ব্যাগ থেকে খুচরো টাকা বের করে বাদামওয়ালাকে দিলো পুষ্প। পুরনো নিউজপেপারে মোড়ানো বাদাম গুলো হাতে বয়ে বেঞ্চে বসল। কাধব্যাগটা রেখে দিলো পাশে। একটা একটা করে বাদাম ছিলে ছু*ড়ে ছু*ড়ে মুখে ভরল। ছোট খাটো পার্কের এই জায়গাটা সবচেয়ে নিরিবিলি। মানুষ জন কম আসে। ইকবালের সাথে দেখা করার জন্যে পুষ্পর কাছে এটাই শ্রেষ্ঠ স্থান ৷ পাক্কা আড়াই বছর চুটিয়ে প্রেম করল,অথচ ধূসরের কানে পৌঁছাল না। এটাও তারই একটা কারন। ইকবাল আর সে যথেষ্ট সচেতন। কারো সন্দেহ হোক,এমন কাজ এখন পর্যন্ত করেনি। এমনকি বাড়ির মানুষ কারো সামনে পুষ্প, ইকবালের দিক তাকায় অবধি না। পাছে কেউ ধরে ফেলে! তবে সেদিন দূর্ঘটনা বশত ইকবাল কে দেখতে গিয়ে পিউটা দেখে ফেলেছে। ভাগ্যিশ ওটা একটা হাঁদারাম। নাহলে বুঝে ফেলত নির্ঘাত। কী হতো তাহলে?
ভাবতেই পুষ্পর হেচকি উঠে যায় । ব্যাগে পানিও আনেনি। পুষ্প হেচকি তুলতে তুলতে আশেপাশে তাকাল। এতক্ষন চোখের সামনে ঘুরঘুর করা পানিওয়ালা একটাও নেই এখন। ঠিক সেই সময় মুখের সামনে টলটলে জল ভর্তি পানির বোতল ধরে কেউ একজন। চট করে আগন্তুকের দিকে ফিরল সে। ইকবাল মুচকি হাসল, সাথে বলল,
” নাও?”
পুষ্প হেসে পানির বোতল হাতে নেয়। ছিপি আগেভাগেই ঢিলে করে রেখেছে ইকবাল। পানি খাওয়ার সময়টায় সে ঘুরে এসে পাশে বসল। বলল,
” অনেকক্ষন বসিয়ে রেখেছি তাইনা?”
পুষ্প ঠোঁটের চারপাশে লেগে থাকা জল মুছে তাকাল। মিষ্টি হেসে বলল,
” সমস্যা নেই।”
ইকবাল ভ্রু কোঁচকায়,
” তোমার কি আমার ওপর কখনওই রা*গ হয়না? ”
পুষ্প অবাক হয়ে বলল,
” ওমা, রাগ কেন হবে?”
” হবেনা কেন? এই যে প্রতিটা দিন আমি তোমায় বসিয়ে রাখি,অপেক্ষা করাই,সময়মতো আসতে পারিনা… ”
পুষ্প দুদিকে মাথা নেড়ে স্ফূর্ত কণ্ঠে জানাল,
” একদমই নয়। আপনি যে সাংঘাতিক ব্যস্ততার মধ্যেও আমায় রোজ সময় দিচ্ছেন,এটাই অনেক। তাছাড়া,তোমার জন্যে অপেক্ষা করতে আমার দারুন লাগে। কখন তুমি আসবে সেই আশায় পথ চেয়ে থাকার মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি আছে ইকবাল। ও তুমি বুঝবেনা।”
ইকবাল মুগ্ধতায় এবারেও হাসল। উৎফুল্ল চিত্তের ছেলেটির ঠোঁটে হাসি লেগে থাকে সবসময়। আরেকটু কাছে এগিয়ে বলল,
” নিশ্চয়ই কোনও ভালো কাজ করেছিলাম। তাই জন্যে তোমাকে পেয়েছি আমার জীবনে। ”
পুষ্পর কোমল হাতের আঙুলে হাত বোলাল ইকবাল। ওমনি সে মুখ বেঁকিয়ে বলে,
” নাটওওক! কতদিন পেছনে ঘুরানোর পর পাত্তা দিয়েছো হ্যাঁ? মনে নেই সেসব?”
ইকবাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়,
” কী করব বলো জানেমন! ভ*য় পাচ্ছিলাম,পাছে ধূসরের সাথে বন্ধুত্বটা যদি ন*ষ্ট হয়? ও যদি খা*রাপ ভাবে আমায়? ওরই ছোট বেলার বন্ধু হয়ে ওর বোনকে পটয়েছি,ফুসলাচ্ছি এসব ভাবে? তাইজন্যেইতো তোমার ভালোবাসা দেখেও না দেখার ভান করতে হয়েছিল। মনে মনে আমি কী তোমায় ভালোবাসিনি? সেই প্রথম তোমায় দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম। অথচ মনকে সংযত ও বা রাখতে পারলাম কই? তোমার এক সমুদ্র প্রেম আমাকেও ভাসিয়ে নিলো যে!”
