অফিডিয়ান | পর্ব – ২৯

৩৩. ভোর পাঁচ টা। সাফওয়ান চিত হয়ে শুয়ে আছে জঙ্গলের খাল পাড়ের কাদামাটি তে। চোখ দুইটা বন্ধ, মুখে ওর বিজয়ীর হাসি। ওর গা ঘেষে কিলবিল করছে খাল পাড়ের আশেপাশের অজস্র ছোটবড় সাপ। সাকসেস টাকে সেলিব্রেট করার আর কোনো রাস্তা পাচ্ছিলো না, তাই খাল পাড়ের কাদামাটি তে এসে লাফিয়ে লাফিয়ে এখন কাদামাটির ভেতরেই শুয়ে পড়েছে!
ওর শরীর থেকে বের হওয়া একটা অদ্ভুত রকমের ওডার এর কারণে সরিসৃপ গুলো আকর্ষিত হয়। এসবে অভ্যস্ত ও৷ বরং এসব সরিসৃপ কে একটু বেশিই ভালোবাসে ও৷

সমস্ত রাত টা ল্যাবে কাটিয়েছে সাফওয়ান৷ রুমাইশার থেকে নেওয়া সমস্ত ফ্লুউড গুলোর টেস্ট করেছে ও৷ রুমাইশার ব্লাড টেস্ট করার পর সাফওয়ান পুরোপুরি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে।

ওর ছোটবেলায় দেওয়া কামড়ের কারণে আন্টিভেনম দেওয়া সত্বেও অল্প কিছু বিষ রয়ে গেছিলো রুমাইশার শরীরে। আর সেটাই রুমাইশার শরীরের রক্তের সাথে মিশে, ওর পুরো ইমিয়্যুন সিস্টেমের সাথে মিশে তৈরি হয়ে গেছে মেডিসিন। সাফওয়ানের শারিরীক কন্ডিশনের একমাত্র মেডিসিন৷
রুমাইশার সামান্য রক্ত নিজের শরীরে নিয়েছে ও, তারপর থেকেই অন্য ধরনের একটা এনার্জি বুস্ট ফিল করছে ও৷ শরীর টা আগের তুলনায় অনেক অনেক ভালো লাগছে। আর এই অত্যাশ্চর্য ব্যাপার টা ডিসকাভার করতেই সাফওয়ান সমস্ত ল্যাব জুড়ে লাফিয়েছে আর আনন্দ চিৎকার দিয়েছে।

কিছু সময়ের জন্য একদম বাচ্চা বনে গেছিলো ও। এত আনন্দ ও জীবনে কখনো পেয়েছে কিনা মনে পড়ে না। ল্যাব থেকে বেরিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সোজা চলে এসেছে খাল পাড়ে, খোলা বাতাসে এসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়েছে। আর তারপরেই খালে পাড়ের কাদামাটিতে শুয়ে মাখা মাখি করেছে। এরপর থেকেই মুখ থেকে হাসি ওর সরছে না।

রুমাইশা কে এত সুন্দর খবর টা ওর জানানোর দরকার, কিন্তু ফোন টা ল্যাবেই ফেলে এসেছে। আর ও কিছুক্ষন কাদামাটিতে সন্তুষ্টচিত্তে মাখা মাখি করে শোয়া থেকে উঠে বসলো সাফওয়ান৷ তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হাটা ধরলো আবার ল্যাবের পথে৷

ল্যাবে গিয়ে ল্যাবের ওয়াশরুমে ঢুকলো, স্কোয়ার শাওয়ার টা অন করে তার নিচে চোখ দুইটা বন্ধ করে দাড়ালো সাফওয়ান। প্রচন্ডরকম ভালো লাগছে ওর৷ দেওয়ালে দুই হাতের ভর দিয়ে সাফওয়ান ভাবতে থাকলো ওর সিঙ্গাপুরের জীবন৷

রিমু কে তার অনেক অনেক কিছু জানানোর আছে৷ রিমু ওর বউ হতে চলেছে খুব দ্রুতই, তাই ওর থেকে কোনো তথ্য গোপন রাখতে চায় না সাফওয়ান৷ পরবর্তীতে কোনো মাধ্যমে জানতে পারলে হয়তো ব্যাপার টা ভালো চোখে দেখবে না রিমু, হয়তো কেন? মোটেই ভালো চোখে দেখবে না৷

