একটা কালো রাত পেরিয়ে সূচনা হলো নতুন দিনের।আমরা সবাই করিডোরে বসে ঝিমাচ্ছি।তখনি একজন নার্স এসে বললো,,,,এখানে শুভর বাসার কে কে আছেন?ওনার জ্ঞান ফিরেছে।উনি আয়রা নামের কারো একজনের সাথে কথা বলতে চায়।
এই কথা শুনেই আমি দৌড়ে ক্রাশের রুমে যায়।গিয়ে দেখি ওও একদম নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে।ওকে দেখে আমি নিজের কান্না আটকাতে পারছি না।একটা সময় আমি ওর কাছে গিয়ে দাড়ায়।আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি,,,,
শুভ:এই পাগল মেয়ে,কাঁদছো কেন হুম?আমি তো এখন ভালো আছি।আর কিছু দিন পরেই আমি আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবো।(আলতো হেঁসে)
আমি:ক্রাশ,,তুমি যানো আমরা সবাই কততটা ভয় পেয়েছিলাম তোমার এই খবরটা শুনে।(ধরা গলায়)
শুভ:ওরে আমার কিউটিটারে।আচ্ছা তোমার বিন্দুপ্পি কি করছে?নিশ্চয়ই এখনো কাঁদছে?
আমি:হুম তা তো কাঁদবেই।হাজার হোক,একমাত্র পেয়ারের বর বলে কথা।(মুচকি হেসে)
আমার কথা শুনে ক্রাশও হাসলো।
আমি:আচ্ছা জিজু,বলো তো সেদিন তোমার সাথে ঠিক কি হয়েছিল?
আমার কথা শুনেই জিজুর মুখ কালো হয়ে গেলো।
এরপর জিজু যা বললো তা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেলো,,,,
শুভ:আসলে আমি এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পরেই একটা গাড়ি এসে দাড়ায় আমার সামনে।তারপর সেখান থেকে কয়েকজন মুখেশ পরা ছেলে এসে আমাকে জোর করে গাড়িতে তুললো।
আমাকে নিয়ে ওরা সবাই একটা গোডাউনে হাজির হয়।তারপর সেখানে একজন ছেলেকে দেখি আমি,যে তার পরিচয় দিয়েছিল ওর নাম “নিহান আহমেদ আরুশ”
সে আমাকে কোনো কিছু না বলেই মারতে থাকে।আর বলতে থাকে,,”তোর সাহস তো কম নাহ,আমার জানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাস।আমার সায়ু কেন তোকে ক্রাশ বলে ডাকবে?কেনননননননন?(ওর চিল্লানিতে আশেপাশের সবাই কেঁপে উঠল)
এরপর হঠাৎই ওও আমাকে গুলি করে আর আমি লুটিয়ে পড়ি মেঝেতে।আমার আর কিছুই মনে নেই।
হঠাৎই হাত তালির আওয়াজ পেয়ে আমি আর জিজু রুমের গেটের দিকে তাকিয়ে দেখি বিন্দুপ্পি হাত তালি দিতে দিতে ভেতরে আসছে!!
বিন্দিয়া:বাহ!আয়রা বাহ!তোর মনে এই ছিলো?তুই আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলি বোন হয়ে?মানছি আমি তোর মামাতো বোন।কিন্তু তোকে তো আমি নিজের বোনের থেকে কখনো আলাদা চোখে দেখিনি।তবে কেন করলি আমার সাথে এমনটা?বল কেন করলি?শুধুমাত্র আমাকে কষ্ট দিতে?তাহলে তো আমাকেই মারতে পারতিস তুই।তবে কেন তুই আমার এতো বড় ক্ষতিটা করলি?বললললল(বলেই আমাকে মারতে গেলেই কেউ একজন আপির হাত ধরে নেয়।)
আমরা সবাই তাকিয়ে দেখি আরুশ আপির হাত ধরে আছে।আর আমার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।আমি যেন বোবা হয়ে গেছি।জানিনা আমার কি হলো,,,আমি কোনো কিছু না বলেই একেএকে আরুশের দুই গালে থাপ্পর বসিয়ে দেই।তা দেখে আরুশ আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো আমি আর কাউকে কোনো কিছু না বলেই দৌড়ে বেরিয়ে আসি হসপিটাল থেকে।এরপর বাসায় গিয়ে রুমের গেট লাগিয়ে দিয়ে আমার স্টাডি টেবিলে বসে পড়ি আর একটা নোটপ্যাডে লিখতে শুরু করি,,,,
প্রিয় আপি,,,
আমি আজ তোমাকে যা বলছি তা নিজের মন থেকেই বলছি।আমি তোমাকে কখনো হিংসা করিনি।হুম,হতে পারে সবার থেকে বেশি তোমার সাথেই ঝগড়া করেছি।কিন্তু তা মন থেকে নয়।শুধুই রাগ,অভিমান থেকে।তবে সেই ঝগড়াগুলো ছিল ক্ষণস্থায়ী।আমি আবার তোমার সাথে ভাব করে নিতাম।কারণ আমি যে জানি,আমরা দুটি দেহ,একটি প্রাণ।তবুও আজ তুমি আমাকে যা যা বলেছো তা আমি চুপচাপ শুনেছি।