পুষ্প ভ্রুঁ উচায়,
” তাই? তা এখন যখন ভাইয়া জানবেন,তখন কী করবে শুনি? একদিন না একদিন কী আমরা পরিবারকে জানাব না?”
ইকবাল চি*ন্তিত কণ্ঠে বলল,
” সেটা ভাবলেই তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। তবে তুমি ভেবনা,ধূসরকে আমি চিনি। ও যদি বুঝতে পারে আমি তোমাকে মন থেকে চাই,ও নিশ্চয়ই না করবেনা।”
পুষ্প থেমে থেমে বলল
” কিন্তু ইকবাল…., বাবা? সেত তোমাকে সহ্যই করতে পারেনা।”
ইকবাল মাছি তাড়ানোর মত হাত নেড়ে বলল,
” আরে ওসব নিয়ে চিন্তা নেই। একবার ধূসর জানুক,বাকী সবাইকে দেখবে ওই মানাবে,রাজি করাবে। আমার জিগরি দোস্ত না? বাই দ্যা ওয়ে,তুমি এত ভাবছো কেন? তুমি না প্রথম দিকে ভীষণ সাহসী ছিলে? বলেছিলে বাবাকে আমি বোঝাব এই সেই,এখন কী হলো?”
ইকবাল দৃষ্টি চো*খা করে ভ্রুঁ নাঁচাল। পুষ্প ওষ্ঠ উলটে বলল,
” তখন তো তোমার প্রেমে পাগল হয়ে গেছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে দিন যত যাচ্ছে,ভ*য় লাগছে। কী হবে, কী করব কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।”
” কী আবার করব? মন প্রান দিয়ে প্রেম করব,সারাদিন ঘুরব,পরেরটা পরে দেখা যাবে৷ আচ্ছা,এখন বলো,কোথায় কোথায় যাবে আজ?”
পুষ্প একটু ভেবে বলল, ” চলো রিক্সায় ঘুরি। অবশ্যই এমন কোনও এরিয়ায় ঘুরব,যেখানে ধূসর ভাইয়ের নেটওয়ার্ক কম। বুঝলে?”
ইকবাল মাথা দোলায়,
” বুঝলাম। তাহলে চলুন মহারানী!”
পুষ্প এদিক ওদিক দেখে বলল,
” কিন্তু আমার পালকি কোথায়? আপনি কী আমায় হাঁটিয়ে নেবেন মহারাজ?”
ইকবাল জ্বিভ কে*টে বলল,
” মাথা খারাপ? আপনাকে হাঁটিয়ে নেয়ার মত সাহস আমার আছে? এই যে,মহারাজের পিঠটাই আপনার পালকি রানি,আপনি এতে চড়ে যাবেন। ”
ইকবাল পিঠ পেতে দিলো। ওমনি দুম করে কি*ল বসাল পুষ্প। ইকবাল পিঠ চে*পে ব্য*থায় দুলে ওঠে। সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দুঃখী কন্ঠে বলে,
” এত জোরে মা*রলে?”
পুষ্প খিলঝিল করে হেসে উঠল ওর মুখভঙ্গি দেখে। ইকবাল সব ভুলে চেয়ে থাকে। নিষ্পলক প্রনিধানে পরোখ করে মনকে জানায়,
” এই হাসির জন্যে সে জান লু* টিয়ে দিতেও প্রস্তুত।”
_______
পিউয়ের কান্ডকারখানা দেখে দেখে হয়*রান হয়ে পরছে সাদিফ। গত পরশু থেকে মেয়েটা ওকে দেখলেই মিটিমিটি হাসছে, আর গাইছে উদ্ভট সব গান। এরকম গান বাপের জন্মে শোনেনি সে। এইত একটু আগেও শুনিয়ে গেল। আর সেই থেকে সাদিফ চেহারা গুঁটিয়ে দরজার দিক চেয়ে আছে। পিউয়ের মাথায় হঠাৎ কীসের ভূত চা*পলো কে জানে! তার ভাবনার মধ্যেই ঘরে ঢুকলেন জবা বেগম। হাতে দুধ ভর্তি লম্বা কাঁচের গ্লাস। ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
” নে বাবা,গ*রম গর*ম খেয়ে ফেল দেখি।”
সাদিফ তাকাল। দ্বিরুক্তি না করে গ্লাস হাতে নিয়ে চুমুক দিল। তার মায়ের কাছে সে এখনও ছোট্ট বাচ্চা বিধায় রোজ রাতে এক গ্লাস দুধ দেবেন। নাহলে না কী গায়ে শক্তি হয়না। সাদিফ হাজার মোচ*ড়া-মুচ*ড়ি করলেও লাভ নেই সেখানে। ইমোশোনাল ব্লাকমে*ইল করে হলেও জবা বেগম খাইয়াবেন,খাইয়েই ছাড়বেন। তাই আর সাদিফ আপত্তি করেনা। যেখানে লাভ নেই সেখানে কথা ন*ষ্ট করে এনার্জি খোয়া*নোর মত লোকসান সে করেনা।
জবা বেগম পাশে বসলেন। উজ্জ্বল মুখমণ্ডল। সাদিফ গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল,
” কিছু বলবে?”
