মাঝরাত! নিস্তব্ধ পরিবেশ। হঠাৎ ঠোঁটে তীব্র ব্য’থা অনুভব হওয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো হুরের। ঘুম হালকা হতেই স্পষ্ট বুঝতে পারলো কেউ তার ঠোঁট নিজের ঠোঁট দ্বারা আঁকড়ে ধরে আছে। আঁকড়ে ধরে আছে বললে ভুল হবে লোক টা অনবরত তার ঠোঁট কামড়ে চলেছে। তীব্র ব্য’থায় গুঙিয়ে উঠলো হুর। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। লোকটা কে অনবরত ধাক্কা দিতে লাগলো নিজের কাছ থেকে সরানোর জন্য। কিন্তু লোকটা কে একচুল ও নড়াতে পারলো না। ভ’য়ে বুক কাঁপ’ছে হুরের। এখনই না আবার সেন্স হারায়। কিন্তু তখনই ফাইয়াজ এর বলা কথা গুলো মনে পড়তেই আবার পুরো দমে ধাক্কাতে লাগলো অচেনা লোকটাকে।
নিজের কাজে বাঁধা পাওয়ায় বিরক্ত হলো অচেনা লোকটা। নিজের এক হাত দিয়ে হুরের দুই হাত একত্র করে চেপে ধরলো। হুর ব্য’থায়, ভ’য়ে কেঁ’দে ফেললো। যদিও কোনো শব্দ করতে পারলো না।
হুরের কা’ন্না অনুভব করতেই লোকটার মন যেনো নরম হলো। কাম’ড়ানো বন্ধ করলেও ঠোঁট ছাড়লো না হুরের। সফ্টলি চুমু খেতে লাগলো হুরের ঠোঁটে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর হুরের ঠোঁট ছেড়ে দিলো অচেনা লোকটা। হুরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“এটা তোমার প্রাপ্য ছিলো হুরপরি। You know what তুমি আমাকে অনেক ক’ষ্ট দাও। তুমি জানো না তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কতো ক’ষ্ট হবে! হয়তো ম’রেই যাবো। আমার প্রাণ যে তোমার মাঝে আটকে আছে!হয়তো জানতে না। কিন্তু আজ এই মুহূর্ত থেকে জেনে নাও। তুমি শুধু আমার। যে তোমার ক্ষ’তি করার চেষ্টা করবে তাকে যেমন শা’স্তি পেতে হবে তেমনি তোমার অসাবধানতার জন্য যদি তোমার কোনো ক্ষ’তি হয় তাহলে সেটার জন্য তোমাকে শা’স্তি পেতে হবে। আজকে যা শা’স্তি দিলাম তারচেয়ে ভয়া’নক কিছু হবে পরবর্তী বার বুঝতে পেরেছো! যদিও আমার কোনো আপত্তি নেই এমন শা’স্তি দিতে। বরং আমি চাইবো তুমি প্রতিদিন এমন কোনো ভুল করো আর আমি তোমাকে এমন করে চুমু টুমু খাবো। আজ তাহলে আসি!
