লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ২১

আকাশঃ কথা কানে যায় নি? বল্লাম না ক্ষুদা পেয়েছে তাড়াতাড়ি যা (ধমক দিয়ে)

মেঘলাঃ উনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে আমি করলেই মার খেতে হবে আজব নিয়ম, কেন আমি কি মানুষ নই (মনে মনে)
আকাশঃ যেদিন আমার মত বুদ্ধি হবে সেদিন তুই ও যা খুশি করিস।
মেঘলা অবাক এর সাথে ভয় মিশিয়ে আমতা আমতা করে  বলল আ আ আ আমি কিছু বলি নি…
আকাশঃ আমি স্পষ্টই শুনেছি কি বলেছিস এবার যদি না যাস আর খাবই না।
মেঘলা পিছন ঘুরে দৌড়। 
বিপাশার এসব মোটেও ভাল লাগল না। সেও কিছুক্ষন পরে মেঘলার পিছু পিছু রান্না ঘরে গেল।
মেঘলা আকাশের ১৪ গোস্টি উদ্ধার করতে করতে প্লেটে খাবার নিচ্ছে।
বিপাশাঃ মেঘলা বাইরে অনেকেই বসে আছে এদের তো কিছু খাবার দেওয়া হয় নি তুমি প্লিজ একটু পায়েশ বসিয়ে দাও না।
মেঘলাঃ আচ্ছা ভাবি আমি ভাইয়ার খাবারটা দিয়ে এসেই করে দিচ্ছি।
বিপাশাঃ আরে আকাশ তো কেবল ঘরে গেল ও ফ্রেশ হতে হতে তুমি বসিয়ে দাও।
মেঘলা কারোর মুখের উপড় কথা বলতে পারেনা আর আকাশের উপরেও রেগে আছে তাই আকাশের খাবার রেখে পায়েশের জোগার করতে লাগল 
বিপাশাঃ এবার দেখি আকাশের এত কেয়ার কোথায় যায়। আকাশ যেভাবে বারবার বলে গেল দেরি হলে তোমার কি অবস্থা করবে দেখতেই পাবে (মনে মনে)
আকাশ এদিকে অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠল তার খুব রাগ হচ্ছে। সে রুম থেকে বেরিয়ে দেখল মেঘলা রান্না ঘরে কিছু রান্না করছে এটা দেখে আকাশ ক্ষেপে গেল, রাগে ছাদে চলে গেল প্রায় আধা ঘন্টা পড়ে নিজের ঘরে ফিরে আসল।
ততক্ষনে মেঘলাও এসেছে তার ঘরে।
আকাশ রেগে বলল লাগবে না খাবার নিয়ে যা এসব….
মেঘলাঃ আগে বল্লেই তো হত তাহলে কষ্ট করে আনতাম না।
আকাশঃ খাবার এনে আমার জীবন একদম ধন্য করে দিয়েছিস মনে হয়? চাই না তোর খাবার।
মেঘলাঃ ও আমি তো ভুলেই  গেছিলাম। বাড়িতে এখন আপনার বউ আছে সেই নিশ্চুই খায়িয়ে দিয়ে গেছে তাহলে আমার খাবার ভাল লাগবে কেন? যাচ্ছি আমি বলে মেঘলা চলে যাইয়ে চাইল।
আকাশ মেঘলার হাত ধরে বলল  তুই দেড়ি করে এসেছিস জন্য রাগ করলাম আর তুই আমার রাগ না ভাংগিয়ে নিজেই রাগ দেখাচ্ছিস?
আমাকে খাবার না দিয়েই চলে যাচ্ছিস…??
মেঘলাঃ হাত ছাড়ুন যখন তখন মেয়েদের গায়ে হাত দিতে খুব ভাল লাগে তাই না? দুশ্চরিত্র ছেলে একটা।
আকাশঃ নিচে তোর আচারন আশ্চর্যজনক লাগলেও অস্বাভাবিক লাগে নি কিন্তু এখন তো দেখছি তোর মাথায় সত্যি সত্যি গন্ডগোল দেখা দিয়েছে….কাকে কি বলছিস বোঝতে পারছিস?
মেঘলাঃ যাকে যা বলা উচিত তাই বলছি….আপনার মত ছেলেদের জন্যই আমার হাজার হাজার মেয়েদের স্বপ্ন ভেংগে যায়,তা দের জীবন নস্ট হয়ে যায়….
