্যা করে। তবে বিন্দু রাতের আঁধারে থাকা মানুষ গুলোর কথা জানতেও পারলো না। সম্পান বিন্দুকে নিজ হাতে খুন করে। যাতে পরবর্তীতে বিন্দুর নিজের প্রতি ঘৃণা না হয়। বিন্দু যাতে জানতে না পারে সম্পানও এসবের মধ্যে ছিলো।
তারপর খড়ের গাদায় কেরোসিন ঢালা হলো। হিন্দু রীতিমত পোড়ানো হবে। এর মাঝে তুমি চলে এলে। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম জঙ্গলের সামনে থেকে। কিন্ত তুমি এলে পেছনের দিক দিয়ে। এবং পালিয়েও গেলে। আমাদের সব পরিকল্পনা আবারও বিফলে গেলো। পরে খবর পেয়ে শায়ের ছুটে এলো। এবং বিন্দুকে যারা ধ*র্ষ*ণ করলো তাদের সবাইকে মেরে দিলো তোমাদের ওই বাগান বাড়িতে নিয়ে। শায়ের বেশি বাড়াবাড়ি করেছিল সেদিন। তাই তোমার বাবা শায়ের কে অনেক কথা শোনায়। এর মধ্যে আরেকটা ভুল হয়ে গেল। শায়েরের পিছু নিয়ে শেখর সব সত্য জেনে গেল। পরের দিন তোমাকে দেখে সে তোমার প্রেমে পড়ে গেল। এবং তোমার বাবাকে এক প্রকার হুমকি দিলো যাতে তোমার সাথে শেখরের বিয়ে দেয়। এটা তোমার বাবা মেনে নিতে চায়নি। তখন গ্রামে এমনিতেই বিন্দু খুন হয়েছে। পুলিশ এসেছে তাই শেখর কে যেতে দেওয়া হলো। সময় নেওয়া হলো বিয়ের জন্য। বিয়ের দিন ওদের গাড়ি দূর্ঘটনা আমরাই করেছি। এবং ফাঁসিয়ে দিয়েছি নাঈম কে। বেচারা নির্দোষ কিন্ত তবুও জেল খাটছে।
শেখর যেদিন জমিদার বাড়িতে এলো তারপর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেনি। জানতাম শহরে ফিরে শেখর সব পুলিশ কে বলে দেবে। তাই ওর কিচ্ছা খতম করে দিলাম। তবে এরপর বিশ্বাসঘাতকতা করে সম্পান। সে পুলিশ কে সব বলতেই যাচ্ছিল কিন্ত তা পারেনি। বিন্দুকে যে ডালে ঝুলিয়ে ছিলাম ঠিক সেই ডালেই সম্পান কে মেরে ঝুলিয়ে দেই। সবাই ভাবলো সম্পান আত্মহত্যা করেছে। ব্যাস এভাবেই একটা ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটলো।
কিন্ত পালক!! ওই মেয়েটা নির্দোষ ছিলো। কি দোষ ছিল ওর? একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছিল শায়েরের কাছ থেকে কিন্ত শায়ের তাকে মৃত্যু উপহার দিলো। কানাইকে মারার পরিকল্পনার করছিল সেদিন শায়ের। কেননা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে কানাই ওত পেতে ছিল সময় মতো তোমাকে সব সত্য বলে দেবে। তাই সত্য গোপন করতে কানাইকে মারার কথা চলছিল। ওইদিন পালক সব শুনে ফেলে। তবে সেও শেখরের মতো ফায়দা ওঠালো। শায়ের কে বলল ও যদি পালককে বিয়ে করে তাহলে কাউকে এই সত্যি বলবে না। শায়েরের আবার মাথা গরম ছিল খুব।
তোমাকে খুন করতে না পারায় সেদিন অনেক কথা শুনতে হয়েছিল ওকে। তাই মাথা গরম করে শায়ের নিজ হাতে পালক কে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলে। কিন্ত সমস্যা হলো যখন জানতে পারলাম পালক সাঁতার জানতো।
তাই আমরা আগেই পালকের বাবা মায়ের কাছে যাই এবং তাদের হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করি। কিন্ত কতদিন আর ওদের চুপ করানো যায়? তাই তাদের কেও মরতে হলো। আমি তখন সচল ছিলাম তাই খুন গুলো আমিই করি। জানোতো পরী,শায়েরের থেকে খুন করার নেশা আমার অনেক বেশি। রক্ত দেখার মজাই আলাদা।
