অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৫৬ | সর্বশেষ পর্ব

একজন স্ত্রী ঠিক ততটাই সুন্দর
যতোটা তার স্বামীর দৃষ্টি সুন্দর!

ইসস উমায়ের আপনি যদি আমার চোখ দিয়ে আপনার সৌন্দর্য দেখতে পারতেন, তাহলে….

‘তাহলে?’

‘অন্যদিন বলবো।’

‘না এখন বলুন।’

‘কিছু জিনিস সিক্রেট থাকুক হোমাপাখি!’

‘না না বলুন।’

আরহাম হেসে ওর চোখে চোখ রেখে বললেন,

‘এক আকাশ শূন্যতার মাঝে আপনি এক পূর্ণতার ছাঁয়া
হাজারো মানুষের ভিড়ে আপনি আমার অদ্ভুত এক মায়া!’

******
কিছুক্ষণ পর….

হাফসা লাইট অফ করে বিছানায় যেতেই উনি ওকে দূহাতে বাহু ধরে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন।

অতপর হেসে বললেন, ‘শুরু হয়ে গেছে কাঁপা-কাঁপি?’

হাফসাকে জড়তায় গুটিয়ে যাওয়া দেখে উনি আরো গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘ভয় পেতে হবে না।আজকে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর আয়শা রাযিআল্লাহু আনহু’র রোমান্টিক ঘটনা শুনাবো।শুনবেন?’

‘শুনবো!’

আচ্ছা।বাট ঘটনা বলতে বলতে আমি যদি রোমান্স মুডে চলে যাই আপনাকে সামলাতে হবে।শুরু করা যাক!’

হাফসা ফ্রিজড হয়ে পড়ে আছে আরহামের বুকে।আরহাম সুন্দর একটা কাহিনী দিয়ে শুরু করলেন…

*****
তাদের জীবনে বৃষ্টিময় সুন্দর আরেকটা প্রেমময় রজনী দোলা দিয়ে গেলো!চারিদিকে ফযরের আযান পড়েছে। হাফসা ব্লাঙ্কেট সরিয়ে উনার শক্ত বাহুডোর থেকে নিজেকে সরিয়ে দ্রুত উঠে গেলো।আরহাম এখনো গভীর ঘুমে।হাফসা এই সুযোগে সাহস করে উনার কপালে ছোট্ট একটা ভালোবাসা দিয়েই দিলো।তারপর জমে আসা লজ্জা টুকু হজম করে স্বাভাবিক হলো।

বেশ কয়েকবার ডাকার পরও উনার কোনো হেলদোল নেই।হাফসা দেখলো ফযরের টাইম পইপই করে চলে যাচ্ছে।উনার গালে চাপড় দিয়ে বলে, ‘শুনছেন! উঠুন না!ডাকছি আমি।’

উনি গালে হাফসার হাত চেপে ধরে রইলেন।

‘উঠুন।ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়বেন।লেট হয়ে যাচ্ছে।’

আরহাম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন, ‘হুয়াট ডু ইউ মিন?’

শেষ!হাফসার এতক্ষণের লুকায়িত লজ্জায় এক বালতি পানি ঢালতে উনার একটা নিঁখুত দৃষ্টিই যথেষ্ট!

আরহাম হেসে ফেললেন।অলসতা ছেড়ে উঠতে উঠতে কি যেনো বিড়বিড় করলেন,শোনা গেলো না।

*****
দূজনে একসাথে সুন্দর মতো নামাজ আদায় করে কুরআন তিলাওয়াত শেষে মোনাজাতে একসাথে হাত তুললো।শুকরিয়া আদায়ে এবারও কার্পণ্য করলেন না তারা। হাফসা জায়নামাজ রেখে ড্রেসিং এ লোশন দিচ্ছে হাতে।চোখ গেলো,ড্রেসিং এর কোণায় কালো রঙ্গের একটা চিরকুটে।সম্ভবত জুব্বা থেকে পড়েছে।সন্দেহবশত সেটা খুলে হাফসা চমকালো, হেসে ফেলল।এখনো একটা ভাঁজই চিরকুটটায়।আরহাম এত যত্ন করে রেখে দিয়েছেন প্রোপোজালটা!এসব ভাবনার মধ্যেই আরহাম আচমকা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে থুতনী ঠেকালেন।

‘এই কয়েকটা শব্দ আমার হৃদয়ে তোলপাড় তুলে দিয়েছিলো।এখানের ওই এতটুক ছোট্ট মেয়েটা বাবুর মা হয়ে গেছে।আমার মন খারাপের ভারী বোঝা ভাগ করার দায়িত্ব নিয়েছে।আমার আনন্দগুলো ভাগাভাগি করতে শিখে গেছে।আমার দূ:সময়ে ছায়ার মতো পাশে থেকেছে।তাকে আমার শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত চাই।সম্ভব তো হোমাপাখি?’