কিন্তু হঠাৎই কিছু একটা ভেবে চোখ মেললো সাফওয়ান৷ না, রুমি কে আগে থেকে কিছু বলবেনা ও৷ বিয়ে টা হওয়ার পর ই বলবে৷ আগে বললে যদি রিমু ওকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়! না কিছুতেই ওকে কিছু বলা যাবে না৷ রিমু কে ও হারাতে পারবে না কোনো অবস্থাতেই। রিমু কে ও প্রচন্ড প্রচন্ড রকম ভালোবাসে৷ আর এখন তো ওর জীবন বাচানোর একমাত্র রাস্তা রিমু৷ ও তোর আর মিথ্যা বলেনি, শুধু কিছু ইনফর্মেশন লুকিয়েছে, এটা কি ধোকার পর্যায়ে পড়ে?

তীর্যক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো সাফওয়ান৷ যা কিছু বলার সব বিয়ের পরে বলা যাবে। এখন কোনো ধরনের ইনফরমেশন লিক হলেই সব দিক থেকে সমস্যা হবে ওর৷ এতসব ঝামেলার মাঝে গোপন ঝামেলা টা গোপনেই রাখার সিদ্ধান্ত নিলো ও৷

হুট করেই সাফওয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো৷ শাওয়ার টা বন্ধ করে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। তারপর শরীর থেকে পানি ঝেড়ে মুছে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অজানার উদ্দেশ্যে।

“””

সকালে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে ছিলো রুমাইশা। ৭ টার দিকে আয়েশা এসে ডেকে তুললেন। তারপর হাসি মুখে বললেন,
— তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠ, উঠে আমার কাজে একটু হাত লাগিয়ে দে। তোর বড় খালা আর জুবায়ের আসবে আজকে৷ রাত থাকবে। রান্না করতে হবে অনেক কিছু। আমি একা একা এত কিছু কখন করবো৷ দ্রুত উঠ।

রুমাইশা ঘুম ঘুম চোখেই জিজ্ঞেস করলো,
— কখন আসবে? আর তারা আসবে তা আমাকে আগে বলোনি ক্যান?

আয়েশা আবার ফিরে যেতে যেতে বললেন,
— এখন তো বলছি, এখন উঠ।

রুমাইশা আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো বিছানায়৷ তারপর হাই তুললো কিছুক্ষন৷
ওকে দিয়ে কাজ করাতে হবে বলে মায়ের ব্যাবহার খুব ভালো হয়ে গেছে। মায়ের এসব খচ্চর মার্কা বুদ্ধির কিছুক্ষণ তারিফ করলো ও, বিয়ের পির নিজের বাচ্চা কাচ্চার ওপর ও এমন ট্রিকস অ্যাপ্লাই করবে বলে ভাবলো।

মায়ের এমন কাজ করিয়ে নেওয়ার ফন্দিতে কিছুক্ষণ চুপে চুপে হাসলো ও। যাই হোক, ভালো করে কথা বলছে এটাই অনেক, এখন কাজ করতে আপত্তি নেই৷

বিছানা ছেড়ে অনেক কষ্টে উঠলো ও৷ তারপর ঢুলতে ঢুলতে বেসিনে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসলো৷ এরপর রান্না ঘরে গেলো মায়ের কাছে।

আয়েশা রা তিন বোন দুই ভাই৷ আয়েশা সেজো। বড়ো বোন জুলেখার বড়ো ছেলে জুবায়ের। ইতালি তে পড়াশোনা করতো। পড়াশোনা শেষে দেশে এসেছে৷ তার খুব শখ হয়েছে আয়েশা খালার বাড়িতে আসবে৷

