শাড়ির আঁচল টেনে ঘাম মুছলো পরী। গলার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পাশে ফিরে তাকালো পরী। হারিকেন এখনও জ্বলে বিধায় শায়েরের ঘুমন্ত চেহারার স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। তার মানে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল? কি ভয়ানক স্বপ্ন? পরী দ্রুত কম্বল ফেলে নেমে পড়ল। জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। এরপর কি আর ঘুমাতে পারবে সে??একবার ভাবলো জানালা খুলে বেলি ফুলের ঘ্রাণ নিবে। কিন্ত ফুপুর কথা মনে পড়তেই আর জানালা খোলা হলো না। এখন ওর পালঙ্কের দিকে এগোতেই ভয় লাগছে।
পরী তৎক্ষণাৎ নিজেকে সুধালো,পরী তুই তো সাহসি। রুপালির বাড়ি থেকেই আসার সময় তো কতগুলোকে একসঙ্গে পিটিয়েছে। এই সামান্য বিষয়ে ভয়ের কি আছে? কিন্ত স্বপ্ন টা ভাবাচ্ছে পরীকে।
-‘আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন?’
সম্বিৎ ফিরে এলো পরীর। তাকিয়ে দেখলো শায়ের জেগে গেছে। উঠে বসে পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। পরী কম্পিত কন্ঠে বলে,’পানি খেতে এসেছিলাম।’
কথাটা বলে পরী ধীর পায়ে এসে পালঙ্কে বসে। শায়ের বলে,’আপনি মনে হয় কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন তাই না?’
-‘হুম খুবই খারাপ স্বপ্ন।’
-‘আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।’
-‘নাহ।’ আতকে ওঠে পরী।
-‘কেন?’
-‘না মানে যদি স্বপ্ন টা আবার দেখি?’
হাসলো শায়ের,পরী কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
-‘তাহলে কি সারারাত জেগে থাকবেন নাকি?সকালে কিন্ত তাড়াতাড়ি উঠতে পারবেন না। কালকে আপনাকে নিয়ে আপনার বাড়িতে যাবো।’
মনটা ভালো হয়ে গেল পরীর। খুশিতে মনটা নেচে উঠলো। সে হেসে জিজ্ঞেস করে,’সত্যি!!’
-‘হ্যা সত্যি। এবার তো ঘুমান?’
পরী শুয়ে পড়ল। কিন্ত ঘুম আসছে না। পরীকে এপাশ ওপাশ করেতে দেখে শায়ের বুঝলো পরী ঘুমায়নি। বাড়িতে যাওয়ার খুশিতে নাকি স্বপ্নের ভয়ে? শায়ের বলল,’ছোটবেলায় আমি যখন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতাম তখন মায়ের হাত ধরে ঘুমাতাম। আর কোন খারাপ স্বপ্ন দেখতাম না।’
-‘আমিও কি তাই করব এখন?’
-‘করতে পারেন।’
-‘তাহলে আপনার হাত দিন?’
-‘হুম দেওয়া যায় আশেপাশে হারিকেন নেই এখন।’
অতীত মনে পড়তেই হেসে উঠল পরী। ইশ খুব বাজে ভাবে পুড়িয়ে দিয়েছিল হাতটা। আর এখন সেই হাতটাই সারা জীবনের জন্য ধরতে হচ্ছে। পরী আলতো করে শায়েরের হাতটা ধরে তারপর চোখ বন্ধ করে নেয়। শায়ের আনমনে বলে উঠল,’আপনার হাসি সুন্দর।’
চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই পরী বলে,’শুধুই সুন্দর?’
-‘ভিশন সুন্দর আপনার হাসি। আপনার থেকেও আপনার হাসি বেশি সুন্দর।’
পরী এবার জবাব দিল না। সে চুপচাপ শুয়ে রইল। শায়ের একটু চুপ থেকে আবার বলল,’বাড়াবাড়ি রকমের সৌন্দর্যের চোখ ঝলসানো মায়া থাকে। ঝলসে যাবে চোখ,হৃদয় পুড়বে তাও সে মাধুর্য থেকে চোখ ফেরানো যাবে না। যে আগুন সব জ্বালিয়ে দেয় সে আগুন কে ক’জন ভালোবাসতে পারে বলুন?’