তবে একটাই কথা বলতে চাই,”ভালোবাসি,খুব খুব খুব ভালোবাসি তোমাদের সবাইকে”
আমি আর কিছুই বলবো নাহ।
চলে যাচ্ছি তোমাদের সকলের জীবন থেকে।ভালো থেকো সবাই।
আল্লাহ হাফেজ
ইতি,
তোমার কেউ নাহ্
এইটুকু লিখে রেখে আমি আপির বেডসাইড টেবিলে রেখে নিজের ট্রলি গুছিয়ে বেরিয়ে পরলাম এক অজানা উদ্দেশ্যে।
আসলে আমি কিছুদিন আগেই ইউকে তে পড়ার জন্য সুযোগ পেয়েছিলাম যা আমি ব্যাতিত আর কেউ যানেনা।কারণ আমি চাইনি কাউকে ছেড়ে চলে যেতে।কিন্তু এখন আর কিসের পিছুটান।সবার লাইফ থেকে আমি চলে গেলেই তা কল্যাণকর হবে।
এই ভেবে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি।আর ছুটে চললাম এক নতুন আর অজানা গন্তব্যে।
বাংলাদেশ,,,,,,,
বিন্দিয়ারা সবাই বাসায় এসে আয়রাকে খুজতে লাগলো।কারণ,,,,,
আরুশ যখন হসপিটালে পৌছায় তখন সবাই ওর উপরে খুব ক্ষেপে যায়।ওকেই সবাই দোষারোপ করতে লাগে।কিন্তু তারপর আরুশ সবাইকে একটা ভিডিও অন করে দেখায়।যেখানে দেখা যাচ্ছে আদিয়াত আরুশের মতো ড্রেসাপ করে ওর সাঙ্গপাঙ্গদের বলছে,
আদিয়াত:সবাই শোন।তোরা এই ছবিটা দেখ(শুভর ছবি দেখিয়ে)
এই ছেলেটাকে আগামীকাল এয়ারপোর্ট থেকে তুলে আনবি তোরা।আর তারপর আমি আরুশ সেজে ওকে খুন করবো।এরপর আরুশের উপরে সব দোষ হবে।আর আয়রা হবে আমার।হাহাহাহাহাহা(শয়তানি হাসি দিয়ে)
এটুকুই ছিলো ভিডিও তে।
এরপর আরুশ বলতে শুরু করলো,,,
আরুশ:আমার টিমের একজন মেম্বার গোপনে আদিয়াতের টিমে রয়েছে যা আদিয়াত বা আর অন্য কেউ জানেনা।সেই গুপ্তচরই আমাকে এই ভিডিও টা পাঠিয়েছে।তবে তা দেখতে আমার খুব দেড়ি হয়ে গেছে।
এইসব শুনে বিন্দিয়া ধপ করে মাটিতে বসে পরলো।আজ ওর নিজেকে খুব অপরাধি মনে হচ্ছে।আজ ওর নিজের প্রাণের প্রিয় বোনকে ওও যা নয় তাই বলেছে।এইসব ভাবতেই ওর দুই চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে।হঠাৎই ওর কাঁধে কেউ হাত রাখলো।তাকিয়ে দেখে নিলয়।নিলয়কে দেখেই বিন্দিয়া ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
নিলয়:কেঁদো নাহ বিন্দু।বাসায় চলো।গিয়ে আয়ুর কাছে মাফ চেয়ে নিবে।দেখবে ওর রাগ,অভিমান এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।(মাথায় হাত বুলিয়ে)
আরুশ:নিলয় ভাইয়া ঠিকই বলেছে আপু।চলুন।
এই বলে বিন্দিয়া,নিলয় আর আরুশ আয়রাদের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলো আর শুভর কাছে নোশিন,জারিন আর সাদিয়া রয়ে গেলো।
বাসায় এসে বিন্দিয়া তাড়াতাড়ি করে আয়রার রুমে গেলো।কিন্তু আজ যেন রুমটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।চারিদিকে তাকিয়ে দেখে আয়রার স্টাডি টেবিলের উপরে তেমন কিছু নেই।এই দেখে ওও তাড়াতাড়ি করে আলমারি খুলে দেখে সেখানেও ওর কোনো ড্রেস নেই।এইসব দেখেই বিন্দিয়ার বুক ধক করে উঠলো অজানা আশংকায়।
হঠাৎই ওর চোখ যায় বেড সাইড টেবিলের উপরে।ওখানে গিয়ে দেখে সেখানে একটা কাগজ ভাজ করে রাখা।বিন্দিয়া দ্রুত কাগজটা খুলে দেখে এইটা একটা চিঠি।সেখানের লেখাগুলো সে পড়তে লাগলো।কিন্তু পুরোটা পড়ে যেন ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।বাকিরা এসে ওকে একভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়ে ওরাও বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
আরুশ এই চিঠিটা পড়ার পর একদম ভেতর থেকে ভেঙে পরলো।পাগলামি শুরু করে দিলো।ওকে সামলানো দায় হয়ে গেলো।সবাই চিন্তিত হয়ে যায় আয়রার জন্য।ওও কোথায় গেছে তার খোঁজ নিয়েও কেউ কোনো খোঁজ পেলো নাহ!
চলবে…