‘ইন শা আল্লাহ।’

*****
উমারকে কোলে নিয়ে বারান্দায় বসে আছেন আরহাম।রোদের ঝলকে উমারের তুলতুলে ত্বক চকমক করছে।হাফসা এসে তাঁকে আরেকটা তোয়ালে জড়িয়ে দিয়ে চোখমুখে চুমু খেয়ে যাওয়ার সময় আরহাম গাল এগিয়ে দিলেন।আরহামের দিকে সরু চোখে চেয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে চলে গেলো সে।

আরহাম মুচকি হেসে উমারের দিকে দৃষ্টি স্থির করতেই কিছু অতীত খেলে গেলো মাথায়।উমারের ছোট ছোট চোখে চোখ রেখে বললেন, ‘তুমার নাম করে,তুমার আম্মু কত অবাধ্য আবদার আমার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছিলেন বাবা।এসবের হিসেব কিন্তু বাকি!একটু বড় হও, আমি আর তুমি গুণে গুণে উসুল করে নিবো!’

ফ্ল্যাশব্যাক—-

উমার যখন নয়মাসের,
আরহাম পেটে হাত দিয়ে বলেন, ‘উনাকে জ্বালিয়ে না বাবা,আমাকে জ্বালাও।’

হাফসা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে বলে,আপনাকে কীভাবে জ্বালাবে এখন?আগে দুনিয়ায় আসুক।’

‘ওপসসস সরি..।’

‘কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।’

আরহাম মনে মনে ভাবলেন, ‘নিশ্চয়ই অবাধ্য কিছু।তবে উত্তর দিলেন, ‘কি?’

‘বুঝতে পারছিনা।’

‘বুঝুন আগে।’

একটু সময় চিন্তা করেই উচ্ছাসিত হয়ে বলে উঠে, ‘রসমালাই।’

‘উঁহু, এটা ছাড়া অন্যকিছু।’

‘আর কিচ্ছু না।রসমালাই-ই খাবো।’

‘ঠান্ডা খাওয়া যাবে না।’

‘বিশ্বাস করুন,বাবাটার মনে হয় এমন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।আমি তো বুঝতে পারছি।’

শত বিরোধিতা করেও ওর মত বদলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে রাত বারোটায় বাইরে থেকে এনে রসমালাই খাওয়ালেন।দ্বিতীয় চামচ খেতে না খেতেই আরহামকে ভাসিয়ে দেয়।নাকে মুখে বিষম উঠে যায়।আরহাম কোনোমতে পানি এগিয়ে দিলে হাফসা স্বাভাবিক হয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘স্ স সরি।

আরহাম শার্ট খুলতে খুলতে বললেন, ‘অস্বস্তি লাগছে?’

‘না,কিন্তু আপনাকে তো ভরিয়ে ফেললাম।’

‘ইটস ওকে।ঘুমান আসছি।’

মিনিট দশেক পর আরহাম শাওয়ার নিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বের হলেন।হাফসার এপর্যায়ে আরোও বেশি খারাপ লাগলো।নিজের জেদের কারণে মানুষটাকে এত হিম ঠান্ডার মধ্যে শাওয়ার নিতে হলো।অথচ কোনো অভিযোগ তো দূরের কথা,বিরক্তিতে টু শব্দ টি পর্যন্ত করলেন না।

আরহাম বিছানায় আসতে ও মুখ কাচুমাচু করে বলল, ‘খারাপ লাগছে।’

আরহাম ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন কেন?শরীর অসুস্থ লাগছে? অস্বস্তি হচ্ছে বলুন আমাকে?’

‘বলছি আপনাকে এত ঠান্ডায় গোসল করালাম, সেইজন্যে খারাপ লাগছে।’

আরহাম একটা স্বস্তিরশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ও মাই আল্লাহ।এভাবে বলবেন না উমায়ের। ভয় পেয়ে যাই।’

হাফসা হেসে বলে,’আপনার থেকে আমার সাহস বেশী।তাই না?’

‘জ্বী।’

‘হুমমম জানি।’

‘এখন ঘুমান।রাত অনেক হয়েছে।’

‘ঘুম আসছে না।’

‘আসতে হবে।কীভাবে ঘুমালে কম্ফোর্টএবলি ঘুমাতে পারবেন?’

‘এমনিই পারবো।’

“সিওর তো?’

‘হুমম।’

‘১০০%?’

‘আশা করি পারবো।আপনি ঘুমান।’

‘খারাপ লাগলে বলবেন কিন্তু, আমি জেগে থাকবো।’

বর্তমান~

গাড়ির হর্ণে চোখ গেলো গেটের দিকে।তাকে কেমন পরিচিত লাগলো আরহামের।সে এদিকেই এগিয়ে এসে আরহামের সাথে মুসাফাহা করলে,আরহাম রাদকে বসার অনুরোধ জানালেন।

রাদ কিছুক্ষণ নিষ্পলক চেয়ে রইলো উমারের দিকে।আরহাম তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘কেমন আছেন?’

রাদের ধ্যান ভাঙ্গলো।উত্তর দিলো, ‘ভালোই আলহামদুলিল্লাহ।’

আরও কিছু আলাপের মধ্যে আরহাম বেশ ইতস্তত ভাব নিয়েই জিজ্ঞেস করলেন, ‘দ্বীন পূর্ণ করছেন না?’