জবা বেগম মাথা নেড়ে বললেন,
” না। কী বলব!”
” ওহ।”
জবা বেগম মন দিয়ে ছেলের দিক চেয়ে রইলেন। তার গায়ের রং শ্যামলা বলে কত কথাই না শুনেছেন জীবনে। এ বাড়ির বাকী বউয়েরা যেখানে ফর্সা,সুন্দর সেখানে তিনি ছিলেন বড়ই বেনানান। যদিও আজমল বা এ বাড়ির কেউ বিন্দুমাত্র তাকে হেয় করে কথা বলেনি। উহু,কোনও দিন এরকম হয়েছে বলেও মনে পড়েনা। তবুও জবা বেগমের অবাক লাগে, তার মত কালো মানুষের কোল জুড়ে এমন সুন্দর একটা ছেলে এসেছে ভাবতেই। সাদিফের চেহারা,দৈহিক গঠন,সব কিছু নির্দ্বিধায় তাকে সুদর্শন পুরুষের আখ্যান দিতে প্রস্তুত। জবা বেগমের বুক ফুলে আসে গর্বে, নিজেকে এমন চমৎকার দর্শনের ছেলের জননী ভাবতেই। ওদিকে পুষ্প? ওটাও কম সুন্দর? যেমন রুপ,তেমন গুন। ভদ্র,শান্ত। জবা বেগম মনে মনে এঁকে ফেললেন ওদের পাশাপাশি বসা একটা ছবি। ইশ! কী দারুন মানিয়েছে দুটোকে! ভেবেই হেসে ফেললেন। সাদিফ ভ্রুঁ কোঁচকাল,
” কী ব্যাপার? একা একা হাসছো কেন?”
খানিক থতমত খেলেন তিনি।
” না মানে একটা কথা ভাবছিলাম।”
” কী কথা? ”
জবা বেগম সময় নিয়ে বললেন,
” তোর বিয়ে নিয়ে।”
সাদিফ চকিতে তাকাল। নিশ্চিত হতে শুধাল ” কী?”
” হ্যাঁ। বড় হয়েছিস,বয়স হচ্ছে,বিয়ে দেবনা? আমরাও বা কতদিন বাঁচব,নাতি নাতনীর মুখ দেখব তো না কি?”
সাদিফ ঠোঁট ফু*লিয়ে শ্বাস ফেলে দুদিকে মাথা নেড়ে বিড়বিড় করল ” আনবিলিভ-এবল!”
আস্তে বললেও কানে গেল জবা বেগমের।
উদ্বেগ নিয়ে বললেন ‘ অবিশ্বাসের কী আছে এখানে? কথাটা গায়ে লাগালি না তাইনা?”
” মা! হঠাৎ কী হয়েছে বলোতো? আমার বিয়ে নিয়ে পরলে কেন? ভাইয়া আছে,সিরিয়ালে পুষ্প আছে এরপর আমি। অনেক দেরি এখনও। তাছাড়া সবে সবে চাকরি পেয়েছি এখনই বিয়ে-টিয়ে করলে কনসেনট্রেশন ঘুরে যাবে।”
” আরে এত দূর তোকে কে ভাবতে বলেছে? তুই মন দিয়ে কাজ করবি তো বাবা। কেউ বাঁ*ধা দেবেনা। আচ্ছা ঠিক আছে, আমাকে একটা কথা বলতে তো আপত্তি নেই, তোর কেমন মেয়ে পছন্দ এই বর্ননা টুকু শুধু দে, তাহলেই হবে।”
সাদিফ ল্যাপটপ বন্ধ করে তাকাল।
” কেন? ”
” জেনে রাখি। ছেলের পছন্দ জানতে পারিনা? আমি তো তোর বন্ধুর মতোই। তাহলে কী সমস্যা?”
সাদিফ ফোস করে নিঃশ্বাস ঝাড়ল। মুচকি হেসে বলল,
” আমার যেমন মেয়ে পছন্দ,সেরকম মেয়ে আমার আশেপাশেই থাকে,আমাদের সবার চোখের সামনে৷ তোমার ক*ষ্ট করে খোঁজার দরকার নেই,সময় হলে আমিই জানাব, ওকে?