ভালোবাসি আমার পরিটাকে। অনেক অনেক ভালোবাসি। ”
লোকটা হুরের কানে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। লোকটা সরে যেতেই এক লাফ দিয়ে উঠে বসলো হুর। নিজের বুক চেপে ধরে হাপাতে লাগলো। অচেনা লোকটার কথা মাথায় আসতেই তাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করলো কারণ সম্পূর্ণ ঘর অন্ধকারে ঢেকে আছে। হুরের স্পষ্ট মনে আছে ঘুমানোর আগে সে টেবিল ল্যাম্প অন করে ঘুমিয়েছিল। তারমানে ওই লোকটাই লাইট অফ করেছে যাতে হুর তাকে দেখতে না পারে। হুর দ্রুত টেবিল ল্যাম্প অন করলো। তারপর বেড থেকে নেমে রুমের লাইট অন করলো। সম্পূর্ণ ঘর আলোকিত হতেই হুর দেখলো ঘরে সে ব্যতিত আর কেউ নেই। বেলকনির দরজা বন্ধ যেমন টা সে ঘুমানোর আগে লক করেছিল।
হুর অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো লোকটা তাহলে এলো কোথা থেকে আর গেলোই বা কোথা থেকে। হুরের মনে হচ্ছে সে এতক্ষন কোনো স্বপ্ন দেখছিলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না কেউ তার রুমে ঢুকে তার সাথে এমন করবে! আর লোকটা আসলো তো আসলো কোথা থেকে। হঠাৎ নিজের ঠোঁটের কথা মনে হতেই আয়নার সামনে চলে গেলো হুর। আয়নায় নিজের ঠোঁট দেখে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো হুর যে এতক্ষন যা ঘটেছে সত্যি ঘটেছে। তার ঠোঁট বি’শ্রী ভাবে ফুলে আছে। দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ কা’মড়েছে।
বাকি রাতটুকু কিভাবে কি হলো চিন্তা করতে করতেই কেটে গেলো হুরের। চোঁখের পাতা কিছুতেই এক করতে পারলো না ভ’য়ে। গুটিশুটি হয়ে বেডে বসে রইলো।
অন্যদিকে অচেনা লোকটা মিটিমিটি হেসে নিজে নিজেই বলতে লাগলো,
-“আজ আমাদের first lip kiss ছিলো পরি। ভাবা যায় আমি তোমাকে চুমু খেয়েছি। সেই একটা অনুভূতি। ইস সেই দিন কখন আসবে যখন আমি তোমাকে যেকোনো সময় চুমু খেতে পারবো! ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে। উম খুব শীঘ্রই সেই দিন টা আসুক। অপেক্ষায় আছি। ”
লোকটা নিজের মাথা চুলকে লাজুক হাসি দিলো। তারপর বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। অনেক ক্লান্ত সে। আজকে অনেক ধকল গেছে। শুতেই গভীর ঘুমে ডুব দিলো অচেনা লোকটি।
একজন আরামে ঘুমিয়ে আর অপর জন চিন্তায়, ভ’য়ে না ঘুমিয়ে বাকি রাতটুকু কাটিয়ে দিলো।
————————————————————————
সকাল সকাল ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছে হুর। কিন্তু সমস্যা একটাই তার ঠোঁট এখনো অসম্ভব রকম ফুলে আছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না হুর। হঠাৎ করে মাথায় আসলো লিপিস্টিক এর কথা। deep মেরুন রঙের একটা লিপিস্টিক বের করলো সে। কিন্তু লিপিস্টিক দিতেও কেমন যেনো লাগছে তার। ফাংশন ছাড়া সে সচরাচর সাজে না। আর ভার্সিটি তে তো নাই। শুধু মাত্র অনুষ্ঠানে দুইবার সেজেছিলো। এখন হুট করে সাজলে সবাই বাঁকা চোঁখে তাকাবে জানা আছে তার। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় ও তো নেই। হুর নিজের ঠোঁটে গাঢ় করে লিপিস্টিক দিলো। শুধু লিপিস্টিক দেয়াতে কেমন খালি খালি লাগছে তাই চোখেও হালকা করে কাজল দিলো। এবার পারফেক্ট লাগছে। আর ঠোঁটের ফোলা টাও বোঝা যাচ্ছে না। হুর নিজের ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতেই দেখলো ফাইয়াজ ডাইনিং টেবিলে বসে ফোন টিপছে।
হুর টেবিলের সামনে এসে গুডমর্নিং উইশ করলো ফাইয়াজ কে। ফাইয়াজ হুরের দিকে হাসি মুখে তাকালেও হুর কে দেখার পর তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“ভার্সিটিতে কি পড়াশোনা করতে যাবে নাকি নিজের রূপ দেখাতে! ছেলেদের নিজের রূপ দেখাতে খুব ভালো লাগে তাই না!”
