এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ১০

‘আই লাভ ইউ’ আই স্টিল লাভ ইউ, আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ, উইল ইউ ম্যারি মি। প্লিজ এক্সেপ্ট মি!’

উনার কথা শুনে চট করে চোখ খুলে ফেললাম আমি।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি আমি উনার দিকে।আমার বুকের মাঝে যেমন দুরুম দুরুম বাড়ি দিচ্ছে তেমনি তপ্ত নিঃশ্বাস উপচে উপচে পড়ছে ঘন ঘন।কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেলাম আমার রাগ,আমি যে উনার প্রতি রেগে ছিলাম সেটা বেখায়াল হয়ে গেলো।উনার মুখে এমন সুন্দর ভাবে আই লাভ ইউ শুনে হঠাত মনে হলো এই কথাটা শোনার অধিকার একমাত্র আমার আছে।এই অমূল্য ভালবাসার অধিকারীনী একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।উনার ওষ্টদ্বারে যতবার প্রেমের অমূল্য বানী আসবে ততবার যেনো আমার জন্য ই হয়।আমার চক্ষুযুগল অপলক উনার মুখপানে চোখ বুলালো।কেমন যেনো লজ্জা বোধ হচ্ছে উনার দিকে তাকাতে,অথচ উনি নির্লজ্জের মতো এক পলকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আচ্ছা আমার যা ফিল হচ্ছে উনার তা হচ্ছে না কেনো?উনার এমন ফিল হলে তো উনিও লজ্জা পেতেন।তবে উনার ওষ্টের মাঝে মিষ্টি হাসির ছড়াছড়ি।মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বলতে বাধ্য হলাম একটা ছেলেকে এতটা সুন্দর হতে হলো কেনো?কেনো এমন আকর্ষণীয় চাহণি উনার।উনার এই চাহনিতে বারবার দূর্বল হয়েছি।হাজার গুন রাগ পানি করেছি,নিজ ইচ্ছায় নয় অনিচ্ছায় রাগ পানি হয়ে গিয়েছে আমার।এই ছেলেটির মাঝে ফর্সার কোনো কমতি নেই,টানা নাক,টানা চোখ, সব কিছু কি সৃষ্টিকর্তা আপণ মনে সৃষ্টি করেছেন।ইস একটা ছেলে এতটা সুন্দর কেনো হতে গেলো,আর সেই সুন্দর ছেলেটা আমার মুখের উপড় ঝুঁকে এসে ভালবাসার বুলি আউড়াচ্ছেন।

আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,’আপনি কি বললেন।’

‘উনি ভ্রু ইশারা করলেন যার মানে কি বললাম?’

‘আমি ওষ্টদ্বয় কাঁপছে,উনাকে বললাম এসব আমাকে বলছেন।’

‘হুম তোকেই তো বললাম।’

‘কৌতুহল নিয়ে জানতে ইচ্ছা হলো সত্যি কি আমাকে বললেন।উনার মুখ থেকেই শুনতেই চাই আমি যে উনি বলুক দিয়া আই লাভ ইউ।তাই আবার ও বললাম আমাকে কেনো বললেন,আমাকে বলবেন ই বা কেনো?আপনার শ্বশুরের মেয়েকে বলুন।’

‘শ্বশুরের মেয়েকেই তো বললাম।তোকে আবার কখন কি বললাম।’

‘আমাকেই তো বললেন।’

‘তোকে বললাম কারণ,তুই এই মেসেজ টা আমার শ্বশুরের মেয়েকে পৌছে দিস।তাকে জানিয়ে দিস তোর শ্বশুরের ছেলে তাকে কত বেশী ভালবাসে।’

‘এই কথাটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।সাথে সাথে রাগ আমার শরীরে দানা বাঁধতে শুরু করলো।আবার আগের দিয়া ফিরে এলো আমার ভেতরে।ধীরে ধীরে ক্ষিপ্ত হতে শুরু করলাম।চোখে রক্তবর্ণরূপ ক্রমশ প্রবল হতে থাকলো।’

‘আমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললাম আমি কি আপনার ভালবাসার ডাকপিয়ন নাকি বিহান ভাই।আপনার এইসব প্রেমের অমূল্য বানী আপনি গিয়ে বলুন না, আমাকে টানছেন কেনো এসবের মাঝে।আপনি এক্ষুণি সরুন মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার।’

‘এই টুকু শরীরে এত রাগ কোথা থেকে আসে দিয়া।শরীরের ওজনের থেকে রাগের ওজন বেশী তোর।’

‘দেখুন চরম মেজাজ খারাপ আমার!’