রাফসানের চেয়ে বয়সে বছর দুয়েকের বড়ো হবে হয়তো৷ রুমাইশা জুবায়ের কে একদমই পছন্দ করে না৷ কেমন যেন ক্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে থাকে সবসময়৷ মনে হয় ওকে জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে পৃথিবীতে। ওর মোটেও পৃথিবীতে আসার মত ছিলো না!
এখন ইতালি থেকে ক্যাবলা কান্ত স্মার্ট কান্ত হয়ে গেছে হয়তো! ”
এসব ভাবতে ভাবতে রুমাইশা ঝাল পেয়াজ কাটা কাটি করছে৷ আয়েশা হিসাব করছে পাশে বসে বসে কি কি খাওয়ানো হবে৷
মাছ ভাজা, সবজি, বেগুন দিয়ে মাছের ঝোল, আলুর দম, মুরগি, গরু, খাসি।

মায়ের এত পদ শুনে রুমাইশা বলে উঠলো,
—ওরে বাপরে, এত আয়োজন করছো যেন মিনিস্টার আসছে!

আয়েশা ধমক দিয়ে বললেন,
— তুই চুপ থাক, এতোদিন পরে ছেলে টা আমদের বাড়িতে আসছে তা খাওয়াবো না?

রুমাইশা সাথে সাথে বলে উঠলো,
— সাফওয়ান ভাইয়া ও তো কতকাল পরে বাড়িতে আসলো, কই তাকে তো একটু খাওয়ালে না? সে বিনা দাওয়াতে তোমার বাড়ি এসে ঘুরে গেলো, তাকে তো তোমরা সামান্য আপ্যায়ন ও করোনি!

আয়েশা ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে করতে বললেন,
— আপ্যায়ন করার মতো হলে আপ্যায়ন অবশ্যই করতাম। কিন্তু আপ্যায়ন করার রাস্তা রেখেছিস তুই? সম্পর্ক গুলো কে তো তুই নষ্ট করেছিস। নইলে সাফওয়ান কে কি আমি কম যত্ন করি?

রুমাইশা বকে উঠলো,
— আমি কিছু নষ্ট করিনি। তাকে আমি পছন্দ করি, লাইফ পার্টনার হিসেবে সে একজন পারফেক্ট পুরুষ। আর হ্যা আমি ভুল করেছি আমি মানছি, কিন্তু সেটা যেমন গুরুতর তোমরা ভেবেছিলে, তত টা নয়। তাই যত্ন করলে সবাই কে সমান যত্ন করবা। নইলে দরকার নেই।

তারপর মায়ের দিকে চোরা চোখে একবার তাকিয়ে নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
— আর তাছাড়া সাফওয়ান ভাইয়া তো কিছুদিন পর তোমার মেয়ের জামাই হতে চলেছে, তাই সে হিসেবে যত্নআত্তি তার একটু বেশিই পাওনা৷
বলে ঠোঁট টিপে হাসলো রুমাইশা।

আয়েশা একবার তীর্যক চোখে তাকালেন রুমাইশার দিকে। কিছু বললেন না। কিন্তু হাসলেন মনে মনে,
‘সাফওয়ান কে আমি এই জীবনে জামাই হিসেবে মেনে নেবো না। তার ব্যাবস্থা আমি শুরু করে দিয়েছি।’
মনে মনে আওড়ালেন তিনি।

সব কোটা কাটা হয়ে গেলে রান্না শুরু করলেন আয়েশা৷ রুমাইশা মায়ের সাথে হাতে হাতে করে দিলো সব৷ মুরগির মাংস আর আলুর দম টা রান্না করলো ও নিজে হাতে৷ দুপুরের আগে সব রান্না বান্না কমপ্লিট করে ফেললো।

আগামী কাল রাফসান আসবে৷ আয়েশা জুলেখাকে বলেছিলেন রাফসান আসলে আসতে। কিন্তু তার ছেলের নাকি তর সইছে না। তাই আজই আসা লাগলো। একটা দিন অপেক্ষা করতে গিয়ে নাকি তার কলিজা ছাই হয়ে যাচ্ছিলো।

একটার পরপরই জুলেখা তার ছেলেকে নিয়ে চলে আসলো আয়েশা দের বাসায়। হাজবেন্ড নেই ওনার, মারা গেছেন গতবছর৷ এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন৷ নাতনি ও আছে একটা৷ ছেলে ইতালি থাকায় ঢাকাতে মেয়ে জামাইয়ের বাসাতে থাকতেন।