রাদ মলিন হাসলো।অনুরোধের সুরে বলল, ‘বাবুটাকে একবার কোলে নিতে দিবেন প্লিজ।একবার নিয়েই দিয়ে দিবো।প্লিজ একবার।’

আরহাম হাসলেন।নম্রতার সুরে বললেন, ‘অবশ্যই।’

উমারকে কোলে নিয়েই তাঁর হাতটা কেমন যেনো কাঁপতে থাকলো।অজস্র চুমু এঁকে দিলো চোখেমুখে।আরহাম চোখ সরিয়ে নিলেন।দৃষ্টিকটু হলেও, এমন দৃশ্য উনার ভালো লাগছে না।একটু আগেই উমায়ের চুমু দিয়ে গেলেন আর…।দাঁতে দাঁত পিষে বিষয়টা কোনোমতে হজম করে নিলেন।রাদ জিজ্ঞেস করলো, ‘নাম কি?’

‘উমার।’

‘মাশা-আল্লাহ।কার মতো হয়েছে?’

‘বুঝি না।সবাই বলে,আমার মতো।’

‘হাফসার মতো হয়েছে।হাফসারও বাম গালে একটা তিল।’

‘আপনি কি করে জানলেন?’

রাদ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।কথা কাটাতে বলে, ‘আপনার বাসার সবাই কেমন আছেন?’

‘আমাকে দেখে বুকপকেটে যে ছবিটা লুকিয়েছিলেন জেলে,ওটা উমায়েরের ছবি তাই না?’

‘না।’

আরহাম আর প্রশ্ন করলেন না।আরহামের একমন বলে,সেটা উমায়েরেরই ছবি।কিন্তু তিনি অস্বীকার করছেন।

শেষ দীর্ঘ একটা স্পর্শ এঁকে রাদ উমারকে দিয়ে দিলো আরহামের কাছে।ঘড়ি দেখে বলল, ‘ফুপা কোথায়?’

‘বাইরে গিয়েছেন।’

‘আমি বিদায় নিতে আসছিলাম।আগামী সপ্তাহ চলে যাবো তুর্কিতে।দোয়ায় রাখবেন।’

‘ইন শা আল্লাহ।অতঃপর কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন, ‘একাই যাবেন?’

‘জ্বি।’

‘জীবনে জড়াবেন না কাউকে?’

‘না।’

‘আফওয়ান।আপনার এমন একটা সিদ্ধান্তের জন্য আমি দায়ী।কিন্তু আপনার ভাগ্যে উনি ছিলেন না।এই ফয়সালা মেনে নিতেই হবে।একা থাকলে, একাকীত্বে ভোগবেন।আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রেখে দ্বীন পূর্ণ করুন।আপনার একাকীত্বও ঘুচবে।আমিও শান্তি পাবো।কারন আমি চাই না আমার স্ত্রী কে নিয়ে আপনি ভাবুন।আড়ালে তাকে ভালোবাসুন।’

রাদ মিনমিনিয়ে আফসোসের সুরে বলে, ‘আমার ভাগ্যটা এতো খারাপ!’

আসি।আল্লাহ হাফিজ।’

রাদ চলে গেলো।আরহামের উত্তপ্ত দৃষ্টি পড়লো তাঁর ওপর।বুকের ভেতর অশান্তি বেড়ে গেলো।কোনোভাবে তাঁর স্মৃতি থেকে,উমায়েরের নামটা যদি মুছে যেত!ইসসস..কোনোভাবে!

গাড়িতে উঠে রাদ ঝাপসা হয়ে আসা চোখটা মুছে নিলো।হাফসাকে এক পলক দেখেছে।এতেই তাঁর বুকের ছটফটানি বেশ কমে গেছে।তার এক ভাসা ভাসা চেহারা দেখে হৃদয় তৃপ্ত।আগামী কয়েকদিন সে শান্তিমতো ঘুমাত পারবে।হারানোর যন্ত্রণায় মাঝরাতে ছটফট করে উঠবে না।সামনের সফরটা প্রশান্তিদায়ক হবে!

বাড়ির সীমনা পেরোতেই স্টিয়ারিং ছেড়ে কনুই দিয়ে চোখ গাল মুছে নিলেন।হৃদয়ে ভারী নিয়ে শুধু আওড়ালেন, ‘সবশেষে তুমি আমার হৃদয়ে থাকবে।আর অন্যজনের ভাগ্যে!যুগের পর যুগ চলে যাবে।তবে তোমাকে না পাওয়ার আক্ষেপ আমার ফুরাবে না।’

*******
রুমে এসে আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘আম্মুর সাথে কথা বলেছেন?’

‘হুমম।’

‘মাইমুনার সাথে?’

হাফসা উত্তর দিলো, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি।’

আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘উমার ঘুমিয়েছে?’
বলেই চমকে হাফসার দিকে তাকালেন।একটু আগে কানে কি গেলো!
আরহাম দ্রুত এসে হাফসার হাত ধরে এক্সাইটমেন্ট নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘উমায়ের কিছু বলেছেন আমাকে?একটু আগে?কিছু বলেছেন?’