এখন কাজ করতে দাও মা? কাল অফিসে আমার প্রেজেন্টেশন আছে।”
জবা বেগম আদুরে কন্ঠে বললেন, ” ঠিক আছে বাবা, কাজ কর তবে।”
ফাঁকা এটো গ্লাস হাতে তুলে হাটা ধরলেন তিনি। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির শ্বাস টানলেন। যাক বাবা! নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। সাদিফটার তাহলে পুষ্পকেই পছন্দ। অবশ্য না হয়ে উপায় আছে? তার ছেলে বলে কথা। পুষ্পর মতো লক্ষীমন্ত মেয়েকে কেউ অপছন্দ করতে পারে? এবার শুধু আজমল আসুক,ভাইজানের কাছে কথা তুলতে বিলক্ষন দেরি করবেন না তিনি।
_____
মিনা বেগমের একমাত্র ভাই রাশিদ মজুমদার। আগামী সপ্তাহে কন্যার বিয়ের তারিখ ধার্য্য করেছেন। ধুমধাম করে পাত্রপক্ষের হাতে তুলে দেবেন মেয়েকে। গতকাল রাতে ফোন করে সে খবর জানিয়েছেন বোনকে। আজ দুপুরে কার্ড পৌঁছে দিলেন বাড়ির দরজায়। যেখানে সিকদার বাড়ির প্রত্যেকের আগমন তার কাম্য। বহু বছর দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। মিনা বেগম প্রস্তবাখানা রাখতেই সকলে হৈহৈ করে উঠল। পিউ একধাপ এগিয়ে চেঁ*চিয়ে জানাল,
” আমি যাব,আম্মু আমি যাব।”
পুষ্প ওর মাথায় চা*টি মেরে বলল,
” আমাদের কাজিনের বিয়ে,আমরা যাবনা? গর্দভ!”
পিউ মাথা ডলতে ডলতে বোনের দিকে তাকায়। পরপর মনস্তা*প নিয়ে বলে,
” কিন্তু কী পরে যাব? আমার তো কোনও ভালো জামা নেই আপু।”
কথাটুকু শেষ করা মাত্রই মিনা বেগম খেঁকিয়ে বললেন,
” তাহলে আলমারি ভর্তি জামাকাপড় গুলো নিয়ে আয়,আ*গুন লাগিয়ে পু*ড়িয়ে ফেলি। প্রতিমাসে দু বোন মিলে অনলাইন দেখে যে অর্ডার করিস? সেসব?
পিউ নিচু আওয়াজে বলল,
” সেসব পরে তো ছবি তুলে ফেলেছি আম্মু।”
তিনি মাথায় হাত দিলেন মেয়ের কথায়। এখন কী প্রতিটা ছবির জন্যে আলাদা আলাদা জামাকাপড় লাগবে এই মেয়ের? আফতাব সিকদার ওর হয়ে সাফায় গেয়ে বললেন,
” আরে ভাবি,এখনই তো ওদের বয়স,এসব করার। আপনিই বা এমন কেন করছেন বলুন দেখি। থাক পিউ মামুনি,এই বিয়ে উপলক্ষে তোমাকে একটা সুন্দর জামা কিনে দেব আমি। কেমন? ”
পিউ ঝলমলিয়ে ওঠে।
” আর আমি? আমাকে বুঝি দেবেনা?”
পুষ্পর বাচ্চামো কণ্ঠে আফতাব সিকদার হাসলেন। বললেন ” নিশ্চয়ই দেব৷ আমার মায়েদের না দিলে হবে না কী!”
দুবোন গিয়েই দুপাশ থেকে গলা জড়িয়ে ধরল আফতাবের।
পিউ তো ঝুলতে ঝুলতে বলল ” চাচ্চু তুমি কত্ত ভালো!”
” হয়েছে হয়েছে। এবার সর তো তোরা,আগে আলোচানা খানা শেষ করতে দে।”
মায়ের কথায় দুবোন সরে আসে। বসে পরে আগের জায়গায়। মিনিটের মাথায় ওপর থেকে নামল সাদিফ। বসে গেল পিউয়ের পাশ ঘেঁষে । টি-টেবিলের ওপর থেকে চানাচুরের বাটি হাতে তুলল। চিবোতে চিবোতে বলল
” কী চলছে রে এখানে?”
” বর্ষা আপুর বিয়ে। সেই আলোচনা।”
সাদিফ ঠোঁট গোল করে বলল ” ও।”
মিনা বেগম ওকে দেখতেই ব্যস্ত কণ্ঠে শুধালেন,
” হ্যাঁ রে সাদিফ,তুই যেতে পারবি তো বাবা?”
সাদিফ একবার পিউকে দেখে নেয় আড়চোখে। ক্ষনশ্বর ভেবে জবাব দেয়,
” হ্যাঁ। তিনদিনের মত ম্যানেজ করা যাবে। ”
” যাক! তাহলে তো ভালোই। এই হচ্ছে আমাদের ছেলে,কোনও বাহানা নেই কিচ্ছু না। ”
রুবায়দা বেগমের কথায় সাদিফ মুচকি হাসল। পুষ্প বলল,
” সবাই গেলে কত্ত ভালো হবে তাইনা ভাইয়া?”