আকাশ অবাক হয়ে বলল কিসব বলছিস মেঘলা?
মেঘলাঃ ঠিকি বলছি কতগুলি মেয়ের জীবন নষ্ট করেছেন হয়ত নিজেও জানেনা আপনাকে দেখে আজ আমার লজ্জা হচ্ছে কি করে এমন একটা প্রতারককে আমি ভালবাসলাম? ইরা আপু কে বিয়ে করার পড়েও আমার সাথে এত ঘনিষ্ট হতে লজ্জা করল না? ছি ছি ছি আজ যদি আপু না বলত আর বিয়ের ছবি গুলি না দেখতাম আমি তো এসব জানতেই পাড়তাম না। আপনাকে দেখে ঘিন্না হচ্ছে…আপনার এই অপবিত্র হায়ে আর কখনো আমাকে স্পর্শ করবেন i just hate you.
আকাশ কোনরকম নিজেকে কন্ট্রোল করে মেঘলার হাত থেকে খাবার টা টেবিলে রাখল তারপর আলমারি থেকে কিছু কাপড় নিয়ে মেঘলার উপড় ছুড়ে মারল। 
মেঘলাঃ কি হয়েছে?এগুলি দিয়ে কি হবে?
আকাশঃ এগুলো নিয়ে আমার সাথে আয়… 
মেঘলা কিছু বোঝল না সে আকাশের পিছু পিছু গেল। 
আকাশ নিচে নেমে ইরার কাছে গেল মেঘলাও তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে….
আকাশ মেঘলার হাত থেকে কাপড় গুলি নিয়ে ইরার সামনে রেখে বলল ইরা আমার কাপড় গুলি কেচে দাও তো….
আকাশের কথায় সবাই যেন থমকে গেল। 
বিপাশাঃ কি বলছো এসব ও কাপড় কাচবে মানে?
আকাশঃ হ্যা অবশ্যই কাচবে ও যেহেতু আমার বউ  তাহলে তো ওর উচিত আমার সব কাজ করা তাই না? আর আমি ভাইয়া নই আমার বউ বাড়ির সব কাজ করবে ইরা বেবি কাজে লেগে পড়ো। আজ থেকে তুমি আমাদের সংসার চালাবে।
ইরা অবাক হয়ে বলল কিন্তু আকাশ আমাদের তো বিয়েই হয়নি?
ইরার কথা শুনে মেঘলা আকাশ থেকে পড়ল,কি মিথ্যাবাদি মেয়েরে বাবা একটু আগেই তো বলেছে বিয়ে হয়েছে…
আকাশঃ ওমা বিয়ে হয় নি বোঝি…?? তাহলে সারা বাড়ির লোক কে কেন বলে বেড়াচ্ছো বিয়ে হয়েছে?
ইরাঃ ……..
বিয়ে হয়নি শুনে মেঘলার মাথা ঘুরছে ছি ছি এই মেয়ের কথায় আকাশকে কতগুলি খারাপ কথা বলেছি আজ আমার কপালে তো দুঃখ আছে  জানি কিন্তু বিয়ে যদি না হয় তাহলে ছবিগুলি…?? (মনে মনে)
ইরাঃ না মানে বিয়ে হয়েছে বলতে এনগেইজমেন্ট হয়েছে সেটাই বলেছি আর কি…সেদিন যদি তুমি রাজি থাকতে তাহলে তো বিয়েটা হয়েই যেত।
আকাশঃ যেটা হয় নি সেটা না বলে যেটা হয়েছে সেটা বল্লে ভাল হয় না?
ইরাঃ ভুল হয়ে গেছে সরি আকাশ আমি বোঝতে পাড়ি নি।
আকাশঃ ভুল যখন করেই ফেলেছো কাপড় গুলি ধুয়ে দাও তাহলে আর এমন ভুল হবে না। মেঘলার দিকে তাকিয়ে আকাশ বলল আজ হোক কাল হোক তোমার সাথে বিয়েটা তো আমার হবেই আফটার অল দুশ্চরিত্র তো হতে পাড়ব না। সবাই যখন ধরেই নিয়েছে বিয়েটা হয়ে গেছে তাহলে বিয়েটা হবেই তাই বরের কাজ করা এখন থেকেই শিখে ফেলো। যদি কাজ করতে না চাও বলতে পাড়ো তাহলে আমি ভেবে দেখব…. 