হাফসা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ সম্মতি দিতেই আরহাম চমৎকার হাসলেন।বুকে হাত দিয়ে বললেন, ‘হৃদস্পন্দন থেমে গেছে।আরেকবার বলে চালু করে দিন।’

হাফসা মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালো।আরহাম খুব করে অনুরোধ করলেন, তবুও মুখ খুললো না।আরহাম ব্যর্থ হয়ে অসহায়ত্ব নিয়ে বললেন, ‘আমি ভালো করে শুনতে পাই নি।আগে বুঝাতেন, প্রিপারেশন নিয়ে শুনতাম।’

হাফসা উমারের অজুহাত দিয়ে চলে গেলো।রুমে গিয়ে চেপে রাখা ভারী শ্বাসটা ছেড়ে ভাবলো, ‘আমি কি করে বলেছি আমিই জানি আলভি।এই শব্দটা কন্ঠভেদ করতে একবছরেরও বেশী সময় নিলো। বুকের ভেতর দ্রীম দ্রীম আওয়াজ টা থামতে হয়তো পাঁচ ছয়দিন লেগে যাবে।

******
বিকেলবেলা____

বারান্দার শেষ প্রান্তে টুলে বসে আছে হাফসা।হালকা বাতাসে তাঁর ওড়না দূলছে।হালকা রোদ্দুর, সাথে বাতাস,কনকনে শীত।আবহাওয়া টা চমৎকার। হাফসা বাইরে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হাতে চকচক করে উঠা ব্রেসলেটে তাকায়।আব্বুর উপহার।যেদিন এসেছিলেন তার পরের দিন দিয়েছিলেন।

আনমনে এসব ভাবতে ভাবতেই আরহামের কথা মনে পড়ে।মানুষটা অসম্ভব রকমের অমায়িক।উনি দূ রকম;বাইরে একরকম আর ভিতরে একরকম। বাইরের দিক থেকে খুব গম্ভীর, স্বল্পভাষী,চুপচাপ। আর ভিতরে খুবই শান্ত,হাসিখুশি, রোমান্টিক।এরকমই তো হওয়া উচিত।স্ত্রীর কাছে থাকতে হয় খোলা বইয়ের মতো।সুখ-দূঃখ,ভালোবাসা শেয়ার করার একান্ত সঙ্গী যিনি।প্রিয় রবের প্রতি শুকরিয়ার শেষ নেই,এত এত উপহার,নিয়ামত তিনি দিয়েছেন।এতটুকুর জন্য হলেও,সারাজীবন শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না।

ছোটকেও অসম্ভব মিস করা হয়।হুটহাট এসে কেউ আর মন খারাপ ভালো করে দেয় না।বাবুই এর গল্প করে না।লুকিয়ে আনহাইজেনিক খাবার-দাবার পাচার করে না।আরহামের বিষয় উঠলে,লজ্জারাঙ্গা মুখ দেখা হয় না।আদওয়ার চলে যাওয়া,হাফসাকে আঘাত দিয়েছে ভীষণ।ইদানীং আরহামও কেমন বদলে গেছেন।আগের মতো এতো জোরদারি করেন না।মাঝে মাঝে ফুচকা,আইসক্রিম নিজেই নিয়ে আসেন।কোনোকিছুর জন্য বায়না ধরলে,উনার চেহারা বদলে যায়।হয়তো আদওয়ার কথা মনে পড়ে খুব।আরহাম অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছিলেন আদওয়াকে।গভীর রাতে একাকী উনার নীরবতা আর ছটফটানি-ই সেটা বুঝিয়ে দেয়।

মাইমুনা আপু একটু অসুস্থ।তাই হুট করে চলে গিয়েছেন ঘন্টাখানিক আগেই।একটু আগেই আম্মু আব্বুর সাথে কথা হলো।উমারকে না দেখে তাদের সময় যেনো যাচ্ছেই না।কবে ফিরবে কবে ফিরবে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে একসময় বলতে বাধ্য হলো, কালই ফিরবো আম্মু ইন শা আল্লাহ।’

*****
কলিং বেল চাপতে যাবেন তখুনি আদওয়ার আম্মুর কল আসে।সালাম বিনিময় হতেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কখন আসবে আরহাম?’

‘আজকে তো আসতে পারবো না মা।ইন শা আল্লাহ কাল এসে নিয়ে আসবো তাকে।’

পাশ থেকে সায়হান ফোন কানে নিয়ে সালাম দিয়ে বলল, ‘কোথায় তুমি?’

‘উমারের নানুবাড়ি থেকে ফিরেছি।কাল…

‘আমাকে নিলে না?’

আরহাম হেসে বললেন, ‘তুমি কি একা থাকতে পারো?’

‘তুমার সাথে পারবো।’

‘সিওর?’

‘হুমম।’

‘আচ্ছা।পরের বার তুমাকে নিয়ে যাবো ইন শা আল্লাহ।’

‘কখন?’