সাদিফ মাথা দুলিয়ে ‘হ্যাঁ’ বোঝায়। হঠাৎ পিউয়ের দিক চোখ পড়তেই দেখল সে আবার মিটিমিটি হাসছে। সাদিফ ওমনি সতর্ক করল,
” খব*রদার উল্টাপাল্টা গান গাবিনা।”
পিউ ফিঁক করে হেসে বলল,
” না না, সবার সামনে কী এসব গান গাওয়া যায়? এগুলো আপনাকে আলাদা শোনাব।”
আলোচনা সভায় ধূসর ব্যাতীত বাকীরা উপস্থিত। আমজাদ সিকদার সিঙ্গেল সোফাটায় বসে এতক্ষন স্ত্রীর সব কথা শুনছিনেল। তিনি বিরতি নিতেই ঘোষণা দিলেন,
” বেশ তো,যাও তোমরা। বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে এসো।”
মিনা বেগম জ্ব*লন্ত শি*খার ন্যায় ফুলকে বললেন,
” তোমরা যাও মানে? আর আপনি, আপনি যাবেন না?”
আমজাদ সাহেব বললেন,
” আমার সময় হবেনা।”
আফতাব বললেন ” ভাইজান না গেলে আমিও যাবনা ভাবি।”
পাশ থেকে আনিস ও মিনমিনিয়ে জানিয়ে দিলেন একই কথা। ব্যাস! যা ভেবেছিল তাই হচ্ছে। মিনা বেগমের মাথা গ*রম হয়ে গেল। ক্ষে*পে বললেন,
” বাহ বাহ, কাউকে যেতে হবেনা। আমার বাপের বাড়ি যাওয়ার প্রসঙ্গ এলেই তোমাদের ভাইয়ের কাহীনি-সংলাপ শুরু হয়। নিজেও যাবেন না ইনিয়েবিনিয়ে আমাকেও যেতে দেবেন না। সব চালাকি বুঝি আমি। বয়স হলে কী হবে,শয়*তানি কী আর কমে?”
বলতে বলতে কেঁ*দে ফেললেন মিনা বেগম৷ পিউ -পুষ্প মাথায় হাত দিয়ে হাটুর ওপর ঝুঁকে গেল। বিয়েতে যাবে সব এক্সাইটমেন্টের দফারফা দেখে হতাশ তারা। আমজাদ সিকদার বললেন,
” আহা আমি তো তোমাকে যেতেই বললাম। তাও কাঁদ*ছো কেন? আমি কি একবারও বলেছি যে তুমি যেওনা? এই রুবি,জবা তোমরাই বলো বলেছি?”
তারা দুজন পরলেন মহা বি*পদে। কার পক্ষে কী বলবেন কেউই বুঝে উঠলেন না। শেষে সুমনা বেগম আস্তেধীরে বললেন,
” আপা কত বছর বাপের বাড়ি যাননি ভাইজান। আপনারা না গেলে উনি কী করে যাবেন? আমরাই বা কেমন করে যাই? পরিবারের সবাই মিলে যাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ,সে কী আর এভাবে ভাগ ভাগ হয়ে গেলে পাব বলুন?”
রুবায়দা বেগম ও তাল মেলালেন,
” হ্যাঁ, সেইত ভাইজান। ছোট তো ঠিক কথাই বলল। সবাই গেলে অন্যরকম আনন্দ তাইনা?”
” আমি সবই বুঝি। কিন্তু আমার কিচ্ছু করার আছে বলোতো? যাওয়ার ইচ্ছে আমার নিজেরও রয়েছে। কিন্তু, ধূসর টা সবে সবে ব্যাবসায় হাত দিলো। ছেলেমানুষ ও। এখনও কত কাজ ওকে বুঝিয়ে দেয়া বাকী। বিয়ে মানে একটা গোটা সপ্তাহের ব্যাপার। ওকে একা ফেলে যাই কী করে?”