ফাইয়াজ এর কথা খুব আ’ঘাত দিলো হুর কে। কেনো যেনো খুব কা’ন্না পেলো। হুর কোনোমতে কা’ন্না আটকে জবাব দিলো,
-“আ… আপনার কি আমাকে তেমন ধরণের মেয়ে মনে হয় ভাইয়া! ”
-“যদি সেই ধরণের মেয়ে না হয়ে থাকো তাহলে সাজ মুছে এসো। এমন সাজগোজ করে যাচ্ছ যাতে ছেলেরা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে বুঝতেই পারছি। ”
হুর রা’গে, দুঃ’খে কেঁ’দেই ফেললো। ধূপ’ধাপ পা ফেলে নিজের রুমে এসে ধু’ম করে দরজা বন্ধ করে দিলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঠোঁট ঘষা শুরু করলো। এমনিতেই ক্ষ’ত ছিলো তার উপর এতো জোরে ঘষার কারণে ঠোঁটের চামড়া ফে’টে র’ক্ত বেরিয়ে আসলো। অপ’মানে, ব্য’থা’য় চোঁখ দিয়ে তার গলগল করে জল পড়ছে। ঠোঁট ফে’টে র’ক্ত গড়াতে দেখে ঘষা থামালো হুর। অনেক ক’ষ্টে নিজের কা’ন্না থামিয়ে ওয়াশরুম এ গিয়ে মুখ ধুয়ে আসলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
-“সাজলে যদি আমি ছেলেদের রূপ দেখানো টাইপ মেয়ে হই তাহলে আর জীবনেও সাজবো না। সাজের কোনো দরকার নেই আমার। উনি কি জানেন সাজ ছাড়াই আমার জন্য কতো ছেলে পা’গল। ”
হুর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচে নেমে গেলো। ডাইনিং টেবিলে বসে চুপচাপ নিজের খাবার খেতে লাগলো। খাবার খেতেও ভীষণ ক’ষ্ট হচ্ছে হুরের। ঠোঁট প্রচন্ড জ্বা’লা করছে। হুরের মুখের দিকে চোঁখ পড়তেই আঁ’তকে উঠলো ফাইয়াজ। নাক চোঁখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কা’ন্না করেছে। আর ঠোঁটের ফা’টা দিয়ে এখনো হালকা হালকা র’ক্ত বেরোচ্ছে। ফাইয়াজ এর হুট করে খুব খারাপ লাগলো হুরের জন্য। সে বুঝতে পারলো একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। ফাইয়াজ ভাবলো হুরের খাওয়া শেষ হলে তাকে সরি বলবে। কিন্তু হুর সেই সুযোগটাই ফাইয়াজ কে দিলো না। নিজের খাবার শেষ করে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। একবারো ফাইয়াজ এর দিকে তাকালো পর্যন্ত না। ফাইয়াজ ভাবলো গাড়িতে ওঠার পর সরি বলে দেবে। কিন্তু বাইরে গিয়ে আর হুরের দেখা পেলো না। দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো হুর নিজের গাড়িতে করে ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে।
ফাইয়াজ নিজের চুল খাম’চে ধরে বিড়বিড় করে বললো,
-“ওহ শিট! আমি আবার ক’ষ্ট দিয়ে ফেললাম হুর কে। আমি জানি আমার অমন করে বলা উচিত হয়নি। কিন্তু ওভাবে না বললে যে তুমি মানতেনা। যাই হোক তোমার রা’গ তো আমি ভাঙিয়েই ছাড়বো। দেখে নিও মিস হুমাইরা জান্নাত হুর। ”
লিয়া আসার পর হুর কে নিয়ে অনেক প্রশ্ন করলো ফাইয়াজ এর কাছে। কিন্তু ফাইয়াজ বারবার এড়িয়ে যাওয়াতে লিয়া বুঝলো আবার কিছু হয়েছে। তাই সে আর বিষয়টা ঘা’টালো না। লিয়া কে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে ফাইয়াজ চলে গেলো তার গন্তব্যে।