পরী এবার শায়েরের হাত ছেড়ে অন্যদিক ফিরে শুয়ে রইল। সে বুঝতে পারছে পাশে থাকা মানুষটির মনের কথা। প্রথম দেখাতেই যে সে পরীতে বেঁধে গেছে। সে পরীর সান্নিধ্য চায় এটাও পরী বুঝেছে। পরীর অনুমতি ব্যতীত শায়ের তাকে স্পর্শ করবে না এটাও ওর জানা। তবুও কিসের এতো দ্বন্দ্ব? কেন পরী শায়েরকে কিছু বলতে পারে না? শায়েরের প্রতি ওর যেন অদৃশ্য টান উপস্থাপনা করেছেন সৃষ্টিকর্তা। সেজন্য পরীর নিজেরও ইচ্ছা করে দুদণ্ড শায়েরের সাথে বসে কথা বলতে। কিন্ত কোন এক আড়ষ্ঠতা জেঁকে ধরে ওকে।
পাখি ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে পরীর। গায়ের কম্বল ফেলে উঠে বসে সে। শায়ের এখনও ঘুমাচ্ছে। পরী পাশ ফিরে তাকালো। এবং কিছুক্ষণ ধরে সে তাকিয়েই রইল। প্রশ্ন জাগছে ওর মনে। এতক্ষণ ধরে দেখছে কেন সে মানুষ টাকে? মনে ধরেছে নাকি? পরী কোথায় যেন শুনেছে ভালোবাসলে সে যেমনই হোক না কেন তাকে দেখতে অসম্ভব ভাল লাগে। চোখ জুড়িয়ে দেখার আনন্দ অনেক। সেরকমই ভালো লাগছে পরীর। উঠতে গিয়ে পরী খেয়াল করে ওর আঁচল শায়েরের পিঠের নিচ পর্যন্ত। আস্তে করে পরী টান দিলো আঁচলটা কিন্ত পারে না। আরেকটু জোরে টান দিতেই শায়ের চোখ মেলে তাকালো। ঘুম জড়ানো গলায় বলল,’কোন সমস্যা?’
পরক্ষণে সে নিজেই বুঝে গেল। পরীকে সাহায্য করলো সে। পরী উঠে চলে গেল। বাইরে এখন সে যেতে পারবে। তাই পরী কলপাড়ে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিলো। আসার পথে খুসিনা ফুপু এসে হাজির। তিনি বললেন,’নতুন বউ তুমি উইঠা পড়ছো। যাও গোসল কইরা একখান ভালা কাপড় পইড়া আহো দেহি। আমার রান্ধায় সাহায্য করো।’
মাথা নাড়লো পরী। ঘরে গিয়ে একটা কমলা রঙের শাড়ি নিয়ে কলপাড়ে গিয়ে গোসল করে নিলো। তারপর রান্নাঘরে খুসিনার কাছে গেলো। খুসিনা রুটি বানাচ্ছে পরী একটা পিঁড়িতে বসলো। খুসিনা বটি দিয়ে পেঁয়াজ মরিচ কাটতে দিলো পরীকে।
এটা সে পারে। তাই সে পেঁয়াজ কাটছে। এমন সময় চামেলি এলো সেখানে বলল,’নতুন ভাবি কি করো?’
পরী তাকালো চামেলির দিকে। মুচকি হেসে বলে, ‘কাজ করি। তুমি আমাদের সাথে নাস্তা করে যেও?’
-‘আইচ্ছা।’ হাসলো চামেলি। খুসিনা পরীকে জিজ্ঞেস করে,’কি কি রান্ধা পারো নতুন বউ?’
-‘আমি কিছুই রান্না করতে পারি না ফুপু।’
খুসিনা যেন আকাশ থেকে পড়লো। বলল,’কও কি? এতো বড় মাইয়া রান্ধা পারো না?’
-‘আম্মা আমাকে রান্না ঘরে যেতে দেয় না। কাজের লোক আর আম্মাই সব করে।’
চামেলি অবাক হয়ে বলে,’তোমাগো বাড়িতে কামের মানুষ আছে নতুন ভাবি? তোমার বাপের অনেক টাকা বুঝি?’