পিউ চট করে মাথা তুলল। মিনা বেগম কপাল গুছিয়ে বললেন,
“তার মানে? ধূসর একা থাকবে কেন,ওতো যাবে আমাদের সাথে।”
আফতাব সিকদার দুটো ভ্রুঁই উচিয়ে বললেন,
” কী বললেন ভাবি? কে আপনাদের সাথে যাবে? ধূসর? এই আপনি ওকে চিনলেন? লিখে রাখুন সে নবাবসাহেব ঘটনা শোনা মাত্র বলবেন ” আমি যাব না বড় মা। তোমরা যাও। ”
আফতাব হুবহু ছেলেকে অনুকরন করে শেষটুক বলাতে জবা বেগম, সুমনা বেগম, পুষ্প ঠোঁট চে*পে হাসি আটকাল। মিনা বেগম তীব্র বিশ্বাস ঝুলিয়ে বললেন,
” কখনও না। আমি বললে ও ঠিক যাবে দেখো।”
” তাহলে তুমিই বলে দেখো। ও গেলে আমাদের ও সুবিধে। তবে মনে হয়না পারবে৷ কারন ছেলে যা ঘাড়ত্যারা হয়েছে,রাজি হলে হয়।”
” ঠিক আছে। আসতে দিন ওকে।”
পিউ চি*ন্তায় পরে গেল। তার উত্তেজনা, উদ্ভাসনা সব মাটি। ধূসর ভাই না গেলে ও কী গিয়ে করবে কী? যে মানুষটার জন্যে গত তিন বিছর যাবত বাড়ি ছেড়ে নড়েনি। একটা দিন অবধি নানাবাড়ি গিয়েও কা*টায়নি, সেখানে চারটে দিন ওখানে কীভাবে টিকবে? থাকবে কী করে? হাউ?
ভাগ্যবশত ধূসর তখনি ঢুকল বাড়িতে। বাইকের চাবি আঙুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চৌকাঠ পেরোলো কেবল। বসার ঘরে সবাইকে দেখে চাবি পকেটে ঢোকাল। এগিয়ে এল। রুবায়দা বেগম ছেলেকে দেখেই খাবার টেবিলের দিক গেলেন। পিউ ছুটে পেছন পেছন গেল। রুবায়দা বেগম গ্লাসে জল ভরে ফিরতে না ফিরতেই আবদার করল,
” আমি নিয়ে যাই মেজো মা?”
মানা করলেন না তিনি। বিনাবাক্যে গ্লাস ওর হাতে দিলেন। পিউ দ্রুত রওনা করল বসার ঘরের দিকে। ধূসর আসতেই পুষ্প উঠে জায়গা দিলো বসার। বসল সে। পিউ তক্ষুনি গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে মিহি কণ্ঠে বলল,
” নিন,আপনার জন্যে পানি এনেছি।”
ধূসর তাকায়। একি সময় চাইল সাদিফও। ধূসরের চাউনী সাবলিল হলেও তার চাউনি অদ্ভূত। পিউতো ওকে পানি দিতে গেলে গড়িমসি করে,ভাইয়ার বেলায় এত তৎপর?
ধূসর তার ভরাট কণ্ঠে জানাল ” লাগবে না।”
পিউয়ের মুখ কালো হলো পুনরায়। স্বাধ করে পানি আনল আর এইভাবে মানা করলেন? ফিরে যেতে গেলেই ধূসর ডেকে ওঠে। পিউ ঘুরে তাকালে দুই বাক্যে বলে,
” দিয়ে যা।”
পিউ খুশি হয়ে যায়। হাসি হাসি চেহারা ফেরত আসে। গ্লাস হাতে দেয় ধূসরের। সে এক চুমুকে পুরোটা শেষ করে টেবিলের ওপর রাখে। এতক্ষন বাকী সকল সদস্য নিরব রইলেও মিনা বেগম ক্রমশ চোখ ইশারা করছিলেন স্বামীকে। যার অর্থ, ‘ধূসরকে কথা টা বলো।’ আমজাদ সিকদার বির*ক্তির শ্বাস নিলেন। যেখানে বলে লাভ নেই তাহলে অযথা প্রসঙ্গ তোলার মানে কী? কিন্তু স্ত্রীর মন রক্ষার্থে, আর বাড়িতে তার শান্তির খাতিরে এটুকু করা উচিত। নাহলে এই মহিলা আবার কেঁ*দেকে*টে জলের পুকুর বসাবেন। ধূসরের জলপান শেষ হওয়া মাত্রই আমজাদ সিকদার গলা খাকাড়ি দিয়ে সবার মনোযোগ ঘোরালেন। সরাসরি ওকেই প্রশ্ন করলেন,
” বর্ষার কথা মনে আছে তোমার ধূসর?”
ধূসর ভাবতে গেলেই পিউ আগ বাড়িয়ে জবাব দেয়, ” আমার মামাতো বোন ধূসর ভাই। মনে নেই আপনার? শেষ যেবার এলো,নাঁচতে গিয়ে মেঝেতে আ*ছাড় খেয়ে পরে গেছিল?”
কথার মাঝে মেয়ের বাম হাত ঢোকানোয় বিদ্বিষ্ট হলেন আমজাদ। তবুও বললেন না কিছু। অথচ
মিনা বেগম সঙ্গে সঙ্গে চোখ পাঁ*কিয়ে বললেন
” তুই বড়দের মধ্যে কথা বলছিস কেন? ”
পিউ চুপসে যায়। পুষ্প কানে কানে ফিসফিস করে বলে
” তুই যে কবে মানুষ হবি!”
পিউ দম ফেলে। আসলেই,সে কবে মানুষ হবে? কবে একটু বুদ্ধি হবে ওর?