ইরাঃ না না আমি করে দিচ্ছি, সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে কি এত সহজে ছাড়া যায় (মনে মনে) কিন্তু মেঘলা তোকে দিয়ে কাপড় ধুয়িয়েছি বলে আকাশকে দিয়ে আমায় জব্দ করালি এর ফল ভাল হবে না… সুযোগ একদিন আমারো আসবে…
আকাশ চলে যাচ্ছে মেঘলা দৌড়ে  গিয়ে বলল বিয়ে হয়নি সেটা ঘরে বল্লেই তো হত সবার সামনে ইরা আপুকে এভাবে বলার কি ছিল? উনি নিশ্চুই ভেবেছে আমি এসব করিয়েছি।
আকাশঃ ঘরে তোকে সারাদিন বললেও তুই শুনতি না তাই যে বলেছে বিয়ে হয়েছে তাকে দিয়েই বলিয়ে দিলাম বিয়েটা হয় নি….!! আকাশ কথায় নয় কাজে বিশ্বাসি। সর সামনে থেকে তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই আমার নেই। বলে আকাশ চলে যাচ্ছে।
মেঘলাঃ ভাইয়া আর একটা প্রশ্ন ছিল একটু শুনুন না? আকাশের পিছন পিছন ছুটছে মেঘলা কিন্তু আকাশ তাকে পাত্তা না দিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে চাইলো, মেঘলা তার আগেই কোন রকমে ঘরে ঢুকে গেল।
আকাশঃ মেঘলা বের হ ঘর থেকে তোর সাথে আমার কোন কথা নেই।
মেঘলাঃ আপনি না বলেছেন আমি আজ এ ঘরে থাকব…??
আকাশঃ হুম থাকবি কিন্তু তুই কি এখন ঘুমাবি? আমার তো মনে হয় না তুই ঘুমাবি কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবি আমার রাগ উঠবে তাই এখন যা পরে আছিস যদি ঘুমাস তাহলে ঘরে থাক না হলে এক্ষুনি বের হ। 
মেঘলাঃ ঘুমাব তো…
আকাশঃ ঠিক আছে তাহলে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পর…একটা আওয়াজ করবি তাহলে গলা টিপে দিব।
মেঘলাঃ খুব রাগ করেছে মনে হচ্ছে. আর করবেই বা না কেন? কতগুলি খারাপ কথা বল্লাম… রাগ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু রাগ তো ভাংগাতে হবে (মনে মনে)
আকাশ সোফায় বসে এক মনে গেম খেলেছে মেঘলার দিকে তাকানোর নামেই নিচ্ছে না।
মেঘলা বিছানায় শুয়ে বার বার আকাশ কে উঁকি মেরে দেখছে আর চিন্তা করছে কি বাহানা নিয়ে কথা বলা যায়?
হটাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল।
সে উঠে গিয়ে একটা মেহেদী নিয়ে আসল। 
মেঘলাঃ আমাকে কেউ ভালবাসে না তাই কেউ একটু মেহেদিও কেউ পড়িয়ে দিল না….. (অভিমানি কন্ঠে)
আকাশঃ…..
মেঘলা এবার আর একটু জোরে বলল আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি? আমার কি ইচ্ছা করে না?
আকাশ ফোনের দিকে মুখ রেখেই বলল কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবি না বলছি না? নিচে গিয়ে কাউকে বল পরিয়ে দিবে।
মেঘলাঃ আমার কেউ নেই…  আমাকে একা একাই পড়তে হবে। বলে নিজেই মেহেদি দিতে শুরু করল  মেহেদী পড়তে গিয়ে গালে, চুলে,জামায়  সব জায়গায় মেহেদি লাগিয়ে ফেলেছে সে।
আকাশঃ উফফ….আর সহ্য হচ্ছে না হচ্ছেটা কি এসব?কি করছিস এগুলা?
মেঘলাঃ কোথায় কি হয়েছে?মেহেদি পরছি।
আকাশঃ পরার সাথে সাথে একটু খেয়েও দেখ কেমন লাগে?
মেঘলাঃ আজব তো….কি ধরনের কথা এগুলো? জীবনেও শুনি নি মেহেদী খাওয়া যায়।
আকাশঃ আমিও দেখিনি কাউকে চুলে গালে জামায় মেহেদী পরতে…
মেঘলা এবার লক্ষ্য করল আর দেখে অবাক হলেও মুখ ভার করে বলল তাতে আপনার কি? আমাকে তো আর পড়িয়ে দিবেন না।
আকাশ উঠে গিয়ে বলল বোঝেছি উঠ গিয়ে ভাল করে হাতমুখ ধোয়ে আয়….