পরী আবারো হাসলো। তারপর বলল,’আমার আব্বা চার গ্রামের জমিদার। আমি জমিদার কন্যা।’
রুটি ছ্যাকা বন্ধ করে দিলো খুসিনা। শায়ের জমিদারের মেয়ে বিয়ে করে এনেছে শুনে বেশ অবাক তিনি। হেরোনাকে কতবার বলেছে যেন চম্পার সাথে শায়েরের বিয়ে দেয়। হেরোনা অনেক কথা শুনিয়েছিল তাকে। এখন খুসিনাও কথা শোনাবে। ভেবেই তিনি মনে মনে খুশি হলেন বললেন, ‘রান্ধা শিখবা আমার থাইকা। এহন বিয়া হইছে আর ক’দিন পর পোলাপান হইবো। নিজের সংসার নিজেরেই তো দেখতে হইব।’
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো পরী। এখনই বাচ্চার কথা বলছে এই মহিলা। না জানি পরে আর কি কি বলবে কে জানে?
ঘরে পাটি বিছিয়ে খেতে বসেছে শায়ের আর চামেলি। পরী খাবার বেড়ে দিচ্ছে। খুসিনার কথাতেই সে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। এই প্রথম সে এ খাবার বাড়ছে একজন স্ত্রী হিসেবে। চামেলি আর শায়ের খেতে বসেছে। সে পরীকে বলে,’আপনি খাবেন না?’
-‘আমি পরে খাবো ফুপুর সাথে। আপনারা খেয়ে নিন।’
শায়ের খাচ্ছে। চামেলি বলল,’ভাই তোমরা আইজ নতুন ভাবিগো বাড়িতে যাবা?’
শায়ের খেতে খেতে জবাব দিল,’হুম কিন্ত তোকে নিতে পারবো না।’
মুখটা কালো করে ফেলে চামেলি। সে তো যাবে বলেই কথাটা বলল। কিন্ত শায়ের আগেই বুঝে গেছে। পরী বলে,’যাক না ও আমাদের সাথে।’
-‘ও গেলে আপনাকে কথায় কথায় লজ্জিত হতে হবে। আগে ভাল করে কথা শিখুক তার পর নাহয় নিবো।’
চামেলি কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,’কে কইছে আমি কথা পারি না। এই তো কথা বলতাছি। আমি খালি সুন্দর করে কথা কইতে পারি না। তাতে কি হইছে। আমারে কি নেওয়া যায় না? সবাই কি সব পারে?নতুন ভাবিও তো রান্ধা পারে না তাইলে হ্যারে নিবা ক্যান।’
চামেলির বোকা বোকা কথায় জবাব দিলো না শায়ের। এই মেয়েটা এরকমই। কথা না বুঝে বলে ফেলে। পরী বলে,’ঠিক আছে। তোমাকে আরেকদিন নাহয় নিয়ে যাবো।’
-‘নতুন ভাবি তুমি ভাইরে কও না? কিছু না পারলে কি বিয়াও হয় না? তুমি তো রান্ধা পারো না। তোমারও তো বিয়া হইছে। ফুপু তো কইলো আর কয়দিন পর তোমাগো পোলাপান হইবো। তাইলে তো আমারও,,,’
কথা শেষ করতে পারলো না চামেলি। শায়েরের কাশির শব্দে সে থেমে গেল। পরী স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। শায়ের কে পানি দিতেও ভুলে গেছে সে। চামেলির কথায় শায়ের পরী দুজনেই হতভম্ব। চামেলি বলে,’নতুন ভাবি পানি দাও ভাইরে।’
পরী তাড়াতাড়ি পানি দিলো শায়ের কে। পানি খেয়ে শায়ের রাগি দৃষ্টিতে তাকালো চামেলির দিকে।
বলল,’এতো কথা তোকে কে বলতে বলেছে? একটু চুপ থাকতে পারিস না তুই?’