রুমাইশা গোসলে গেছে, তাই আপ্যায়ন টা আয়েশাই করলেন। শামসুল বাড়িতে নেই। আসবে তিন টার পর৷ জুলেখা আর জুবায়ের কে গেস্ট রুমে গিয়ে কাপড় ছেড়ে আসতে বললেন৷
নাস্তা সব রেডি করাই ছিলো। ওনারা কাপড় ছেড়ে আসতে আসতে আয়েশা গুছিয়ে ফেললেন সব৷

কিছুক্ষণ পর জুলেখা আর জুবায়ের এসে বসলো সোফায়। আয়েশা নাস্তা এগিয়ে দিচ্ছেন আর গল্প করছেন বোনের সাথে৷ গল্পের এক পর্যায়ে জুলেখা জিজ্ঞেস করলেন রুমাইশার কথা।
আয়েশা বললেন যে ও গোসলে গেছে, বেরোবে এখনি।

গোসল শেষে গাড় খয়েরি রঙের সালওয়ার কামিজ পরে মাথায় টাওয়েল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমাইশা বিছানায় রাখা ফোনের কাছে গেলো। কাজের চাপে ফোন টা চেক করার সময় পায়নি। বাম হাতে ভেজা জামাকাপড় গুলো উচু করে রেখে ডান হাত টা জামায় মুছে নিয়ে ফোন টা ধরে সুইচ টিপলো।

কাঙ্ক্ষিত মানুষ টার নাম টা ওপরে ভেসে থাকতে দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর৷ মেসেজ ওপেন করে দেখলো, সাফওয়ান লিখেছে,
— তোমার ভেতর দিয়ে আমি নতুন করে জন্ম নিতে চলেছি,
ভালোবাসি……..

কথার আগা মাথা বুঝলোনা রুমাইশা। কিন্তু ‘ভালোবাসি’ শুনে খুশি হলো খুব। প্রতিউত্তরে কিছু লিখলো না৷ ভেজা জামা কাপড় গুলো রোদে দিতে ছাদে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে রুম থেকে বেরোলো। বের হতেই সোফায় বড় খালা আর জুবায়ের কে বসা দেখতে পেলো৷

অপ্রস্তুত হয়ে গেলো রুমাইশা। দ্রুত পায়ে জুলেখার নিকট এসে সালাম বিনিময় করলো। রুমাইশাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো জুলেখার। তিন বছর পর দেখছেন তিনি বোনের মেয়ে কে। এতদিন তিনিও আসেননি আর রুমাইশা ও যায়নি তাদের বাসায়৷

খালার পাশে বসে থাকা জুবায়ের কে দেখে মনে মনে হাসলো রুমাইশা। ক্যাবলা কান্ত জুবায়ের ভাই তো আসলেই স্মার্ট স্মার্ট একটা ভাব নিয়ে আছে। আসলেই স্মার্ট হইছে নাকি অভিনয় করছে বুঝতে পারলো না ও৷
জুলেখার সাথে কুশল বিনিময় শেষে জুবায়েরের সাথে কথা বলল রুমাইশা৷ তারপর জুলেখার থেকে সময় চেয়ে জামা কাপড় গুলো নেড়ে দেওয়ার জন্য ছাদের দিকে গেলো ও৷

ছাদে কাপড় গুলো নেড়ে দিয়ে শামসুলের শুকনা কাপড় গুলো তুলে নিয়ে আসলো সাথে৷ তারপর নিচে এসে সেগুলো শামসুলের রুমে রেখে দিয়ে ডাইনিং এর সোফায় বসলো জুলেখার বিপরীতে।

মায়ের পাশে বসা জুবায়ের চোখ বড় বড় করে দেখছে রুমাইশাকে। সেই কোন পিচ্চি বেলায় দেখেছে, রুমাইশা হয়তো তখন এইট কি নাইনে পড়তো৷ সবে মাত্র কৈশোরে পা দিয়েছিলো তখন৷ আর এখন সে পরিপূর্ণ যুবতী।