শায়েরের সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার কোন কথাই ছিল না। কিন্ত শায়ের নিজেই বিয়ের দিন বলে সে তোমাকে বিয়ে করবে এবং ওর গ্রামে নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে। আমি বিশ্বাস করিনি ওর কথা। তোমার বাবাকে বারণ করেছিলাম কিন্ত তিনি শুনলেন না। বিয়ে দিয়ে ওই রাতেই তোমাদের পাঠিয়ে দিলো নবীনগর। এরপর দিনের পর দিন যায় কিন্ত শায়ের তোমাকে মারে না। অনেক চিঠি যায় শায়েরের কাছে সে উত্তর দিতো না। শেষ চিঠি পেয়ে শায়ের এখানে আসে এবং বলে দেয় সে তোমার সাথে থাকতে চায়। আমাদের সাথে সে আর কাজ করবে না।
আমাদের ধোকা দিয়ে শায়ের তোমাকে নিয়ে সুখে থাকবে এ’তো মানা যায় না। তাই জুম্মান কে দিয়ে মিথ্যা বলে তোমাকে এখানে আনলাম। এবং আজ তোমাকে মরতে হবে পরী। শায়ের কে শাস্তি দিতে হলে তোমাকে মরতে হবে। আমি জানি শায়ের নিজ থেকে তোমাকে আমাদের হাতে তুলে দেবে না। তাই ছলচাতুরির আশ্রয় নিতেই হলো।’
পরী চোখ বন্ধ রেখেই সব শুনছিলো এতক্ষণ। এখনও চোখ খুলছে না সে। মনে হচ্ছে চোখ খুললেই শায়ের কে দেখতে পাবে এবং শায়ের এসেই ওর গলায় ছুরি চালিয়ে দেবে। পরী সেই মৃত্যুটা নিতে পারবে না। বিন্দুকে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। না জানি ওই রাতটা ওর কিভাবে কেটেছে? নিজের প্রিয় মানুষটার খারাপ রূপ টা দেখে মরতে পারেনি বিন্দু। কিন্ত পরী তো শায়েরের আসল রূপ টা জেনে গেছে। মরতে ওর ভিশন কষ্ট হবে। পরী চোখ খুলে নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমার হাতের বাঁধন খুলবেন না। আমাকে মারার সময় ভুলেও আমার হাত খুলবেন না। তাহলে আমার মৃত্যুর সাথে সাথে আর কার মৃত্যু হবে তা বলা মুশকিল।’
-‘বাহ তোমার তেজ দেখছি বেড়ে গেছে। তোমাকে তো ছাড়া যাবেই না। নওশাদ চল এখন। পরীকে পরওপারে পাঠানোর সময় এগিয়ে আসছে।’
নওশাদ লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। খোড়াতে খোড়াতে সে চলে গেল। কবির ও চলে গেল। আর কিছু জানানোর নেই পরীকে। এখন এখানে না থাকাই ভাল। পরীকে একা ছেড়ে দিলো ওরা।
আফতাব আর আখির বাগান বাড়িতে এসে পৌঁছালো মাত্র। ওদের জন্যই সবাই অপেক্ষা করছিল। আফতাবের হুকুম না পাওয়া পর্যন্ত পরীর গায়ে ফুলের টোকাও কেউ দিতে পারবে না। বাহিরে কড়া পাহারা,বাগান বাড়িটার চারপাশে জঙ্গলে আবৃত। আশেপাশে কোন ঘরবাড়ির নিশানা ও নেই। তাছাড়া মোঘল আমলের এই বাড়ির ভেতরের কোন শব্দ শোনা কারো পক্ষে সম্ভব না। আফতাব আসতেই কবির এগিয়ে গেলো বলল,’যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। পরীকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। ওই মেয়েটা চতুর বেশি। কি জানি কখন আমাদের উপর আক্রমণ করে বসে।’
-‘ডাক্তার আসতে একটু সময় লাগবে। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
নওশাদ গর্জে উঠে বলে,’হোক দেরি, আগে পরীকে শেষ করে দেই তারপর ডাক্তার আসুক সমস্যা নেই।’
-‘বেশি বোঝো না তুমি? আগে ডাক্তার আসুক। পরে সমস্যা হলে তুমি সামলাবে?’