খাওয়া শেষ না করে শায়ের চলে গেল। পরীর দিকে তাকানোর সাহস আর হলো না ওর।
বোরখা পরে তৈরি পরী। বাড়ি যাওয়ার আনন্দ ওর। তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েছে। চামেলিকে ফেলে যাওয়া সম্ভব হলো না। সে কেঁদে অস্থির। হেরোনা মানা করলো না মেয়েকে। কেননা চামেলির কাছ থেকে শুনবে শায়েরের শ্বশুর বাড়ি কেমন? গাড়ি ভাড়া করেছে শায়ের। তাতে করে তিনজন রওনা হলো। নূরনগর পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেলো। নিজ বাড়িতে এসে ছুট লাগালো পরী। সবার আগে গেলো মালার কাছে। মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,’কেমন আছেন আম্মা?’
-‘ভালো!!তুই কেমন আছোস?’
-‘আপনাদের ছাড়া আমি ভালো নাই আম্মা। অনেক মনে পড়ে সবাইকে।’
মালা পরীর গালে হাত রেখে বলে,’সবকিছু যেদিন আপন কইরা নিবি সেদিন দেখবি ওই বাড়িই তোর সব।’
জুম্মান দৌড়ে এলো পরীর কাছে। পরীকে দেখে সে খুব খুশি। পরী জুম্মান কে নিয়ে গেল রুপালির কাছে। বাবুকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করলো। ওখানে বসেই হাসিতে মেতে উঠলো। কুসুম দৌড়ে এসে বলে,’পরী আপা আপনে এইহানে! বড় আম্মা ডাকতাছে।’
মায়ের কাছে যেতেই একগাদা বকুনি খেতে হলো পরীকে। শায়ের কে কেন এখনও বৈঠকে একা ফেলে এসেছে সেজন্য। কোন জ্ঞান বুদ্ধি কি ওর নেই নাকি? যথেষ্ট বড় হয়েছে সে। তবুও এমন ভুল করে কিভাবে? পরী মাথা নিচু করে সব শুনলো। মালা নিজের কথা শেষ করে পরীকে নিজের ঘরে পাঠালেন। মন খারাপ করে ঘরে গেল পরী। শায়ের কে খেয়াল করলো না। পরীকে এভাবে আসতে দেখে
শায়ের বুঝলো না যে কি হয়েছে? সে জিজ্ঞেস করে, ‘বাড়িতে আসলেন মন ভালো করার জন্য। আর এসে মন খারাপ করেন বসে রইলেন কেন?’
-‘আমার মন ভালো করানোর কেউ নেই। তাহলে মন ভালো হবে কীভাবে?’
-‘আপনি বুঝলেন কীভাবে যে কেউ নেই?’
-‘আমি বুঝি সব। আমি কি ছোট নাকি?’
-‘ওহ,আপনি তো যথেষ্ট বড়। বিয়েও হয়ে গেছে। কিন্ত,’
জুম্মান তখনই এসে বলে ওদের খেতে ডাকছে মালা। তাই আর কথা হলো না ওদের। নিচে নেমে গেলো।
খাওয়া শেষে মালা শায়ের কে ডাকলেন। তিনি বললেন,’আমি জানি না বাবা তুমি কেমন? যতটুকু দেখছি জানছি খারাপ জানি নাই। পরী আমার সব চাইতে আদরের মাইয়া। ওরে এতোদিন অনেক কষ্টে আগলাইয়া রাখছি। এহন ও তোমার কাছে থাকবো। তুমি আমার মাইডারে আগলাইয়া রাইখো। পরী এহনও জানে না বাইরের দুনিয়া কেমন? কোনদিন বাইরে যায় নাই তো। ওরে তুমি সব বুঝবা। আমার মাইয়াডারে ভালো রাইখো।’
বলতে বলতে মালা চোখ মুছলেন। শায়ের মালাকে আশ্বস্ত করে বলল,’আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ে আমার দায়িত্ব। এখানে থাকাকালীন আমি যেমন আমার সব দায়িত্ব নিখুঁত ভাবে পালন করেছি তেমনি আপনার মেয়ের সব দায়িত্ব ও পালন করবো। আপনি চিন্তা করবেন না।’
শায়েরের কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মালা। পরী বড়ই দূরন্ত। কখন কি করে বসে বোঝা অসম্ভব। রাগটাও একটু বেশি। শায়ের পরীকে সামলাতে পারবে কি না এই চিন্তা মালার বেশি। কিন্ত শায়েরের সাথে কথা বলে সে বুঝতে পারল শায়ের ঠিকই পরীকে মানিয়ে নিতে পারবে। মালা চলে গেল। শায়ের সামনে পা বাড়াতেই দেখলো পরী দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা এখনও গম্ভীর করে আছে। শায়ের কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পরী বলে উঠল,’আমি সত্যিই কি শুধু আপনার দায়িত্ব? আপনি আপনার কাজকে আর আমাকে একই নজরে দেখেন?’