রুমাইশার ফোলা ফোলা গাল, গলার নিচের ক্ষীণ ভাসমান বিউটি বোন, থুতনিতে থাকা ছোট্টো কাটা দাগ, কানের লতির নিচে থাকা ছোট্টো কুচকুচে কালো তিল সব কিছুতে বিচক্ষণতার সঙ্গে চোখ বুলাচ্ছে জুবায়ের৷

জুবায়ের কে নিজের দিকে এইভাবে ড্যাবড্যাব তাকাতে দেখে রুমাইশা অস্বস্তি বোধ করলো ভিষণ। একবার মায়ের দিকে ইশারা করলো রুমে চলে যাওয়ার অনুমতির জন্য, কিন্তু আয়েশা চোখ গরম দিয়ে ওখানেই বসিয়ে রাখলো ওকে।

জুবায়ের মনে মনে প্রচন্ড খুশি। কারণ কাল পরশুর ভেতরেই রুমাইশার সাথে ওর বিয়ে। যদিও রুমাইশা কে কখনো তেমন নজরে দেখেনি ও, কিন্তু মা যখন প্রস্তাব দিলো তখন ভেবে দেখলো একবার তেমন নজরে দেখলে কোনো অসুবিধা নেই। আর এখন রুমাইশাকে দেখার পর তো সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ ই রইলো না।

আয়েশা খালা যে তার মায়ের কাছে নিজে এমন প্রস্তাব রাখবেন তা
কখনোই ভাবেনি জুবায়ের। রাফসান ও দুদিন আগে কথা বলেছে ওর সাথে এই বিষয়ে৷ রাফসান বলেছিলো ডিসিশন টা আগে ওকে জানাতে৷ জুবায়ের ও তাই করলো। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ফোন টা বের করে ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিলো রাফসান কে যে সে রাজি, এবং খুব ভালোভাবেই রাজি।

এমন গুলুমুলু বউ পাওয়া উপলক্ষে খালা কে মনে মনে ধন্যবাদ দিলো অনেক গুলা। মনের ভেতর ও খুশিতে আটখানা হয়ে যাচ্ছে৷ বার বার চোখ চলে যাচ্ছে রুমাইশার দিকে। কামিজের ওপর দিয়ে রুমাইশার পেটের দিক টাতে একবার চোখ বুলালো জুবায়ের। মেদ আছে বলে মনে হচ্ছে না! ওপর থেকে রুমাইশার সুডৌল দেহ কাঠামো দেখে চকচক করে উঠলো জুবায়েরের চোখ দুইটা।

রুমাইশা অনেক ক্ষন ধরেই খেয়াল করছে জুবায়েরের চাহনি। কিন্তু এবার ওর এমন লোলুপ দৃষ্টি দেখে রুমাইশা আর মায়ের অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করলো না৷ সোজা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
— আমার ক্ষিদে পেয়েছে মা, আমি আমার খাবার টা নিয়ে রুমে যাচ্ছি, ওখানেই খাবো।

তারপর মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে জুলেখার দিকে একবার তাকিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে খাবার বেড়ে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো রুমাইশা।

রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো। গায়ের ভেতর রিরি করছে ওর। এ তো ক্যাবলা ছিলো ভালোই ছিলো, এত বেয়াদব ছিলো না৷ দামড়া হয়েছে আর অসভ্য হয়েছে। এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন জীবনে মেয়ে দেখেনি কোনোদিন!
এসব ভাভতে ভাবতে ভাতের থালা টা নিয়ে বিছানায় উঠে বসলো রুমাইশা। তারপর ফোন অন করে ইউটিউবে ঢুকে ভিডিও দেখতে দেখতে খেতে লাগলো।

৩৪. দুপুরে বাড়িতে ঢুকলো সাফওয়ান। এতক্ষণ ও ল্যাবেই ছিলো। নিজের ওপর আর ও কিছুক্ষন রিসার্চ চালিয়েছে। রেমেডি তে ওর সব সমস্যার সমাধান হলেও চোখ আর দাঁতের ওপর সেটার কোনো প্রভাব পড়বে না৷ এটা নিয়ে ও চিন্তিত। তবে যাই হোক, ও যে একটা সল্যুশন পেয়েছে তাতেই ও খুশি। এর চেয়ে বেশি খুশি আর কখনো ও হয়নি৷

মাইন গেট দিয়ে ঢুকে গ্যারাজে গাড়ি রেখে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো সাফওয়ান। রুনিয়া হলরুমেই বসে ছিলেন। সাফওয়ান কে দেখে বললেন,
— কি রে, রাতে বললি খাবার রেখে আসতে এসে খাবি, অথচ সকালে তোর খাবার দিতে গিয়ে দেখি সেটা ওভাবেই ফেলানো আছে। কি যে করিস না তুই!