ধূসর জানাল ” হ্যাঁ মনে আছে। হঠাৎ এই কথা? ”
মিনা বেগম ধৈর্যহীন কণ্ঠে বললেন,
” আমি বলছি। হয়েছে কী,আগামী শুক্রবার ওর বিয়ে। পুষ্পর মামা আমাদের পুরো পরিবার সমেত দাওয়াত দিয়েছেন। বারবার করে বলেছেন আমরা যেন সবাই যাই।”
” ভালো খবর। যাও তোমরা,ঘুরে এসো।”
মিনা বেগম হতভম্ব হয়ে আফতাবের দিক তাকালেন। তার ঠোঁটে বিজয়ের হাসি। একদম কথাখানা কাটায় কাটায় ফলে গেল যে!
রুবায়দা বেগম বললেন ” তুই যাবি না?”
ধূসর এক বাক্যে বলে দিল ” না।”
ব্যাস! সবার সমস্ত আয়োজন ফুস করে উড়ে গেল। পিউয়ের আনন্দ নেতিয়ে পরল লতার ন্যায়। মিনা বেগম বড় আহ্লাদী স্বরে শুধালেন,
” কেন রে ধূসর? কেন যাবিনা বাবা? না যাওয়ার কারন টা কী? ”
” তুমিতো জানো বড় মা,আমার এসব,প্রোগ্রামে ইরিটেশন হয়। ”
মিনা বেগম কেঁ*দে ফেললেন আবারও।
” তাতো হবেই। আমি তো কেউ নই,আমার বেলায় সবার কত শত ঝা*মেলা হবে। কাউকে যেতে হবেনা। কোনও বিয়ে বাড়ি যাবনা। ঘরে খিল দিয়ে বসব আমি,খবরদার কেউ আমার দরজায় টোকাও ফেলবেনা বলে দিলাম।”
সবাই উদ্যত হলেন তাকে বোঝাতে। তিনি চাইলেন না শুনতে। নাকে আঁচল ধরে সিড়ির দিকে এগোবেন তখনি ধূসর প্রশ্ন করে,
” তুমি চাও আমি বিয়েতে যাই?”
মিনা বেগম দাঁড়ালেন। ভেজা গলায় বললেন ” হ্যাঁ, চাইতো।”
ধূসর ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল ” বেশ,যাব।”
প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুঁটলেও পিউয়ের চেহারা জ্বলে ওঠে। অত্যুজ্জল তারার ন্যায় আলো ছড়ায়। মিনা বেগম চোখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এলেন। খুশি খুশি কণ্ঠে বললেন ” সত্যি তুই যাবি? আমি জানতাম আমার ধূসর আমার কথা ফেলবেনা। কী মেজো ভাই দেখলে তো?”
আফতাব সিকদার একটু চুপ থেকে বললেন,” হ্যাঁ তাইতো দেখছি। ”
মিনা বেগম অতি আনন্দে লতিয়ে পরবেন,ঠিক তখনি ধূসর জানাল,
” কিন্তু,আমি তোমাদের সাথে যাব না। একেবারে বিয়ের দিন গিয়ে বিয়ে এ্যাটেন্ড করে চলে আসব।”
পিউয়ের আনন্দিত মুখমণ্ডল ঠুস করে ফেঁ*টে যায়। হাসিটাও শেষ। মিনা বেগম তব্দা খেয়ে বললেন,
” এ্যা?”
ধূসর উঠে দাড়াল, বলল ” হ্যাঁ। তুমি কাঁ*দছিলে তাই যাব,এর বেশি আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়। ”
বলে দিয়েই সে রুমের দিক হাঁটা ধরে। আফতাব সিকদার তার প্রস্থান দেখে দেখে বিরক্তি নিয়ে মাথা নাড়লেন। পুরোনো প্রশ্নটা রয়েই গেল ‘ এই ছেলে কার? ‘
ধূসর যখন বলেছে যাবে না,তখন সে যাবেওনা। পিউ হাঁসফাঁ*শ করছে। ধূসরকে রেখে ওখানে চার চারটে দিন তার কাছে চারশ বছরের সমান। কী করে থাকবে? পিউ ঘরময় পায়চারি করেও উপায় পেলোনা ধূসর কে রাজি করানোর। যেখানে তার মায়ের কা*ন্নাকা*টি দেখেও পাষ*ন্ডটার মন গলেনি সেখানে সেতো দুধভাত।
পিউ হাত কঁচলে কঁচলে হাটছে। মাথার মধ্যে উদ্ভভ হচ্ছেনা কোনও বুদ্ধি। শেষ মেষ ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
ওদিকে পুষ্পর অবস্থাও বেগ*তিক। ইকবাল যখন থেকে জেনেছে সে তার মামা বাড়ি যাবে, সেই মুহুর্তে শুরু হয় তার হাজারখানেক নিষেধা*জ্ঞা। বিয়ে বাড়িয়ে কত ছেলেপেলে থাকবে, এই করবেনা, সেই করবেনা, বেশি সাজবেনা। শুনতে শুনতে পুষ্পর মেজাজ বিগ*ড়ে গেল। প্রত্যেকবার কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই ইকবাল এমন করবে৷ পুষ্প রে*গেমেগে বলল,
” আমার যা মন চায় তাই করব। রাখোতো ফোন।”
সংসারে আ*গুন লাগিয়ে পুষ্প লাইন কা*টল। পরপর সেটাকে ছু*ড়ে ফেলল বিছানার ওপর। নিজেও ধপ করে বসে পরল পাশে। এই পুরুষজাতি মেয়েদের একটুও বিশ্বাস করেনা। আরে বাবা যেখানে তার হৃদয় জুড়ে মানুষটার বসবাস,সেখানে এসব শিখিয়ে দিতে হয়? সেতো এমনিতেও কোনও ছেলের সাথে কথা বলেনা। অসহ্য!