মেঘলাঃ কেন?
আকাশঃ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না যাবি নাকি যাবি না?
মেঘলা কথা না বাড়িয়ে গিয়ে ধুয়ে আসল। 
আকাশ মেহেদিটা নিজের হাতে নিয়ে মেঘলাকে পাশে বসিয়ে মেঘলার হাতে মেহেদী  পরিয়ে দিতে শুরু করল। 
মেঘলা এটাই তো চাচ্ছিলাম….এবার কথা না বলে যাবে কোথায়?
মেঘলাঃ একটা কথা বলি…
আকাশঃ না…
মেঘলাঃ কিসের না? আমি বলছি আপনি শুনলে শুনুন না শুনলে নাই… আমি তো কাউকে বলি নি  আমার কথা শুনতে।
আচ্ছা আমি কাপড় ধুয়েছি এটা কেউ জানল কি করে? আমি তাকে বলি নি আর আমাকে কাপড় ধুতে কেউ দেখেও নি তাহলে তিনি কি করে জানলেন?
আকাশ মেহেদী পরানোর দিকে মনোযোগ রেখেই বলল ছাদে লাইটিং ভালো করে করা হয়েছে কিনা দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে গিয়ে অদ্ভুত কিছু দেখলাম।
মেঘলাঃ কি দেখলেন?
আকাশঃ ছাদে কিছু ভিজা কাপড়  ঝুলছে বিয়ে বাড়িতে এতগুলি কাপড় ধোয়ার কার ইচ্ছে হতে পারে তাও এই রাতের বেলা চিন্তা করছিলাম তখন মনে হল আমাদের বাড়িতে তো তুই আর ভাবি ছাড়া কোন মেয়ে নেই, তোর আর ভাবির ২ জনের কাপড় চোপড় আমার চিনা, বাকি থাকল সুমি সে টিশার্ট প্যান্ট পড়ে অতএব ভিজা কাপড় গুলি ওর নয়  তাই বোঝলাম কাপড়গুলি ইরার আর তুই ছাড়া বাড়িতে সবাই আজ মেহেদি পড়েছে মেহেদি হাতে কেউ নিশ্চুই এতগুলি কাপড় কাচবে না তাই বোঝলাম এগুলি তুই ধুয়েছিস।
মেঘলাঃ ওমা কি বুদ্ধি আপনার…কিন্তু আমি ধুলেই বা কি? তাই বলে ইরা আপুকে দিয়ে কাজ করাবেন?
আকাশঃ আমার বউ আমি কি করাব না করাব আমি বোঝব, তুই চিন্তা করছিস কেন?
মেঘলাঃ তাই তো….!!!
আকাশঃ আচ্ছা মেঘলা তোর কি একবারো মনে হল না ইরার সাথে যদি আমার বিয়েই হয়ে থাকে তাহলে ও কেন আমাদের বাড়িতে থাকে না আর যদিওবা না থাকে তাহলে আসার পর কেন তোর রুমে থাকবে আমার রুমে কেন নয়?
মেঘলাঃ এসব তো আগে ভাবি নি।
আকাশঃ এসব না ভাবলেও ভেবেছিস আকাশ আমাকে কিভাবে ঠকাল, আমার সাথে প্রতারনা করলো? আমাকে নিয়ে খেলল এসব ঠিকি ভেবেছিস তাই না?
মেঘলাঃ ভাবাভাবির কি আছে খেলেছেনই তো…
এতক্ষন আকাশ নিচের দিকে তাকিয়ে মেহেদি পড়াচ্ছিল আর কথা বলছিল কিন্তু মেঘলার এই কথাটা শুনে মেহেদি পরানো বন্ধ করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল কি করেছি?
মেঘলাঃ খেলেছেন…. 
আকাশ একটা থাপ্পড় মারল… 
মেঘলা যেই গালে হাত দিতে যাবে আকাশ তার হাত ধরে বলল মেহেদী নস্ট হলে মেরে ফেলব।
মেঘলাঃ মারলেন কেন? মিথ্যা কি বলেছি এনগেইজম্যান্ট আর বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কি?

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।