মায়ের কথায় হাটা থামিয়ে দাড়িয়ে গেলো সাফওয়ান। তারপর মায়ের দিকে ফিরে বলল,
— সর‍্যি মা, কাজ ছিলো একটা, খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমাকে ফোন দিয়ে একবার বলতে চেয়েছুলাম, কিন্তু পরে ভাবলাম তুমি হয়তো ঘুমিয়ে গেছো তাই আর কল করিনি। সর‍্যি। ক্ষিধে পেয়েছে অনেক, তুমি খাবার টা নিয়ে আসো একটু ওপরে, কথা আছে কিছু।

কথা গুলো বলেই আবার আগের মতো হেটে সিড়ি বেয়ে চোলে গেলো ওর রুমের দিকে।

রুনিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাফওয়ানের জন্য প্লেটে খাবার সাজাতে লাগলো৷

সাফওয়ান রুমে গিয়ে নিজের পোশাক আশাক সব খুলে একটা ট্রাউজার পরে ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে মাথার ওপরের ফ্যান ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে পা ঠেকিয়ে বসে রইলো বিছনায়৷ প্রচুর হালকা লাগছে ওর। মাথা থেকে যেন আস্ত একটা বোঝা নেমে গেছে৷

বসা থেকে ধাম করেই বিছানায় শুয়ে পড়লো সাফওয়ান। হাতের তালু দুইটা একটার ওপর আরএকটা দিয়ে মাথার নিচে রাখলো। তারপর চোখ দুইটা বন্ধ করে বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস ছাড়লো কয়েকবার।

কিছুক্ষণ পর রুনিয়া আসলেন ছাদে। এক হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে অন্য হাতে টোকা দিলেন দরজায় কয়েক বার৷
শব্দ শুনতেই সাফওয়ান শোয়া থেকে উঠে দরজা খুলে দিলো। রুনিয়া ভেতরে ঢুকলেন।
দরজা টা আবার বন্ধ করে দিয়ে মায়ের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে টেবিলের ওপর রাখলো। তারপর মাকে বিছানায় বসিয়ে চেয়ার টা টেনে নিয়ে নিজেও বসলো।

রুনিয়া চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন ছেলের ঘর টাকে৷ কতদিন আসা হয়না এখানে। ঘর টাকে দেখা শেষ হতেই ওনার চোখ গেলো সাফওয়ানের শরীরে দিকে।

ছেলের বাহুতে হাত স্পর্শ করে তিনি বললেন,
— বাহ, সেই খসখসে চামড়া গুলো তো আর দেখা যাচ্ছে না, তুলে ফেলেছিস নাকি?

সাফওয়ান মায়ের হাত টা ধরলো, তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
— এই টা বলার জন্যই তোমাকে ডেকেছি মা৷

রুনিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলের দিকে। মায়ের চাহনি দেখে সাফওয়ান আবার স্মিত হাসলো। তারপর কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে উঠলো,
—তোমাকে একটা খুশির খবর দেওয়ার আছে মা। আল্লাহ চাইলে আমি আর ও বেশিদিন বাচবো। তোমাদের মাঝে থাকবো!