_____
পরেরদিন সকালবেলা ধূসর অফিসের জন্যে তৈরি হয়ে ঘর ছেড়ে বের হয়। সিড়ির গোড়ায় আসতেই দেখে পিউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ফোনে। ধূসর ভ্রুঁ বাঁকাল। এই সাত সকালে কার সঙ্গে কথা বলছে ও?
ধূসর পাশ কা*টিয়ে চলে যাবে ভাবল। হঠাৎ পিউয়ের কিছু কথা কানে যেতেই থমকে দাঁড়াল। পিউ দেয়াল খুঁটছে হাত দিয়ে। অন্য হাতে ফোন। ওপাশের কাউকে হেসে হেসে বলছে,
” আরে তুইতো জানিস না,বর্ষা আপুর খালাতো ভাই আছে একটা, ‘রোহান’ নাম। যা সুন্দর দেখতে! এত্ত হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং উফ! দেখলেই মনে হয় চেয়ে থাকি। সেই কবে দেখেছিলাম! এবার আপুর বিয়ে উপলক্ষে উনিও আসবেনা শুনলাম। আমার তো সেটা ভেবেই খুব আনন্দ লাগছে৷ এই কয়টা দিন চুটিয়ে এঞ্জয় করব।”
মুহুর্তমধ্যে ধূসরের চিবুক শ*ক্ত হয়। পিউ বলতে বলতে পেছন ঘুরল। একদম সম্মুখে ধূসরকে দেখেই চমকে গেল। ধূসরের দাঁত ফুটছে কট*মট করে। শ*ক্ত চাউনী তার দিকেই নিবদ্ধ৷ পিউ ভ*য় পায়। আতঙ্ক নিয়ে চেয়ে থাকে।
ঠিক তখনি ধূসর ধমকে ওঠে,
” সর সামনে থেকে,বেয়া*দব।”
পিউ হতবুদ্ধি হয়ে গেল। চটজলদি সরে দাঁড়াল। ধূসর গটগট করে সিড়ি ভে*ঙে নেমে যায়। পিউ চেয়ে থাকে। ধূসর সোজা নিচে এসেই উঁচু কণ্ঠে ডাকল,
” বড় মা!”
মিনা বেগম রান্নাঘরে ছিলেন। ডাক শুনে ব্যস্ত পায়ে সামনে এলেন ওর।
” হ্যাঁ রে,কিছু লাগবে বাবা?”
পিছু পছু রুবায়দা বেগমও এসেছেন। ধূসর তাদের দুজনকে একবার দেখে বলল,
” তোমরা কবে যাচ্ছো?”
” কোথায়? আমাদের বাড়িতে?”
” হ্যাঁ। ”
” এইত, কাল।”
” আমিও যাব।”
দুজন অবাক হয়ে একে অপরকে দেখলেন। রুবায়দা বেগম কৌতুহল নিয়ে বললেন,
” কাল যে বললি…”
” এখন বলছি,আমিও যাব। সমস্যা আছে তোমাদের?”
মিনা বেগম ত্রস্ত দুপাশে মাথা নাড়েন।
” না না কোনও সমস্যা নেই। আমিতো চাইছিলামই, তুই যাস।
ধূসর আরেকবার ওপরের দিক তাকায়। গুঁটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে পিউ। এদিকেই দেখছে। চোখ ফিরিয়ে পল্লব বুজে শ্বাস ফেলল সে। পরপর
হনহনে কদমে বাড়ি ছাড়ল। রুবায়দা বেগম বিড়বিড় করে বললেন ” এই ছেলেটার কখন যে কী হয়!”
ধূসর অদৃশ্য হতেই পিউ হেসে ওঠে। একা একা হাসিতে কু*টিকু*টি হয়। হাত মুঠো করে ওপর -নিচ ঝাঁকিয়ে উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে ‘ ইয়েস!”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।