-‘আপনি এখনও আমার কথা শুনছেন না। আমার কথা শুনলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। পরীকে আরো আগেই শেষ করে দিতাম।’
-‘এই খোড়া পা নিয়ে কি করবে তুমি? চুপচাপ বসে থাকো।’
অপমানিত হয়ে নওশাদ চুপ করে গেলো। আফতাব প্রায়ই এই কথা বলে অপমানিত করে ওকে। কিন্ত এজন্য তো নওশাদের কোন দোষ নেই। শায়েরের জন্য সব হয়েছে তাই ওর ক্ষোভ এখনও রয়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করলে ক্ষতি হবে তাই আফতাব সব সময়ই সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
সবার কথার মাঝে একজন রক্ষী এসে খবর দিলো শায়ের এসেছে। মুহূর্তেই সবার চোখে মুখে আতঙ্ক দেখা দিলো। এতো তাড়াতাড়ি তো শায়েরের আসার কথা না!! সে ব্যবস্থা আফতাব করেই রেখেছে। তাহলে শায়ের এখানে পৌঁছালো কিভাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। নওশাদ রেগে আগুন। সে বলল,’এজন্যই বলেছিলাম সব তাড়াতাড়ি করতে। সব কিছু বিফলে গেলো।’
কবির ছুট লাগালো পরীর কাছে। দড়িটা নিয়ে ফাস লাগালো পরীর গলাতে। হঠাৎ কবিরের এহেম কান্ডে অবাক হলো না পরী। মৃত্যুর জন্য সেও প্রস্তুত ছিলো। কিন্ত কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই শায়ের সেখানে প্রবেশ করে। এবং কবিরকে এলোপাতাড়ি ঘুসি মারতে থাকে। কয়েক মুহূর্তে কি হয়ে গেল পরী বুঝে উঠতে পারলো না। গলায় ফাঁস লাগার আগেই শায়ের তাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। শায়ের টেবিল থেকে একটা ছুরি এনে চেপে ধরে কবিরের গলায়। চোখ তুলে শায়েরের চোখে চোখ রাখে কবির। যেন অগ্নেগীরির লাভা ওই চোখে। কবির বুঝলো এই মুহূর্তে যদি শায়ের ওকে শেষ করেও দেয় কেউ ওকে কিছু বলতে পারবে না। শায়েরের ভয়ংকর রূপ কবির দেখেছে কিন্ত এতোটা ভয়ানক হতে সে দেখেনি। শায়ের রুষ্ঠচিত্ত কন্ঠে বলল,’সাহস অনেক দেখিয়েছিস তুই। তোকে মারলে কেউ আমার গায়ে সূচ ও ছোঁয়াতে পারবে না এটা জেনেও আমার পরীজানের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস তোর হলো কীভাবে??’
ধারালো ছুরির সামান্য ছোঁয়াতেই কবিরের গলার চামড়া কেটে রক্ত ঝরতে লাগলো। সবাই ততক্ষণে চলে এসেছে। আফতাব হুংকার ছাড়লো বলল, ‘শায়ের!!! কবিরকে ছাড়ো!!’
হাত থেকে ছুরি ফেলে দিলো শায়ের। আফতাবের দিকে না তাকিয়ে সে এগোলো পরীর দিকে। হাত এবং পায়ের বাঁধন খুলতে খুলতে বলতে লাগল, ‘আমার সাথে গলাবাজি করবেন না। আপনার মতো শত জমিদারের মস্তিষ্ক এই সেহরান হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘোরে। আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টাও করবেন না। যদি আমার পরীজানের কিছু হয়ে যেতো তাহলে আপনারা ভয়ংকর কিছুর সম্মুখীন হতেন। তাই মুখটা বন্ধ রাখুন।’
আফতাব চোখ বুজে শায়েরের কথাগুলো হজম করে নিলো। শায়েরের কথা আফতাব কে মানতেই হবে। কেননা আফতাবের দূর্বল স্থানগুলো শায়েরের জানা। নাহলে শায়ের কে সে কবেই মেরে দিতো।
পরীর বাঁধন খুলে হাত ধরে পরীকে দাঁড় করালো শায়ের। পরী শায়েরের থেকে হাত সরিয়ে পিছিয়ে গেল। লম্বা টেবিলের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়াল পরী। শায়ের সাথে সাথেই পরীর কাছে গিয়ে বলল,’আপনি ঠিক আছেন পরীজান? চিন্তার কারণ নেই আমি এসে গেছি। চলুন আমরা ফিরে যাই।’
পরী মৃদু ধাক্কা দিয়ে শায়ের কে দূরে ঠেলে সরিয়ে দিলো। বলল,’ছোঁবেন না আমাকে আপনি। যে হাতে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন সেই হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না আমাকে।’
শায়ের নওশাদের দিকে তাকালো। সাথে নওশাদের চোখের ভাষাও বুঝে গেল। নওশাদ পরীকে সব সত্য জানিয়ে দিয়েছে। তাই শায়ের শান্ত স্বরেই বলল,’যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলবেন। আপাতত এখান থেকে চলুন।’
এবার পরী প্রতিক্রিয়া করে না। চুপচাপ পা বাড়ায় শায়েরের সাথে। কবির বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। গলায় হাত দিয়ে রক্ত দেখে সে রেগে গেল ভিশন। কিন্ত এই রাগটা যেন চিরকালের জন্য থেমে গেল। কারণ আচমকাই কবিরের গলার ভেতরে ছুরি গেঁথে দিয়েছে পরী। শ্বাস টেনে নিতেও পারলো না কবির। মেঝেতে ধপাস করে পড়ে গেলো। গলা দিয়ে বয়ে গেলো রক্তস্রোত।