রুনিয়া চেয়ে রইলেন ছেলের দিকে

আবার কিছুক্ষন চুপ থেকে সাফওয়ান ধরা গলায় বলল,
— আমি আমার মেডিসিন পেয়ে গেছি মা। আল্লাহ যদি রহমত করেন তাহলে আমি এবার সুস্থ হয়ে যাবো, পুরোপুরি না হলেও হবো কিছু টা। অন্তত যে খারাপ অবস্থা আমার হওয়ার কথা ছিলো সেটা আর হবে না আশা রাখি৷ তোমাদের সাথে আর ও কিছুদিন থাকছি মা আমি। এখন শুধু সেই মেডিসিন টাকে ঘরে নিয়ে আসার পালা।

রুনিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন ছেলের কথা, প্রচন্ড খুশি হয়েছেন তিনি, চোখে মুখে ওনার ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। চোখের কোণ টা ভারি হয়ে গেছে। টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো ওনার চোখ থেকে। দুই হাত তুলে চোখ বন্ধ করে অসীম দয়ালু সৃষ্টিকর্তার নিকট শোকর গোজার করলেন তিনি।

কিন্তু শেষের কথা টা বোধগম্য হলো না ওনার। হাত নামিয়ে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
— মেডিসিন ঘরে আনতে হবে বলতে? কোথায় পাওয়া যাবে সেটা? দেশেই তো!

সাফওয়ান হাসলো, তারপর বলল,
— হ্যা মা, দেশেই৷ তোমার ভাইয়ের ঘরে৷

রুনিয়া বুঝলেন না কিছু, ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন। মাকে এত ভাবনা চিন্তা করতে দেখে সাফওয়ান বলল,
— আমি রিমুর ব্লাড সহ ওর শরীরের আর ও কিছু ফ্লুইড টেস্ট করেছি কাল রাতে। ওর ব্লাডে আর ফ্লুইডে অদ্ভুত মিউটেশন দেখেছি আমি মা। যা আমি আজ পর্যন্ত কারো শরীরে দেখিনি। আর সেটা হয়েছে ছোটবেলায় আমারই দেওয়া কামড়ের কারণে৷
তারপর ওর ফ্লুইড গুলোর সাথে আমার শরীরের কিছু ফ্লুইড মিক্স করতেই আমি এক অভাবনীয় ডিসকাভারি করে ফেলেছি মা! এত বছর আমি যে মেডিসিনের খোজে সারা দুনিয়া তন্নতন্ন করে ফেলেছি সেটা আমার ঘরের কাছেই ছিলো। কিন্তু আমি ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি৷

রুনিয়া কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
— মিউটেশন কি? আর তুই কিভাবে বুঝলি যে ওর শরীরে মিউটেশিন ঘটেছে?

সাফওয়ান সোজা হয়ে বসে বলল,
— বাকি সব তোমারে পরে বলব, তুমি শামসুল মামার কাছে আর ও একবার ফোন দিবা। তারপর মামাকে বলবা আমার প্রস্তাব টা আর ও একবার ভেবে দেখে সম্মতি জানাতে৷ আমি দুই পরিবারের ভেতর সম্পর্ক নষ্ট হোক সেটা চাই না৷ মামি কে কিছু বলার দরকার নেই আগে থেকে, মামাকে বোঝাও। মামা বুঝলে মামিও বুঝবে৷ তুমি আজ রাতেই মামার কাছে ফোন করবা, মনে করে।

রুনিয়া মাথা নাড়ালেন৷

সাফওয়ান বলল,
— এখন তুমি নিচে যাও, আমি খেয়ে ঘুমাবো। সারারাত ঘুমাইনি আমি। আর পারলে মামার মন টা একটু নরম করার চেষ্টা কইরো। তুমি তার আদরের বোন, তুমি তাকে একটু বুঝিয়ে বললে সে শুনবে।
আমি রিমু কে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না কখনো আর রিমু কেও প্রাণ থাকতে কখনো অন্য কারো হতে দিবো না। এটা উনি যত দ্রুত বুঝবেন, তত আমাদের সবার জন্যই ভালো হবে৷ ঝামেলা হবে না কোনো।

ছেলের কথায় সায় জানিয়ে রুনিয়া বসা থেকে উঠে দরজা খুলে নিচে চলে গেলেন৷ আর সাফওয়ান খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে গেলো।

এদিকে রুমাইশার অগোচরে তার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো বাড়িতে…….

( রিচেক করিনি, বানান ভুল থাকতে পারে, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 🤧)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।