‘শীঘ্রই ইন শা আল্লাহ।খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করেছো?হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করেছো?’

‘হুমম।’

‘মাশা-আল্লাহ,গুড বয়।মা’য়ের কাছে দাও।’

সায়হান মাকে ফোন দিলে আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবা কি ডক্টরে গিয়েছিলেন?’

‘হ্যাঁ গিয়েছিলেন।ওষুধ দিয়েছে।’

‘আচ্ছা।ওষুধ ঠিকঠাক খাওয়ান।আমি এসে আবার নিয়ে যাবো ডক্টরে।’

‘আচ্ছা।’

‘উনি আসলে কাইন্ডলি একটু কল দিতে বলবেন।’

‘আচ্ছা, তুমি ভালো আছো তো?হাফসা ভালো?উমার ভালো?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’

‘নিয়ে এসো তাদের।অনেকদিন দেখিনি।’

‘ইন শা আল্লাহ দোয়া করবেন।’

ফোন রেখে বেল চাপতেই আম্মু দরজা খুললেন।আরহামের হৃদয়টা ধ্বক করে উঠলো কেন জানি।ডুকতেই আম্মু বললেন, ‘উমারকে কাল নিয়ে আসতে বলেছে।’

‘কাল-ই?’

‘হ্যাঁ।কয়টা দিন পর আইরা আসবে, তখন গিয়ে থাকবে নে হাফসা।আমার সময় কাটছে না।’

আরহাম মুচকি হাসলেন।উত্তর না দিয়ে মাইমুনার রুমের দিকে এগোলেন।কমল গায়ে জড়িয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।আরহাম পাশে গিয়েই মাথার টেম্পারেচার চেক করলেন।অতপর ঠান্ডা হাতটা গাল স্পর্শ করতেই মাইমুনা ঘুমের মধ্যে হালকা কেঁপে উঠে।আরহাম হাত সরিয়ে কাঁথা টেনে দিলেন গায়ে।সম্পর্কে সৃষ্টি হওয়া দূরত্ব আরহামকে খুব পোড়ায়!তবুও নীরবে ভালোবেসে যান!

‘ঘুম জড়ানো দূচোখ মেলে এই যে আমি রোজ বেলাতে তোমায় এসে দেখি,
তুমায় ভালোবাসি বলেই তো নাকি!

রংধনুটা পেরে এনে বুকের সাদা কাশবনে তুমার ছবি আঁকি,
তুমায় ভালোবাসি বলেই তো নাকি!

বিরামহীন দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন আরহাম।রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মাইমুনা ডিনার করেছেন?ওষুধ খেয়েছেন?কীভাবে ঠান্ডা লাগলো?’

‘জানি না।ওষুধ খেয়েছে।তুমি আসতে গেলে কেন?এতদূর জার্নি করে?’

‘আব্বু কোথায়?’

‘ঘুমিয়ে পড়েছেন আজ সকাল সকাল।’

‘ওহ।খিদে লেগেছে খুব।আজকে আপনি আর আমি একসাথে ডিনার করি আম্মু?’

আম্মু মুচকি হেসে কিচেনের দিকে চলে গেলেন।আম্মু জানেন,মাইমুনার একটু অসুস্থতায় সে এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেই।প্রিয়জনদের প্রতি আরহাম খুব দূর্বল।যেমন,বাহ্যিকভাবে মাইমুনার সাথে দূরত্ব রাখলেও, আড়ালে তাকে ভালোবাসার কমতি নেই।তেমন হাফসার ক্ষেএেও।উমারের জন্মের পরেই হাফসার শারীরিক কন্ডিশন ভালো ছিলো না।গোটা একদিন সেন্সলেসই ছিলো।কিন্তু আরহাম এসব জানেন না,জানবেন ও না কোনোদিন হয়তো।কারণ উনাক জানানো হয় নি।কত শত অশ্রু গড়িয়েছে মোনাজাতে,রবের অপরিসীম দয়া আর মতব্বতে আজকে সম্পূর্ণ একটা পরিবার তাদের।

আরহাম রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে দেখলেন, আম্মু ইতিমধ্যে খাবার সাজিয়ে ফেলেছেন।আরহাম গিয়ে আম্মুর কপালে চুমু দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে পড়লেন।আম্মু প্রথম লোকমা আরহামের দিকে এগিয়ে দিতে আরহাম হেসে ফেললেন।মাকে রিপিট করতে করতে বললেন, ‘আম্মু আপনিও চলুন না আমাদের সাথে।আমি ব্যবস্থা করি?’

‘ফার্স্ট টাইম হাফসার।তুমরা একা যাও।আগামী রোযায় যাবো ইন শা আল্লাহ।’

‘ইন শা আল্লাহ।’

*****
ডিনার শেষে মাইমুনার রুমে আসলেন আরহাম।হাফসা সাথের স্বল্প কথোপকথন শেষে মাইমুনার পাশে এসে দাঁড়ালেন।বিশেষ কোনো কারন ছাড়াই মনটা খারাপ লাগছে।একের পর এক ভারী দীর্ঘশ্বাস বুক চিরে বেরিয়ে আসছে।যেনো, কিছু একটার খুব অভাব।যেটা প্রশান্তিকে অশান্তিতে পরিণত করছে।উমারকেও তো দেখলেন,হাফসার সাথেও খোশালাপ হলো,মাইমুনা তো পাশেই তাহলে কিসের ঘাটতি!