-‘নাহ আসলে,,’
-‘আপনাকে আর কষ্ট করে কিছু বলতে হবে না।’
চলে গেল পরী। খুব রাগ হচ্ছে শায়েরের উপর। পরীকে দায়িত্ব মনে করে সে? বিয়েটা কি ছেলেখেলা নাকি? পরীর কাছে তাই মনে হচ্ছে প্রথমে নওশাদ তারপর শেখর। শেষমেশ শায়েরের সাথে বিয়ে হলো। এটাকে তো খেলাই মনে হয়। সে ঠিক করলো শায়েরের সাথে কথাই বলবে না।
শায়ের বুঝলো পরী অভিমান করেছে। এখনই এতো অভিমান। পরে আর কি হবে কে জানে? কিন্ত সে আর পরীর মান ভাঙাতে যেতে পারলো না। কারণ আফতাব তাকে ডেকেছে। সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরলো শায়ের কিন্ত পরী নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শায়ের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
ছাদের কার্ণিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে পরী। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিন্দুকে খুঁজছে। বিন্দুই একদিন বলেছিল যে মানুষ মারা গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়। তাই পরী এসেছে বিন্দুর সাথে কথা বলতে।
-‘তুই থাকলে খুব ভালো হতো বিন্দু। আজ তুই নেই বিন্দু কিন্ত তোর মাঝি তোকে এখনও ভালোবাসে। সোনা আপা তার ভালোবাসা পেয়েছে। রুপা আপা পায়নি কিন্ত সিরাজ ভাইয়ের ভালোবাসা সত্যি। আর আমাকে দেখ,একজনের দায়িত্ব আমি। ওই সুখান পাগল টাও ভালোবাসা বোঝে। কত গভীর ওর ভালোবাসা। আমার কপাল খারাপ বিন্দু।’
জ্বলন্ত তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে হাসলো পরী। বিন্দুকে খুব মনে পড়ছে। কিন্ত ওই বিন্দু এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
-‘চাদর ছাড়া ছাদে কেন এসেছেন আপনি? ঠান্ডা লাগছে না?’
শায়েরের গলার আওয়াজ চিনলো পরী। তাই পেছন ফিরে তাকালো না। পরী ওভাবেই বলল,’এই দায়িত্ব টা আপনার নিতে হবে না।’
পরীর অভিমান যে গাঢ় হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে শায়ের। সে পরীর পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,’স্ত্রীকে সূখে রাখার দায়িত্ব তো স্বামীর নিতে হয়। শুধুই সুখ নয় ভালোবাসার দায়িত্ব ও কিন্ত নিতে হয়। আপনি কোন দায়িত্বের কথা বলছেন বুঝলাম না।’
পরীর জবাব না পেয়ে শায়ের বলতে শুরু করল, ‘আমি আপনাকে প্রথম কবে দেখেছি জানেন? হয়তো জানেন বিয়ের দিন। নাহ,আমি আপনাকে প্রথম দেখছি সম্পানের নৌকাতে। বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজছি আর আপনি ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমিও ভেতরে গেলাম। আপনি তখন ঘোমটা টেনে বসেছিলেন। নেকাব পড়েননি। আপনার খেয়াল ছিল না যে আপনার মুখ বরাবর আয়না গাঁথা ছিলো নৌকার ছইয়ের সাথে। যেখানে স্পষ্ট আপনার মুখটা আমি দেখে ছিলাম।’