‘ইস রে!এইটুক পুচকে মানুষের এত রাগ। আমাকে বাতাস কর আগে,তোর বাবাকে বলবি তার জামাই এর জন্য এসি কিনতে?’

‘এসি,এই ঠান্ডায় এসি লাগবে আপনার।আমার বাবার ঠেকা পড়ে নি আপনার জন্য এসি কিনতে?’

‘তার মেয়ে ডিস্টার্ব করবে,আর এসি কি অন্য কেউ কিনবে?গরম তো তার মেয়ের জন্য ই লাগছে আমার।’

‘কি করেছি আমি আপনার বলবেন প্লিজ।চোখে মুখে অগ্নিরুপ আমার।’

‘এই যে কেমন গরম গরম নিঃশ্বাস ছাড়ছিস।চোখে মুখে এসে পড়ছে, উফফ মেয়েদের নিঃশ্বাসে এত উত্তাপ আগে জানতাম নাতো!গরম পানি খেয়েছিস নাকি দিয়া কিছুক্ষণ আগে।তোর এই উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে প্রচন্ড গরম লাগছে আমার।আই থিংক আমি।’

‘ইউ থিংক ইউ হট!বিহান ভাই।তো যান না ফ্রিজ থেকে আইস নিয়ে গোসল করে আসুন।একদম ঠান্ডা হয়ে যাবেন।’

‘উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,তুই তো আর ছোট নেই দিয়া।তুই আমাকে এইগুলা কি বলিস,ওহ মাই গড!আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে স্ট্রেইঞ্জ করতে পারে নি এই প্রথম বার তুই।আমি মারাত্মক আকারে শিহরিত দিয়া।বাট এই এত্ত অসভ্য কিভাবে হলি দিয়া।’

‘এই যে আমাকে হট বললি।’

‘হট মানে গরম তাই তো বললাম,আপনি তো বললেন আপনার গরম লাগছে খুব।’

‘বাট তুই তো আমাকে অন্য কিছু বলেছিস।’

‘কি বলেছি বিহান ভাই।’

‘ওকে আয় তোকে দেখায় কি বলেছিস,গুগলে সার্চ কর দেখি কি আসে।’

‘আমার এমবি নেই।’

‘উনি উনার ফোন বের করে সার্চ করে আমাকে দেখালেন।’

‘আমি একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলাম,এই মানুষ টা এত অসভ্য কেনো?প্রতিটা কথার উদ্ভট কিছু কথা আর মানে উনি বের করে ফেলেন।ছিঃছি আমি বা কি বললাম উনি বা কি দেখালেন।গুগলে এত অসভ্য কেনো কেউ বলতে পারেন।’

‘আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,সবার নিঃশ্বাস ই এমন গরম হয়। ‘

‘উনি বললেন কই দেখ তো আমার নিঃশ্বাস তোর মতো নাকি।উনি একটু ঝুঁকতে গিয়েই অসাবধনতায় উনার অনিচ্ছায় উনি হোচট খেলেন।আর সাথে সাথে উনার ডান গাল আমার গালের সাথে লেগে গেলেন।আমি উহু বলতেই উনি বললেন কি হলো আমি কি তোকে মেরেছি।’

‘আপনার দাঁড়ি আমার গালে লেগে ব্যাথা লেগেছে।’

‘উনি নিজের গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমার দুই গালে খুব জোরে উনার গাল ঘষে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।’

উহু এই মানুষ টা ভাল হবে কবে।এ কেমন অদ্ভুত দাঁড়ি গোফ।আজন্ম দেখছি এই এতটুকুই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।বড় ও হয় না ছোট হয় না।আমি সামান্য চুল ম্যানেজ করতে পারি না আর উনি দাঁড়ি গোফ এত পরিপাটি রাখেন কিভাবে।