মাথায় সূক্ষ এক যন্ত্রণা আস্তে আস্তে জায়গা করে নিচ্ছে।ভাবনা ছেড়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে মাইমুনার পাশে শুয়ে পড়লেন।জড়তা ভেঙ্গে তাকে একটু কাছে টেনে নিলেন।কপালে,গালে উষ্ণ স্পর্শ মেখে নিশ্চিন্তে চোখ বুঝতে গিয়েও আরহামের বুক ফেটে অসহ্য রকমের এক যন্ত্রণা অনুভব হলো।ঠেলেঠুলে সেই যন্ত্রণা চেপে রেখে আবারো ঘুমানোর চেষ্টা করলেন।ঘড়ির কাটা তাঁর বেগেই এগিয়ে চলছে।রাত তাঁর গতিতে দূর্গম এগিয়ে চলছে,তবুও আরহামের অস্থিরতা কমছে না,সময়ের সাথে যেনো পাল্লা দিয়ে বাড়ছেই।এমন যন্ত্রণার উপশম কী!

*******
এপাশ-ওপাশ ছটফট করতে করতে নির্ঘুম রাত কাটছিলো আরহামের তাই ছাদে এসছেন।ধীরেধীরে রাত গভীর হচ্ছে।আরহামের ব্যথিত হৃদয় সমুদ্রের উত্তাল গর্জন শেষে কিঞ্চিৎ শ্রান্ত।এ ব্যাথা,যন্ত্রণার কারন শ্যামাপাখিটা।অভাব টা হচ্ছে, তাঁর ভালোবাসার।হৃদয়ে নির্জীবতা বাসা বাঁধার কারন,আর যে তাঁর চঞ্চলতা, ছটফটানি আরহামকে মাতিয়ে রাখে না!শান্তি দেয় না!

আর কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে না বেরোনোর সময়!এটা ওটা খাবে বলে বায়না ধরে না।কলিং বেল বাজাতে ছুটে আসে না শ্যামাপাখিটা।আরহামের বুকে ঘুমাবে বলে জেদ ধরে না!কেউ আর সারাক্ষণ চঞ্চলতায় মাতিয়ে রাখে না বাড়িটা।রোজ বিকেলে ফাইয়াজের সাথে বল নিয়ে কেউ ঝগড়াও করে না।আরহাম প্রায় সময় বিকেলে বাগানে এসে বসে থাকেন।আরহামের চোখের সামনে ভেসে উঠে,এই তো সেদিন পর্যন্ত উনার শ্যামাপাখির পাগলামিতে অতিষ্ঠ ছিলেন তিনি।শ্যামাপাখিটা আর আরহামের একটু অসুবিধায় ব্যস্ত হয় না!তাঁর আবদার না শুনায় গাল ফুলিয়ে থাকে না আর!একটু আধটু ভালোবাসায় তাঁর লজ্জায় রক্তিম চেহারা আর দেখা হয় না।কেউ আর সারাদিন অপেক্ষা করে না আরহামের একটু সঙ্গ পাওয়ার!শ্যামাপাখিটা যেনো আরহামের জীবন থেকে নিজের সব অস্তিত্ব মুছে নিয়েছে।আরহামের একলা সময় পড়ে থাকে।শ্যামাপাখি তো নেই, যে ছুটে গিয়ে তাঁর রাগ ভাঙ্গাবেন।আরহামের কোলে মাথা রেখে গল্প শেনার বায়নাও ধরে না।রাতভর তাঁরা গুনারও বায়না নেই।আরহামের ভেতরটা ছিঁড়ে ফেড়ে যায় আদওয়ার কথা ভাবতে।শ্যামাপাখিটা আর নেই,ভাবলেই বুকটা হাহাকার করে উঠে।হাতুড়ি পিঠানোর মতো ভারী শব্দ হয় বুকের ভেতর।শ্যামাপাখির কথা মনে হলে,শক্ত মনটা মুহুর্তেই গলিয়ে যায়!

আদওয়ার শেষ রাত~

সে বায়না ধরে বলছিলো,
‘আপনাকে নিয়ে একবার তারা গুনতে চাই।খোলা আকাশের নিচে চাঁদ দেখতে চাই।রাতের পৃথিবীটা আর একটা বার দেখতে চাই।’

আদওয়া শেষবারের মতো যখন তারা গুনার ইচ্ছে পোষণ করেছিলো তখনও আরহাম জানতেন না যে তার এই চাওয়া টা খুব দূরে।

আদওয়ার আকুল কণ্ঠের কথাগুলো আরহামের ঠিক বুকের মাঝে গিয়ে ঠেকলো।প্রিয়তমার মুখে ‘মৃ’ ত্যু’ নামক শব্দটি শুনে হৃদয় কেঁপে উঠেছিলো উনার। সে মুহূর্তেই আদওয়াকে বেশ কয়েকটা ধমকও দিলেন,কেনো সে শেষবার শব্দটা বারবার ব্যবহার করছে।কিন্তু পরক্ষণেই তাকে বুকে জড়িয়ে বললেন,
‘একবার কেনো, হাজারবার তারা গুনবো আমরা।’

কিন্তু আরেকটা রাত আর শ্যামাপাখির জীবনে আসলো না।আদওয়ার কথা মনে হলে,আরহাম নিজেকে থামাতে পারেন না।প্রতিশ্রুতি ভেঙে শত ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে।ভেতরটা অস্থির হয়ে যায়,আদওয়াকে একটাবার দেখতে।কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়!

আজও বন্দি আপনি মনমাঝারে,
তারাগুলো আজও জ্বলে ঐ আধারে,
না থেকেও আপনি সর্বদা আমার সঙ্গি
জান্নাতের পথে ভালো থাকুন প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গি!(কপি)

*****
গাল বেয়ে পড়া অশ্রুর চিহ্ন মুছে হাফসার ফোনে কল দিলেন।যদিও এত রাতে তিনি নিশ্চয়ই ঘুমে কাত।দূবার রিং হতেই ঘুমু ঘুমু কন্ঠে সালাম ভেসে আসলো।আরহাম জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘রাগ লাগছে তাই না এত রাতে কল দেওয়ায়?’

‘আপনার ওপর রাগ করা যায় না।’

‘তাই?’

‘জ্বি।আপনি ঘুমোন নি?’

‘কেন জানি ঘুম আসছে না।বাবাটা পাশে নেই।খালি খালি লাগছে।’

হাফসা হেসে ফেললো।বলল, ‘একদিনই তো।ঘুমিয়ে পড়ুন।ঘুম না হলে আপনার মাথায় পেইন করবে।’

‘আপনাকে দেখবো।উমারকে দেখবো।ভিডিও কল দিচ্ছি।’

এলোমেলো ওরনা গুছিয়ে নিতে না নিতেই আরহামের কল এসে ঢুকলো।রিসিভ করতেই তিনি ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলেন।হাফসা সেটা সন্তোর্পনে ধরে এনে হাপ করে মুখে পুরে ঢোক গিললো।আরহাম মুখে হাত চেপে হাসতে লাগলেন।উমারকে দেখাতেই উনার চোখের ছটফটানি দেখলো হাফসা।এতটুক একটা প্রাণে এত মায়া!

হাফসার দিকে ক্যামেরা শো করতে বললেন।হাফসা কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কেঁদেছেন?’

আরহাম অপ্রস্তুত হলেন না।মুখে হাসি টেনে বললেন, ‘আমার কি দূ:খ আছে যে আমি কাঁদবো?’

‘এমনি-ই লাগছে।’

‘আপনার রুমের কাবার্ডের পাশে যান একটু।’

‘কেনো? ‘

‘কষ্ট করে উঠে যান না একটু।’

হাফসা পাশে গেলে উনি বললেন, ‘ফাস্ট তাকের ড্রয়ারে একটা এনভেলাপ আছে।সেটা খুলুন।’

হাফসার সাহস হলো না।মস্তিষ্কে ডিভোর্স শব্দটা ঘুর পাক খেলে যেতেই দূ কদম পিছিয়ে গেলো।আরহাম বোধহয় ওর ভয়ার্ত অবস্থা বুঝলেন।আশ্বস্ত করে বললেন, ‘অশুভ কিছু নয় হোমাপাখি।ভয় পাবেন না?’

‘প্ পাচ্ছি।আগে বলুন এতে কি আছে?’

‘আমি বলেছিলাম না যেদিন আমাদের বাবাটা আসবে, আপনাকে আর তাকে একটা গিফট দিবো।এটাই।এবার খুলুন।’

হাফসা খুলেই বলল, ‘চেগ এর পেপার?টাকা দিয়ে আমি কি করবো?’

‘আরে পাগলী ঘুম ছেড়ে ভালো করে দেখুন।’

মন দিয়ে পেপারটায় চোখ বুলিয়ে নিতেই হাফসার মুখে হাত চলে যায়।এক্সাইটমেন্টে জোরে বলে উঠে, ‘সত্যি?’

‘জ্বি।’

‘আপনার সাথে সত্যি সত্যিই স্বপ্নের ওই কালো কা’বা ছুঁয়ার সৌভাগ্য হবে আমার?’

‘এটা শুধু চেষ্টা।আল্লাহ চাইলে,সত্যিই সৌভাগ্য হবে।’

‘আমার কি কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখতে দিবেন না?’

‘নো।নাউ আই ডিজার্ভ এ্যা লাভলি হাগ,এ্যা সুইট কিস এন্ড এগেইন ওয়ান্ট টু লিসেন ইউর থ্রী ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড।’

হাফসা খিলখিল করে হাসে আরহামের কথা শুনে। হাসির শব্দ আরহামের বুকে এসে বাজে খুব। ফোনের ও প্রান্তে থাকা মেয়েটার হাসি স্বচক্ষে দেখতে ইচ্ছে করে খুব। আলতো হাতে গালটা ছুতে ইচ্ছে করে। আর বলতে ইচ্ছে করে, অসম্ভব ভালোবাসি হৃদয়হরণী!

কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন উনাকে,

‘মাইমুনা এত কিছু করলো তাকে কোনো শাস্তি দিবে না?আর হাফসার এত ধৈর্যের বিনিময় দিবে না?’

আরহাম অনেকক্ষণ চুপ থেকেছিলেন।অতপর জবাব দিয়েছিলেন, ‘উনি যতটুকু অন্যায় করেছেন মাশুল হিসেবে মেপে মেপে ঠিক তত বেশী ভালোবাসবো।যখন বুঝতে পারবেন উনার করা অন্যায়ের বিপরীতে আমি শুধু ভালোবাসাই দিয়ে যাচ্ছি, তখন সেই অনুতপ্ত হওয়াটাই উনার শাস্তি হবে।মাইমুনার জন্য এরচেয়ে ধারালো শাস্তি হতে পারে না।আর উমায়েরের বিনিময় হিসেবে কিছু দেওয়ার সাধ্য আমার নেই।উনি তো আমার অস্তিত্ব।আর নিজের অস্তিত্বকে ভালো না বেসে পারা যায়!”

কিছু কিছু জিনিস প্রিয় হলেও হারাতে হয়,
কিছু কিছু জিনিস অপ্রিয় হলেও,মানিয়ে নিতে হয়!

*****
নির্জনতায় আরহামের হালকা হাসিটা পরিষ্কার বুঝা গেলো না,কিন্তু চোখের চিকচিক করা পানিটুকু বুঝা গেলো।আরহাম মুচকি হেসে বুকের বা পাশে হাত রেখে আওড়ালেন, আপনি আমার হৃদয়ে তোলে রাখা অতি যত্নের এক প্রজাপতি শ্যামাপাখি~

তিনতারাতে আটকে আছি আমি,
হৃদ মাঝারে এিভুজের বাস,
বদলানো,আর চলে যাওয়ার নিয়ম ভেঙে,
ফের দেখা হবে জান্নাতে,
আমার আশ্বাস!

…….সমাপ্ত……

বিঃদ্রঃ-#অপেক্ষা গল্পের জন্য যাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তারা হয়তো একসময় আমাকে ভুলে যাবে।আমি আন্তরিকাবে দূ:খিত।এই গল্পের প্রথমদিকের পাঠকরাই জানে,কত কত অপেক্ষার পর আমি এক পর্ব পোস্ট দিতাম।লিখার আগ্রহ পেতাম না।যাই হোক,অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে #অপেক্ষা শেষ করেছি।

গল্পটা একটা আসক্তি!আমার মাঝে মাঝে মনে হ’য়েছে,আমি আসলেই ভুল করছি।এই গল্পের মাধ্যমে আপনাদের অনেক মূল্যবান সময় চুম্বকের মতো টেনে নিয়েছি।এজন্য অনেক সময়ই মনে হতো,লিখা বাদ দেই।পর্বগুলো কেটে দিই।অনেকবার এমন ভেবেও পারি নি,কারণ #অপেক্ষা আমার কাছে একটা মায়া💚।হুট করে একদিন চিন্তাগুলো ভয়াবহ রুপ নেবে,তখন সত্যি সত্যিই হয়তো কেটে দিবো।

গল্পটা অনেকবার কাটতে গিয়ে,সরে আসতে গিয়ে এই মায়া’র কারনেই পারলাম না।গল্পের চরিএ কাল্পনিক হলেও,আমার কাছে খুব যত্নের।ছোট্ট একটা উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম,যে মাসনা’কে নিয়েও সুন্দর করে সংসার করা যা।যেটা সমাজ নেগেটিভলি নেয়।সেটা বুঝাতে গিয়ে অনেক কিছু যোগ করে ফেলেছি কীভাবে।তাই এতো লম্বা হয়েছে।আমি জানি, আমি মোটেও পারি নি।যাকগে, কমেন্টে তিনটা প্রশ্ন আপনাদের রেখে গেলাম।

(মানুষ মাএই ভুল।ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে খুব খুশি হবো।যারা কখনো লাইক কমেন্ট করেন নি আমার সাইলেন্ট পাঠক, শেষ পর্ব হিসেবে আপনাদেরও একটা অভিমত চাই।)

বি:দ্র: যারা যারা এই গল্প পড়েছেন তারা এটা সেইভ করে রাখুন।গল্পের সিজন টু আসবে
আর সিজন টু পড়তে না পারলে আপনার সিজন ১ পড়াই বৃথা।কারন সিজন টুতে আমি এমন কিছু টুইস্ট রাখবো,যেটা কল্পনার বাইরে।বিশেষ করে যারা আমার গল্পটা নেগেটিভলি নিয়েছেন তারা অবশ্যই পড়বেন।

আল বিদা~

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।