‘আমি চিল্লায়ে বললাম,শুনুন ভালো ভালোই বলছি আমি জীবনেও আপনাকে স্বামি হিসাবে মানবো না।এই জীবনে কখনো আপনাকে মেনে নিবো না।’

–আগামিকাল আমার গায়ে হলুদ। শুনেছি ছোট আকারে অনুষ্টান করে আমাকে বিদেয় দেওয়া হবে।বিষয় টা আমার মারাত্মক অপমানে লাগছে।একজনের প্রেমিকা আছে সে তাকে কন্টিনিউ ভালবেসে যাচ্ছে আর আমি তাকে বিয়ে করতে যাবো।তাছাড়া উনার জন্য ই তো আজ আমার এই অবস্থা। এক মাত্র উনার বাড়াবাড়ির জন্য আমাকে ঘরভর্তি মানুষের মাঝে অপমানিত হতে হয়েছে। শুনেছি উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো ফ্যামিলি থেকেই।কই আমি তো কখনো জানলাম ই না।উনার সাথে কি আমার বিয়ে হওয়ার ই ছিলো।যেহেতু ফ্যামিলি থেকে ঠিক করেছিলো বিয়ে সেহতু বিয়ে হওয়ার ছিলো।এক অভিশপ্ত জীবনের জন্য তৈরি হয়ে নিলাম আমি।কোথাও যে পালিয়ে যাবো কোথায় যাবো আমি।আত্মীয় স্বজন যে যেখানে আছে সবার মুখে একই কথা বিহানের মতো ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে এটা অত্যান্ত আনন্দের কথা।উনার জন্য আম্মু আমাকে মেরেছে এটা ছাড়া উনার আর কোনো দোষ নেই।না আছে চারিত্রিক কোনো খারাপ দিক না আছে অন্য কোনো বাজে রিপোর্ট। এলাকার আইডল হলেন বিহান ভাই।যাকে দেখে ছেলে মেয়েরা অনুপ্রাণিত হয়।

–রিয়া আর আমি সুয়ে আছি এক জায়গা।রিয়া ব্রাইডাল গহনা চয়েজ করবে।আমার জীবন তেজপাতা হতে চলেছে ওদের মনে ঈদ লেগেছে।বাহ রে মানুষ বাহ!।

–রিয়া আমাকে বললো,দিয়া তোর ফোন টা ইউটিউব দেখি।

–এমবি নেই।

–রিয়া আমার ফোন নিয়ে বললো দিয়া ৫০ জিবি এমবি আছে,তবুও বলছিস এমবি নেই।এত কিপ্টা কবে হলি রে।

–রিয়ার কথা শুনে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম,সত্যি ৫০ জিবি এমবি।এত এমবি কোথা থেকে এলো।কেউ ভুলে রিসার্চ করে আমার টায় দেয় নি তো আবার।

–রিয়াকে বললাম এই রিয়া আমি তো টাকা লোড দেয় নি।তাহলে এত এমবি কিভাবে এলো।

–নিশ্চয়ই বিহান ভাই দিয়েছেন দিয়া।

–উনি কেনো দিতে যাবেন।কেউ ভুলে দিয়ে দিয়েছে হয়তো।

–ইস রে কেউ আমার নাম্বারে কেনো ভুলে দেয় না বুঝলাম নাহ।যেহেতু ফ্রি এমবি অর্ধেক আমার কিন্তু দিয়া।

–আমি বললাম যা ইচ্ছা কর আমার ভাল লাগছে না রিয়া।

একদিন পরেই ছোট আকারে গায়ে হলুদ লাগানো হলো আমার।কথা হয়েছে পরে আবার ও বড় অনুষ্টান হবে।আপাতত ঘরোয়া ভাবে কালেমা হবে কিন্তু আমাকে বিহান ভাই এর সাথেই থাকবে হবে।যে কয়দিন উনি বাড়িতে থাকবেন আমাকেও থাকতে হবে উনার সাথে।

কেমন যেনো ছোট্ট এক ভূমিকম্পন এর মতো বিয়ে হয়ে গেলো আমার।আসলে আমি বিবাহিত। ভাবতেই কেমন লাগছে আমি তাহলে বিবাহিত হয়ে গিয়েছি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।